পুনর্জন্মের রহস্য!

প্রকাশ: ১০ মার্চ ২০২১ | ১০:৪৮ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ১০ মার্চ ২০২১ | ১২:৪৬ অপরাহ্ণ

এই পোস্টটি 1256 বার দেখা হয়েছে

পুনর্জন্মের রহস্য!
মুরারী গুপ্ত দাস

১৯৪৪ সালের ১১ অক্টোবর তারিখে ভারতের বিসুলি রাজ্যে জন্মগ্রহণ করেন পারমােদ শর্মা। পারমােদের বয়স যখন মাত্র আড়াই বছর, তখন একদিন সে তার মাকে বলল যে, তার জন্য আর কখনাে খাবার রান্না করতে হবে না, কেননা মােরাবাদ নামক এক স্থানে তার এক স্ত্রী আছে, যে তার জন্য রান্না করবেন! এই মােরাবাদ স্থানটি ছিল বিসুলি থেকে ৯০ মাইল দূরে। তিন থেকে চার বছরের মধ্যে পারমােদ তার পূর্ব জীবনের নানা তথ্য দিতে থাকে। সে বর্ণনা করে যে তার অনেকগুলাে ব্যবসা আছে যার মধ্যে কুকি বিস্কুট এবং সােড়া পানির দোকান রয়েছে যার নাম “মােহন ব্রাদার্স”। এছাড়াও তার ব্যবসা রয়েছে। সাহারানপুর নামক এক স্থানে যা মােরাবাদ থেকে শত মাইল দূরে।

পারমােদ অন্যান্য শিশুদের সাথে খেলাধুলা করত না। সে মাটির বিস্কুট তৈরি করত। পারমােদ দধি একদম পছন্দ করত না, যা ভারতীয় শিশুদের বেলায় একদম অস্বাভাবিক। একদিন এক অনুষ্ঠানে সে বাবাকে বলল, দধি খাওয়া খুবই বিপজ্জনক কেননা সে তার পূর্বজন্মে অতিরিক্ত দধি খেয়ে রােগাক্রান্ত হয়ে পড়েছিল। পারমােদ তার পূর্বজন্মের বিয়ে এবং ৫টি সন্তান সম্পর্কেও তার পিতামাতাকে জানায়। এছাড়াও পারমােদ বাথটাবে স্নান করতে খুবই ভয় পেত, যা খুবই অস্বাভাবিক। সে তার পূর্বের পরিবারকে দেখার জন্য খুবই উৎসুক হয় এবং পিতামাতাকে অনুরােধ জানায় তাকে মােরাবাদ নিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু তার পিতামাতা সর্বদাই তার অনুরােধ প্রত্যাখ্যান করে। পারমােদের পিতামাতা কখনােই এই বিষয়ে অনুসন্ধান করার চেষ্টা করেননি। কিন্তু পারমােদের ঘটনা পুরাে এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে এবং মােরাবাদের মেহেরা নামক এক পরিবারের সাথে পারমােদের ঘটনাগুলাে মিলে যায়। মােরাবাদের সেই পরিবার অনেকগুলাে ব্যবসা পরিচালনা করে এবং সেসাথে তাদের ‘মােহন ব্রাদার্স’ নামক একটি দোকান রয়েছে। সেই দোকানটি পরমানন্দ মেহেরা নামক এক ব্যক্তি সূচনা করেন এবং তিনি ১৯৪৩ সালের ৯ মে মারা যান। তার মৃত্যুর ১৮ মাস পর পারমােদ জন্মগ্রহণ করেন। পরমানন্দ দধি খুবই পছন্দ করত এবং সেই কারণে তার গ্যাস্ট্রিক হয় যা পরবর্তীতে অ্যাপেনডিকটিস এ রূপান্তরিত হয় এবং সে মৃত্যুবরণ করে। মৃত্যুর কিছুসময় পূর্বে পরমানন্দ বাথটাবে স্নান করেছিলেন।

১৯৪৯ সালে মেহেরা পরিবার বিসুলীতে গিয়ে পারমােদের সাথে সাক্ষাতের জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করে, তখন পারমােদের বয়স ৫ বছর। যখন তারা সেখানে পৌছেন দুর্ভাগ্যবশত পারমােদের বর্তমান পরিবার সেখানে ছিলেন না, কিন্তু পারমােদের পিতামাতা মেহেরা পরিবারের আমন্ত্রণ স্বীকার করে পারমােদের কথাগুলাের সত্যতা পরীক্ষার জন্য তাকে নিয়ে মােরাবাদে গমন করেন।

পারমােদদের রেলওয়ে স্টেশনে রিসিভ করেন পরমানন্দের কাকাতাে ভাই শ্রীকরম চান্দ মেহেরা। পারমােদ তাকে দেখা মাত্রই কেঁদে তার দিকে হাত বাড়িয়ে বলল, “বড় ভাই, আমি পরমানন্দ।” এরপর পারমােদকে মােহন ব্রাদার্স এ নিয়ে যাওয়া হয়। সেই দোকানে প্রবেশ করার মুহূর্তে পারমােদ অভিযােগ করল যে, তার সেই বিশেষ সিট পরিবর্তন করা হয়েছে। সত্যিই পরমানন্দের মৃত্যুর কিছুদিন পর তার বসার সিটটি সরানাে হয়েছিল । পারমােদকে পরীক্ষার জন্য সেই সােডা ফ্যাক্টরীর একটি জটিল মেশিন গােপনে সরিয়ে রাখা হয়েছিল। যখন পারমােদকে সেই যন্ত্রটি দেখানাে হল তখন সে কারাে সাহায্য ছাড়াই সেই যন্ত্রের ত্রুটি চিহ্নিত করল এবং সেখানের এক সঙ্গীকে নির্দেশনা দিল মেশিনটি কিভাবে ত্রুটিমুক্ত করা যায় সে সম্পর্কে |

