প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে কৃষ্ণভাবনার জয়

প্রকাশ: ২৩ মে ২০২২ | ১০:০২ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ২৩ মে ২০২২ | ১০:০২ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 206 বার দেখা হয়েছে

প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে কৃষ্ণভাবনার জয়

বৈদিক শাস্ত্রের সুগভীর দর্শন ও ভক্তিরসামৃত যেভাবে এক মেধাবী ছাত্রের ক্ষুধা তীব্র করেছিল ।

চৈতন্য চরণ দাস


আমি হৃদপিণ্ড বিকৃতি নিয়ে জন্মগ্রহণ করলে ডাক্তাররা বলেছিলেন, “হয়তো আমার ৫ম জন্মদিনটি আর দেখা হবে না। আমার বয়স যখন প্রায় এক বছর তখন সবে মাত্র আমাদের মধ্যবিত্ত শ্রেণির সেই গৃহে গুটি গুটি পায়ে হাঁটতে শিখছিলাম ঠিক তখনি ঘটে এক দূর্ঘটনা। আমি হঠাৎ ভারসাম্যহীনভাবে ভূপতিত হয়েছিলাম এবং তারপর থেকে আর কখনো আমি স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পারিনি। আমার পিতা-রামচন্দ্র পূজারী, মাতা-সুনন্দ পূজারী, ১৯৭০ সালের দিকে ভারতে পলিও ইনফেকশন প্রতিরোধে আমাকে ভ্যাকসিন দিয়েছিলেন। কিন্তু দুর্ঘটনা বশতঃ ডাক্তার আমাকে একটি ত্রুটিপূর্ণ ভ্যাকসিন দিলে আমার বাম পা রোগাক্রান্ত হয়। এরপর থেকে আমাকে খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাঁটতে হতো। দু’বছর বয়সে এক দীপাবলী উৎসবে আতশবাজীর প্রদর্শনী উপভোগ করার সময় হঠাৎ একটি রকেট বাজী আকাশে উড়ার পর আমার দিকে তেড়ে আসলে তা দেখে অনেকে দৌড়ে পালালেও আমি পারলাম না। ফলে বাজীটি আমার ডান বাহুতে আঘাত করলে আমার শার্ট ও ত্বক পুড়িয়ে দিয়ে দ্রুতবেগে পুনঃরায় ওপরদিকে ধাবিত হতেই অল্পের জন্য আমার ডান চোখ বেঁচে গেলেও মুখ ঝলসে যায়।
যখন আমার বয়স তিন বছর তখন গৃহের নিকটের একটি দেয়াল থেকে মাটিতে পড়ে গেলে আমার মাথার খুলি ফেটে যায়। একজন জ্যোতিষবিদ আমার পিতা-মাতাকে বলেছিলেন, আমি শনিগ্রহ কর্তৃক আক্রান্ত যেটি প্রথম সাড়ে সাত বছর পর্যন্ত পুনঃ পুনঃ সমস্যা সৃষ্টি করবে।

