এই পোস্টটি 37 বার দেখা হয়েছে
বিশ্ব সেবায় ইসকন (পার্ট-১)
সমগ্র বিশ্ব এখন এক বিরাট হুমকির সম্মুখীন। কেননা পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য যে সমস্ত প্রাকৃতিক সম্পদ বা উপাদান মানব জাতিকে সহায়তা প্রদান করে সেগুলোকে টিকিয়ে রাখাটাই বর্তমানে এক বিরাট চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর প্রকৃতির বর্তমান এই অসহায় অবস্থার জন্য দায়ী একমাত্র মানুষই। তারাই দিনের পর দিন এই গ্রহকে বসবাসের অযোগ্য করে তুলছে । সারাবিশ্বে বর্তমানে কিভাবে প্রকৃতিকে মানুষ বিপর্যস্ত করে তুলছে তার কিছু পরিসংখ্যান নিম্নে দেয়া হল।
পানি দূষণ : ১৯৭৯ সালে মেক্সিকোর উপসাগরে এক দূর্ঘটনায় ১৪০ মিলিয়ন গ্যালন তেল নিঃসৃত হয়। যা উপসাগরের প্রায় ১০ ভাগই ছেয়ে যায়। বিভিন্ন দুর্ঘটনার কবলে পড়ে গড়ে প্রতি বছর তেলবাহী জাহাজের মাধ্যমে ১২০ মিলিয়ন সাগর বা মহাসাগরে নিঃসৃত হয়।
গ্যালন তেল সারাবিশ্বের প্রায় ১.৭৫ মিলিয়ন লোক শুধুমাত্র বিভিন্নভাবে পানি দূষণের ফলে দূষিত বা অপরিশোধিত পানি পেয়ে থাকে। সূত্রঃ Herman 1990 P.-13, Caplan et al. 1990-P.-98
বায়ু দূষণ : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং জাতিসংঘের পরিবেশক অনুষ্ঠানে দেখানো হয় যে, বিশ্বে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ নগর জনগোষ্ঠি দূষিত বায়ুতে বসবাস করে। (তথ্যসূত্র-French-1990, P.-109)
ওয়ার্ল্ড ওয়াচ ইনস্টিটিউটের লেস্টার ব্রাউনের বিবৃতি-“কেউ যদি ভারতের মুম্বাইয়ে বসবাস করে তবে সে যে পরিমাণ বায়ু প্রতিদিন গ্রহন করে তা দিনে দশটি সিগারেটের ধোঁয়ার সম ক্ষতিকারক। কেননা সেখানকার বায়ু এতটা দূষিত। (তথ্যসূত্রঃ hinrichsen, 1988, P.-69)
এথেন্সে দূষণমুক্ত দিনের তুলনায় দূষণযুক্ত দিনগুলোতে মৃত্যুর হার ৬ গুণ বেশি। বায়ু দূষণ এবং এর ফলশ্রুতিতে এসিড বৃষ্টির কারণে গ্রীসের বিভিন্ন শহরে গত ২৫ বছরে যতগুলো ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন ক্ষতি হয়েছে তা এরও পূর্বে ২,৫০০ বছরেও হয়নি।
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন: স্বাভাবিক পরিমাণে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের তুলনায় প্রতি বছর ৭৫% কার্বন-ডাই-অক্সাইড সৃষ্টি হয় ফ্যাক্টরী এবং মোটর যানগুলো থেকে। ২০% সৃষ্টি হয় বনাঞ্চল পুড়িয়ে । জাতিসংঘের ঘোষণামতে বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে, সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা পরবর্তী শতাব্দিতে ২ মিটার বৃদ্ধি পাবে। যদি সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা ১ মিটারও বেড়ে যায় তবে ৫০ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার নিম্নভূমি সমুদ্রে তলিয়ে যাবে যেখানে বসবাস করছে ১ বিলিয়ন লোক এবং বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ শষ্যভূমি যেখানে চাষ করা হয়।
এভাবে জমিতে মানুষের জন্য ক্ষতিকারক সার ব্যবহারের ফলে নতুন প্রজন্মদের ৪ গুণ ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়েছে। অপরদিকে যন্ত্রপাতির ব্যবহারে চাষাবাদের কারণে ২০৫০ সালের মধ্যে কৃষিভূমির উপরি স্তরের মাটির এক চতুর্থাংশ হারিয়ে যাবে। এমনকি রেইন ফরেস্ট ধ্বংস করা হয় প্রতি বছর ৪৫,০০০ বর্গমাইল। এভাবে চলতে থাকলে আগামী আশি বছরের মধ্যে রেইন ফরেস্ট সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। বন্য প্রাণীদের বিলুপ্তি ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। ১৯৮০ সালে আফ্রিকায় হাতির সংখ্যা ১.৫ মিলিয়ন থেকে ৬০,০০০ এ নেমে এসেছে। ২০১০ সালে এই অবস্থায় আর কতটুকু নেমেছে সেই তথ্য অজানা থাকলেও বিশ্ব যে প্রাণীদের হত্যার মাধ্যমে যে পরিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট করছে তার জন্য দায়ী এই মানব সভ্যতাই।
