প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২২ | ১০:০৩ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০২২ | ৮:৩২ পূর্বাহ্ণ
এই পোস্টটি 131 বার দেখা হয়েছে
বর্তমান কালের যে জীবন যাপন, তা হচ্ছে ভোগবাদ। অর্থাৎ ভোগ করে যাও, ফুর্তি কর আগে পিছু বিবেচনা না করেই। নীতি অনীতির বিবেচনা করতে হবে না, তোমার ফুর্তির জন্য, ভোগ স্পৃহার জন্য
কারো কোন ক্ষতি হল কি হল না সেটি ভাবতে হবে না। যেন তেন প্রকারে তুমি কতটা বিত্তশালীভাবে ভোগ করতে পারছ সেটাই তোমার জীবনের লক্ষ্য, সেটাই হবে তোমার সামাজিক সম্মানের সীমারেখা আর এরই নাম হচ্ছে এখন ‘উন্নয়ন।’ বিভিন্ন নগরে ও শহরে এখন প্রচুর ‘মল’ আখ্যাধারী চোখ ধাঁধানো বৃহৎ বিপনী তৈরী হচ্ছে। প্রচুর আকাশচুম্বী অট্টালিকা, নৈশ নৃত্য গৃহ ইত্যাদি নানাবিধ তামসিক আমোদ প্রমোদের ক্ষেত্র তৈরী হচ্ছে। এই হচ্ছে এখন শহরে ও নগরে মানুষের সামাজিক জীবন যাপনের অবস্থান। কিন্তু এইগুলো যদি ‘উন্নয়নই” হবে তাহলে পাশাপাশি মানুষের জীবনে এত সমস্যা বাড়ছে কেন? ” কেন এতসব উন্নয়নের অট্টালিকার পাশাপাশি বাড়ছে ব্যবসায়িক হাসপাতালের সংখ্যা? অর্থাৎ এই তথাকথিত উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের জীবনে নানাবিধ সমস্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে অসুস্থতা। আর অসুস্থতা যে বাড়বে তাতে কোন সন্দেহ নেই এই কারণে যে এই ধরনের চোখ ধাঁধানো স্বার্থপর ‘উন্নয়ন’মুখী জীবন যাপনে সমাজে কারও মনই ভালো থাকতে পারে। না। যেহেতু আমাদের জীবনের ভিত্তি নিহিত রয়েছে আমাদের মন ও মননে, তাই সার্বিকভাবে মন যদি ঠিক না থাকে, সুস্থ না থাকে, ভালো না থাকে, তাহলে দেহের অসুস্থতা তো বাড়বেই। আজকের সময়ের এই ধরনের ভোগবাদী উন্নয়নে ভোগ বিলাস করার বাসনায় যেভাবেই হোক বিত্ত অর্জনের নেশায় মেতে যারা অবশেষে বিত্তশালী হয়ে ভোগবিলাস করছে, তারা কিছুকাল ফুর্তি, ভোগ বিলাস করার পর যেমন একঘেয়েমিতা অনুভব করে জীবনের অবসাদে ভুগছে, তেমনি অপর দিকে ভোগ বিলাসের লক্ষ্যে, হয়ে তথাকথিত সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জনের লক্ষ্যে যারা নানাভাবে চেষ্টা করেও লক্ষে পৌঁছতে পারছে না, পরিশেষে তারাও অবসাদে ভুগছে। অর্থাৎ আমরা দেখতে পাচ্ছি যে আজকের এই ‘উন্নয়ন’ নামের সামাজিক ব্যবস্থার সার্বিক পরিনামই হচ্ছে অবসাদ বা মানুষের দুঃখ কষ্ট বৃদ্ধি পাওয়া। তাছাড়া এই ধরনের প্রতিযোগিতামূলক সামাজিক ব্যবস্থার ফল কখনই ভালো হতে