বুদ্ধিদীপ্ত আশ্রয়

স্বাভাবিক একটি শৈশব ফিরিয়ে আনার জন্য আমার পিতা-মাতা যথাসাধ্য সবকিছু করেছিল । তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, এক দশক ধরে আর কোন সন্তান নিবে না যাতে তারা আমার যত্ন নিতে পারে। সর্বোচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য পিতামাতা আমাকে ব্যয় বহুল খ্রিস্টান কনভেন্ট স্কুলে ভর্তি করান। তাদের দুঃখ কিছুটা লাঘব হয়েছিল যখন আমি পরীক্ষায় ভাল ফলাফল অর্জন করছিলাম । এজন্যে তারা প্রায়ই আমার আত্মীয়দের বলতো যে, ভগবান আমার শারীরিক অক্ষমতাটি পূর্ণ করেছে মেধার মাধ্যমে। আমি এই অদ্ভুত জীব ভগবানকে নিয়ে অবাক হতাম যে, আমাকে কি দিবে না দিবে এই সবকিছুর সিদ্ধান্ত নেওয়ার অপরিমেয় শক্তি ছিল ভগবানের। আমার পিতা মাতা জন্মসূত্রে ছিলেন ব্রাহ্মণ, তাই ধর্মীয় সংস্কারাদি পালন করা পারিবারিক সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল।
প্রায় শত বছর পূর্বে তার প্রপিতামহ নিজ গ্রামে প্রত্যূষে যখন স্নান করছিলেন তখন তিনি একটি পঞ্চ মস্তক বিশিষ্ট হনুমান বিগ্রহ নদীতে ভাসতে দেখেন। তিনি তখন সেই বিগ্রহটি নিয়ে অভিষেক করে পূজারী হিসেবে সেবা করতে থাকেন। আমার বংশগত ধর্মীয় ঐতিহ্যের সাথে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার যে জীবন রয়েছে তার সঙ্গে সামান্যই মিল রয়েছে। বিদ্যালয়ে আমার ফলাফল বেশ ভাল ছিল এবং তা দেখে মনে হয় যেন শনি গ্রহের আধিপত্য বোধহয় ছেড়ে গেছে। আমি দশম স্ট্যান্ডার্ড ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় রাজ্যের শীর্ষস্থানীয়দের মধ্যে একজন হই। এজন্যে জেলা সংগ্রাহক (জেলার শীর্ষ সরকারি অফিসার) আমাদের গৃহ পরিদর্শন করে আমার পিতা-মাতাকে অভিবাদন জানান এবং সেই সংবাদ স্থানীয় পত্রিকায় ছবিসহ ছাপানো হয়। পিতা-মাতার জীবনের মোড় যেন ঘুড়ে যায়।
দুর্ভাগ্যবশতঃ তাদের সেই আনন্দ দীর্ঘক্ষণ স্থায়ী হল না। একসময় হঠাৎ একটি দুর্যোগ নেমে আসে। যেদিন সংবাদপত্রে আমাদের পারিবারিক ছবিটি ছাপানো হয় সেদিন আমার একটি মেডিকেল চেকআপ করেন। আর তাতে লিউকেমিয়া ধরা পড়লে তিনি এক মাসের মধ্যেই দেহত্যাগ করেন। এমতাবস্থায় আমার চারপাশে যখন দুর্যোগের ঘণঘটা আমি তখন পড়াশুনা ও প্রাতিষ্ঠানিক ফলাফলের আশ্রয় গ্রহণ করলাম। শিখর থেকে চোরাবালিতে এবং অতঃপর বেড়িয়ে আসা ১৯৯৬ সালে পুণের একটি শীর্ষস্থানীয় কলেজে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সময় আমি আমেরিকায় পোস্ট গ্র্যাজুয়েশনের জন্য জি.