বৃহৎ বিজ্ঞান

প্রকাশ: ৫ জুলাই ২০২৪ | ১০:৫৯ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ৫ জুলাই ২০২৪ | ১১:০০ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 46 বার দেখা হয়েছে

বৃহৎ বিজ্ঞান

ডঃ প্রেমাঞ্জন দাস


মনে করুন, কোটি কোটি আলোকবর্ষ দূরে একটি নক্ষত্র রয়েছে যার নাম ইন্দ্রলোক। নামে কিছু যায় আসে না। নাম তো মানুষেরই দেওয়া। এখন কেউ যদি চ্যালেঞ্জ করে, ঐ নক্ষত্রটি যে রয়েছে তার প্রমাণ কি? বৈজ্ঞানিকেরা হামেশাই এরকম অগণিত নক্ষত্রের অস্তিত্ব স্বীকার করে, যাদের আলোকে এখনো পৃথিবীতে পৌঁছয়নি এবং যাদের আলোক পৌঁছতে পৃথিবীতে কোটি কোটি আলোকবর্ষ সময় লাগবে। কোনও বৈজ্ঞানিকের ক্ষমতা নেই অত বছর বেঁচে থেকে ঐ সকল নক্ষত্রের অস্তিত্ব প্রমাণ করার। সুতরাং ঐ সকল নক্ষত্রের অস্তিত্ব প্রমাণ করা সম্ভব নয়। যদি বলি, ঐ সকল নক্ষত্র নেই তাহলে তা ভিত্তিহীন। কারণ ঐসকল নক্ষত্রগুলি প্রমাণ করা সম্ভব নয়। প্রমাণ ছাড়াও কোটি কোটি আলোকবর্ষ দূরে নক্ষত্র থাকতেই পারে। ঐ সকল নক্ষত্রগুলি হচ্ছে এক অর্থে অনেকটা ভগবানের মতো। ভগবানকে যেমন প্রমাণ করা সম্ভব নয়, ঐ সকল নক্ষত্রগুলিকেও প্রমাণ করা সম্ভব নয়।
প্রশ্ন হচ্ছে, প্রমাণ ছাড়া ভগবানকে মানবো কেন? প্রমাণ ছাড়া ঐ সকল নক্ষত্রের অস্তিত্বই বা মানবো কেন? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনটি দল তৈরি হলঃ ১) অজ্ঞেয়তা বাদ ২) নাস্তিক্য বাদ এবং ৩) আস্তিক্য বাদ।
অজ্ঞেয়তাবাদীদের সিদ্ধান্ত হল: যেহেতু আমরা জানি না, ঐ সকল নক্ষত্র আছে কিনা, বা ভগবান আছে কিনা, তাই আমরা নীরব থাকব। ঐ সকল নক্ষত্র থাকতেও পারে, নাও থাকতে পারে। তেমনি ভগবান থাকতেও পারে, নাও থাকতে পারে।
নাস্তিক্যবাদীদের সিদ্ধান্ত হল: যা প্রত্যক্ষ করতে পারি না, তা নেই। কোটি কোটি আলোকবর্ষ পরে কোনও নক্ষত্রের আলোক পৃথিবীতে পৌঁছাবে কিনা, তা প্রত্যক্ষ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়, তাই ঐ সব নক্ষত্র নেই। ঠিক তেমনি আমি ভগবানকে প্রত্যক্ষ করতে পারি না, তাই ভগবান নেই।
এটি ডঃ ব্যাঙের দর্শন (কূপ মণ্ডক ন্যায়)। কূয়োর ব্যাঙ ভাবতে পারে প্রশান্ত মহাসাগর নেই। কারণ কুয়োর বাইরে কী আছে তা সে জানে না। বলা হয় যে পেঁচা কখনো সূর্য দর্শন করতে পারে না। কারণ সে হচ্ছে দিবান্ধ। তাই পেঁচা ভাবতে পারে, সূর্য বলে কোনও বস্তু নেই। ঠিক তেমনি, নাস্তিকেরা যখন বলে ভগবান নেই, তাদের একমাত্র যুক্তি হচ্ছে কুয়োর ব্যাঙ বা পেঁচার মতো–যা দেখিনা তা নেই।
কূয়োর ব্যাঙ যখন মনে করে প্রশান্ত মহাসাগর নেই, কারণ তা দেখি না, তখন সেটিও এক ধরনের বিশ্বাস। দিবান্ধ পেঁচা যখন মনে করে, সূর্য নেই, সেটিও এক ধরনের বিশ্বাস। ঠিক তেমনি, নাস্তিকেরা যখন বলে, ভগবান নেই, সেটিও এক অন্ধ গোঁড়ামী।