পরবর্তীতে পরমানন্দের বাড়িতে গমনের পর সে পরমানন্দের পূর্বের ঘরটি সঠিকভাবে চিহ্নিত করল। এছাড়াও সে সেখানের একটি নির্দিষ্ট কাপবাের্ড দেখাল এবং জানালাে যে, সে খাবার গ্রহণের সময় এটি ব্যবহার করত। যখন পরমানন্দের মা সেই ঘরে প্রবেশ করল এবং কেউ কিছু বলার আগেই পারমােদ তৎক্ষণাৎ তাকে মা বলে সম্বােধন করল। এছাড়াও সে তার স্ত্রীকে চিনতে পারল এবং তার সন্নিকটে কিছুটা লজ্জিত হল। যদিও তার পূর্বজন্মের সেই স্ত্রী এখন বয়স্ক এবং তার নিজের বয়স মাত্র ৫ বছর। একসময় যখন তারা উভয়ে একাকী হলেন তখন পারমােদ তাকে বললেন, “আমি ফিরে এসেছি তবু তুমি বিন্দি পরনি। এছাড়াও পারমােদ তার পূর্বজন্মের সেই স্ত্রীকে সাদা শাড়ী পরতে নির্দেশ দিলেন। পারমােদ, পরমানন্দের মেয়ে এবং তার ছেলেদের ঠিকভাবেই সনাক্ত করলেন। পরমানন্দের ছােট পুত্রকে পারমােদ চিনতে পারলেন এবং তাকে গাের্ধন বলে সম্বােধন করলেন। কিন্তু যখনই গাের্ধন তার নাম ধরে তাকে সম্বোধন করলেন তৎক্ষণাৎ পারমােদ তাকে বাবা বলে সম্বোধন করতে আদেশ দিলেন। পারমােদ বলল, “আমি এখন শুধুমাত্র ছােট হয়েছি কেবল। এরপর সে তাদের সমস্ত ঘর এবং ব্যবসাকেন্দ্রগুলাে সনাক্ত করল হুবহু। এমনকি সেই কেন্দ্রসমূহের সামান্যতম পরিবর্তনও সেই সনাক্ত করতে পারল।

এরপর পারমােদকে যখন সাহারানপুর নিয়ে যাওয়া হয় তখন সে পরমানন্দের এক ঘনিষ্ট ডাক্তার বন্ধুকে দেখা মাত্র সনাক্ত করতে সক্ষম হন এবং তাকে বন্ধু বলে সম্বােধন করেন। সেখানে ইয়াসমিন নামক এক ব্যক্তিকে দেখা মাত্রই পারমােদ বলে উঠে, “তুমি আমার কাছ থেকে যে টাকাগুলাে ধার নিয়েছ, তা ফেরত দাও। প্রথমদিকে ইয়াসমিন তা অস্বীকার করলেও যখন সে জানতে পারল যে মেহেরা পরিবার সেই টাকা নিতে চায় না, তখন সে স্বীকার করল যে বাস্তবিকই সে পরমানন্দের কাছ থেকে কিছু টাকা ধার নিয়েছিল।

এই সত্য ঘটনাটি ক্রিস্টোফার বেকির Lifecycles: Reincarnation and the Web of Life গ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া পূর্বজন্মের সত্যতা সম্পর্কিত গবেষণার জন্য বিখ্যাত ড. ইয়ান স্টিভেনসন এই ধরনের বহু যুক্তিপূর্ণ সত্য ঘটনা বিবৃত করেন। ড. ইয়ান স্টিভেনসনের গবেষণা কর্ম এবং তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থসমূহ সম্পর্কে জানতে ভিজিট করুন নিম্নোক্ত সাইটে : http://reluctant-messenger.com/reincarnation-proof.htm

মৃত্যুর পর কি নতুন জীবন রয়েছে?

বিখ্যাত রেডিয়েশন অনকোলজিস্ট ড. জেফরি লংগ

যুক্তি উপস্থাপন করেন যে, যদি আমরা বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে পর্যালােচনা করি তবে দেখতে পাব যে এই প্রশ্নের উত্তর হবে ‘হ্যাঁ। মৃত্যুর সন্নিকটের অভিজ্ঞতা বা NDE (Near Death Experience) নিয়ে প্রায় এক যুগ ধরে গবেষণা করার সময় তিনি প্রায় ১৬০০ ব্যক্তিদের বিভিন্ন পুনর্জন্ম সম্পর্কিত ঘটনাগুলাের বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ করেন। অবশেষে তিনি তাঁদের মধ্যে শতভাগ গ্রহণযােগ্য পুনর্জন্মের ঘটনাগুলাে নিয়ে একটি গ্রন্থ রচনা করেন- Evidence of the Afterlife (তথ্যসূত্র : টাইম ম্যাগাজিন, জানুয়ারি ২০১০)। পুনর্জন্ম সম্পর্কিত এই ধরনের হাজারাে গবেষণা ও তথ্য সম্পর্কিত প্রবন্ধ, ভিডিওচিত্র এবং গ্রন্থ ছড়িয়ে রয়েছে সারা বিশ্বব্যাপী।

চিকিৎসাবিদ্যা মতে NDE কি?

