এই পোস্টটি 126 বার দেখা হয়েছে
![বিজ্ঞানীরা কোন জাগতিক সৃষ্টির প্রথম স্রষ্টা নন (শেষ পর্ব)](http://csbtg.org/wp-content/uploads/2022/08/g1agfm1o_space-generic-satellite-generic-earth-from-space-generic-pixabay_625x300_11_September_20.jpg)
আমরা যদি আনবিক স্তর থেকে ভগবানের সৃষ্টিকে পর্যবেক্ষণ করি তাতেও বিস্ময়াবিষ্ট হব। বিজ্ঞানীরা ফুলের রঙের ভিন্নতার কারণ স্বরূপ কিছু যৌগই খুজে পেয়েছেন যেগুলোকে বলা হয় এন্তোসায়ানিস এবং ফুলের সৌরভে ভিন্নতার জন্য তারপিন ও তারপিনয়েট যৌগকে দায়ী করেছেন । এসকল যৌগ বস্তুতে অত্যন্ত সরল অথবা জঠিলভাবে সজ্জ্বিত থাকে। যেমন লেবুর বৈশিষ্ট্যের জন্য দায়ী লেমেনিউ নামক তারপিনটি একটি সরল যৌগ আবার গাজর কিংবা টমেটোর রঙের জন্য দায়ী কেরোটেনোডিস নামক জঠিল যৌগ। এ ধরণের তারপিন সমূহের দ্বারা গঠিত যৌগগুলোর কাঠামো গঠন অত্যন্ত বিস্ময়কর ও অনুপম কেননা ঐ কাঠামোর মৌলের সামান্য পরিবর্তন অথবা স্লাইডের পরিবর্তন ফুলের মিষ্টি সৌরভকে করে দিতে পারে তিঙ্গ ও দূর্গন্ধময় এবং সুমিষ্ট ফলকে করে দিতে পারে তেঁতো কিংবা আহারের অনুপযোগী। পরমানুসমুহের ক্যালাসন অংশটিও অত্যন্ত অনুপম যেমন হিরা ও গ্রাফাইটের একই পরিমান কার্বন মৌল থাকা স্বত্ত্বেও হিরা উজ্জ্বল, সচ্ছ, শক্ত এবং গ্রাফাইট কালো অসচ্ছ পিচ্ছিল পর ইহার কারণ মৌল সমূহের ক্যালাসন কাঠামোর ভিন্নতা। হিরার ক্যালাসনের আড়াআড়ি গঠনে প্রত্যেক কার্বন মৌল চতুস্তলকীয়ভাবে অন্য চারটি কার্বন মৌল দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকে। এ কার্বন মৌল সমূহ পরস্পর হতে ১.৫৪ এ্যাংগগ্রম দূরে অবস্থান করেন। এ্যাংগম্ভ্রম = ১০ <-৮> সি এম। আবার সেই তুলনায় গ্রাফাইটের আনবিক গঠনের তিনটি মৌলিক বন্ধন বিকৃত হওয়ার ফলে খাড়াভাবে নিকটতম কার্বন মৌলের সাথে যুক্ত থাকে এর ফলে হিরা ও গ্রাফাইট ভিন্ন হয় এরকম বহু উদাহরণ রয়েছে বহু সারিবদ্ধ আনবিক গঠনের, যা বৈজ্ঞানিকেরা তৈরি করতে পারে না। কিন্তু অবাক হয় এই সকল দক্ষ ও সুকৌশলীয় আনবিক গঠন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করে। প্রায় তারা মনে মনে প্রশ্ন করে কে তার ল্যাবটরিতে এরকম আবিষ্কার করেন? প্রকৃতপক্ষে এটা হচ্ছে একজন বুদ্ধিমান এবং পরম বৈজ্ঞানিকের কাজ যিনি হচ্ছেন পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। তার কর্ম প্রক্রিয়া অচিন্ত্য। কোন বৈজ্ঞানিকই সেই পরম বৈজ্ঞানিকের কাজ অস্বীকার করতে পারে না। কিভাবে তারা ভগবানের ক্রিয়াকলাপকে অস্বীকার করবে?
