এই পোস্টটি 361 বার দেখা হয়েছে
জপ মালার প্রতি গুটিকায় একবার করে মোট ১০৮ বার হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র উচ্চারণ করলে এক মালা জপ হয়। প্রতিদিন নির্ধারিত মালা জপ হয়। প্রতিদিন নির্ধারিত মালা জপ সমাপ্ত করা ভগবদ্ভক্তের দৈনন্দিন ভক্তি অনুশীলননের এক আবশ্যকীয় অঙ্গ। অন্য কোন কিছু করার আগে এটি সমাধা করা উচিত। বৃন্দাবনে এমন অনেক বৈষ্ণব রয়েছেন, যাঁরা ৬৪ মালা জপের পূর্বে এক বিন্দু জল পান করেন না। দুর্ভাগ্যবশতঃ অনেক ভক্ত এই সবচেয়ে প্রয়োজনীয় কৃত্যটিকে গৌণ করে তোলেন; তাঁদের দেহগত পারিবারিক বা অন্যান্য কাজকর্মই অগ্রাধিকার পায়। মায়ামোহবশতঃ ভোরে জেগে উঠেই আধিকাংশরাই চিন্তা করতে থাকে ঃ “আমার অইেশ গুরুত্বপূর্ণ কাজ দ্রুত সমাধা করে ফেলতে হবে :ই- ইমেল, ফোন-কল খবরের কাগজ পড়া, দূরদর্শনে খবর দেখা …। অবশ্য ব্যস্ততার কি আছে, জপের জন্য সারাদিনটাই তো পড়ে আছে!” এইভাবে, আত্মার প্রাণবায়ু-স্বরূপ শ্রীকৃষ্ণে দিব্যনাম জপ ‘অন্য কোনো সময়ে করা’র মতো এতটা তুচ্ছ কাজে পরিণত হয়। সর্বপ্রথমে যেটি করা উচিত, সেটিই করা হচ্ছে সবশেষে! সংকল্প শব্দের ব্যাখ্যায় শ্রীল প্রভুপাদ বলেছেন যে শ্রীকৃষ্ণের দিব্যনাম জপ এমনকি আহার-নিদ্রার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ।
“তুমি যদি কোন একদিন ১৬ মালা জপ করতে না পার, তাহলে সেদিন তোমার আহার নিদ্রা ত্যাগ করা উচিত। তুমি খাওয়ার কথা ভুলে যাও না কেন? এই হচ্ছে অবহেলা, অপরাধ। বরং, তোমাকে খাওয়া ও ঘুমানোর কথা ভুলে যাওয়া উচিত। একেই বলা হয় দৃঢ়সংকল্প।”
-প্রভুপাদ প্রবচন ২৮/১/৭৪
গুরু, গৌরাঙ্গ ও কৃষ্ণের কৃপা লাভ করা, অন্তর কলুষমুক্ত করা এবং ভক্তিমার্গে সাফল্য অর্জন করতে হলে প্রতিদিন অবশ্যই নির্দিষ্ট সংখ্যক মালা জপ করা উচিত। ষোল মালা জপ করতে কম-বেশি দু’ঘন্টা সময় লাগে। কিছু ভক্ত তাঁদের উচ্চতর মানসিক শুদ্ধতা এবং বর্তমান ও অতীত জীবনের সুকৃতির প্রভাবে এক ঘন্টার মধ্যেই ১৬ মালা জপ সমাধা করতে পারেন।
যদিও প্রতিদিন নির্দ্দিষ্ট-সংখ্যক মালা জপ সাধু-গুরু-শাস্ত্রের নির্দেশ, তবুও এই ভয়ানক যুগ কলিযুগের সাধকদের তাদের দৈনন্দিন জপ সমাপনের মতো সঙ্কল্পের দৃঢ়তা প্রায়শঃই থাকে না। চিত্তে সঞ্চিত পাপাবশেষ, মানসিক অশুদ্ধতা এবং ইন্দ্রিয়সুখ ভোগাসিক্তর জন্য সঙ্কল্পের অভাব ঘটে। স্থিরভাবে ব্রত পালনের মানসিক বলের অভাব কিছু ভক্ত খেয়াল-খুশিমত জপ করেন। কোনোদিন ষোল মালা, কোনদিন আট-মালা, কোনোদিন চৌষট্টি মালা, কোন দিন দশ, আবার কোনদিন শূণ্য! শ্রীল রূপ গোস্বামী ভক্তি বৃদ্ধির ষড়বিধ উপায়ের মধ্যে দৃঢ়সংকল্পকে (নিশ্চয়াৎ) অন্তর্ভূক্ত করেছেন। নিশ্চয়াৎ বা সংকল্পের সমার্থক শব্দ হচ্ছে – সাহস, ইচ্ছাশক্তি, মনোবল, অঙ্গীকার, অধ্যবসায়। কিভাবে এই গুণগুলি অর্জন করা যায়? কিভাবে সংকল্প- শক্তি বৃদ্ধি করা যায়? ভক্ত্যালোকে গ্রন্থে শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুর বলেন যে শ্রীরূপ, শ্রীসনাতন, শ্রীরঘুনাথ এবং ঠাকুর হরিদাসের ন্যায় মহাত্মাগণের ভক্তিযোগসাধন সম্বন্ধীয় আলোচনা পাঠ বা শ্রবণ ও স্মরনের ফলে সংকল্পশক্তি বর্ধিত হয়। চলমান..