পারে না। কেননা কেউ যখন একে অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে তখন তারা একে অপরের শত্রু হয়। কেননা সেখানে উভয়ে উভয়ের প্রতিদ্বন্দী। ফলে এই ধরনের সামাজিক অবস্থানে ও পরিবেশটিই হয় শত্রুভাবাপন্ন। এরকম পরিবেশে মানুষ কিভাবে সুখী হতে পারে, আনন্দ ও শান্তি লাভ করতে পারে? সেটি সম্ভব নয়। তাই যতই উন্নয়নের স্বপ্ন দেখানো হোক না কেন, যতই উন্নয়নের তত্ত্ব আওড়ানো হোক না কেন, আমরা নিত্যদিনের অভিজ্ঞতায় অনুভব করেই চলেছি যে, মানুষের দুঃখ দুর্দশা বেড়েই চলেছে। প্রলোভন ও প্রতারণার এই ভোগবাদী সমাজ ও সময়ে নিজেকে ভালো রাখার একমাত্র উপায় হলো ভোগের আকাঙ্খা থেকে নিজেকে যতদূর সম্ভব সংযত রাখা। এমনি এমনি সেটা সম্ভব নয়। সেটা একমাত্র সম্ভব পারমার্থিক বিষয়ের প্রতি যদি মনকে কেন্দ্রীভূত করা যায়। আমাদের জানা উচিত বা হৃদয়ঙ্গম করা উচিত যে পৃথিবীতে, এই জড় জগতে, জীবন, যৌবন, ধন, মান সবকিছুই ক্ষণস্থায়ী। কিন্তু তবু আমরা বিভিন্ন শরীর নিয়ে জন্মগ্রহণ করি কেন? আমাদের, বিশেষত এই মনুষ্য জন্মের উদ্দেশ্য কি? আমি কে? এইসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করতে হবে। তার মানে এই নয় যে আপনাকে আপনার চাকুরী, ব্যবসা, গৃহ, সংসার সব ত্যাগ করতে হবে। না, আপনাকে কিছুই ত্যাগ করতে হবে না সবই চলবে ঠিকঠাক। আপনাকে শুধু এই ব্যাপারে আগ্রহী হতে হবে। আপনাকে শুধু সারা দিন রাত চাকুরী বা ব্যবসায় অর্থের নেশায় নিজেকে জড়িত না রেখে, সম্পূর্ণ সময় ঐ দিকে না দিয়ে পারমার্থিক জ্ঞান
জানার জন্যও সময় বের করতে হবে। পারমার্থিক জ্ঞান জানবার জন্য, এই জীবনের দুঃখ কষ্ট থেকে রেহাই পাবার উপায়ের জ্ঞান লাভ করার জন্য ইচ্ছুক হতে হবে। আর একটি প্রবাদ আছে “ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়।” সেই অনুযায়ী। আগে ইচ্ছেকে জাগ্রত করুন, দেখবেন উপায় আপনার কাছে হাজির হয়েছে। শ্রীভগবান কথিত জ্ঞান, সুপ্রাচীন কাল থেকে পরম্পরাক্রমে প্রাপ্ত ঋষি, মহাঋষিদের প্রদত্ত জ্ঞান, আজও গ্রন্থ রূপে আমাদের কাছে রয়েছে। যেমন ‘শ্রীমদ্ভগবদগীতা’, ‘শ্ৰীমদ্ভাগবত’, উপনিষদ, পুরাণ ইত্যাদি। ভক্ত সান্নিধ্যে সেগুলো পাঠ করুন, ভক্তদের কাছ থেকে ভগবানের কথা শ্রবণ করুন, ভগবানের নাম জপ করুন। দিনের কিছু সময় এইভাবে ব্যয় করলে ধীরে ধীরে অনুভব করতে পারবেন যে বর্তমান কালের এই বীভৎস ভোগবাদী সমাজের মধ্যে বাস করেও, আপনি অনেকের চেয়ে ভালো আছেন।
হরে কৃষ্ণ।
ReplyForward
|