এই পোস্টটি 980 বার দেখা হয়েছে
বিবাহ একটি পবিত্র বন্ধন। এটি সুপ্রসিদ্ধ মতবাদ। কিন্তু এই জড়জগতে যারা তথাকথিত সামাজিক প্রথা হিসেবে বিবাহকে গ্রহণ করছে তারা কি সত্যিই বিবাহকে একটি পবিত্র বন্ধন হিসেবে মনে করছে কিংবা গড়ে তুলতে পারছে? উত্তরটি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ‘না’। কেননা বিবাহের প্রকৃত তত্ত্ব বা তাৎপর্যই সম্পর্কে অধিকাংশই অবগত নয়।বিবাহের পর কিভাবে জীবন যাপন করতে হয়। কিভাবে পরস্পরের মধ্যে সমঝোতা সৃষ্টির মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করতে হয় ইত্যাদি সম্পর্কে মানুষ বলতে গেলে অজ্ঞ। এ কারণে প্রতিটি গৃহেই ঝগড়া-বিবাদ, বিবাহ বিচ্ছেদ ইত্যাদি নানাবিধ সমস্যা ঘটেই চলেছে।
তাই এ সমস্যা নিরসনের জন্য বিবাহের প্রাথমিক পর্যায় থেকে কি কি করা উচিত এ সম্পর্কে বিস্তৃত তথ্য ‘চৈতন্য সন্দেশ’ তুলে ধরছে। এ প্রতিবেদনটি প্রতি সংখ্যায় পাঠকদের জন্য লিখছেন ইস্কন ভক্তিবৃক্ষের অন্যতম প্রচারক বিজয় বেনুগোপাল দাস এবং তার সহধমির্নী প্রেমপদ্মীনি দেবী দাসী। তারা বিশেষত মধ্যপ্রাচ্য সহ সারা বিশ্বে কৃষ্ণভাবনাময় সুখী গৃহস্থ জীবন কিভাবে গড়ে তোলা যায় সে সম্পর্কে প্রচার করেন। উল্লেখ্য তারা দুজনই ১৯৮৯ সালে শ্রীমৎ জয়পতাকা স্বামী মহারাজ থেকে দীক্ষা গ্রহন করেন।
বিষয়: পাত্র পাত্রী
নির্বাচন
[বি:দ্র: নিজের এই প্রতিবেদনটি মূলত যারা কৃষ্ণভক্তিতে যুক্ত রয়েছেন তাদের জন্য হলেও যারা এখনও কৃষ্ণভক্তিতে যুক্ত হননি তারাও এর মাধ্যমে উপকৃত হতে পারবেন।]
একজন ভক্তের জন্য পাত্র/পাত্রী নির্বাচন করা বিভিন্ন দিক থেকে অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। সেক্ষেত্রে সর্বপ্রথম হল আমার সঙ্গী কি পারমার্থিক জীবনধারার ক্ষেত্রে আমার মতই আগ্রহী? দ্বিতীয়ত তিনি জড়জাগতিকভাবে কতটা স্বাবলম্বী বা যোগ্য? তৃতীয়ত আমাদের বৈবাহিক জীবন সন্তোষজনক হবে কি হবে না? এই আশঙ্কা আমরা সাধারণত যে সমস্ত প্রতিকূলতার সম্মুখীন হই তা এজন্যেই যে আমরা সর্বাবস্থায় ভগবানের শরণাগত নই।
তাই ভগবদগীতায় ভগবান ব্যক্ত করেছেন, ‘‘তুমি আমার আশ্রয় গ্রহনের মাধ্যমে জড় জগতের সমস্ত প্রতিকূলতা অতিক্রম করতে পারবে। কিন্তু মিথ্যা অহমিকার বশবর্তী হয়ে যদি তুমি আমাকে ভুলে যাও। তবে তুমি হেরে যাবে’’(গীতা ১৮/৫৮) তাই সঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রথম পদক্ষেপটি হল কৃষ্ণের আশ্রয় গ্রহন করা। এ জন্যে আমাদের কৃষ্ণের প্রতি বিশ্বাস থাকা কর্তব্য যে, কৃষ্ণই আমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ সঙ্গী।
তথাকথিত ভালোবাসার আশ্রয়ে পরস্পরের প্রতি আর্কষিত হওয়ার চিন্তাধারা আমাদের অনেকের মধ্যেই থাকে। কিন্তু তা দেহগত এবং মানসিক আর্কষনের উপরই নির্ভরশীল এবং তা বেশিদিন স্থায়ীও হয় না। যদি কৃষ্ণ আমাদের সঙ্গীকে মঞ্জুর না করেন তবে আমরা অনেক প্রতিকূলতার সম্মুখীন হব। তাই সেই প্রকার ভালোবাসার গভীর সম্পর্ক গড়ে তোলা উচিত যার মাধ্যমে আমরা উভয়রই পারস্পরিক সহায়তায় কৃষ্ণের কাছে পৌঁছাতে পারি।
