বিশ্বব্রহ্মাণ্ডটি একটি স্বপ্ন

প্রকাশ: ২০ এপ্রিল ২০২১ | ৬:২৩ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০২১ | ৬:২৩ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 291 বার দেখা হয়েছে

বিশ্বব্রহ্মাণ্ডটি একটি স্বপ্ন

কৃষ্ণকৃপাশ্রীমূর্তি শ্রীল অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ

আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের প্রতিষ্ঠাতা-আচার্য কৃষ্ণকৃপাশ্রীমূর্তি শ্রীল অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ এবং একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রের মধ্যে এই কথোপকথনটি হয়েছিল ১৯৭৪ এর জানুয়ারিতে লস্ এঞ্জেলেসে ।

ছাত্র : আপনার গ্রন্থগুলোর মধ্যে আপনি বলেছেন যে, এই জগৎটি একটি স্বপ্নের মতো।

শ্রীল প্রভুপাদ : হ্যাঁ। এটা একটি স্বপ্নের মতো।

ছাত্র : কীভাবে এটা একটি স্বপ্ন?

শ্রীল প্রভুপাদ : উদাহরণস্বরূপ, গত রাতে তুমি কিছু স্বপ্ন দেখেছিলে, কিন্তু এখন এর কোনো মূল্য নেই। তা শেষ হয়ে গেছে। পুনরায়, আজ রাতে যখন তুমি ঘুমোবে, তখন তুমি ভুলে যাবে এ সব জিনিস। তুমি স্মরণ করতে পারবে না, যখন তুমি আজ রাতে স্বপ্ন দেখবে, “আমি আমার বাড়ি লাভ করেছি; আমি স্ত্রী লাভ করেছি।” তুমি এ সব কিছুই ভুলে যাবে। তাই এসকল হচ্ছে একটি স্বপ্ন।

ছাত্র : এটা কি সত্যি, অথবা সত্যি নয়?

শ্রীল প্রভুপাদ : এটা সত্যি হতে পারে কীভাবে? রাতে তুমি সব ভুলে গেছ। তুমি কি মনে করতে পারছ যখন তুমি ঘুমোচ্ছ তখন স্ত্রী তোমার সঙ্গে আছে এবং তুমি শয্যায় ঘুমোচ্ছ? যখন তুমি কোথাও তিন হাজার মাইল দূরে চলে গেছ এবং কিছু জিনিস দেখতে পাচ্ছ যেগুলো তোমার স্বপ্ন দেখা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন, তখন তুমি কি মনে করতে তুমি একটি স্থান পেয়েছ তার মধ্যে বসবাস করবার জন্য?

ছাত্রঃ না।

শ্রীল প্রভুপাদ : সুতরাং এটা হচ্ছে একটি স্বপ্ন। আজ রাতে, যা তুমি দেখছ এখন তা একটি স্বপ্নে পর্যবসিত হবে, ঠিক যেমন যা তুমি গত রাত্রে দেখেছিলে এখন তুমি জান যে তা ছিল কেবল একটি স্বপ্নমাত্র। সুতরাং উভয়ই হচ্ছে স্বপ্ন। তুমি শুধুমাত্র একজন দর্শক, সেটুকু পর্যন্তই। তুমি এই স্বপ্ন এবং ঐ স্বপ্ন দেখছ। তুমি, আত্মা, হচ্ছে বাস্তব। কিন্তু তোমার জড় শরীর এবং তোমার জড় জাগতিক বেষ্টনী বা পারিপার্শ্বিক অবস্থা যা তুমি দেখছ এটাও হচ্ছে একটি স্বপ্ন।

ছাত্র : কিন্তু আমার বিশ্বাস আছে যে, এই অভিজ্ঞতা হচ্ছে সত্যি এবং আমার স্বপ্ন সত্যি নয়। পার্থক্যটি কি?

