বৈদিক ইতিহাসে বিজ্ঞানের সমর্থন

প্রকাশ: ২১ মে ২০১৯ | ৪:২৭ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ২২ মে ২০১৯ | ৫:১৩ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 961 বার দেখা হয়েছে

বৈদিক ইতিহাসে বিজ্ঞানের সমর্থন
অমিশ ত্রিপতি, ইন্ডিয়া টুডেতে প্রকাশিত শতাব্দীর সাম্প্রতিক চমকপ্রদ খবর দিচ্ছেন মহেশ কেশবাম, গদাধর যাদব এবং আকবর প্যাটেল। তারা একত্রে ঘোষণা দিলেন যে, ইন্দো ভ্যালির বিভিন্ন প্রাচীন স্ক্রীপ্টগুলোর মর্ম উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছেন তারা। তাদের কাজটি সহজ হয়ে যায়, যখন তাদের কর্তৃক ভারতীয় প্রাচীন অক্ষর খোদিত রোসেটা পাথর আবিস্কার হয়। রোসেটা পাথর হল প্রাচীন ফারাও- মিশরীয় স্ক্রীপ্ট খোদিত ১৮০০ শতকে আবিস্কৃত পাথর, যা থেকে প্রাচীন মিশরীয় ভাষা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। যেসকল ভারতীয় রোসেটা পাথর আবিস্কৃত হয়েছে সেগুলোকে নাগা পাথরও বলা হয়। এই পাথর লক্ষ বছর পূর্বের এক রাজার মেসেজ লিপিবদ্ধ আছে। এটি তিনটি ভিন্ন ভিন্ন প্রাচীন ভাষায় অক্ষরে খোদাই করা হয়েছিল। সেখানে ব্রাহ্মালিপিও খোদিত হয় আবিষ্কারকত্রয় এই পাথরের নাম দিলেন নাগা পাথর কেননা এই পাথরটি নাগাঞ্চলে পাওয়া গিয়েছিল। সেই পাথরে একজন স্থানীয় শাসকের মেসেজ রয়েছে যে, একটি নির্দিষ্ট উৎসবকে অবশ্যই কঠোরভাবে পালন করার নির্দেশাবলী রয়েছে। তিনটি আলাদা ভাষায় একত্রে বিবৃতি লেখা আছে, তাই একত্রে তিনটি ভাষার মর্মার্থ উপলদ্ধি সম্ভব কেননা ব্রাহ্মীলিপি সম্পর্কে তাদের যথেষ্ট জ্ঞান ছিল। তারা তিনটি ভাষার প্রত্যেকটি অক্ষরের মধ্যে মিল খুজে বের করেন।
সবচেয়ে চমকপ্রদ আবিষ্কারটি হলো, যখন তারা সেই তিনটি ভিন্ন ভিন্ন লিপিসমূহের মর্ম উদ্ধারের কাজ করছিলেন তখন তারা সেখানে ইন্দাস ভ্যালি সভ্যতার বহু নিদর্শন ও লিপির মধ্যে সমতা খুজে পান। বিশেষত ইন্দাস ভ্যালিতে যে সকল চিহ্ন পাওয়া গেছে তার সাথে এই খোদাই করা লিপির অনেক মিল আছে। ইন্দো স্ক্রীপ্টগুলো মান্দারিন ভাষার মতো চিহ্নভিত্তিক ভাষা। এই ভাষাটির হুদিস পাওয়া গিয়েছে ইন্দো ভ্যালির খোদাইকৃত সিলে যা এক সময়ে ব্যবসার কাজে ব্যবহার করা হতো। এই সমস্ত সিলে বিভিন্ন উৎসাহ বৃদ্ধিমূলক তথ্য খোদাই হয়েছিল।
আকবর বলেন, “আমরা যা আবিষ্কার করেছি তাতে দেখা যাচ্ছে, ইন্দাস ভ্যালি প্রাচীন লিপি বৈচিত্র্যপূর্ণ। এখানে বহু ধরণের সাংকেতিক চিহ্ন রয়েছে, তাদের মধ্যে সাদৃশ্যও রয়েছে। এছাড়া এমন একটি লিপি পাওয়া গেছে যার লেখা ডান থেকে বাম দিকে প্রসারিত হয়েছে।”
ভাষাতত্ত্ববিদদের একটি সাধারণ ধারণা যে, ইন্দাস ভ্যালির একটি সাধারণ ভাষা থাকবে। যেহেতু ইন্দাস ভ্যালি সভ্যতার পুরাতাত্বিক জিনিস গুলোতে বহু সাদৃশ্য রয়েছে, যেমন আবাসস্থল তৈরিতে একই মাপের ব্যবহার তাই ভাষাবিদগণও মনে করেছিলেন, সেখানে একটি ভাষাই থাকবে। কিন্তু তারা ভুল বলে প্রমাণিত হলেন। ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের ব্যক্তিগণ যেমন ভিন্ন ভিন্ন লিপি ব্যবহার করে থাকেন তেমনি হয়তো ইন্দাস সভ্যতায় বিভিন্ন লিপি ব্যবহার করা হতো। লিপির ভিন্নতা থাকলেও ভাষা কি এক ছিল?
