এই পোস্টটি 60 বার দেখা হয়েছে
বর্তমান বিশ্বের নানাবিধ পরিবেশ বিপর্যয়ের প্রধান কারণ হিসেবে অনেকে দাবি করছেন জনসংখ্যা সমস্যাকে। উত্তরোত্তর জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় মানুষ নানাভাবে পরিবেশ ধ্বংসের কাজে লিপ্ত। কিন্তু কারণে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় মানুষ সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল প্রকৃতপক্ষে জনসংখ্যা কোন বড় সমস্যা নয়। সমস্যা হল সঠিক পরিকল্পনার অভাব। ইউরোপ আফ্রিকায় কত হাজার হাজার একর জমি পড়ে রয়েছে সেগুলো মানুষ ব্যবহারই করছে না। একটি সহজ ক্যালকুলেশন দেখে বোঝা যায় ফ্রান্সের জনসংখ্যা সম্পর্কে। সমগ্র জনসংখ্যার মধ্যে ছয় বিলিয়ন লোককে ফ্রান্সের ২,১০,০৩৮ বর্গমাইলের মধ্য রাখা যাবে যেখানে প্রতি লোকের জন্য বরাদ্দ থাকবে ৯৭৫ বর্গফুট শূন্য ভূমি। এভাবে সমগ্র পৃথিবীতে মানুষের বসবাসের জন্য ভগবান পর্যাপ্ত পরিমাণে ভূমিও দিয়েছেন।
এবার আসা যাক খাদ্য প্রসঙ্গে, জনসংখ্যা বাড়লে তো খাদ্য ঘাটতি হওয়ার কথা। সেক্ষেত্রে ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার কৃষি বিজ্ঞান বিভাগ এক গবেষনায় তথ্য প্রদান করেছে যে, যদি বিশ্বের কৃষকরা সর্বোত্তম কৃষি পদ্ধতি ব্যবহার করে ১০ গুণ বেশি খাদ্য উৎপাদন সম্ভব হবে। এক্ষেত্রে মানুষ বর্তমানে এ মাংসাহার খাদাভ্যাসে অভ্যস্ত হওয়া সত্ত্বেও মানুষ খাদ্য অভাবে ভুগবে না। যদি লোকেরা শুধুমাত্র নিরামিষ খাবারে অভ্যস্ত হয় তবে পৃথিবীর সমগ্র জনসংখ্যার জন্য ৩০ গুণ বেশি খাদ্য উৎপাদন সম্ভব। তাহলে এই যদি পরিসংখ্যান হয় তবে খাদ্য সমস্যা কোথায়। মানুষেই ধীরে ধীরে আরো মারাত্মক খাদ্য সমস্যা সৃষ্টি করছে। যেভাবে চলছে অনতিবিলম্বেই মানুষ অদূর ভবিষ্যতে ১ মুষ্ঠি খাবারের জন্য প্রবল সংগ্রামে লিপ্ত হতে বাধ্য হবে। ফ্রান্সের বিখ্যাত গবেষক Moor Lappe তার Food First নামক গবেষণামূলক গ্রন্থে তুলে ধরেছেন যে, বিশ্বে যে চাষ উপযোগী জমি রয়েছে সেগুলোর অপব্যবহার হচ্ছে তার ফলে খাদ্য সমস্যা ধীরে ধীরে মারাত্মক রূপ নিচ্ছে।
১৯৭৫ সালের দিকে মরিশাষ দ্বীপ পরিদর্শনের সময় শ্রীল প্রভুপাদ উচ্চ শ্রেণীর লোকদের উদ্দেশ্যে বলেন, “আমি তোমাদের মরিশাস দ্বীপ দেখেছি এখানে শস্য উৎপাদনের জন্য পর্যাপ্ত জমি রয়েছে। কিন্তু তোমরা সেখানে শস্য উৎপাদনের পরিবর্তে রপ্তানির উদ্দেশ্যে আখ উৎপাদন করছ কেন? তোমাদের সর্বপ্রথমে নিজেদের খাদ্য যোগানের জন্য শস্য ফলাতে হবে এবং এর পরে যদি সময় থাকে এবং যদি তোমাদের জনগণ পর্যাপ্ত শস্য পায় তখন তুমি ফল বা শাকসজি ফলানোর চেষ্টা করতে পার।”
এভাবে শ্রীল প্রভুপাদ তুলে ধরেছেন মানুষ তাদের আবাদি জমিতে শস্য উৎপাদনের পরিবর্তে কম গুরুত্বপূর্ণ কিছু খাবার উৎপাদনের উপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে ফলে তাদের খাদ্য সমস্যায় ভুগতে হচ্ছে। কৃষ্ণ সমগ্র সৃষ্টিকে পূর্ণভাবে সৃষ্টি করেছেন। অর্থাৎ এখানে সবকিছুই পূর্ণ।
শ্রীল প্রভুপাদ মরিশাষে তার এক বক্তৃতায় আরো বলেন, “আমি দেখেছি পশ্চিমা দেশগুলোতে মানুষ শস্য উৎপাদন করছে পশুর জন্য এবং পশুরা সেই শস্য খায় এবং সেসব পশুগুলোকে মানুষ খাচ্ছে.. তাতে কি পরিসংখ্যান দাঁড়াচ্ছে? পশুরা শস্য খাবার খাচ্ছে। কিন্তু সেই একই পরিমাণ যদি খাদ্য অনেক অনেক মানুষ খেতে পারে। পরিসংখ্যান বলছে ইউ.এস.এ তে ৯০% শস্য উৎপাদন হয় শুধুমাত্র পশুদের খাওয়ানোর জন্য যেগুলোকে পরে মাংস উৎপাদনের জন্য হত্যা করা হয়। অথচ প্রতি ১৬ পাউন্ড শস্য পশুদের খাওয়ালে তা থেকে মানুষ পায় মাত্র ১ পাউন্ড মাংস। এ ধরনের ঘটনা খুব স্বাভাবিকভাবেই ঘটছে পশ্চিম ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, জাপান সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশগুলোতে।