গীতায় বলা হয়েছে- সর্বজ্ঞ, সনাতন, নিয়ন্তা, সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্মতর, সকলের
বিধাতা, জড় বুদ্ধির অতীত, অচিন্ত্য পুরুষরূপে পরমেশ্বর ভগবানের ধ্যান করা উচিত। তিনি সূর্যের মতো জ্যোতির্ময় এবং এই জড়া প্রকৃতির অতীত। (গীতা- ৮/৯) তথাকথিত বড় বড় বৈজ্ঞানিকেরা শুধুমাত্র ভগবানের কাজগুলোকে নকল করার চেষ্টা করে বৃথা সময় অপচয় করে। এতে তারা পুনঃ পুনঃ ব্যর্থ হন এবং সামান্য সফলতার মুখ দেখেন। যদিও তারা এতে নিজেদের গর্বিত বোধ করেন। নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী হাবার্ড ও জুরিখ কৃত্রিম ভিটামিন বি-১২ তৈরি করার জন্য ১৯টি দেশের ৯৯জন বিজ্ঞানীর সহায়তায় প্রায় ১২ বছর ধরে গবেষণা করে তৈরি করেছিলেন। মজার বিষয় এই যে, ভগবান প্রতিমুহুতে এই রকম শত কোটি ভিটামিন বি-১২ মৌল তৈরী করে চলেছেন। যা বিভিন্ন খাদ্য উপাদানে বিদ্যমান। এভাবে তারা পুনঃ চেষ্টা করে কিন্তু যখন ব্যর্থ হয় তখন জেনে অথবা না জেনে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে (যদিও তারা ভগবান নেই বলে দাবি করে)। যেমন ১৯৭० সালের ১১ই এপ্রিল কোটি কোটি ডলার ও শত শত বিজ্ঞানীদের মস্তিস্কের প্রচেষ্টায় প্রেরিত এ্যাপোলো ১৩ টি যখন বিধ্বস্ত এবং নভোচারীদের ফেরত আসার ব্যাপারে শংকা দেখা দিয়েছিল। তখন বিজ্ঞানীরা বিশ্বের সকল লোকদের অনুরোধ করেছিলেন যেন নভোচারীরা ফেরত আসার জন্য ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেন। যদিও তারা ভগবানে বিশ্বাস করতে চান না। বিজ্ঞানীদের বড় ত্রুটি হলো তারা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক বিষয় নিয়ে অনুসন্ধান করেন না। যেমন, নিউটন আপেল গাছের নিচে বই পড়ার সময় একটি আপেল তার মাথায় পড়লে তিনি প্রশ্ন করেন কেন এবং কিভাবে আপেলটি পড়লো কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ প্রশ্ন করলেন না কে এই আপেলটি ফেলল । যাই হোক এর ফলে তিনি মহাকর্ষ অভিকর্ষ সূত্র আবিষ্কার করেন। কিন্তু তিনি আবিষ্কার করতে চাইলেন না কে এই মহাকর্ষ-অভিকর্ষটি নিয়ন্ত্রণ করছেন। ব্রহ্মসংহিতাই বলা হয়েছে শ্রীকৃষ্ণ সর্বকারণের কারণ। অধিকন্তু, ভগবান তাদের সামান্য কিছু বুদ্ধিমত্তা প্রদান করেছেন। এই বুদ্ধিমত্তার ফলে তারা জানতে চাই মহাবিশ্ব কি ? ইহা কত বড়? কখন ইহার উৎপত্তি? এই সকল গবেষণার ফল স্বরূপ তারা কিছু সূত্র আবিষ্কার করে গর্ববোধ করেন। যেমন বর্তমানে তারা মনে করছে সৌরজগতে দশটি গ্রহ রয়েছে। তারা সেটা আবিস্কার করতে চাচ্ছে। উক্তিটির