মৃত্যুর সন্নিকটের অবস্থাটি দুই রকমের। প্রথম অবস্থায় ব্যক্তিটি প্রায় মুমূর্ষ হবেন, তিনি অচেতন হবেন, তার হার্টবিট বা শ্বাস-প্রশ্বাস থাকবে না, তাই তাকে ‘ক্লিনিক্যাল ডেথ’ বলে ঘােষণা করা হয়। অপর অবস্থাটি হচ্ছে মৃত্যুর নিকটবর্তী সময়ে একটি অন্যরকম চেতনাময় অবস্থা, যেমন তিনি বিভিন্ন ধরনের আনন্দময় অনুভূতি লাভ করেন। নিয়ার ডেথ এক্সপেরিয়েন্স এর সত্যতা নিয়ে চিকিৎসাশাস্ত্রের সম্মতি এখন বেশ জোরালাে। ২০০১ সালের ১৫ ডিসেম্বর বিশ্ববিখ্যাত জার্নাল “দি ল্যানসেট এ প্রকাশিত হয় ১৩ বছর ধরে এনডিই নিয়ে চলা গবেষণাকর্মের ফলাফল । প্রবন্ধটির লেখক ড. ভ্যান লােমেল এনডিই নিয়ে খুবই উৎসাহী হন আমেরিকার ডাক্তার রেইমন্ড মুডির লিখিত ‘লাইফ আফটার লাইফ গ্রন্থটি পড়ে। ১৯৮৮ সালে ভ্যান লােমেল ১০টি ডাচ হাসপাতালে মারাত্মক হৃদরােগে আক্রান্ত হয়ে ক্লিনিক্যাল ডেথ হওয়া সত্ত্বেও বেঁচে যাওয়া ৩৪৪ জন ব্যক্তির বিভিন্ন মৃত্যুর সন্নিকটের অভিজ্ঞতাগুলাে সংগ্রহ করে গবেষণা করেন। এই সময়ে বেশিরভাগ ব্যক্তিই নিজেকে তার দেহের বাইরে অনুভব করেন এবং পরবর্তীতে সেই সময়কার ঘটনাগুলাে হুবহু বর্ণনা করতে সক্ষম হন।

ড. ভ্যান লােমেল বলেন, “একজন ব্যক্তি যখন সব রকমের মস্তিস্কের কর্মক্ষমতা হারান এবং কোমায়। পর্যবসিত হওয়ার কারণে যাকে ক্লিনিক্যাল ডেথ ঘােষণা করা হয়, তখন তার পক্ষে কিভাবে কি ঘটেছিল তার হুবহু বর্ণনা দেওয়া সম্ভব? বেশকিছু ক্ষেত্রে অন্ধব্যক্তিরা হুবহু তাদের সেই সময়ের দৃশ্যমান বিভিন্ন ঘটনা বর্ণনা করতে সক্ষম হয়েছেন। ড. কেনিথ রিং সম্পূর্ণরূপে অন্ধ ব্যক্তিদের এনডিএ সম্পর্কে গবেষণা করেন, যেখানে ২৫টি ঘটনার মধ্যে ১৫টির ক্ষেত্রেই অন্ধ ব্যক্তিটি দেহের বাইরে দৃষ্টিক্ষমতা লাভ করেন। ২০০৭ সালে ভ্যান লােমেল প্রকাশিত “এন্ডলেস্ কনসাস্নেস্ : এ সাইন্টেফিক ভিউ অন দা নিয়ার ডেথ এক্সপিরিয়েন্স” বেস্ট সেলার গ্রন্থ হিসেবে স্বীকৃতি পায় যেখানে মৃত্যুর পরবর্তী জীবনের নানা গবেষণালব্ধ প্রমাণ সংযােজিত হয়। সুতরাং মৃত্যুর সন্নিকটের অভিজ্ঞতা হল পুনর্জন্মের বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকৃত প্রমাণ।

সদৃশ মুখমণ্ডল

বহু পুনর্জন্ম বিষয়ক ঘটনাগুলােতে ব্যক্তিটির চেহারাগত মিল দেখা যায়। এই বিষয়ে আমরা আমেরিকার কানেকটিকাটের এক অবসরপ্রাপ্ত যােদ্ধা জেফরি কীন এর ঘটনা উদাহরণ হিসেবে দেখতে পারি। তার গ্রন্থ Someone Else’s Yesterday তে তিনি বর্ণনা করেন যে, তিনি তাঁর পূর্বজন্মের কথা স্মরণ করতে পেরেছেন এবং তিনি পূর্বজন্মে ছিলেন জন বি. গর্ডন, যিনি ১৮৬২ খ্রীস্টাব্দে আমেরিকান সিভিল যুদ্ধের সময় অ্যান্টিতাম যুদ্ধক্ষেত্র পরিচালনা করেন। জন গর্ডন এবং জেফরি কীন এর অভ্যাস এবং চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের মিল রয়েছে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিল রয়েছে তাদের চেহারায়।