আমরা কর্দম মুনির মত কৃষ্ণের শরণাগত নই যে, যিনি শুধুমাত্র কৃষ্ণের ধ্যানের মাধ্যমে অন্য কোন কিছুর সহায়তা ছাড়াই জীবনসঙ্গী নির্বাচন করতে পেরেছিলেন। তাই সেক্ষেত্রে আমাদের উচিত ইস্কনের কোন সিনিয়র এবং বিশ্বস্ত ভক্তমন্ডলীর সহায়তা নেওয়া। যাতে করে একজন উপযুক্ত পাত্র/পাত্রী আমাদের জীবনে পেতে পারি। এরপর পাত্র/পাত্রীর খোঁজ পাওয়া গেলে তাদের সঙ্গে সেই ব্যক্তির ব্যাকগ্রাউন্ড বিষয়ে আলোচনা করা উচিত। আমরা ভক্ত জ্যোতিষবিদদের সঙ্গে এই বিবাহের সফলতা বা বিভিন্ন কিছু মিল-অমিল ইত্যাদি বিষয়ের আলোচনা করতে পারি।
এ ক্ষেত্রে প্রশ্ন আসতে পারে। “যদি কৃষ্ণ এখানে জড়িত থাকে তবে জ্যেতিষবিদের কি প্রয়োজন?” আমরা হয়ত বলতে পারি, “যদি সংসার জীবন কৃষ্ণভাবনাময় হয় তাতেও কি যথেষ্ট নয়?” এক্ষেত্রে যদি গুরু বা কোন সিনিয়র ভক্ত প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন। তবে তিনি জ্যেতিষিদের সহায়তায় দুজনের প্রকৃত অবস্থা জেনে নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে এটি কৃষ্ণের ইচ্ছানুসারেই তারা হয়ত এটি করতে পারেন। যা হোক সাধারণত আমাদের যথাসম্ভব কোন অযোগ্য ব্যক্তিকে বিয়ে করার ঝুঁকিকে এড়িয়ে চলা উচিত।
আমরা অনেকেই হয়ত দেহগত এবং মনগত আকর্ষণকেই শুধুমাত্র প্রাধান্য দিয়ে থাকি এবং পরে আরো অনেক কিছুই আমাদের বিবেচনায় নিয়ে আসি। কিন্তু সেসব বিবেচনা জাগতিক হোক কি পারমার্থিক জীবন ধারা উভয় ক্ষেত্রকেই ক্ষতিগ্রস্থ করবে। এমনকি আমাদের জানা মতে সেই সঙ্গীজন যদি ভালোও হয়ে থাকে তবুও আমাদেরকে জ্যেতিষদের সহায়তা নেয়া উচিত। কেননা প্রথম হয়ত বিয়ের পরেই আমার সঙ্গীজনের প্রতি আমাদের আচরণ পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। দ্বিতীয়ত, জ্যেতিষবিদ্যাগতভাবে বিয়ের মাধ্যমে দু’জনের কর্মের ফলাফল একত্রে যুক্ত হয়। তাই এটি উত্তম হবে যে, আমাদের দু’জনের কর্মের ফলাফল কি আমাদের দু’জনের জন্যই সহযোগী হবে কি হবে না।
কেবল যৌন জীবনের ভিত্তিতে স্ত্রী এবং পুরুষের মিলন হওয়া উচিত নয়। সেই ক্ষেত্রে বহু বিচার্য বিষয় রয়েছে। বিশেষ করে স্বভাব এবং রুচি। স্ত্রী এবং পুরুষের মধ্যে যদি স্বভাব এবং রুচির পার্থক্য থাকে তা হলে সেই মিলন কখনই সুখের হবে না। প্রায় চল্লিশ বছর আগের ভারতীয় বিবাহের প্রথমে বর এবং তার পর তাদের বিবাহ হত। তা হতো দু’পক্ষের পিতা মাতার নির্দেশনায়। জ্যেতিষ শাস্ত্র অনুসারে, পিতা মাতার ছেলে মেয়েদের স্বভাব এবং রুচি নির্ধারণ করতেন এবং তাতে মিল থাকলেই কেবল তাদের বিবাহ হত অন্য সমস্ত বিচার ছিল গৌন। জ্যেতিষ গননায়, দিব্য অথবা আসুরিক গুণ বনুসারে মানুষের শ্রেণিবিভাগ হয়ে থাকে। সেই বিচার অনুসারে পতি- পত্নীর মনোনয়ন হত। দিব্য গুণসস্পন্না কণ্যাকে দিব্য গুণসম্পন্ন পাত্রের কাছে এবং আসুরিক গুনসম্পন্না কন্যাকে আসুরিক গুণসম্পন্ন পাত্রের কাছে সম্প্রদান করা উচিত। তা হলে তারা সুখী হবে। কিন্তু কন্যা যদি আসুরিক হয় এবং পাত্র যদি দিব্য গুণাবলীসম্পন্ন হয়, তা হলে সেই যোটক বেমানান হবে এবং বিবাহ কখনো সুখের হতে পারে না। বর্তমানে, যেহেতু ছেলে- মেয়েদের গুন এবং স্বভাব অনুসারে বিবাহ হচেছ না, তাই অধিকাংশ বিবাহই দু:খময় এবং নেইজন্য তাদের বিবাহ বিচেছদ হয়। (শ্রীল প্রভুপাদ তাৎপর্য-ভাঃ-৩/২৪/১৫)
(আগামী সংখ্যায় পাত্র/পাত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্র আরও কিছু গুরুত্বপূর্ন বিষয় তুলে ধরা হবে) হরেকৃষ্ণ!
(মাসিক চৈতন্য সন্দেশ মার্চ পত্রিকা ২০১১ তে প্রকাশিত)