পুতনা বধ স্থল

প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৯:৪৬ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৯:৪৬ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 59 বার দেখা হয়েছে

পুতনা বধ স্থল

পুতনা বধ স্থল

যশোদানন্দন শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন পরমেশ্বর ভগবান। অমল পুরান শ্রীমদ্ ভাগবতের মতে ভগবানের সকল অবতার এমনকি ভগবান বিষ্ণুও শ্রীকৃষ্ণের অংশ প্রকাশ মাত্র। যেহেতু শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন সমস্ত অবতারের উৎস সেহেতু শ্রীকৃষ্ণের মধ্যে সকল অবতারগণ অবস্থান করেন। তাই যখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অবতীর্ন হন তখন সমস্ত অবতারের গুণাবলী নিয়েই আবির্ভূত হন। তাই তাঁকে অবতারী বলা হয়। ব্রহ্মার একদিনে ৪৩২ কোটি বছরে একবার মাত্র শ্রীকৃষ্ণ এই ধরাধামে আবির্ভূত হন।

পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অপ্রাকৃত ধাম বৃন্দাবন গোকুলে শ্রীকৃষ্ণ বাল্য লীলা প্রদর্শন করেন। প্রকৃতপক্ষে গোকুল মহাবন নামে পরিচিত। গাভী, গো-বৎস ও গোপীগণ এই ধামে অবস্থান করার ফলে এই মহাবন গোকুল নামে খ্যাত। শাস্ত্রে বর্ণিত আছে যে, শ্রীকৃষ্ণের পিতা নন্দ মহারাজের নয় লক্ষাধিক গাভী ছিল। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সকল গাভীর নাম জানতেন এবং কোন গাভী যদি দৃষ্টির অগোচর হত তৎক্ষণাৎ তিনি গাভীটির নাম ধরে ডাকতেন। সাথে সাথে গাভীটি ভগবানের সম্মুখে এসে উপস্থিত হত। গোকুলে ভগবান তাঁর বাল্য লীলায় বহু অসুর বধ করেছিলেন। সেই সকল চমকপ্রদ লীলাগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে পুতনা বধ লীলা।

সত্যযুগে শ্রী বলি মহারাজের গুরু যখন শুক্রাচার্যের আজ্ঞানুসারে দান প্রদান করছিলেন তখন শ্রীভগবান দান গ্রহণ করবার জন্য বামনরূপ ধারণ করে ধরাধামে অবতীর্ণ হন। বামনদেবকে দর্শন করে শ্রী বলি মহারাজের কন্যা ‘রত্নমালা’ মনে মনে বলতে লাগলেন যে, আহা! কি সুন্দর এই বালক, যদি তিনি আমার পুত্র সদৃশ হত তাহলে আমি তাহাকে বক্ষে ধারণ করে মুখে স্তন পান করাতাম। তার কিছুকাল পরে বলতে লাগলেন যে, এই বামন আমার পিতার নিকট ত্রিপাদ ভূমি গ্রহণ ছলে সর্বস্ব হরণ করেছে। অতএব এইরূপ বালক যদি আমার হত তবে তাকে আমি বিষ মিশ্রিত স্তন পান করিয়ে মেরে ফেলতাম। বামনরূপী হরিও পরম ভক্তিমতী বলি কন্যাকে মনে মনে বরদান করলেন যে -তোমার মনোবাঞ্চা পূর্ণ হউক। পরবর্তীতে দ্বাপরযুগে সেই বলিমহারাজের কন্যা পুতনা নামে মথুরায় কংসের অনুচরী হয়ে জন্মগ্রহণ করলেন। কংসের আদেশ অনুসারে পুতনা শ্রীকৃষ্ণকে হত্যা করবার জন্য গোকুলে গমন করলেন। সেখানে গিয়ে পুতনা তার বিষ মিশ্রিত স্তন্য পান করিয়ে অনেক শিশুর জীবন নাশ করে। যাদুবিদ্যার প্রভাবে অতি রূপবতী রমণীর রূপ ধারণ করে পুতনা যশোদা মায়ের ঘরে প্রবেশ করল। মৃদু হাস্যে ভ্রু-ভঙ্গি করে সে সকলের দিকে তাকাতে লাগল এবং সমস্ত ব্রজবাসীরাই তার রূপে মোহিত হল। শিশুঘাতিনী পুতনা দেখতে পেল যে, শ্রীকৃষ্ণ একটা শয্যার উপর শুয়ে আছে। একটা ছোট্ট শিশুর মতো শ্রীকৃষ্ণ তাঁর চোখ দুটি বন্ধ করলেন, যেন তিনি পুতনার মুখ দর্শন করতে চাইলেন না। শ্রীকৃষ্ণ যখন তাঁর চোখ বন্ধ করলেন, পুতনা তখন তাঁকে কোলে তুলে নিল। পুতনা তার স্তনে এক অতি তীব্র বিষ লাগিয়ে এসেছিল এবং শিশু শ্রীকৃষ্ণকে কোলে নিয়েই সে তৎক্ষনাৎ তাঁকে তার স্তন দান করল, যাতে সেই স্তন পান করা মাত্রই তাঁর মৃত্যু হয়। শ্রীকৃষ্ণ ক্রদ্ধভাবে তৎক্ষনাৎ সেই স্তন গ্রহণ করে দুগ্ধরূপী বিষের সঙ্গে পুতনার প্রাণবায়ুও শোষন করে নিলেন। তখন সেই রাক্ষসী পুতনা হাত – পা ছড়িয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আর্তনাদ করতে লাগল। সে বিকটভাবে আর্তনাদ করতে লাগল এবং তার সমস্ত শরীর ঘামে ভিজে গেল। এইভাবে আর্তনাদ করতে করতে যখন তার মৃত্যু হল, তখন প্রচন্ড এক শব্দে নদ-নদী, পাহাড়-পর্বত, ধরণী কেঁপে উঠল। এইভাবে পুতনা রাক্ষসীর বিভীষিকা সমাপ্ত হল। তার বিশাল শরীর পতনের ফলে ছয়- ক্রোশ জায়গা জুড়ে সমস্ত গাছপালা বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছিল।