এমনকি উভয়ের দেহে এবং মুখে একই ধরনের দাগ রয়েছে, এমনকি গর্ডনের শরীরে যেসব অংশে যুদ্ধক্ষেত্রে আঘাত পেয়েছিলেন, সেই চিহ্নগুলাে জেফরি কীনের শরীরে রয়েছে। Born Again নামক বিখ্যাত গ্রন্থে লেখক ওয়াল্টার সিমকিউর বিভিন্ন পুনর্জন্মের ঘটনা বিশ্লেষণ করে বলেন যে, মানুষের জন্ম এবং বর্তমান কর্ম পূর্ববর্তী জীবনের কোন কিছুর প্রতি কারাে আবেগপূর্ণ সংস্পর্শের কারণে হয়ে থাকে। সিমকিউর এ বিষয়ে বিশ্বের অনেক ব্যক্তির পুনর্জন্ম সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য প্রদান করেন। যেমন-

জেনারেল ক্যাডমাস উইলকক্স এবং যােদ্ধা ওয়েস আর. জালিটার মধ্যে চেহারা এবং শারীরিক গঠনের হুবহু       মিল পাওয়া যায়।

ডরদি ড্যান্ড্রিজ (১৯২২-১৯৬৫) ছিলেন একজন অভিনেত্রী যিনি কৃষ্ণাঙ্গ নারী বলে তাকে অস্কার পুরস্কার         থেকে বঞ্চিত করা হয়। কিন্তু তিনি বেরি (জন্ম ১৯৬৬) হিসেবে পুনর্জন্ম গ্রহণ করে পুনরায় কৃষ্ণাঙ্গ               অভিনেত্রী হন এবং ২০০২ সালে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে অস্কার পুরস্কার লাভ করেন।

সদৃশ সৃষ্টিমূলক কর্ম

একটি আত্মার পূর্বোক্ত জীবনের বিভিন্ন জ্ঞান, মেধা, শৈল্পিক চিন্তাধারা অনেক সময় বর্তমান জন্মে প্রকাশ পায়। পুনর্জন্ম নেয়া এমন সব প্রতিভাবান শিশুদের মধ্যে একজন হলেন একেইন ক্রামারিক। তিনি মাত্র চার বছর বয়স থেকেই অবিশ্বাস্য চিত্র আঁকতে শুরু করেন। তিনি তার এক অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন।

তাকে একসময় স্বর্গে নেয়া হয়েছিল। যদিও তার বয়স মাত্র ১৬ বছর, কিন্তু এ বয়সেই তার আঁকা প্রতিটি চিত্রকর্ম বিক্রি হয় ৫০,০০০ ১,০০,০০০ ইউ.এস ডলার পর্যন্ত। এক্ষেত্রে তাঁর পূর্বজনের চিত্রকর্ম আঁকার দক্ষতা এ জন্মে প্রকাশিত হয় । আরেকজন প্রতিভাবান শিশু শিল্পী হলেন আলেক্সান্দ্রা নেচিতা যাকে চিহ্নিত করা হয়েছে বিখ্যাত শিল্পী পাবলাে পিকাসাের পুনর্জন্ম হিসেবে। মাত্র চার বছর বয়স থেকেই তিনি আঁকতে শুরু করেন কিউবিস্ট চিত্রকর্ম (জ্যামিতিক আকারের সাহায্যে চিত্রাঙ্কন পদ্ধতিবিশেষ) যেটি উদ্ভাবন করেন পাবলাে পিকাসােই । মাত্র ৮ বছর বয়সে আলেক্সান্দ্রা, কিউবিক চিত্রকর্মের জন্য সেরা হয়ে উপাধি পান “Petite Picasso’’ তিনি বর্তমানে পিকাসাের মত ভাস্কর্য এবং চিত্রকর্ম সৃষ্টি করার মাধ্যমে বহু মিডিয়াতে কাজ করেন। এরকম আরেকটি জনপ্রিয় চিত্রকর্ম সম্পাদিত হয় পিটার টিক্যাম্প এবং পল গউগিন (১৮৪৮- ১৯০৩) এর মধ্যে। গউগিন যে ছবি ১০০ বছর আগে এঁকেছিলেন সেই একই ছবি টিক্যাম্প শুধুমাত্র পেন্সিলের মাধ্যমে পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়াই আঁকেন। গউগিনের পূর্বের বিভিন্ন চিত্রকর্মের স্মৃতি এ জন্মে পিটার টিক্যাম্পের মধ্যে অদ্ভুতভাবে প্রকাশ পায়। অবিশ্বাস্যভাবে দু’জনের চেহারাতেও মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

