এই পোস্টটি 176 বার দেখা হয়েছে
শাঁখা ও সিঁদুর সতীত্বের প্রতীক। কারও হাতে শাঁখা ও কপালে সিঁদূর দেখে এইটি নিরূপণ করা হয় যে, এই মেয়েটির একজন পতি রয়েছে। এই সংসারে এটি সাধারণ কথা। পুরাকাল থেকে শঙ্খ, যা একটি অস্থি হলেও পবিত্র এবং সিঁদুর যা একটি ভেষজ রঞ্জক পদার্থ সতী নারীর ভূষণ রূপে চিহ্নিত হয়ে আসছে। শাঁখা ও সিঁদূর অঙ্গীকার করে একজন নারীর মনোভাব এইভাবে গড়ে ওঠে যে, আমি বিশেষ রূপে পতির সহধর্মিনী হওয়ার দায়িত্ব বহন করতে এসেছি, পতির সংসারে সবার প্রতি প্রীতি, সৌহার্দ্য, সহমর্মিতা ও কর্তব্য পালন বজায় রেখে আমাকে চলতে হবে। এক সময় সীতাদেবীকে সিঁদুর পরতে দেখে ভক্ত হনুমান প্রশ্ন করেন, মাতা, সিঁদূর কেন পরতে হয়? উত্তরে সীতাদেবী বলেন, পতির মঙ্গলের জন্য। হনুমান বুঝলেন আমার প্রভু শ্রীরামচন্দ্রের যাতে অমঙ্গল না হয়, সেজন্য সিঁদূর পরা হচ্ছে। তাই এক সময় কৌটো থেকে সব সিঁদূর নিয়ে হনুমান নিজের মাথা লাল করে ফেলল। সীতাদেবী জিজ্ঞেস করলেন, হনুমান তুমি কেন এভাবে সারা মুখ ও মাথা লাল করেছ? হনুমান উত্তর দেন, একটুখানি ছোট্ট করে সিঁদুর পরলে যদি প্রভুর মঙ্গল হয়, তবে আমি অনেক বেশি সিঁদুর পরেছি, অতএব প্রভুর অনেক বেশি মঙ্গল হবে। তখন সীতাদেবী হাসতে থাকেন। হনুমান বুঝলেন এভাবে সিঁদুর মেখে ফেলার প্রয়োজন নেই, সিঁদুর সতী নারীদের ভূষণ। বিয়ের পর ছেলেদের এভাবে কোন চিহ্ন ধারণ করতে হয় না। মোটামুটি শাখা-সিঁদুর পরা সহধর্মিনী সঙ্গে থাকলেই বোঝা যায় যে, ছেলেটি বিবাহিত। তাকে আলাদা করে কোনও প্রতীক গ্রহণ করতে হয় না। যেমন: পৈতাধারী ব্রাহ্মণের পত্নীকে পৈতা ধারণ করতে হয় না, ব্রাহ্মণী বলেই পরিচিত হয়ে থাকে। শ্রীমদ্ভাগবতের শিক্ষা হচ্ছে, পতি একজন পত্নীর পাণি-গ্রহণ করেছেন। মানেই পত্নীকে ভক্তিমার্গে স্থির করিয়ে দুঃখময় সংসার থেকে উদ্ধার করবার দায়িত্বও নিয়েছেন। অন্যথায়, তিনি পতি হওয়ার কিংবা বিবাহিত হওয়ার সুফল থেকে ভ্রষ্ট ও অধঃপতিত জীব রূপে গণ্য। আবার, পতিকে সাধনভজন পথে সহযোগিতা করবার দায়িত্বও পত্নীর। অন্যথায়, তিনি পত্নীই নন পেত্নী।
চৈতন্য সন্দেশ জানুয়ারি-২০২৩ প্রকাশিত