শ্রীল প্রভুপাদ বলেন, “যদি সারাবিশ্বের জন্য মাত্র একজন সরকার এ বিশ্বকে পরিচালনা করত তবে তিনি পৃথিবীর সব মানুষের মাঝে শস্য সুন্দরভাবে শস্য বিতরণ করা হত। তখন অভাব থাকার কোন প্রশ্নই নেই। কোন প্রয়োজন নেই নিজেদের উদর পূর্তির জন্য কসাইখানা গড়ে তোলার।”
তাই বিশ্বের বর্তমান এ ভয়াবহ পরিস্থিতিতে মানুষকে সচেতন করার জন্য সর্বস্তরের লোককে ভগবান প্রদত্ত বৈদিক নির্দেশনাগুলো তুলে ধরছেন। এ বিষয়ে সারাবিশ্বের অনেক অনেক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে এবং তা বিপুল পরিমাণে মানুষের মাঝে বিতরণও করা হচ্ছে। বিশ্বের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের, সরকারি মহলকেও এ বিষয়ে পরিকল্পনা দিচ্ছে যে কিভাবে বর্তমান ও ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এ সমস্যাগুলো দূর করা যায়। মানুষকে প্রকৃতি নির্ভর করে গড়ে তোলার জন্য ভগবদমুখী হওয়ার বাস্তবিক পরামর্শ দিচ্ছে। এতে জনগণ খুবই উপকৃত হচ্ছে।
ইস্কনের সেরকম একজন নিষ্ঠাবান সেবক হলেন ব্রহ্মপদ দাস। মায়াপুর ডেইরী খামারে রয়েছে ৪০টিরও বেশি গাভী, ষাঁড়, বাছুর, স্থানীয়রা যেটিকে গোশালা বলে ডাকা হয়। ঠিক ভোর ৬টায় (মঙ্গলারতির পরপরই) ব্রহ্মপদ দাস ১৪জন সেবক নিয়ে গোশালাটিকে ধৌত করা, গরুগুলোকে খাওয়ানো এবং দুধ সংগ্রহ করা, চারণভূমিতে নিয়ে যাওয়ার সেবায় নেমে পড়ে। ১৯৭৬ সালে মায়াপুরে যখন তিনি যোগ দেন তখন তার বয়স ছিল মাত্র ২১ বছর। কয়েক বছর পর তাকে গোশালা পরিচর্যার এ দায়িত্বটি দেয়া হয়। তখন থেকে তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে তার বাকি জীবনটি এই সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করবেন।
তার প্রচেষ্ঠায় ৩টি বায়োগ্যাস জেনারেটর আবিষ্কৃত হয় যেটি সম্পূর্ণ পরিচালিত হয় গোবর দিয়ে। এটি যে পরিমাণ গ্যাস সরবরাহ করে তা দিয়ে দিনে তিনবার করে ১১০ জন লোকের জন্য রান্না করা সম্ভব। তার এই আবিস্কারের ফলে সরকারও খুব উৎসুক হয় এ বিষয়টি সম্পর্কে। তার কাছে ছুটে আসে সরকারি লোকেরা এবং এই জেনারেটরগুলো তাদের জন্য তৈরি করতে বলে। যখন বিদ্যুৎ চলে যায় তখন রান্না করার জন্য খুব অসুবিধে হত আর তাই তিনি এ জেনারেটরের উদ্ভাবন করেন। ৩ ভাগ গোবর ও ৫ ভাগ জল মিশিয়ে একটি বিশেষ প্রক্রিয়ায় প্রতি ট্যাংকের মধ্য থেকে উৎপন্ন হয় প্রাকৃতিক গ্যাস।
ব্রহ্মাপদ শুধু এতেই থেমে থাকেনি তিনি এ থেকে আলো ও তাপ সরবরাহের জন্য নানারকম উপায় উদ্ভাবন করেছেন।
পৃথিবীতে যখন গ্যাস নিয়ে এত সমস্যা যুদ্ধ বিগ্রহ হচ্ছে অনতিবিলম্বে মানুষ ব্রহ্মাপদের এ বায়োগ্যাস জেনারেটর ব্যবহারের উপর নির্ভরশীল হলে কিন্তু সে সমস্যা অনেক অংশই লাঘব হয়। ইতোমধ্যে এর ব্যবহার বিস্তৃত হচ্ছে। এভাবে ইস্কন নানামুখি কার্যক্রমের মাধ্যমে সারাবিশ্বের জনগণকে সেবা করে যাচ্ছেন। একজন কিংবা দু’চারজন কিংবা একটি ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য নয় ইসকন বিশ্বের সমগ্র মানুষের সেবার জন্য উৎসর্গীকৃত। আপনি মানব সেবার মত এ মহৎ সেবায় অংশগ্রহনের জন্য ইসকনের সাথে অংশগ্রহণ করতে পারেন। তাতে আপনার ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা একটি বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য উন্নতি বয়ে আনবে। একজন মানুষ হিসেবে অন্য মানুষের সেবা করা একটি নৈতিক দায়িত্ব।
হরে কৃষ্ণ ॥
বিঃ দ্রঃ কিভাবে আপনি ইস্কনের বিভিন্ন মানব সেবা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করবেন তা জানতে আরো বিস্তারিত জানতে নিকটস্থ ইস্কন মন্দিরে যোগাযোগ করতে পারেন।
মাসিক চৈতন্য সন্দেশ , অক্টোবর – ২০১০ ইং