আর.ই পরীক্ষায় কলেজের ইতিহাসে সর্বোচ্চ স্কোর করে রাজ্যের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করি। আমি যখন এরকম সর্বোচ্চ অর্জনে উৎফুল্ল হয়ে পড়ি তখন মনে হয়েছে আমার মধ্যে কিছু একটা বিকৃত হয়েছে। সমাজ আমাকে এই বিশ্বাসের দিকে ঠেলে দিয়েছিল যে, শিক্ষাগত অর্জনই হলো জীবনের পরম সফলতা ও সুখ। আমি এর পেছনে ছুটি এবং তা প্রাপ্তও হই। কিন্তু যখন সফলতার শিখরে পৌছে হাতে ট্রফি, স্কোর শিট নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম তখন দেখলাম এই গ্রেড বা ফলাফলে আমি আসলে আনন্দিত নই। শুধুমাত্র তখনই একটু আনন্দ পাই যখন কেউ আমার প্রশংসা করে।
আমার মধ্যে একটি বিষয় নাড়া দিল যে, আমি তো এক মরীচিকার পেছনে ছুটছি, যেমন শিক্ষাগত অর্জন বা এই সম্পর্কিত অন্য কিছু। প্রকৃতপক্ষে এগুলো আমাকে কখনো সন্তুষ্ট করতো না। আমার সর্বোচ্চ সফলতা একটি চোরা বালিতে পরিণত হয়েছিল।
এমতাবস্থায় আমার এক বন্ধু শ্রীল প্রভুপাদ বিরচিত শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা যথাযথ গ্রন্থটি প্রদান করার মাধ্যমে আমাকে সেই চোরাবালি থেকে উদ্ধারের জন্য সাহায্য করে। এরপর গীতা আমার জীবনের উদ্দেশ্যসহ অনেক প্রশ্নের উত্তর প্রদান করেছিল, যেগুলো আমার পড়া অনেক ধর্মীয় গ্রন্থের মধ্যে পাইনি। তবে কিছু প্রশ্ন বাকি ছিল সেগুলো খুব দক্ষতার সহিত উত্তর প্রদান করেছিলেন পুণে মন্দির অধ্যক্ষ শ্রীমান রাধেশ্যাম প্রভু ও ইয়ূথ প্রচারক গৌরসুন্দর প্রভু। এভাবে কৃষ্ণভাবনার সুগভীর দর্শনের মাধ্যমে আমার জীবন প্রত্যাশা ও আনন্দে আলোকিত হয়। আমি তখন বুঝতে পারলাম যে খোড়া পা দিয়ে আমি ক্রিকেট খেলতে পারতাম না। কারণ আমার পূর্বকৃত কর্মফল । কিন্তু এই প্রতিবন্ধকতা আমার পারমার্থিক জীবনে হস্তক্ষেপ করতে পারেনি। কেননা আমিতো এই দেহ নই এবং আমার সমস্ত পারমার্থিক প্রগতি এই শরীরটির উপরও নির্ভরশীল নয় ।
হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র ছিল আমার পরবর্তী আবিস্কার। কৈশোর থেকে আমি তারুণ্যের বিরুদ্ধে হারমানা যুদ্ধ করেছি। যেটি প্রায়ই আমার জন্য অন্তর্ঘাত স্বরূপ ছিল। পবিত্র হরিনাম জপ করার মাধ্যমে আমি এই অন্তর্ঘাত থেকে মুক্তির কৌশলটি আবিষ্কার করতে পেরেছিলাম।

