এই পোস্টটি 161 বার দেখা হয়েছে
১৯৩০ খ্রীস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে দেশনায়ক সুভাষচন্দ্র বোস কিছু স্বনামধন্য বিশিষ্টজনের সহিত কলিকাতা বাগবাজারস্থ শ্রীগৌড়ীয় মঠে আগমন করেন শ্রীল প্রভুপাদের সাক্ষাৎলাভের জন্য। সেই সাক্ষাতের কিয়দংশ তুলে ধরা হলো-
নেতাজী: আমি দেশমাতৃকাকে ইংরেজ শাসন থেকে মুক্ত করিবার জন্য সংকল্পবদ্ধ। সমগ্র দেশব্যাপী শ্লোগান দিয়েছি – “তোমরা আমায় রক্ত দাও। আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব।…” সম্প্রতি আমি জানিলাম যে সমাজের অনেক তরুনযুবকেরা আপনার শ্রীচরনাশ্রয় গ্রহণ করিয়াছে। আপনি দয়া করে তাদের কয়েকজনকে আমার আন্দোলনে সংযুক্ত হতে বলুন, যাতে তারা স্বাধীনতার লড়াইয়ে অংশগ্রহণ করে।
প্রভুপাদ: আপনি শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা পড়িয়াছেন কি?
নেতাজী: হ্যাঁ পড়িয়াছি।
প্রভুপাদ: তাহা হইলে আপনার শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার এই শ্লোক নিশ্চয়ই স্মরণ আছে —
“যং যং বাপি স্মরণ ভাবং ত্যজত্যন্তে কলেবরম্।
তং তমেবৈতি কৌন্তেয় সদা তদ্ভাবভাবিতঃ॥” (শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা ৮/৬)
“হে কৌন্তেয়, মৃত্যুকালে যে যেরূপ ভাব স্মরনপূর্বক দেহত্যাগ করেন, তিনি সেই সেই ভাবই প্রাপ্ত হন এবং সর্বদা সেই ভাবেই ভাবিত থাকেন।”
নেতাজী: হ্যাঁ নিশ্চয়ই স্মরণ আছে।
প্রভুপাদ: তাহা হইলে আপনি পুনর্জন্মে বিশ্বাস করেন নিশ্চয়ই?
নেতাজী: অবশ্যই আমি বিশ^াস করি। এমন কোন হিন্দু আছে কি যিনি পুনর্জন্মে বিশ^াস করেন না?
প্রভুপাদ: যদি ঘটনাক্রমে আপনি আজ মারা যান এবং পরজন্মে ইংল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন, আপনি কি তখনও ভারতের স্বাধীনতার জন্য লড়বেন নাকি ভারতের ওপর নিজের দেশের কর্তৃত্ব বজায় রাখিবার চেষ্টা করিবেন?
নেতাজী: আমি আপনার যুক্তি বুঝিয়াছি কিন্তু এক্ষনে আমাদের দেশের স্বাধীনতার জন্য চিন্তা করা উচিত।
প্রভুপাদ: আপনি সেসকল বিষয় নিয়ে চিন্তিত যাহা ক্ষণস্থায়ী, জড়জাগতিক মুক্তি এই বিচারে যে আমরা ভারতীয়। কিন্তু এই ভারতীয় পদবীও জাগতিক। কিন্তু আমার চিন্তা সমগ্র মানবজাতিকে কি করে জড়মায়ার বন্ধন হইতে মুক্ত করা যাইতে পারে। বাস্তবে শুধু মানবজাতি নয়, সমগ্রজীবকুল কি প্রকারে মুক্ত হইবে….. ইহা আমার ভাবনা।
নেতাজী: আমি ইতিপূর্বে কাহার নিকট ভগবদগীতার এমন প্রাঞ্জল ব্যাখা শুনি নাই। কিন্তু আমার ভয় এই যে আমাদের দেশের স্বাধীনতার আন্দোলন যেন ব্যাহত না হয়।
উক্ত কথার পর দেশনায়ক নেতাজী প্রভুপাদের নিকট পুনরায় তরুণলোকবলের জন্য কোনো অনুরোধ করার সাহস পেলেন না এবং নীরবে প্রত্যাগমন করলেন। (সংগৃহীত)
ডিসেম্বর-২০২২ প্রকাশিত