প্রমাণ স্বরূপ, কিছু বিজ্ঞানীর সন্দেহ লক্ষণীয়। যেমন, ড. রবিন সন ও ম্যানহার্টন বলেছেন সৌরজগতে কি দশটি গ্রহ রয়েছে? কিভাবে গ্রহগুলো সম্পর্কে সূক্ষ্মভাবে জানতে পারব সময় তা বলে দেবে। প্রকৃত কথা হচ্ছে তারা কখনই ভগবান সৃষ্ট এই জড় জগতের রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারবে না। যে কোন বুদ্ধিমান মানুষই বুঝতে পারে যে মহা বিশ্বের আয়তন মাপতে যাওয়া কত বড় বোকামি। প্রভুপাদ এই সম্পর্কে একটি সুন্দর উদাহরণ দিয়েছেন একটি ব্যাঙ তিন ফুটের একটি কুয়াই বাস করত। এক সময় তার বন্ধু প্রশান্ত মহা সাগর দেখে আসে। সে তার বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করল প্রশান্ত মহা সাগর কত বড়? এ কুয়ার মতো তিনটা? না। তাহলে এ কুয়ার মতো পাঁচটা? না । তাহলে নিশ্চয় এই কুয়ার মত সমান হবে। এভাবে ব্যাঙটি তার বুদ্ধিমত্তা দিয়ে প্রশান্ত মহা সাগরের আয়তন মাপতে থাকে। উক্ত ব্যাঙের মতো বিজ্ঞানীরা মহা বিশ্বের আয়তন মাপার কাজের মাধ্যমে শুধু মাত্র সময় ও শক্তির অপচয় করছে। আমরা যদি পরম কর্তৃপক্ষ শ্রীকৃষ্ণের শরণাগত হয় তাহলে আমরা সকল উত্তর পেতে পারি। সৃষ্টির সমস্ত রহস্যের উত্তর আমরা ভাগবতে পায় যা সকল জীবের মঙ্গলার্থে প্রণীত হয়েছে। ভাগবতের প্রথম স্কন্ধে তৃত্বীয় অধ্যায়ে ১ থেকে ৫ শ্লোকে জড় জগত ও অপ্রাকৃত জগতের বিশাল বর্ণনা দেয়া হয়েছে। এমনকি গীতায়ও ভগবান শ্রীকৃষ্ণ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন তার শক্তির এক চতুর্থাংশ এই জড় জগত সৃষ্টিতে এবং অপর তৃতীয়াংশ অপ্রাকৃত জগত সৃষ্টিতে ব্যয়িত হয়েছে। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু একটি সুন্দর ব্যাখ্যা দিয়ে তা দেখিয়েছেন– “অপ্রাকৃত জগত একটি পদ্ম ফুলের মতো যার কেন্দ্রে গোলক বৃন্দাবন বা কৃষ্ণলোক, অন্যগুলো বৈকুণ্ঠলোক যা সমগ্র সম্পদ, শক্তি, জ্ঞান, শ্রী ও বৈরাগ্যপূর্ণ সুতরাং আমাদের উচিত এই সকল মহাজাগতিক সৃষ্টি সম্পর্কে জড় বুদ্ধি সম্পন্ন বিজ্ঞানীর তথাকথিত প্রলোভনে বিভ্রান্ত না হয়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শরণাগত হওয়া, এতে আমরা বুদ্ধিজ্ঞান উভয়ই প্রাপ্ত হবো।”
গীতায় বলা হয়েছে
তেষাং সততযুক্তানাং ভজতাং প্রীতিপূর্বকম্ ৷
দদামি বুদ্ধিযোগং তং যেন মামুপযান্তিতে ৷৷
(গীতা-১০/১০)
অর্থাৎ, যারা নিত্য ভক্তিযোগ দ্বারা প্রীতিপূর্বক আমার ভজনা করেন, আমি তাঁদের শুদ্ধ জ্ঞানজনিত বুদ্ধিযোগ দান করি, যাঁর দ্বারা তাঁরা আমার কাছে ফিরে আসতে পারে। হরেকৃষ্ণ।