শিশুদের মাঝে পুনর্জন্মের স্মৃতি

শিশুদের অতীত জীবনের স্মৃতি বিষয়ক বিশ্বের বিভিন্ন গবেষকদের তৈরিকৃত হাজার হাজার ডকুমেন্ট রয়েছে। বেশকিছু শিশুর ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে, তারা পূর্বজন্মের বাসস্থানের ঠিকানা স্মরণ করতে পারে এবং পূর্ব জন্মের আত্মীয়-স্বজনদের সনাক্ত করতে সক্ষম হয়। যদিও শিশুদের ক্ষেত্রে এই সকল ব্যাপার অনেকটা কল্পনাতীত, তা সত্ত্বেও তারা আশ্চর্যজনকভাবে পূর্বজন্মের অবিকল ঘটনার বর্ণনা দিতে পারে। ইউনিভার্সিটি অব ভার্জিনিয়া স্কুল অব মেডিসিন এর ডিপার্টমেন্ট অব সাইকিয়েট্রিক মেডিসিন প্রধান ড. ইয়ান স্টিভেনসন প্রায় ৪০ বছর যাবৎ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শিশুদের পূর্বজন্মের ঘটনা নিয়ে গবেষণা করেন। সারাবিশবে এরকম প্রায় ৩০০০ কেইস গবেষণা করে নথি প্রকাশ করেন, যাতে পুনর্জন্ম সম্পর্কে সত্যতা মেলে। ভারতে একই ধরনের গবেষণা করেন নিমহ্যান্স, বেঙ্গালুরু এর ক্লিনিক্যাল সাইকোলজির ডিপার্টমেন্ট প্রধান সাওয়ান্থ পাসরিচা। তিনি ১৯৭৩ সাল থেকে শিশুদের পুনর্জন্ম বিষয়ক ৫০০টি ঘটনা লিপিবদ্ধ করেন। ১৯৭০ সালের শুরু থেকে তিনি ইয়ান স্টিভেনসনের সাথে পুনর্জন্ম বিষয়ক ঘটনাগুলাে গবেষণা করতে থাকেন। পাসরিচা পুনর্জন্ম বিষয়ক ৫টিরও বেশি গবেষণা গ্রন্থ প্রকাশ করেন।

কেন পুনর্জন্মের কথা আমাদের মনে থাকে না?

বর্তমানের জীবনের দুঃসহ অভিজ্ঞতাগুলো সর্বদাই আমাদের কষ্ট দেয়। আমাদের অতীত জীবনের মানসিক কষ্টগুলাে, অপূর্ণ অভিলাষগুলাে এবং মৃত্যুর কষ্ট যদি বর্তমান জীবনে স্মরণে আসে তবে আমরা অবশ্যই ভয়ে, আতঙ্কে এবং মানসিক কষ্টে পক্ষাঘাতগ্রস্থ হয়ে পড়ব। তাই আমরা বর্তমান জীবনে যাদের সাথে কর্মের বন্ধনে সম্পর্কযুক্ত হয়েছি, তাদের সাথে ভালভাবে সম্পর্কযুক্ত হতে পারব না। বর্তমান জীবনের উন্নতির জন্য পূর্বজন্মের স্মৃতি সম্পূর্ণ প্রতিকূল। তাই পুনর্জন্মের স্মৃতির বিস্মরণই আমাদের উপর পরমেশ্বর ভগবানের অপরিসীম কৃপা।

যদি নির্দিষ্ট পরিমাণ আত্মার অস্তিত্ব থাকে তবে কেন পৃথিবীর জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে?

অসীম আত্মা রয়েছে। আমাদের চারপাশে বাতাস, জল এবং মাটিতে কত যে অসংখ্য ক্ষুদ্র জীবাণু এবং পােকা রয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। তাদের মধ্যে কয়েক ভগ্নাংশ যদি মানব জাতিতে বিবর্তিত হয় তবে এই মহাবিশ্বের অন্যান্য স্থানের মত পৃথিবীও জনসংখ্যায় প্লাবিত হবে। পৃথিবী হচ্ছে অসংখ্য আত্মার বসতির মধ্যে ক্ষুদ্রতম একটি গ্রহ মাত্র।

বিভিন্ন ধর্মে পুনর্জন্ম

খ্রীস্টান ধর্ম : যীশু তার শিষ্যদের জিজ্ঞাসা করল, “লোকেরা আমি কে তা বিষয়ে কি বলে? এবং তারা উত্তর দিল, “জন দ্যা ব্যাপটিস্ট; কিন্তু অন্যরা বলল, এলিজা; এবং অন্যরা বলল যে প্রাচীন নবীদের অন্যতম একজন (risen) হয়েছে।” (Luke 9.18-19 যীশু তার অনুসারীদের আরও বলল যে, নবী এলিজা জন দ্যা ব্যাপটিস্ট হয়ে পুনর্জনা ঘটেছিল। (Matthew ১৭.৯-১৩, ১১.১১-১৫) এমনকি একসময়ের সর্বশ্রেষ্ট ধর্মযাজক সেন্ট জাস্টিন মার্টার (১০০-১৬৫A.D), অরিজেন (১৮৫-২৫৪ A.D) পুনর্জন্মের সত্যতা স্বীকার করেন।

ইহুদি ধর্ম (Judaism) : জীউস ইতিহাসবিদ, ফ্লাবিয়াস জোসেফাস্ (৩৭-১০০) লিখেছিলেন এমেন্সেরা এবং ফারসিরা উভয়ই পুনর্জন্ম বিশ্বাস করতেন।

কাবালিস্টরাও পুনজন্ম বিশ্বাস করতেন, যােহারদ এক কাবালিক গ্রন্থে পুনর্জন্ম বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা দেয়া আছে।