বিশ্বাস দুই প্রকার

১) অন্ধ যুক্তিহীন বিশ্বাস এবং ২) যুক্তিগ্রাহ্য বিশ্বাস। ভগবান নেই এবং ভগবান আছে-দুটোই বিশ্বাস মাত্র। তবে একটি হচ্ছে যুক্তিহীন বিশ্বাস এবং অপরটি হচ্ছে যুক্তিগ্রাহ্য বিশ্বাস। এবার বিচার করে দেখা যাক-নাস্তিক বিশ্বাস এবং আস্তিক বিশ্বাসের মধ্যে কোনটি যুক্তিহীন এবং কোনটি যুক্তিগ্রাহ্য। শূণ্য থেকে জগৎ সৃষ্টি হয় নি। তাহলে কোথা থেকে জগৎ সৃষ্টি হল? বিগ ব্যাঙ তত্ত্বে বিশ্বাসী নাস্তিকেরা বলেন, একটি পিও ছিল, সেই পিণ্ডে বিস্ফোরণ হল। বিস্ফোরণ থেকে জগৎ সৃষ্টি হল। প্রশ্ন হল, সেই পিও কি শূন্য থেকে সৃষ্টি হল? শূণ্য থেকে তো কোনও কিছুর সৃষ্টি হয় না। এছাড়া বিস্ফোরণ থেকে ধ্বংস হতে পারে, সৃষ্টি হয় না। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হল, বিগ ব্যাঙের সেই আদি পিণ্ডটি তো শূণ্য থেকে আসতে পারে না। কেউ যদি বলে, বিভিন্ন প্রকার শক্তি ঘণীভূত হতে হতে সেই পিণ্ডটি সৃষ্টি হল, তাহলেও সেই রকম প্রশ্ন থেকেই যায়। সেই সব শক্তি কি শূণ্য থেকে সৃষ্টি হল? যদি বলেন, সেগুলি প্রাকৃতিক শক্তি। আগে থেকেই ছিল। তাহলে প্রকৃতি কি শূণ্য থেকে সৃষ্টি হল? নাস্তিকেরা তার উত্তর দিতে পারে না।

0+0=0
0-0=0

এ প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায় বেদের উপনিষদে। পূর্ণস্য পূর্ণমাদায় পূর্ণমেবাবশিষ্যতে। (ঈশ উপনিষদ, মঙ্গল মন্ত্র)

পূর্ণ + পূর্ণ = পূর্ণ
পূর্ণ – পূর্ণ = পূর্ণ

বিজ্ঞানের ভাষায়:

infinity+ infinity=infinity
infinity-infinity=infinity

প্রশ্ন হতে পারে সেই infinity কি শূণ্য থেকে সৃষ্টি হয়? শূণ্য থেকে যেহেতু কোনও কিছুই সৃষ্টি হয় না, তাই infinity -ও শূণ্য থেকে আসেনি। তাহলে সেই infinity কোথা থেকে infinity শব্দটির সংজ্ঞা হল, যার বাইরে কিছু নেই। যদি বলি “আগুন কি শীতল?”- এই প্রশ্নটি ভুল। যে ব্যক্তি আগুনের সংজ্ঞা জানে না সেই এরকম মূর্খের মতো প্রশ্ন করতে পারে। তাই infinity বা পূর্ণ সম্পর্কে প্রশ্ন করার আগে পূর্ণের সংজ্ঞা ভালো করে বুঝতে হবে। তা না হলে, আমরা শুধু বোকার মতো প্রশ্ন করেই চলব। যদি প্রশ্ন করি পূর্ণ কোথা থেকে সৃষ্টি হল বা infinity কোথা থেকে সৃষ্টি হল, তার মানে আমি ধরেই নিয়েছি পূর্ণ মানে সসীম যার বাইরে কিছু থাকতে পারে। অর্থাৎ পূর্ণ মানে পূর্ণ নয়। মনে করি x হচ্ছে পূর্ণ বা infinity। এবার x কোথা থেকে সৃষ্টি হয়।? যদি বলি y থেকে, তাহলে x কে আর পূর্ণ বলা যাবে না।

