ভগবানের দায়বদ্ধতা

প্রকাশ: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ১২:২৮ অপরাহ্ণ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ১২:২৮ অপরাহ্ণ

এই পোস্টটি 294 বার দেখা হয়েছে

ভগবানের দায়বদ্ধতা

ভগবান তাঁর ভক্তের প্রতি বিশেষভাবে দায়বদ্ধ থাকেন। তিনি সর্বদা ভক্তকে রক্ষা করেন। ভগবানের ভক্ত কে? যিনি সম্পূর্ণরূপে ভগবানের শরণাগত। যিনি নিজেকে ভগবানের দাস এবং ভগবানের সেবা করাই একমাত্র কর্তব্য বলে মনে করেন, তিনিই ভক্ত। অনেকেই নানাভাবে ভগবানের আরাধনা করেন, তপশ্চর্যা করেন। তারা নানাবিধ সিদ্ধি লাভ করেন। বিভিন্ন শক্তি অর্জন করেন। তপস্যাবলে পৃথিবীতে দীর্ঘদিন ক্ষমতা, ঐশ্বর্য আদি ভোগ করেন। কিন্তু তারা কখনও ভক্ত হতে পারেন না। কেননা তাদের ভগবৎ আরাধনার মূল উদ্দেশ্যটি হল পৃথিবীতে কোনো কোনো ঐশ্বর্য ভোগ করা, প্রকৃতপক্ষে যা নিজ ইন্দ্রিয় সন্তুষ্টিরই নামান্তর। কিন্তু প্রকৃত ভক্তের ভগবৎ ভক্তির উদ্দেশ্যটি সেরকম নয়। ভক্ত শুধু ভগবৎ সেবাপরায়ণ হতে চায়। নিত্য ভগবৎ সান্নিধ্যই তাঁর একমাত্র কাম্য। অন্য কোনোকিছুই সে চায় না। সে জানে যে পৃথিবীর জড় তথাকথিত আনন্দের সমস্ত কিছুই ভগবৎ-প্রেমের আনন্দের কাছে তুচ্ছবৎ। তাই এই ধরনের ভক্তের ভগবৎ আরাধনা অহৈতুকী।
এই বিষয়ে প্রহ্লাদ মহারাজ ও তাঁর পিতা হিরণ্যকশিপুর উদাহরণটি উল্লেখযোগ্য। বৎসর ধরে এতই কঠোর তপস্যা করেছিল যে তা অনেক ঋষি, মহাত্মারাও করতে পারেন নি। হিরণ্যকশিপু মন্দার পর্বত উপত্যকায় পায়ের আঙুলের ওপরে ভর করে দাড়িয়ে, ঊর্ধ্ববাহু হয়ে ও আকাশে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে তপস্যা করেছিল। এই কঠোর তপস্যার প্রভাবে হিরণ্যকশিপুর মাথা থেকে আগুন বিচ্ছুরিত হচ্ছিল। সেই প্রচণ্ড অগ্নি ও ধুম ধীরে ধীরে সারা মহাকাশে ছড়িয়ে পড়লে তার তাপে সমস্ত গ্রহলোক অত্যন্ত উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল। কিন্তু এত ভয়ঙ্কর কঠোর তপস্যা সে কেন করেছিল? সে কি ভগবানকে চেয়েছিল? না, হিরণ্যকশিপু ভগবৎ-প্রেম চায় নি। সে অমর হতে চেয়েছিল, সে সমস্ত ব্রহ্মাণ্ডের শাসনকর্তার অধিকার ভোগ করতে চেয়েছিল এবং সে সর্বপ্রকার যোগসিদ্ধি লাভ করতে চেয়েছিল। অমরত্বের বাসনার ছলে সে এই বর চেয়েছিল যে যাতে গৃহের অভ্যন্তরে বা বাইরে, দিনে অথবা রাত্রে, ভূমিতে বা আকাশে যেন তার মৃত্যু না হয়। কোনো মানুষের দ্বারা, কোনো পশুর দ্বারা, কোনো অস্ত্রের আঘাতে যেন তার মৃত্যু না হয় এবং অতিমানবিক ক্ষমতা লাভ করে, সেই ক্ষমতা ও ঐশ্বর্যের দম্ভে মদমত্ত হয়ে হিরণ্যকশিপু সমস্ত শক্তির উৎস পরমেশ্বর ভগবানকেও হীন মনে করেছিল । তাই হিরণ্যকশিপুকে কখনও ভক্ত সম্বোধন করা হয়নি। তাকে অসুর বলা হয়ে থাকে। অপরদিকে হিরণ্যকশিপুরই পুত্র প্রহ্লাদ মহারাজ ছিলেন এক মহান ভগবদ্ভক্ত। আর ভগবদ্ভক্ত হওয়ার জন্য প্রহ্লাদ মহারাজকে কোনো কঠোর তপস্যা করতে হয়নি। নারদ মুনির নির্দেশ অনুসারে তিনি শুধু ভগবানের নাম ও মহিমা কীর্তন করতেন। তিনি কখনও কোনো ক্ষমতা ভোগ করতে চান নি বা জড় কিছু পাওয়ার প্রার্থনা করেন নি। তিনি শুধু ভগবানের কৃপা লাভ করতে চেয়েছিলেন। তাই হিরণ্যকশিপুর পুত্র হওয়া সত্ত্বেও যেহেতু প্রহ্লাদ মহারাজ ছিলেন পরম ভক্ত, তাই নৃসিংহদেব রূপে আবির্ভূত হয়ে পরমেশ্বর ভগবান হিরণ্যকশিপুকে বধ করে সকল অত্যাচারের হাত থেকে ভক্ত প্রহ্লাদকে রক্ষা করেছিলেন। ভগবান নৃসিংহদেব অত্যন্ত করুণাময়। তাঁর শরণাগতকে তিনি সর্বতোভাবে রক্ষা করেন। আসুন নৃসিংহ চতুর্দশীর দিনটিতে আমরাও আকুলভাবে প্রার্থনা করি, আমরাও যেন ভগবানের নিস্কাম ও ঐকান্তিক ভক্ত হতে পারি এবং আমাদের ভক্তিপথের সকল বাধা-বিঘ্ন ভগবান নৃসিংহদেব দূর করুন ।


 

এপ্রিল-জুন ২০১৫ ব্যাক টু গডহেড

সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।