এই পোস্টটি 61 বার দেখা হয়েছে
অনেকেই বলে থাকেন মানব সেবাই হল পরম ধর্ম। যদি তাই হয়ে থাকে তবে প্রশ্ন উঠে তারা কি সত্যিই পূর্ণরূপে মানব সেবা করছে নাকি সেবা করতে গিয়ে যতটুকু না সেবা হয় তার চেয়ে মানুষের দুঃখকে আরও বাড়িয়ে তুলে। কিভাবে? তার কিছু উদাহরণ তুলে ধরা হল। তবে নিম্নের বিষয়বস্তুগুলো তাদের জন্য, যারা মাংসাহারে অভ্যস্ত তাদের উদ্দেশ্যেই-
১) আপনি যদি মাংসাহারে অভ্যস্ত হয়ে থাকেন তবে শুধুমাত্র আপনি দায়ী পৃথিবীর লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনকে বিপন্ন করে তোলার জন্য। কেননা আপনিই তো পৃথিবীর পরিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট করছেন প্রাণী হত্যার মাধ্যমে যার ফলে পৃথিবীতে ক্ষতিকর গ্যাসের আধিক্য বেশি হচ্ছে এবং পৃথিবী হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে।
২) ১ জন মাংসাহারী দৈনিক গড়ে যতটুকু মাংস গ্রহণ করে তা দিয়ে ২০ জন লোক নিরামিষ খাদ্য গ্রহণ করতে পারে। সুতরাং আপনি একজনই ২০ জন লোকের ক্ষুধার কারণ।
৩) পৃথিবীর সমগ্র উৎপাদিত শস্যের প্রায় অর্ধেকই খরচ করা হয় বিভিন্ন প্রাণীদের খাওয়ানোর জন্য এবং পরবর্তীতে মাংসের জন্য সেগুলোকে হত্যা করা হয়। সুতরাং সমীকরণটি দাড়াচ্ছে পরোক্ষভাবে আপনিই দায়ী পৃথিবীর শস্যের অভাব বেড়ে যাওয়ার জন্য আর তার ফলে হাজার হাজার লোক অভুক্ত থাকছে শুধুমাত্র আপনারই জন্য।
অতএব, ভেবে দেখুন আপনি কি সত্যিই মানব সেবা করছেন নাকি মানুষের ক্ষতি করছেন। আপনি হয়ত বলতে পারেন গরীবঃ দুঃস্থদের দান, স্কুল-কলেজ-হাসপাতাল নির্মাণ ইত্যাদি তো মানব সেবাই। হ্যাঁ, মানব সেবা তবে আপনার আরেকটি অভ্যাস মাংসাহারের ফলে আপনি তো হাজার হাজার মানুষকে বিপদে ঠেলে দিচ্ছেন। তাতে কি আপনার মানবসেবা পূর্ণরূপে হচ্ছে। একটু ভেবে দেখুন…..