ড্রীউজ ধর্ম (Drute) : লেবানন, প্যালেস্টাইন (ইসরাইল অন্তর্ভূক্ত) এবং সিরিয়ার ড্রীউজ সম্প্রদায়ে পুনর্জন্মে বিশ্বাস বিস্তৃতভাবে প্রচলিত
রয়েছে।

সনাতন ধর্ম : সনাতন ধর্মে ভরত মহারাজের কাহিনীসহ শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় পুনর্জন্ম বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য দেয়া রয়েছে।

“বায়ু যেমন ফুলের গন্ধ নিয়ে অন্যত্র গমন করে, তেমনই এই জড় জগতে জীব এক শরীর থেকে অন্য শরীরে তার জীবনের বিভিন্ন ধারণাগুলি নিয়ে যায় । (গীতা-১৫/৮) এছাড়াও শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার ২য় অধ্যায়ের ১৩-৩০নং শ্লোকে পুনর্জন্ম সম্পর্কে -বিস্তারিত আলােচনা করা হয়েছে। শ্রীমদ্ভাগবতে বর্ণিত আছে ভরত মহারাজ পরপর তিনবার পুনর্জন্ম নেন। রাজা হিসেবে, হরিণ হিসেবে, আবার মানব হিসেবে। (স্কন্দ-৫, অধ্যায়-৮)
রেড ইন্ডিয়ানরা পুনর্জন্ম বিশ্বাস করে। পুনর্জন্ম বিশ্বাস করত মিশরের ফারাওরাও। গ্রীসের পলিথিয়েস্কিরা, বােম সহ টাওইজম (Taoism) এবং জোরাস্ট্রিয়ানইজম (Zorastrianism) এই বিশ্বাস প্রচলিত রয়েছে ।

পুনর্জন্ম এবং কর্মে বিশ্বাসের প্রয়ােজনীয়তা

পুনর্জন্ম বিশ্বাস এবং এই বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে জীবন অতিবাহিত করলে মানুষের ব্যক্তিগত চারিত্রিক উন্নতি সাধিত হয় এবং সারাবিশ্বের সামাজিক-রাজনৈতিক সংঘাতসমূহের নিরসন হবে। পুনর্জন্ম মানে আমাদের শরীর, প্রজাতি, ধর্ম, লিঙ্গ এবং তথাকথিত ধর্ম জন্মের পর জন্ম ধরে পরিবর্তিত হতে থাকবে। কেউ যদি জানতে পারে যে তার ধর্ম, দেশ, পরিস্থিতি সবকিছুই পরিবর্তন হবে এবং সে কখনাে হিন্দু, কখনাে বৌদ্ধ, কখনাে খ্রীস্টান হয়ে বিভিন্ন দেহে জন্মের পর জন্মে পরিবর্তিত হতে থাকবে, তবে সে সামাজিক, ধর্মীয় কিংবা রাজনৈতিক ইত্যাদি সংঘাতে কখনােই জড়াবে না। যেহেতু আমরা এই ক্ষণস্থায়ী দেহের মধ্যে আবদ্ধ হয়েছি এবং দ্রুতই আমাদের আত্মা এই দেহ ছেড়ে চলে যাবে, তাহলে কোন যুদ্ধ বা সংঘাত করার প্রশ্নই আসে না। জার্মানরা যদি জানত যে, একজন ব্যক্তি এক জন্মে জিউস বা ইহুদী এবং অন্যজন্মে সে খ্রীস্টান হতে পারে, তবে ৬০ লক্ষ ইহুদিদের আগুনে পুড়িয়ে হত্যা (Holocaust) কখনাে ঘটত না। যখন আমরা উপলব্ধি করব যে, পুনর্জন্ম এবং কর্ম হচ্ছে সঠিক, তখন আমরা আমাদের প্রতিটি কর্ম সম্পাদনে সচেতন হব এবং সকল প্রকার সংঘাত থেকে বিরত থাকব এবং সহনশীল হব। কেননা প্রত্যেক কর্মের সমান ও বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া রয়েছে, তাই আমরা যদি অন্যকে কষ্ট দিই তবে আমাদেরও কষ্ট পেতে হবে। যদিও মানুষ তাদের অতীত কৃতকর্মের কারণে প্রতিনিয়ত দুঃখ কষ্ট পাচ্ছে তবু সে চাইলে বর্তমান সুকর্মের মাধ্যমে পরবর্তী জীবন ও জন্মের দুঃখ নিবারণ করতে পারে। এছাড়াও পুনর্জন্ম বিশ্বাসের কারণে সংঘাত না হলে আমাদের পরস্পরের মাঝে সৌহার্দ্য বৃদ্ধি পাবে এবং আমরা কারাে উপর আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা না করে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারব। এ প্রসঙ্গে ড. জেফরি লং বলেন, আমি একজন ডাক্তার কিন্তু তা সত্ত্বেও আমি ক্যানসার রােগে ভুগছি। কিন্তু আমার শত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও হয়ত আমি সুস্থ হব না। কিন্তু আমার পরম উপলব্ধি হল যে, আমার আবার পুনর্জন্ম হবে। তাই আমি ক্যান্সারের মারাত্মক যন্ত্রণার ভয়েও ভীত নই।”

বাংলাদেশে জাতিস্মর!