শ্রীকৃষ্ণ এতই কৃপাময় যে, সেই রাক্ষসী যেহেতু তার বুকের দুধ দান করবার জন্য তাঁর কাছে এসেছিল, তাই তিনি তার মনোকামনা পূর্ণ করেছিলেন এবং পুতনার সেই কার্যকলাপ মাতৃবৎ বলে গ্রহণ করেছিলেন। আর শ্রীকৃষ্ণের দ্বারা নিহত হওয়ার ফলে সে মুক্তি লাভ করেছিল। ভক্তরা তাই প্রার্থনা করেন যে, – শত্রুভাবাপন্ন হয়ে শ্রীকৃষ্ণকে কিছু দান করার – ফলে পুতনা এই রকমের সৌভাগ্য অর্জন করতে পারে, তাহলে ভক্তিভরে শ্রীকৃষ্ণের আরাধনা করলে যে কি লাভ হবে, সেটা কে কল্পনা করতে পারে। উল্লেখ্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণ – তাঁর আবির্ভাবের সপ্তম দিবসে এই লীলাটি সম্পন্ন করেছিলেন।

এখনও বৃন্দাবনে গেলে এই পবিত্র স্থানটি দর্শন করা যায়। এখানে বহু প্রাচীন একটি মন্দির রয়েছে যার দেয়ালে পুতনা বধ লীলার চিত্র অঙ্কিত আছে।

আমরা প্রায় সময়ই বিভিন্ন শাস্ত্র হতে ভগবান – শ্রীকৃষ্ণের অসাধারণ বিভূতিসম্পন্ন লীলাসমূহ পাঠ ও শ্রবণ করে আনন্দ পেয়ে থাকি। যদি আমরা এই সকল পবিত্র লীলাস্থানসমূহ স্বচক্ষে দর্শন করতে পারি তাহলে কি পরিমাণ – অপ্রাকৃত আনন্দ লাভ করব তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই নন্দ যশোদা, গোপ- গোপী ও রাধাকৃষ্ণের চরণরেণু শোভিত দিব্য ব্রজভূমি দর্শনের জন্য এখন আপনার মনকে নিমগ্ন করুন, কেননা ভগবানের এই অপ্রাকৃত তীর্থ স্থান একবার দর্শন করলে মন, চেতনা, শুদ্ধ পবিত্র হয় এবং জীব ভগবদ্ধাম প্রাপ্ত হয়।

হরে কৃষ্ণ ।


মাসিক চৈতন্য সন্দেশ , আগস্ট ২০১০ ইং

সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।