কিছু বিস্ময়কর তথ্যঃ
১) আমেরিকায় প্রায় ৫০% পানি দূষণ হয় শুধু পশু খামারগুলোর কারণে। [সূত্র: Brown 1990 P-4]
২) পশুখামারগুলোর জন্য আমেরিকা ৫০% বিশুদ্ধ জল প্রতি বছর খরচ করে। [সূত্র : French 1990 P-109] অথচ বিশ্বের অনেক স্থানেই মানুষ বিশুদ্ধ পানীয় জলের অভাবে ভুগছে।
৩) শস্যকে মাংসে রূপান্তরের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ৯০% প্রোটিন, ৯৯% কার্বোহাইড্রেটস এবং ১০০% ডাইটারি ফাইবার হারিয়ে যায়।
8) Physicians committee for Responsible Medicine (USA) এর প্রেসিডেন্ট নীল ড. বার্নাড বলেন, “যদি আপনি একজন মাংসাহারী হউন আপনি পরিবেশ ধ্বংসের ক্ষেত্রে সাহায্য করছেন এবং সেটি আপনি বুঝতে পারুন বা নাই পারুন আপনি কিন্তু তাই করছেন।” [সূত্র : greenpeace 1990]
৫) অনেক পূর্বে Jermy Rifuin এর অধিক প্রচারিত গ্রন্থ Beyond Beef এ তিনি সবাইকে সতর্ক করেন যে, “প্রতি পাউন্ড মাংস উৎপাদন করতে গিয়ে বন পোড়ানো, নদী শুকিয়ে যাওয়া, মিলিয়ন টন কার্বন-ডাই অক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইড এবং মিথেন ইত্যাদি আকাশে মিশে।” [সূত্র caplanetal. 1990, P. 240] :
এই অবস্থায় একদিকে যখন বিশ্বে ধ্বংসযজ্ঞ চলছে এবং মানুষের অস্থিত্ব যখন হুমকির সম্মুখীন তখন অপরদিকে ইস্কন মানবতার সেবায় সমগ্র মানব জাতিকে রক্ষার জন্য কাজ করে চলছে। ISCOWP এই বিভাগটি সারাবিশ্বে কাজ করে চলছে গাভীদের রক্ষণাবেক্ষণের উপর সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে ও তাদের গুরুত্ব সম্পর্কে তুলে ধরতে।
আইরেন (ছায়া দাসী) এবং তার স্বামী উইলিয়াম তোব (বলভদ্র দাস) শুধুমাত্র দুটি ষাঁড়ের গাড়ীতে চড়ে পুরো আমেরিকায় উপকূল থেকে উপকূলে ছুটে চলছেন গাভী এবং ষাঁড়ের গুরুত্ব এবং তার পরিবেশগত ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব সম্পর্কে মানুষের কাছে প্রচারের জন্য।
তারা দু’জনই আমেরিকাতে International Society for Cow Protection (ISCOWP) প্রতিষ্ঠা করেন। এর সঙ্গে সারাবিশ্বের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেমন Beyond Beef of Washington D.C, The Bhareatiya Cathe resoucr Development Foundation (New Delhi, Dindia), Tillens International, American vedic Asociation সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কাজ করে চলেছেন।
১৯৯১ সালে এই দম্পতি উত্তর ক্যারোলিনাতে, ইফল্যান্ডের নিকটে ৩.৫ একর এলাকা জুড়ে একটি ফার্ম গড়ে তোলেন। যেখানে ষাঁড়ের শক্তিকে কিভাবে কাজে লাগানো যায় সে বিষয়ের উপর সবাইকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। যেখানে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরাও তাদের জীবনের শুরু থেকে এ বিষয়ের উপর প্রশিক্ষণ নিতে পারে। শুধুমাত্র শব্দের সাহায্যে কিভাবে ফার্মের শত শত গাভী বা ষাঁড়কে নিয়ন্ত্রণ করা যায় তার একটি, সুন্দর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
এভাবে ISCOWP সারাবিশ্বে কাজ করে চলেছে গো-হত্যা বন্ধের জন্য এবং সবাইকে নিরামিষ গ্রহণের প্রতি উদ্বুদ্ধ করার জন্য। বর্তমানে ISCOWP আরো বিস্তৃতভাবে প্রচার করে চলেছে, বৃদ্ধি পেয়েছে এর প্রসারও। মানবতার জন্য অনন্য এক সেবায় ISCOWP তথা ইস্কন অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। এ অগ্রণী সেবায় ইস্কনের সাথে একাত্ম হয়ে আপনিও অংশগ্রহণ করতে পারেন। কেননা একজন মানুষ হিসেবে অন্য মানুষের সেবা করা আপনার একটি নৈতিক দায়িত্ব।
হরে কৃষ্ণ।
মাসিক চৈতন্য সন্দেশ , নভেম্বর – ২০১০ ইং