নীল তিমি না নীল বালক?

প্রকাশ: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ৬:২৯ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ৬:২৯ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 99 বার দেখা হয়েছে

নীল তিমি না নীল বালক?

নীল তিমির সাথে খেলা আত্মহত্যা আর নীল বালকের সাথে খেলা আত্মার মুক্তি

কার্তিকেয় দাস


নীল তিমি বা ব্লু হোয়েল একটি অন লাইন গেইম যেটি একবিংশ শতকের অনলাইন গেইমের মধ্যে অন্যতম আলোচিত গেইম। এটি ‘ব্লু হোয়েল চ্যালেঞ্জ’ নামেও পরিচিত। ২০১৬ সালে যাত্রা শুরু হওয়া এই গেইমটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রয়েছে বলে দাবী করা হয়। গেইমটি যারা পরিচালনা করেন তারা খেলোয়াড়দের ৫০ দিনের একটি সময়সীমা বেঁধে দেয়, যার মাধ্যমে তারা বিভিন্ন স্তর বা শর্ত পেরিয়ে অবশেষে সর্বশেষ স্তরে পৌঁছলে আত্মহত্যা করতে অনুপ্রাণিত করা হয়। নীল তিমি নিজেই জীবনের একটি পর্যায়ে চলে আসে সমুদ্র তীরে, শুকনো ভূমিতে ধীরে ধীরে নিজেকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। বাস্তব প্রমাণ পাওয়া যায় ২০০৮ সালে ৫৫টি নীল তিমি একযোগে সমুদ্র সৈকতে চলে অসে উদ্ধারকারীরা তাদেরকে সাগরে ফেরত পাঠালেও তারা তীরের দিকে বারবার চলে আসে। আপাতভাবে মনে হয় আত্মহত্যাই যেন তাদের উদ্দেশ্য ধাপে ধাপে নিজেকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া, এই গেইমটির নাম তাই ‘ব্লু হোয়েল চ্যালেঞ্জ’ বেছে নেওয়া হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। এই গেইমটি খেলার পর বিশ্বে শত শত ব্যক্তি বা টিনেজার আত্মহত্যা করেছেন বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। এমনকি বাংলাদেশেও এই গেইমের প্রতি টিনেজারদের আগ্রহ দেখা যায় বলে অনেক গণমাধ্যম থেকে জানা যায়। ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে এক কিশোরী এই গেইমের প্রতি আসক্ত হয়ে আত্মহত্যা করে এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রকে পুলিশ এই গেইমের সঙ্গে সম্পৃক্ততার জন্য গ্রেপ্তার করে। শুধু তাই নয় ভারতে গুগল সার্চে এই গেইমের প্রতি আসক্তির প্রমাণ পাওয়া যায় সার্চ ইঞ্জিনে র‍্যাংকিংয়ে ২য় স্থান করার মাধ্যমে। এখন অনেক দেশেই এই গেইমটি নিষিদ্ধ। ঘোষণা করা হয়েছে।
যারা এই গেইমটি খেলে তারা মনে করে এটি রোমাঞ্চকর একটি গেইম, কিন্তু তারা অবগত নয় যে, এর চেয়েও অধিক রোমাঞ্চকর উত্তেজনাপূর্ণ একটি লাইফ চ্যালেঞ্জিং গেইম রয়েছে। যার নাম হল ‘ব্লু বয় (কৃষ্ণ) চ্যালেঞ্জ’। এখন প্রশ্ন হল এই ব্লু বয় (কৃষ্ণ) চ্যালেঞ্জ গেইমটি কি? এখানে সেই ব্লু হোয়েল চ্যালেঞ্জের মতো ১০টি স্তর রয়েছে এবং সর্বশেষ স্তরটি হল সবচেয়ে রোমাঞ্চকর স্তর। স্তরগুলো হল :
১ম স্তর: প্রথম চ্যালেঞ্জটি শুরু হয় নিজেকে নিম্নোক্ত প্রশ্নগুলোর উত্তর অনুসন্ধানের মাধ্যমে যে: আমি কে? ভগবান কে? এবং ভগবানের সঙ্গে আমার সম্পর্ক কি?
২য় স্তর: শ্রীমদ্ভগবদ্‌গীতা ও শ্রীমদ্ভাগবতের মতো জ্ঞানগর্ভ গ্রন্থগুলো অধ্যয়ন শুরু করা।
৩য় স্তর: মহাত্মাদের কাছ থেকে শ্রীমদ্ভগবদ্‌গীতা ও শ্রীমদ্ভাগবতের অমিয় বাণী শ্রবণ শুরু করা।
৪র্থ স্তর: প্রত্যুষে শয়ন ত্যাগ করা এবং মন্ত্র ধ্যান অর্থাৎ ভগবানের পবিত্র নাম

হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে ।
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে ।।

জপ করা। যখন আপনি জপ করবেন তখন মহামন্ত্রের প্রতিটি শব্দের প্রতি মনোনিবেশ করতে হবে। অন্তত ১০৮ বার জপ করতে হবে।
৫ম স্তর: এই প্রক্রিয়া চলমান থাকবে যতদিন না আপনি উপলব্ধি করতে পারেন যে, আপনার বুদ্ধিমত্তা নিখুঁত হয়েছে। ভাল-মন্দ পার্থক্য নির্ণয়ের জন্য আপনার পরিকল্পনা থাকতে হবে। অবশেষে চেষ্টা করতে হবে সেই সব ভাল কাজগুলো করার জন্য ।
৬ষ্ঠ স্তর: যারা এই ব্লু বয় চ্যালেঞ্জটি গ্রহণ করেছেন সেই সমস্ত ব্যক্তি বা ভক্তের সঙ্গ করতে হবে এবং এমনকি তাদের সঙ্গে থেকে মন্ত্র জপ, ভাগবত ও ভগবদ্গীতা শ্রবণ করতে হবে।
৭ম স্তর: তীক্ষ্ণ বুদ্ধি দিয়ে ৬টি বিপজ্জনক বিষয়কে হৃদয় থেকে কেটে ফেলতে হবে। সেগুলি হল কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ ও মাৎসর্য। এই কার্যটি প্রতিদিন করার চেষ্টা করতে হবে। এটি হলো সবচেয়ে কঠিন কার্য।
৮ম স্তর: এই সমস্ত কার্যকলাপগুলো অব্যাহত রাখতে হবে ব্লু বয় বা কৃষ্ণকে উপলব্ধি করার আগ পর্যন্ত। যিনি আপনাকে প্রতিনিয়ত সাহায্য করছেন এবং জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে রক্ষা করে চলেছেন। এই বিষয়টি বোধগম্য হলে আপনি তখন নির্ভীক হয়ে উঠবেন।
৯ম স্তর: প্রতিদিন এ সমস্ত কার্যকলাপের পাশাপাশি মানবতার সেবা করতে হবে। অর্থাৎ, পরমেশ্বর ভগবানের বা কৃষ্ণভাবনার বার্তা সবার মাঝে প্রচার করা। যার মাধ্যমে আপনি পারমার্থিক গুরুদেবকে খুঁজে বের করতে সমর্থ হবেন। যিনি আপনাকে এই চ্যালেঞ্জটিকে অতিক্রম করার জন্য পরিচালনা করবেন ।
১০ম স্তর: প্রতিদিন সেই ব্লু বয় কৃষ্ণের সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য লালায়িত হতে হবে, আপনার গুরুদেবের তত্ত্বাবধানে বা নির্দেশানুসারে তার প্রতি সেবা সম্পাদন করতে হবে এবং অবশেষে আপনি যদি একনিষ্ঠ হন তবে আপনার জীবনের অন্তিম সময়ে সেই ব্লু বয় কৃষ্ণের সাক্ষাৎ লাভ করতে সমর্থ হবেন। এই ব্লু বয় কৃষ্ণই তখন জন্মমৃত্যুর চক্র থেকে আপনাকে উদ্ধার করবেন ।
সতর্কতা : যদি এই চ্যালেঞ্জটি খেলার সময় আপনি কোন একটি স্তর ছেড়ে চলে যান তবে আপনাকে এই দুঃখালয়ং অশাশ্বতম স্থানে (জড় জগতে) পুনরায় ফিরে আসতে হবে।
যদি আপনি সত্যিই জীবনে কোন অ্যাডভেঞ্চার বা রোমাঞ্চ পেতে চান তবে কেন পঞ্চাশ দিনের তথাকথিত চ্যালেঞ্জ নিতে হবে। বরং এই ব্লু বয় (কৃষ্ণ) চ্যালেঞ্জটি গ্রহণ করাই কি উচিত নয়? এই গেইমটি আপনার হতাশময় একঘেঁয়েমী জীবনকে শুধু রাঙিয়েই দিবে না বরং এটি আপনাকে নিত্য শাশ্বত আনন্দ দিবে।


 

জানুয়ারী-মার্চ  ২০১৮ ব্যাক টু গডহেড
সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।