অতএব বছরের পর বছর অনেক পরিবেশ সম্মেলন হলেও আশু ব্যবস্থা নিতে আরও দেরী হলে এই পৃথিবীই বসবাসের অনুপযুক্ত হতে আর বেশি দেরী নেই। কিন্তু এ সমস্যাটি আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ ইস্কন অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে নিয়েছে। এ সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা ও আচার্য্য অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ এ সমস্যা সম্পর্কে পূর্বেই অবগত হয়ে সারাবিশ্বে তার শিষ্যদেরকে এমন কিছু প্রকল্প গড়ে তোলার জন্য নির্দেশ দেন, যা সম্পূর্ণভাবে ভগবান কর্তৃক প্রদত্ত বৈদিক নির্দেশনাসমূহ অনুসরণ করবে। সেরকম একটি ফার্ম কমিউনিটি হল নবগোকুল ফার্ম। যেটি ব্রাজিলে ১৯৭৯ সালে স্থাপিত হয়। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ২১,০০০ ফুট উঁচু সাও পাওলোর উত্তর-পূর্ব দিকে ১১৪ মাইল এলাকা জুড়ে বসবাস করে প্রায় ১৪০টি পরিবার। যেটি একটি ঘন বনাঞ্চলের মধ্যে অবস্থিত। “সরল জীবন উচ্চ চিন্তা” এ দর্শনের উপর উৎসাহিত হয়ে সেখানকার মেয়র পর্যন্ত অনেক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। এ ফার্ম কমিউনিটির পদ্ধতিটি হচ্ছে এটি স্ব- নির্ভর অর্থনৈতিক ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত এবং একই সাথে পারমার্থিক চেতনারও উন্নয়ন ঘটবে। বিশ্ব যেখানে বনাঞ্চল ধ্বংস, পানি দূষণ, বায়ু দূষণ, ভূমি ক্ষয়, পুষ্টিহীন শাক- সবজি উৎপাদনের মাধ্যমে সারাবিশ্বের পরিবেশকে একটি বিরাট ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় ঠেলে দিচ্ছে সেখানে এ বৈদিক নগরী সম্পূর্ণ এর বিপরীত। গো-সংরক্ষণ এবং ষাঁড় পালনের মাধ্যমে এই শক্তিকে ব্যবহার করে অর্থনৈতিক সমস্যা অনায়াসে সমাধান হয়। জমিতে চাষ ও দুগ্ধ জাতীয় পণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে বছরের পর বছর বাইরের কারও সহায়তা – ছাড়াই স্ব-নির্ভর জীবন-যাপন করে। এ নব গোকুল এর পরিচালক গুরু দাস সেখানে • একটি পরিকল্পনা বোর্ড স্থাপন করেন। তাদের বিভিন্ন পরিকল্পনা বৈদিক আদর্শ অনুসারে তারা এই সবুজ ও সুস্থ নগরী গড়ে তোলে। বাসিন্দারা (ভক্তবৃন্দ) নিজেদের কাপড় চোপড়, জুতা, কাগজ, জ্বালানি এবং প্রদীপের জন্য তৈল ইত্যাদি নিজেরাই উৎপাদন করে। কোন রাসায়নিক কারখানা নেই, নেই কোন মোটরবাহী যান। সম্পূর্ণ প্রকৃতির উপর নির্ভর করে তারা জীবন-যাপন করে। গরুর গাড়ীর মাধ্যমে যোগাযাগ ব্যবস্থা সম্পন্ন হয়।
১৯৮৫ সালে নবম বার্ষিক বিকল্প সম্প্রদায়ে সম্মেলনে ৪২টি সংস্থা থেকে প্রায় ৩,০০০ পরিদর্শক এ বৈদিক গ্রাম বা নগরী পরিদর্শন কর। সম্পূর্ণ পরিবেশ বান্ধব এই প্রকল্প সরকার সহ সমস্ত সুশীল সমাজকে আকর্ষন করছে। সারা বিশ্বে এখন এ ধরনের উদ্যোগ গড়ে উঠেছে এবং তা খুবই প্রশংসিত হচ্ছে। বিশ্বকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য সারা বিশ্বে যত দ্রুত সম্ভব এ ধরনের প্রকল্প ছড়িয়ে দেওয়া উচিত। বিশ্ব সেবায় ইস্কনের এ ভূমিকায় সহায়তার জন্য সবারই এগিয়ে আসা অতীব জরুরী।
হরে কৃষ্ণ।
মাসিক চৈতন্য সন্দেশ , আগস্ট – ২০১০ ইং
পর্ব – ০২ এর লিংকঃ