সর্বোচ্চ শিক্ষা

এখনো সর্বোচ্চ অর্জনটা বাকি। ধীরে ধীরে যখন শ্রীল প্রভুপাদ ও তার অনুসারীদের বিশেষত ভগব গীতার ওপর রচনামূলক গ্রন্থ অধ্যয়ন করতে লাগলাম তখন অধ্যয়নের মাধ্যমে এক প্রকার স্বাদ আস্বাদন করছিলাম। এই বিষয়টি আমার প্রথম দিকের শিক্ষা জীবনে ছিল না, যেখানে আনন্দ বলতে সীমিত ছিল পড়ালেখার মাধ্যমে কিছু ভাল গ্রেড অর্জন করা। এর পর আমি মহর্ষি ব্যাসদেব বিরচিত শ্রীমদ্ভাগবত অধ্যয়ন করি। বৈদিক সাহিত্যের ওপর তাঁর অনেক রচনা আমাকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি কিন্তু যখন ভগবানের অপূর্ব মহিমা আমি অধ্যয়ন করতে শুরু করি তখন আমাকে তা পূর্ণরূপে সন্তুষ্টি প্রদান করেছিল। যেন মনে হচ্ছিল আমার জীবনের গল্পই আমার সম্মুখে দর্শন করানো হচ্ছে। আবার সেই সাথে এর ভবিষ্যত সম্পর্কেও বার্তা প্রদান করছে। শুধুমাত্র যখন কৃষ্ণের মহিমা বর্ণনা করা হয় তখন এর মাধ্যমে নিজের ও অন্যের প্রকৃত সুখের আগমন ঘটে, যেটি আমি চিহ্নিত করতে পেরেছিলাম এবং এই আদর্শটি আমার ভবিষৎ দর্শন করিয়েছিল।
আমি বন্ধুদের মাঝে কৃষ্ণভাবনার দর্শন ও অনুশীলন প্রচার শুরু করলাম। আশ্চর্যের বিষয় হলো এর মাধ্যমে কয়েকজনের জীবনে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়েছিল। তারা কুঅভ্যাসগুলো ত্যাগ করে কৃষ্ণভাবনাময় জীবন যাপনের দিকে পরিচালিত হয়েছিল। ১৯৯৮ সালে গ্র্যাজুয়েশন সম্পূর্ণ হওয়ার পর আমি উভয় সংকটে পড়ি। যদিও একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে সফট্ওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে চাকরি করি এবং সেসাথে আমেরিকান ইউনিভার্সিটিতে পড়ার একটি সুযোগও ছিল। তবুও আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে, তার চেয়ে বরং ভাল হয় যদি পারমার্থিক পাণ্ডিত্যের মাধ্যমে সর্বোত্তমভাবে সমাজে সেবা করা যায়, যেটি আমার জীবনকে সমৃদ্ধ করেছিল। ভারতে কোনো সফট্ওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার কিংবা আমেরিকায় ভারতীয় শিক্ষার্থীদেরও কমতি ছিল না কিন্তু সর্বত্র যেটির ঘাটতি ছিল তা হলো শিক্ষিত পারমার্থিক ব্যক্তির।
আরেকটি উভয় সঙ্কট ছিল। এখানে একটি ভাল ক্যারিয়ার বিসর্জন দেয়ার চেয়ে কঠিন হলো পিতার হতাশা সহ্য করা। সাধারণত প্রথাগত ভারতীয় ঐতিহ্যে বৃদ্ধ পিতা-মাতার দেখাশুনা করেন তাদের উপযুক্ত সন্তানরা। কিন্তু আমি জানতাম, বিষয়টি আমার পিতার উদ্বিগ্নতার কারণ নয়। আর্থিকভাবে তিনি মোটামুটি সচ্চল ছিলেন। সেই সাথে আমার একটি মেধাবী ছোট ভাইও ছিল যার নাম হার্শাল । তবুও আমার পিতার হৃদয় ভাঙ্গার কারণ ছিল তার জ্যেষ্ঠ পুত্রের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তা নষ্ট হয়ে গেল। পুত্রকে নিয়ে তার স্বপ্নগুলো পরিণত হলো একজন মস্তক মুণ্ডিত, কোনো ব্যাংক একাউন্ট বিহীন গৌড়ীয় বসনধারী সাধু হিসেবে। তার দুঃখ আমাকে ব্যতিগ্রস্ত করেছিল। কিন্তু অন্যদিকে আমার হৃদয় অন্যকিছু গ্রহণ করতে নারাজ। আমি ক্রমাগতভাবে কৃষ্ণের কাছে প্রার্থনা করতে লাগলাম যাতে তিনি আমার পিতার হৃদয়কে প্রশমিত করে এবং যেকোনোভাবে, যেকোনো সময় যেন আমার এই সিদ্ধান্ত তিনি উপলব্ধি করেন।
অতঃপর, ১৯৯৯ সালে ইস্‌কন পুণের একজন ব্রহ্মচারী হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে গীতার জ্ঞান পূর্ণরূপে প্রচারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। ২০০০ সালে আমার গুরুদেব শ্রীমৎ রাধানাথ স্বামী মহারাজ থেকে দীক্ষা প্রাপ্ত হই। তিনি আমাকে বলেছিলেন, যেহেতু আমি কৃষ্ণের জন্য আমেরিকায় উচ্চ শিক্ষা লাভের সুযোগ পরিত্যাগ করেছি তাই কৃষ্ণ আমাকে সর্বোচ্চ শিক্ষা গ্রহণ ও বিতরণের সুযোগ প্রদান করছে। সেই উচ্চতর শিক্ষাটি হলো কৃষ্ণভাবনার শিক্ষা, যেটিকে শ্রীমদ্ভগবদ্‌গীতায় রাজবিদ্যা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তার নির্দেশ অনুসারে পুণেতে প্রথম যুব গোষ্ঠীদের মাঝে প্রচার শুরু করি এবং এরপর সমগ্র ভারত জুড়ে প্রচার বিস্তৃত হয়। কৃষ্ণের কৃপায় আমার খোড়া পা এখনো পর্যন্ত কোনো প্রতিবন্ধকতায় সৃষ্টি করতে পারে নি।

