এই পোস্টটি 311 বার দেখা হয়েছে
![বিদ্যার্থীদের সফলতার জন্য পাঁচটি উপদেশ](http://csbtg.org/wp-content/uploads/2021/10/The-Thirsty-Crow-Kids-Story.jpg)
গৌরগোপাল দাস
কাক চেষ্টা বকোধ্যানম্ সোয়াননিদ্রা তথৈবচ।
অল্পাহারি গৃহত্যাগি বিদ্যার্থী পঞ্চলক্ষনম্ ৷।
বিদ্যার্থীদের পাচঁটি লক্ষন হল কাক চেষ্টা, বকোধ্যানম, সোয়ানিদ্রা, অল্পাহারি এবং গৃহত্যাগী। যা একজন বিদ্যার্থীকে জীবনে সফল হতে সহায়তা করে।
১) কাকচেষ্টা: একদা একটি কাক তৃষ্ণার্ত হয়ে গহীন অরণ্যের পথে পথে ঘুরে বেড়ায় একটু জল পান করে তৃষ্ণা নিবারনের জন্য অবশেষে কাক একটি মাটির কলস দেখতে পায় কিন্তু সেখানে খুবই অল্প জল ছিল যা কাকের পক্ষে কোনভাবেই পান করা সম্ভব হচ্ছিল না। তখন সে বুদ্ধি করে কলসের মধ্যে পাথর ফেলতে থাকে এবং জল উপরে ওঠতে থাকে, সে জল পানের সুযোগ পায়। কাকের এই চেষ্টা থেকে আমরা শিক্ষা লাভ করতে পারি। সাফল্য অর্জন করতে হলে কষ্টের বিকল্প নেই এবং প্রতিকূল পরিস্থিতি সহ্য করার ক্ষমতা আমাদের থাকতে হবে। শুধুমাত্র ডিকশনারীতে ‘w’ (Work hard) এর পূর্বে ‘s’ (success) আসে কিন্তু বাস্তবিক জীবনে তা অসম্ভব। তাই সফলতা লাভ করতে হলে আমাদেরও কাকের মত প্রচেষ্টা দরকার ।
২) বকোধ্যানম্: এই শব্দটি দ্বারা এখানে লক্ষ্য নির্ধারণ এবং তা লাভ করার প্রয়াসী হওয়াকে বুঝানো হচ্ছে। বক পাখি মাছ শিকার করার সময় এক পায়ে দাঁড়িয়ে পানিতে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। অনেক ছোট মাছ নদীতে ঘুরে বেড়ায় বক পাখি সেদিকে দৃষ্টিও দেয়না বরং, তার লক্ষ্য বড় মাছ শিকার করা। সে যদি ছোট মাছ শিকার করতে চায় তাহলে বড় মাছ হারাবে। তদ্রুপ আমরা যদি ছোটখাট ঝগড়া, শারীরিক সমস্যা, আর্থিক সমস্যা এসব নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ি তাহলে জীবনের চরম উদ্দেশ্য ভগবদ্ভক্তি সাধিত হবে না।
৩) সোয়াননিদ্রা: ‘সোয়াননিদ্রা’ শব্দের অর্থ ‘কুকুরের নিদ্রা’ । যদিও কুকুর চোখ বন্ধ করে নিদ্রা যায় তবুও সে সতর্ক থাকে। তার পাশ দিয়ে কেউ নিরবে হেঁটে গেলেও সে বুঝতে পারে এবং চোখ মেলে তাকায় তদ্রুপ আমাদেরও পারপার্শ্বিক অবস্থা সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে যেন চারপাশের কোন বিষয় আমাদের অভিষ্ট লক্ষ্য পুরণে বাধা হতে না পারে।
৪) অল্পাহারি: আক্ষরিক অর্থে, অল্পাহারি বলতে বুঝায় একজন বিদ্যার্থীকে পরিমিত আহার করা উচিত। এখানে ‘অল্পাহার’ এ অর্থে ব্যবহৃত হয়নি। আমরা অনেক ধরনের আহার করে থাকি। আমরা জিহ্বার মাধ্যমে যেসব খাদ্য গ্রহণ করি, তা আহার। আবার শ্রবণের জন্য শব্দ ও ছন্দ গ্রহণ, এটাও আহার। তবে তা কানের। আবার চোখের আহার হলো সৌন্দর্য দর্শন করা ও লোকজনকে দেখা। সুতরাং আমাদের প্রত্যেকটি ইন্দ্রিয়ের জন্য আহারের প্রয়োজন। উপরোক্ত ‘অল্পাহারি’ শব্দটি নির্দেশ করে যে, একজন বিদ্যার্থী হিসেবে আমাদের ইন্দ্রিয়ের বিভিন্ন বিষয় গ্রহণের সময় খুবই সতর্ক থাকা উচিত। কেননা আহার হিসেবে আমরা আমাদের ইন্দ্রিয়সমূহকে যা যা দিচ্ছি তা আমাদের মন ও আত্মার উপর এক দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে। সংস্কৃত ভাষায় একেই বলে সংস্কার। আমরা ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে অনেক ধরণের আহার গ্রহণ করে থাকি। এসব আহার আমাদের মন ও চেতনার উপর স্থায়ী দাগ কাটে। মন ও চেতনা হতে এগুলো মুছে ফেলা মাঝে মাঝে দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। আমরা যখনই ‘অল্পাহারি’ নিয়ে কথা বলি, তখন আমাদের উচিত ঐ সমস্ত ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য আহারগুলো নির্বাচনের ক্ষেত্রে খুব সতর্ক থাকা উচিত। এগুলো মনের মূল্যবান স্থান দখল করে নেয়। আমাদের সতর্ক থাকা উচিত যাতে আমাদের চারপাশে থাকা ঐ সমস্ত অপ্রত্যাশিত, অপ্রয়োজনীয়, কম গুরুত্বপূর্ণ ও স্বল্প প্রাধান্য বস্তুগুলো হৃদয়ে স্থান না পায়। আমাদের হৃদয়ে থাকা বহুমূল্যবান স্থান কেবল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বস্তুরসমূহের জন্য সংরক্ষিত ।
৫) গৃহত্যাগী: গৃহত্যাগী বলতে গৃহত্যাগ করা নয় বরং সুবিধাজনক স্থান হতে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে আসাকে বুঝাচ্ছে। No pains, no gains পড়া লেখা করার জন্য সুদূরে চীনে ও যেতে হয়। এই পাঁচটি লক্ষণ একজন বিদ্যার্থীকে সফলতার চরম শিখরে পৌঁছাতে সাহায্য করে। হরে কৃষ্ণ
মাসিক চৈতন্য সন্দেশ জুন ২০১৮ খ্রিস্টাব্দ