খুলনার দাকোপ উপজেলার পূর্ব বাজুয়া গ্রামের সুশান্ত শেখর মণ্ডলের আড়াই বছরের সন্তান অর্পণ মণ্ডল বলছে, সে জাতিস্মর’ । শিশুটির ভাষ্য মতে আগের জন্মের পিতা মৃত নগেন মণ্ডল তার নাম দিয়েছিল রণজিত মণ্ডল। তাদের বসবাস সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার নাড়ারাবাদ গ্রামে। পরে জাতিস্মরের দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী খবর পাঠালে ঘটনাস্থলে হাজির হন ‘পূর্বজন্ম-এ মা কদম মণ্ডল (৬৫)। তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, ‘অর্পণের আচার-আচরণ, কথাবার্তা ও চালচলনের মধ্যে আমি রণজিতের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাচ্ছি। আমি অৰ্পণকে আমার ছেলে হিসেবে স্বীকার করে নিয়েছি।”
শিশুটি বলে, ২০০৪ সালে শিব চতুর্দশী পূজার রাতে তার বন্ধু রাজেন মণ্ডল তাকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়। তারপর অপরিচিত দু’জন। লােক এসে তাকে জোরপূর্বক মােটরসাইকেলে তুলে জঙ্গলের ভেতর নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। তখন তার বয়স ছিল প্রায় ৩০ বছর”
তার পূর্বজন্মের স্ত্রীকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে এর সত্যতা প্রমাণিত হয়। উল্লেখ্য যে, একদিন বিস্ময় বালক অর্পণ পূর্বজন্মের হত্যাকারী রাজেন মণ্ডলকে প্রথম দেখা মাত্রই তাকে সনাক্ত করতে সক্ষম হন। কাকতালীয় ব্যাপার হচ্ছে হত্যাকারী রাজেন মণ্ডল চিহ্নিত হওয়ায় ঐ রাতেই পালিয়ে যায় ।

সূত্র : দৈনিক সমকাল, ১৭ মে ২০০৯ইং

পুনর্জন্মের দাগ

ড. ইয়ান স্টিভেনসন পুনর্জন্মের সাথে সম্পর্কিত জন্মদাগ ও জন্মক্রটির বিভিন্ন দিক সম্পর্কে তুলে ধরেন তার Where Biology and Reincarnation intersect গ্রন্থে।
পূর্বজন্মের কথা স্মরণ করতে পারে এমন শিশুদের মধ্যে ৩৫% শিশুর বিশেষ জন্মদাগ অথবা ত্রুটি রয়েছে এবং তারা পূর্বের জন্মে সে বিশেষ জায়গায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিলেন বলে উল্লেখ করেন। এই ধরনের ২১০ জন শিশুর উপর গবেষণা সম্পাদিত হয়। মােট ৪৯টি ঘটনার মধ্যে ৪৩টি ঘটনার ক্ষেত্রে পূর্বজন্মে নিহত ব্যক্তির পােস্টমর্টেম কপি নিয়ে পর্যালােচনা করে সত্যতা পাওয়া গিয়েছে পূর্বজনের কোন বিশেষ অঙ্গের ক্ষতের দাগ পরবর্তী জন্মে দৃশ্যমান থাকে।

বুকে উজ্জ্বল দাগ থাকা এই ভারতীয় যুবকটি মহারাম নামক ব্যক্তির পূনর্জন্ম (বামে)। মহারামকে দেহের ঠিক যে স্থানে বন্ধুকের গুলিতে হত্যা করা হয়েছিল। ঠিক একই স্থানে বর্তমান যুবকটির দাগ দৃশ্যমান হয়। ডানের চিত্রে মহারামের ময়না তদন্তের রিপাের্টের স্কেচ অঙ্কিত হয়েছে।

এক তুর্কি বালকের বিকৃত কান (মাইক্রোটিয়া)। তার ভাষ্য মতে পূর্বজন্মে তাকে কানে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল।

জন্ম থেকেই পা না থাকা মায়ানমারের এই বালিকা বর্ণনা করে যে, পূর্বজন্মে সে ট্রেন দূর্ঘটনায় মারা যায়। মৃত্যুর পূর্বে তার ডান পা কেটে গিয়েছিল।

ভবিষ্যৎ কী?