Y থেকে x সৃষ্টি হলে x পূর্ণ হতে পারে না, কেননা infinity বা পূর্ণ হচ্ছে বৃহত্তম বৃত্ত যার মধ্যে x, y, x সমস্ত সীমিত বস্তুর বৃত্তগুলি অন্তর্ভূক্ত। সংস্কৃতে বলা হয় “সর্ব কারণ কারণম্” (cause of all causes)। সংস্কৃত কারণের পরম কারণ হচ্ছে পূর্ণতম সত্তা, যার বাইরে কোনও কিছুর অস্তিত সম্ভবই নয়। কেননা পূর্ণতমের বাইরে কিছু আছে বলা মাত্রই পূর্ণতম অপূর্ণ হয়ে গেল।
আমাদের বৈদিক শাস্ত্রে, যেমন- গীতা ভাগবতে, কৃষ্ণকে পূর্ণতম বলা হয়েছে। মনে করুন আমি এক গ্লাস জল নিলাম। এবার জলটি ঢেলে ফেলে দিলাম। গ্লাসটি আবার জলে ভরে গেল। আবার সেই জল ফেলে দিলাম, গ্লাসটি আবার জলে ভরে গেল। যদি এরকম চলতেই থাকে, তাহলেই সেই জলকে অসীম বলা চলবে। লক্ষণীয় বিষয় হল- রাস নাচের বর্ণনা অনুসারে কৃষ্ণ একা বসেছিলেন। দুজন গোপী এলেন, একজন কৃষ্ণ দুজন হয়ে গেলেন। তিন জন গোপী এলেন, এক কৃষ্ণ তিনজন হয়ে গেলেন। অনন্ত কোটি গোপী এলেন, কৃষ্ণও আবার অনন্ত কোটি হয়ে গেলেন। এমনকি গোপীরাও কৃষ্ণেরই শক্তি, তাঁরাও সেই পূর্ণতম যে বৃত্ত শ্রীকৃষ্ণ, তাঁর অন্তবর্তী ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বৃত্তমাত্র। অনেক অসীম বা infinity কে নিরাকার বলেন। নিরাকার মানে আকারের অভাব। অথচ পূর্ণতম মানে যার কোন কিছুর অভাব নেই।

আকার বৃত্তটি পূর্ণতমের অন্তবর্তী বৃত্ত, কেননা পূর্ণতমের মধ্যে কোন কিছুর অভাব থাকতে পারে না। তাই পূর্ণতম আকারহীন নন। পূর্ণতম কোনও ব্যাপারেই হীন নন। জ্ঞানহীন নন, পূর্ণতম অনন্ত জ্ঞানময়। বুদ্ধিহীন নন, পূর্ণতম অনন্ত বুদ্ধিমান। রূপহীন নন, পূর্ণতম অনন্ত রূপময়। তিনিই হচ্ছেন শ্রীকৃষ্ণ। তিনি অভাব অনটনে ভোগেন না। তার না আছে রূপের অভাব, না আছে শক্তির অভাব, না আছে জ্ঞানের অভাব। বৈদিক শাস্ত্র তাঁর জ্ঞান সম্পর্কিত প্রমাণ। অনন্ত কোটি ব্রহ্মাণ্ডের সমস্ত আকার কৃষ্ণ থেকেই নির্গত হয়েছে। বৈজ্ঞানিককেরা black hole যাঁকে বলেছেন, বৈদিক শাস্ত্রে তাকেই black person বলা হয়েছে। সেই ঠফটডপ যন্ত্রমভ হচ্ছেন শ্রীকৃষ্ণ। বৈজ্ঞানিকেরা যাকে big bang বলেছেন, সেই big bang হচ্ছে সেই বৃহৎ পুরুষের big brain।


 

ব্যাক টু গডহেড অক্টোবর – ডিসেম্বর ২০১৮ হতে প্রকাশিত

সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।