শ্রীল প্রভুপাদ : না। এই অভিজ্ঞতা হচ্ছে সব অসত্য। এটা সত্যি হতে পারে কীভাবে? এটা যদি সত্য হতো রাতে তা তুমি ভুলে গেলে কী করে? রাতে তুমি এ সব মনে করতে পার?

ছাত্র : না। আমি মনে করতে পারি না।

শ্রীল প্রভুপাদ : তবে কীভাবে তা সত্যি হতে পারে? ঠিক যেমন তুমি মনে করতে পারছ না গত রাত্রে তোমার স্বপ্নের কথা এবং তাই তুমি এটাকে বলছ একটি “স্বপ্ন”, অনুরূপভাবে, এই অভিজ্ঞতা যেহেতু তুমি তা রাতে ভুলে যাও-এটাও হচ্ছে একটা স্বপ্ন…..

ছাত্র : কিন্তু তাতে আমার কি?

শ্রীল প্রভুপাদ : এটা হচ্ছে একটি দিবাস্বপ্ন; আর ওটা হচ্ছে একটি রাতের স্বপ্ন। ঐ পর্যন্তই। তুমি যখন রাতে স্বপ্ন দেখ, তখন তুমি উপলব্ধি কর যে তা সত্যি। হ্যাঁ। তুমি মনে কর সেটা হচ্ছে সত্যি। এটা হচ্ছে একটি স্বপ্ন, কিন্তু তুমি কান্নাকাটি করছ, “একটি বাঘ! বাঘ। বাঘ! বাঘটি কোথায়? কিন্তু স্বপ্নে এটাকে অবিকল দেখছ-একটি বাঘ। “আমি একটি বাঘ দ্বারা নিহত হচ্ছি।” কিন্তু বাঘটি কোথায়? অথবা তুমি স্বপ্ন দেখছ যে, তুমি কোনো একটি সুন্দরী বালিকাকে আলিঙ্গন করছ। তাহলে সেই সুন্দরী বালিকাটি কোথায়? কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা ঘটছে।

ছাত্র : এটা ঘটছে?

শ্রীল প্রভুপাদ : এক অর্থে এটা ঘটছে, কারণ তখন বীর্যপাত হয়। নৈশ নির্গমন ঐ বালিকাটি কোথায়? এটা কী একটা স্বপ্ন নয়? অনুরূপভাবে, এই তথাকথিত বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতাও হচ্ছে একটি স্বপ্ন তুমি তাকে বাস্তব বলে বিশ্বাস করছ, কিন্তু এটাও হচ্ছে একটি স্বপ্ন। আর একে বলা হয় ‘মায়া-সুখ’। তোমার রাত্রিকালীন সুখ এবং তোমার দিবাকালীন সুখ হচ্ছে একটি জিনিস রাতে স্বপ্ন দেখছ যেন তুমি একটি সুন্দরী বালিকাকে আলিঙ্গন করছ, অথচ সে রকম কিছু নেই। অনুরূপভাবে দিনের বেলায় যা কিছু “উন্নতি” তুমি করছ-এগুলিও ঠিক ঐ রকমই। ‘মায়াসুখায়’ তুমি স্বপ্ন দেখছ, ” “এই পন্থা আমাকে সুখী করবে,” অথবা ঐ পন্থা আমাকে সুখী করবে,” “কিন্তু সব পন্থাই হচ্ছে কেবলমাত্র একটি স্বপ্ন তুমি এই দিবাস্বপ্নকে সত্য বলে গ্রহণ করছ কারণ এর স্থিতিকাল হচ্ছে লম্বা। রাতে যখন তুমি স্বপ্ন দেখ, তার স্থিতিকাল হচ্ছে মাত্র ঠিক আধঘন্টার মতন। কিন্তু এই দিবাস্বপ্ন স্থায়ী হয় বারো ঘন্টা অথবা কিছু বেশি। সেটুকুই হচ্ছে পার্থক্য। এটা হচ্ছে বারো ঘন্টার স্বপ্ন এবং ওটা হচ্ছে আধঘন্টার স্বপ্ন—কিন্তু প্রকৃতপক্ষে উভয়ই হচ্ছে স্বপ্ন। যেহেতু একটি হচ্ছে বারো ঘন্টার স্বপ্ন তাকে তুমি সত্য বলে গ্রহণ করছ। সেটাকেই বলা হয় মায়া।

ছাত্র : মায়া!