মহেশ জানালেন, “হ্যাঁ, লিপির ভিন্নতা থাকলেও ভাষার মধ্যে কোনো পার্থক্য ছিল না। আর সেই ভাষাটি হল সংস্কৃত।” এরপর একরাশ বিস্ময় নিয়ে গদাধর বললে, “আপনারা কি জানেন, সংস্কৃত ভাষার জন্য দেবাংগিরি লিপির ব্যবহার ব্যবহার অতি সাম্প্রতিক ঘটনা। প্রাচীনকালে আরো অনেক লিপি ব্যবহৃত হত, যেমন ব্রাহ্মীলিপি। এমনকি কেরালাতে এমন কিছু প্রাচীন পুঁথি পাওয়া গেছে যেখানে সংস্কৃতভাষার শব্দ মালয় ভাষায় লিখিত পাওয়া গেছে। তাই একই ভাষার বিভিন্ন লিপির ধারণা প্রাচীন ভারতে ছিল। অবশ্যই সংস্কৃত ভাষার কোনো স্থানীয় লিপি নেই এবং সুপ্রাচীন থেকেই এটি একটি মৌখিক ভাষা।
কিন্তু এখানে প্রশ্নের অবতারণা হয় যে, ইতিহাস আমাদের কি শেখাচ্ছে? আমাদের বর্তমান ইতিহাস শেখাচ্ছে, ইন্দাস উপত্যাকার প্রাচীন মানুষগণ হলেন দ্রাবিড়বাসী যারা হলেন মূল ভারতীয়। তাদেরকে পরবর্তীতে বিদেশী আর্যগণ অধিকার করে সংস্কৃত ভাষা শেখান এবং দক্ষিণে গমনে বাধ্য করেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো কিভাবে পরাজিত জাতির ভাষা বিজিত জাতির ভাষা হিসাবে ব্যবহৃত হয়?
আকবর জানালেন, “যদি আপনি নাগা পাথরের লিপিগুলো পড়েন তবে নিশ্চিত হবেন যে, এখানে কোনো আর্য আক্রমণ হয় নি। দূরাগত ঐতিহাসিকগণ এখনো পর্যন্ত বিস্মিত হন সুপ্রাচীন অতি উন্নত ইন্দাস ভ্যালি সভ্রতা নিরীক্ষণ করে। এটিকে বলা হয় সর্ববহৎ এবং সেই সময়কার সবচেয়ে সমৃদ্ধ সংস্কৃতি। তাহলে এটি কি সম্ভব যে সেই সময়কার সবচেয়ে শক্তিশালী এবং সমৃদ্ধ সংস্কৃতির জাতি তাদের কোন সাহিত্যই রেখে যান নি? আর বিদেশী মধ্য এশিয়ার আর্যরা যারা কোন বড় শহরও নিমার্ণ করে নি তারা অন্যান্য সভ্যতার তুলনায় পৃথিবীর সর্ববৃহৎ প্রাচীন সাহিত্য রেখে গেছেন? তাহলে প্রকৃত বাস্তবতা হল ইন্দাস ভ্যালি সভ্যতা এবং আর্য সভ্যতা হল একই। অর্থাৎ আর্য আগমন তত্ত্ব সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।”
