এই পোস্টটি 897 বার দেখা হয়েছে
—– ড.বিবেক বিন্দ্রা
আজ আমাদের আলোচ্য বিষয় ব্যর্থতাকে সফলতাই পরিণত করা। আপনি কি কখনও কখনও ব্যর্থ হন? যদি নাও হন তারপরও আপনার এ ব্যাপারে জানা উচিত। যদি আপনি জীবনে কোথাও ব্যর্থ না হন তাহলে আপনি নিজেকে খুবই নিরাপদ পথ দিয়ে পরিচালিত করছেন। আর জীবনে সবচাইতে বড় ঝুঁকি হচ্ছে কোন ঝুঁকি না নেওয়া। ঝুঁকি আপনাকে নিতে হবেই। ঝুঁকি না নিয়ে এ জীবনে কোন ব্যক্তি সফলতা লাভ করতে পারেন নি। ঝুঁকি নিতে গেলে আপনি কয়েকবার ব্যর্থও হতে পারেন কিন্তু সে ব্যর্থতাকে কিভাবে রোধ করবেন তা হচ্ছে আমাদের আলোচ্য বিষয়। যদি কেউ সত্যিই সফল হতে চাই তাহলে তার কি করা উচিত এবং কি কি করা তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ তা আমরা জানব।যারা আজ সারা বিশ্বে পথিকৃৎ, বিশ্বজয়ী তাদের মধ্যে এমন কোন জিনিসটি রয়েছে।আমি বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী এবং নেতাদের সাথে কথা বলেছি ,প্রশিক্ষণ দিয়েছি।প্রত্যেকের মাঝেই আমি কিছু মৌলিক গুণাবল দেখেছি বেশির ভাগের ক্ষেত্রেই যা প্রায়ই সবক্ষেত্রেই মিলে যায়।
আপনাদের জন্যই আমার নিচের এই পরামর্শগুলি যা আমাদের অনেক কাজে আসতে পারে :
আমরা সম্পদ না থাকতে পারে কিন্তু আপনাকে সমৃদ্ধ হতে হবে :
অনেকেই বলে আমার কাছে অর্থ ছিল না,সম্পত্তি ছিল না,আমি সুযোগ পাই নি,আমার পিতা মাতা তত ক্ষমতাশালী ছিল না,আমার মামা ছিল না ইত্যাদি ইত্যাদি।কোন ব্যাপার নয় আপনার অর্থ সম্পত্তি না থাকতে পারে কিন্তু তা অর্জনের ক্ষমতা আপনার রয়েছে,আপনার মেধা বা প্রতিভা না থাকতে পারে কিন্তু তা অর্জনের ক্ষমতা রয়েছে।গীতায় ১৫অধ্যায়ে ৭নং শ্লোকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলছেন সকল জীবন আমার অংশ।ভগবান এবং আমরা গুণগতভাবে এক হয়ত পরিমাণগতভাবে তিনি বিশাল।সমুদ্রের বিশাল জলরাশি এবং সমুদ্রের বিন্দু জলের মতে যেমন গুণগত তেমন কোন পার্থক্য নেই তেমনি ভগবান এবং আমাদেরও কোন পার্থক্য নেই।কিন্তু আমাদের মধ্যে প্রচেষ্টা নেই।আমরা বলি আমাদের টাকা নেই কিন্তু আমাদের আশেপাশে টাকার কোন অভাবই নেই ।ব্যাংকগুলো,আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো আপনার জন্য টাকা নিয়ে বসে আছে।যদি আপনার মধ্যে প্রচেষ্টা, দৃঢ়তা এবং উন্নত ধারণা থাকে এবং তা আপনি তাদেরকে সঠিকভাবে প্রকাশ করতে পারেন তবে তারাই এগিয়ে আসবে আপনাকে সাহায্য করার জন্য।এটি গণিতেই হয় যে শুধু একটি সমস্যার একটি মাত্রই সমাধান হয় কিন্তু বাস্তব জীবনে তা নয়,বাস্তব জীবনে একটি সমস্যার অনেক সমাধান রয়েছে।আমরা যা সমাধানের খোঁজ করছি কোনটি না কোনটি সমস্যাটিকে সমাধান করতে পারে।আপনি কি মনে আপনি সমস্ত সমাধানগুলোকে পরীক্ষা করে ফেলেছেন?যদিও করেও ফেলেন সেখানেই শেষ নয় হয়ত আরেকটি সমাধান বাকি রয়ে গেছে।জীবন আর গণিত এক নয়।এখানে প্রতিনিয়তই আপনাকে সমাধান খুঁজে যেতে হবে।
সমস্যার গন্ডি এবং সম্ভাবনার গন্ডিঃ
আপনার প্রকৃত অধিশ্রয়(Focus) কোথায়?সমস্যায় না সম্ভাবনায়।যেখানে আপনার অধিশ্রয় বেশি তার গন্ডি ততই বাড়তে থাকবে এটি খুবই সহজ ব্যাপার।যদি আপনি ভাবেন অনেক সমস্যা তাহলে তা বাড়তেই থাকবে আর যদি ভাবেন সম্ভাবনা বেশি তাহলে সম্ভাবনা বাড়তে থাকবে।আমার পরামর্শ আজ থেকে সকল সমস্যার সাথে বিচ্ছেদ করুন এবং সম্ভাবনার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হোন।
সমস্যা গুলো লিখে কেটে দিন আর শুধু সম্ভাবনাগুলো লিখে রাখুন।সমস্যার গন্ডি=মানসিক চাপ এবং সম্ভাবনার গন্ডি=কৌশল।আর এভাবেই আমি সফল হবেন।
আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির অসুখ ক্যান্সার অথবা ব্রেইন স্ট্রোক এর চাইতেও ভয়াবহঃ
একবার যদি আপনার দৃষ্টিভঙ্গি নেতিবাচক হয় তবে আপনি শেষ।কারণ আপনার ক্যান্সার বাইরের কেউ ঠিক করতে পারবে কিন্তু আপনার দৃষ্টিভঙ্গি আপনি ছাড়া পৃথিবীর কেউ ঠিক করতে পারবে না।সমস্যা হল আমি কে? সেটা না ভেবে আমি কি অনুভব করছি অথবা দেখছি সেটা উপর ভিত্তি করে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিষ্ঠা করছি।আপনার অনেক মেধা এবং প্রতিভা রয়েছে কিন্তু আপনি নিজে যতদিন পর্যন্ত তা বের না করবেন কেউ আপনাকে সাহায্য করতে পারবে না।শুধুমাত্রই আপনি আপনাকে সাহায্য করতে পারেন।কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে কৃষ্ণ শুধুমাত্র কিছু উপদেশ দিয়েছিল কিন্তু য্দ্ধুটা অর্জুনকেই করতে হয়েছিল।প্রকৃতপক্ষে যে স্মার্ট কাজ শুরু করে সে স্মার্ট নয়,যে তা সঠিকভাবে সমাপ্ত করতে পারে সেই স্মার্ট।সমস্যাকে সমস্যা মনে করাই প্রকৃত সমস্যা।যখনি সমস্যায় পড়বেন একটি কথা মাথায় রাখুন আপনাকে ঘুরে দাঁড়াতে হবে।পারলে সব জায়গায় যেখানে আপনার দৃষ্টি যায় লিখে রাখুন ‘আমাকে ঘুরে দাঁড়াতে হবে।’ ধন্যবাদ। হরেকৃষ্ণ!
( মাসিক চৈতন্য সন্দেশ পত্রিকা অক্টোবর ২০১৮ সালে প্রকাশিত)