শ্রীমদ্ভগবদগীতায় বর্ণনা করা হয়েছে, আমাদের ইচ্ছাতেই আমাদের পরবর্তী জীবনের ভিত্তি সূচিত হয়। অন্তিমকালে (মৃত্যুর সময়) যিনি যে ভাব স্মরণ করে দেহত্যাগ করেন, তিনি পরবর্তী জন্মে সেই ভাব অর্জন করেন, এতে কোন সন্দেহ নেই” (গীতা-৮/৬)। শ্রীমদ্ভগবদগীতায় আরাে বলা হয়েছে যে, আমরা যেমন পুরাতন কাপড় ছেড়ে নতুন কাপড় পরিধান করি, তেমনি আত্মা দেহের মৃত্যুর মাধ্যমে পূর্ববর্তী দেহ ত্যাগ করে নতুন জন্মে, নতুন দেহ লাভ করে। যদিও জন্মজন্মান্তরে আমরা দেহ, আত্মীয়-স্বজন, বাসগৃহ পরিবর্তন করছি কিন্তু আমাদের প্রকৃত আত্মার কোন পরিবর্তন হচ্ছে না।
আত্মার পক্ষে এই জড় জগৎ ভাগ করার অর্থ হল একটি মাছের শুকনাে মরুভূমিতে জল খোঁজার মত। সকল আত্মাই পরমেশ্বর ভগবানের সাথে সম্পর্কযুক্ত। আত্মা যদি পরমেশ্বর ভগবানের নিত্য আলয়ে ভগবানের সাথে যুক্ত হয় তবে সে নিত্য পরমানন্দ লাভ করে, যে আনন্দ সমগ্রজীবন ধরে সে এই শুক নদীর এ জড়জগতে পাওয়ার জন্য চেষ্টা করছে।
এখন প্রশ্ন হল, এই জড় জগতে আমাদের দুঃখময় পুনর্জন্ম কিভাবে বন্ধ করা যায়? এ প্রসঙ্গে গীতায় বলা হয়েছে, “…কিন্তু অপর একটি দিব্য ধাম রয়েছে,

শ্রীমদ্ভাগবতে রাজা
ভরত মহারাজের
তিনটি জন্মের কথা
লিপিবদ্ধ আছে। তিনি
প্রথমে রাজা, পরে
হরিণ এবং পুনরায়
মনুষ্য দেহে পুনর্জন্ম
লাভ করেন।

যেটি কেউ প্রাপ্ত হলে, তাকে আর পুনর্জন্ম গ্রহণ করতে হয় না। বৈদিক শাস্ত্রে পরমেশ্বর ভগবান কে? তার আলয় কোথায়? তাকে পাওয়ার পথ সম্পর্কিত বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। ভগবানের নিত্য আলয়ে জীব প্রেমভক্তিতে ভগবানের সেবায় নিত্য যুক্ত হয়ে পরমানন্দ লাভ করে।

আপনি যদি সেই নিত্য আলয়ে গমন করতে চান তবে আপনাকে পরমেশ্বর ভগবানের প্রতি ভালবাসা এবং ভক্তিকে মধ্যমণি হিসেবে রেখে একটি বিশেষ জীবনযাপন প্রণালীতে অভ্যস্ত হতে হবে। আমাদের সর্বদাই কৃষ্ণ চিন্তা করা উচিত, কৃষ্ণভরক্তিময় জীবনযাপন করা উচিত, যাতে করে মৃত্যুর সময় আমরা কৃষ্ণকে স্মরণের মাধ্যমে সেই নিত্য আলয় গােলক বৃন্দাবনে প্রবেশ করতে পারি। ভগবানের প্রতি প্রেমময় ভক্তিমূলক সেবার মাধ্যমে পুনর্জন্ম এবং সকল প্রকার নিত্য দুঃখ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার এই অপূর্ব সুযােগ কি আপনি হারাতে চান? :

তথ্যসূত্রঃ • Kenneth Ring and Sharon Cooper, MINDSIGHT: Near-Death and out of body experiences in the Blind (Palo Alto, Califoria: William James Center for Consciousness Studies, 1999),

• Searching for vedic India, by Devamrita Swami

• Born Again by Walter Simkiw. MD. Ritana books

• Origin of Soul by Walter Simkiw, MD. Ritana books

• Human Devolution by Michael A. Cremo

Web :

Kevin Ryerson, the Spirit Being Ahtun Re and the Proposed Reincarnation of John Adams, with the Robert Morris | Shirley MacLaine Past Life Case

www.time.com/time/magazine/article/0,9171,1657919,oo.html.

অনলাইন রেফারেন্স

পুনর্জন্মের ভিডিওচিত্র/ডকুমেন্টারি

বিখ্যাত সব পুনর্জন্মের ঘটনাগুলাের ডকুমেন্টারি সচক্ষে দেখতে ব্রাউজ করতে পারেন ইন্টারনেটে।
পুনর্জন্ম নেওয়া বালক জেমস এর কাহিনীর ভিডিওচিত্র দেখুন :

https://www.youtube.com/watch?v=SF3KgGpxXvo

মানুষের মাথা সমন্বিত শুকর ছানার জন্ম গুয়েতমালায় :

https://www.youtube.com/watch?NR=1&feature=endscreen&v=QICj8lwgyes এছাড়াও Discovery, BBCসহ বিখ্যাত চ্যানেল কর্তৃক নির্মিত বহু পুনর্জন্ম বিষয়ক ডকুমেন্টারি রয়েছে ।

পুনর্জন্মের প্রামাণিক গ্রন্থ

পুনর্জন্মের বহু প্রামাণিক ঘটনাবলী বিশ্লেষণ ও গবেষণার মাধ্যমে বহু বিজ্ঞানী পুনর্জন্মের সত্যতা সম্পর্কিত প্রমাণাদি সংগ্রহ করেছেন এবং নানা বিখ্যাত গ্রন্থে পুনর্জন্মের প্রামাণিকতা স্বীকার করা হয়েছে।
যেমন,

Twenty Cases Suggestive of Reincarnation

Children Who Remember Previous Lives

Where Reincarnation and Biology Intersect. etc

 

২০১৩ সংখ্যা ১ জানুয়ারি ফেব্রুয়ারি 

সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।