দুর্ভাগ্যবশত ভারতে ইতিহাস নিয়ে গবেষণা বা-ডান পন্থীদের মতাদর্শে প্রভাবিত হয়ে আছে। বলেলেন গদাধর। তারা নিজেরাই নিজেদের বক্তব্য দিয়ে বিষয়টি ঘোলাটে করে তুলেছেন। তাই তারা পশ্চিমা মতাদর্শে প্রতি অনুরক্ত হয়ে উঠেছেন। তাই পশ্চিমা মতাদর্শ এবং ভারতীয় প্রভাবিত ঐতিহাসিকদের ছেড়েড় আমাদের এমন কারো যৌক্তিকতা শুনতে হবে যারা অন্যান্য প্রভাব মুক্ত। সুখবর হল ইতিমধ্যে বহু পশ্চিমারাই আর্য আগমন তত্ত্বকে ইউরোপের বানানো গল্প বলে প্রচার করছেন।
সবচেয়ে বড় প্রমাণ আমাদের সামনে রয়েছে নাগা পাথর। এটির লিখিত বার্তা দ্ব্যর্থহীন। সেই সময়ের স্থানীয় রাজা ছিলেন বাসুকী। তিনি প্রাচীন নাগদের একটি উৎসব পঞ্চমীকে যথাযথভাবে পালনের জন্য আদেশ দেন কেননা এই উৎসব পরম্পরাক্রমে সংগম এবং দ্বারকা থেকে ১০ হাজার বছর পূর্বে সেই বৈদিক জনগণের কাছে আশীর্বাদরূপে এসেছে। যেহেতু এই পাথরটি কমপক্ষে ৩ হাজার বছর প্রাচীন, তাই নিশ্চয়ই সংগম এবং দ্বারকা সভ্যতা ১৩ হাজার বছর প্রাচীন, অর্থাৎ এটি পশ্চিমাদের দৃষ্টিতে রবফ যুগেরও প্রাচীন।
কিন্তু সেই সংগম এবং দ্বারকা কোথায়? আমরা বিশ্বাস করি যে সংগম হল একটি প্রাচীন তামিল সভ্যতা এবং দ্বারাকা হল প্রাচীন গুজরাটি সভ্যতা। বললেন আকবর। একটি বোঝা যাচ্ছে, বৃটিশ লেখক গ্রাহাম হ্যাকংকক ছিলেন সঠিক। তিনি জানিয়েছিলেন, বরফ যুগেরও আগে বহু সভ্যতা পৃথিবীতে ছিল। তখন জলের উচ্চতা ছিল নিম্ন। সেই সময়কার দুটি সভ্যতাই ছিল ভারত কেন্দ্রিক। যার একটি ছিল বর্তমান সমুদ্র উপকূলবর্তী তামিলনাড়–তে এবং অন্যটি গুজরাটে। এই সভ্যতাসমূহ ধ্বংস হয় যখন বরফ যুগের সমাপ্তি ঘটে এবং সমুদ্রের জলের উচ্চতা বাড়ে। এই সময় বেঁচে যাওয়া জনগোষ্ঠি উত্তরে ধাবতি হয় এবং এমন একটি সভ্যতা সৃষ্টি করে যাকে আমরা বৈদিক সভ্যতা বলি। তাই গ্রাহাম হ্যাংককের মতে প্রাচীন বৈদিক সভ্যতা আরো প্রাচীন তামিল ও গুজরাটি সভ্যতা থেকে এসেছে। নাগা পাথরও এই বক্তব্য সমর্থন করে। সুতরাং বৈদিক সভ্যতা যে সুপ্রাচীন তা প্রমাণিত হয় এবং আর্যরা বা বৈদিক মানুষেরা বিদেশী নয় তা সুপ্রাচীন সময়কাল থেকে বৈদিক ধর্ম এই অঞ্চলে অনুসরণ করে আসছে।
সুতরাং এখন সময় এসেছে নতুন করে ইতিহাস পুনঃলিখিত করা! (অমিশ ত্রিপতি শিব ত্রিলোজীর একজন লেখক)

(মাসিক চৈতন্য সন্দেশ জুলাই ২০১৪ প্রকাশিত)

সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।