বুদ্ধিদীপ্ত সমাধি

২০০২ সালে নতুন করে লেখালেখিতে মনোনিবেশ করি। শৈশবে আমি লেখালেখিতে মনোনিবেশ করতে চেয়েছিলাম কিন্তু তা আর হয়ে উঠে নি। আমার কখনো ইংরেজি শব্দের ঘাটতি হতো না (আমার প্রিয় শখ ছিল বিভিন্ন অভিধান থেকে শব্দ মুখস্থ করা), কিন্তু সবসময় বিভিন্ন বিষয়ে ধারণার ঘাটতি ছিল বলে আমার মনে হতো। এই ঘাটতি পূরণের জন্য কৃষ্ণভাবনার সমৃদ্ধ দর্শন আমাকে সহায়তা করেছে। গত ১৭ বছরেরও অধিক সময় আমি ১৫০টির মতো প্রবন্ধ রচনা করি এবং সেসাথে আমার গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে ৮টি। এই প্রবন্ধগুলোর অনেকগুলো ভারতীয় শীর্ষস্থানীয় পত্রিকায়ও প্রকাশিত হয়। আবার এর কিছু প্রকাশিত হয় ইংরেজি ব্যাক টু গডহেড ম্যাগাজিনে। প্রথম যখন আমার একটি প্রতিবেদন বিখ্যাত টাইমস্ অব ইন্ডিয়া পত্রিকায় প্রকাশিত হয় আমার অতি উৎফুল্ল পিতা এর একশ ফটোকপি বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজন, অন্যান্য পরিচিত ব্যক্তি ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের মাঝে বিতরণ করেছিলেন। প্রতিটি নতুন গ্রন্থ প্রকাশিত হওয়ার পর আমার পিতার চোখে-মুখে যে আনন্দ স্ফূরিত হয় তা দর্শন করে আমি কৃষ্ণকে ধন্যবাদ জানাই যে তিনি আমার প্রার্থনার প্রত্যুত্তর দিয়েছেন।
২০০৯ সালের শেষে দিকে আমাকে আন্তর্জাতিক ব্যাক টু গডহেড এর সম্পাদক আমন্ত্রণ জানায় এই ম্যাগাজিনে সহ-সম্পাদক হিসেবে সেবা করার জন্য। ব্যক্তিগতভাবে লেখনি খুব বেশী না হলেও এর ফলাফলটি হলো অর্থবহ, আবেগপূর্ণ, তাৎপর্যপূর্ণ ও স্বয়ংসম্পূর্ণ। পারমার্থিক জীবনে আমি একজন নবীন ভক্ত হিসেবে যখন স্বার্থান্বেষী বাসনার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছিলাম, তখন লেখনী আমাকে প্রদান করে সমাধির স্তর এবং সেসাথে কৃষ্ণ ও তার বাণীর ভাবনা রাজ্যে আনন্দময় সন্নিবেশ। জাগতিকভাবে সবকিছু শূন্য হওয়ার অভিজ্ঞতা আবার অন্যদিকে পারমার্থিক বুদ্ধিদীপ্ত সমৃদ্ধি উভয়ের অভিজ্ঞতা প্রাপ্ত হবার পর আমি বিষণ্ন অনুভব করি যে, জাগতিক বুদ্ধিদীপ্ত ব্যক্তিরা তাদের বুদ্ধিদীপ্তির পারমার্থিক ফল থেকে কতই না বঞ্চিত হয়েছে। অনেক ভারতীয় বুদ্ধিদীপ্ত ব্যক্তি বৈশ্বিকভাবে জাগতিক সুখ্যাতি অর্জন করলেও তারা এখনও সেই স্বাদটা অর্জন করতে ব্যর্থ হচ্ছে। আমার লেখনীসমূহ তাদের সেই হারানো উত্তরাধিকার পুনঃ আবিস্কারের পথে বিনম্র প্রচেষ্টা মাত্র। আমি বাকী জীবনটা যেই বুদ্ধিদীপ্ত ভক্তিরসামৃতের মাধ্যমে আমি আশীর্বাদপুষ্ট হয়েছিল সেটি বিশ্লেষণ, আস্বাদন ও বিতরণের প্রত্যাশা করি।
চৈতন্যচরণ দাস শ্রীমৎ রাধানাথ স্বামী মহারাজের একজন শিষ্য। তিনি ইলেক্ট্রনিক ও টেলিকমিউনিকেশনের ওপর উচ্চতর ডিগ্রি গ্রহণ করেছেন এবং পুনে মন্দিরে ব্রহ্মচারীরূপে শ্রীকৃষ্ণের সেবায় নিজেকে পূর্ণরূপে উৎসর্গ করেছেন। তিনি এ পর্যন্ত আটটি গ্রন্থ লিখেছেন ।


 

জানুয়ারী-মার্চ ২০১৭ ব্যাক টু গডহেড
সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।