শ্রীল প্রভুপাদ : হ্যাঁ… তুমি পার্থক্য নির্ণয় করতে চাইছ একটি পশু এবং তোমার মধ্যে, কিন্তু তুমি ভুলে যাচ্ছ যে, যেমন একটি পশু মরবে, তেমনি তুমিও মরবে। সুতরাং তোমার প্রগতি কোথায়? তুমি কী চিরকাল থাকবে? তুমিও মরবে। সুতরাং একটি পশুর ঊর্ধ্বে তোমার প্রগতি কোথায়? সেটাই বৈদিক সাহিত্যে বর্ণনা করা হয়েছে। আহারনিদ্রাভয়মৈথূনং চ। সমানং এতৎ পশুভির্নরাণাম্ – এই ক্রিয়াকলাপ-আহার, নিদ্রা যৌনজীবন এবং প্রতিরক্ষা এগুলো পশুদেরও কাজ এবং তুমিও সেই একই কাজ করছ। সুতরাং একটি পশু থেকে তুমি আলাদা কোথায়? তুমি মরবে; পশুটিও মরবে। কিন্তু যদি তুমি বলো, “আমি একশত বছর পরে মরব, কিন্তু এই পিঁপড়াটি একঘন্টা পরে মরবে, সেটার অর্থ এই নয় যে, তুমি হচ্ছ বাস্তব। এটা হচ্ছে সময়ের প্রশ্ন। যেমন বিশাল ব্রহ্মাণ্ড-একদিন ধ্বংস হবে। যেমন একদিন তোমার দেহও ধ্বংস হবে এবং এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডটাও ধ্বংস হবে। পূর্ণধ্বংস। প্রলয়। প্রকৃতির নিয়মে সমগ্র জিনিসের অবসান হবে। সুতরাং, এটাও হচ্ছে একটি স্বপ্ন। এটা হচ্ছে দীর্ঘস্থায়ী স্বপ্ন, এ পর্যন্তই। অন্য কিছু নয়। কিন্তু মানবদেহ লাভ করার বিশেষ সুবিধা হচ্ছে যে, এই স্বপ্নের মধ্যেও, তুমি উপলব্ধি করতে পার বাস্তব-ভগবানকে। সেটাই হচ্ছে বিশেষ সুবিধা। সুতরাং তুমি যদি এই স্বপ্নের বিশেষ সুযোগটি গ্রহণ না কর, তাহলে তুমি সব কিছুকে হারাচ্ছ।

ছাত্র : সুতরাং আমি কী অর্ধনিদ্রিত?

শ্রীল প্রভুপাদ : হ্যাঁ। এটাই হচ্ছে অবস্থা। বৈদিক সাহিত্য বলছে, উত্তিষ্ঠ-“জাগো! জাগো! জাগো!” জাগ্রত-“জেগে উঠো।” প্রাপ্য বরান্ নিবোধত-“এখন তুমি সুযোগ পেয়েছ, তার সদ্ব্যবহার কর।” তমসো মা জ্যোতির্গময় – অন্ধকারে থেকো না, আলোর দিকে এগিয়ে এসো।” এগুলো হচ্ছে বৈদিক নির্দেশ এবং আমরা সেই একই জিনিস শিক্ষা দান করছি। “বাস্তব হচ্ছে এখানে-কৃষ্ণ। তুমি অন্ধকার স্থানে থেকো না। উচ্চ-চেতনার দিকে এগিয়ে এসো। 


 

ত্রৈমাসিক ব্যাক টু গডহেড, এপ্রিল -জুন ২০১৪

সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।