দ্বন্দ্ব নিরসন

প্রকাশ: ৩ জানুয়ারি ২০২২ | ১১:২৬ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ৩ জানুয়ারি ২০২২ | ১১:২৬ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 221 বার দেখা হয়েছে

দ্বন্দ্ব নিরসন

রাধেশ্যাম দাস

অনেক নেতা রয়েছে যারা দু’পক্ষের মধ্যে বিরাজমান কোনো দ্বন্দ্ব নিরসন করতে চান। তাদের জন্য রয়েছে অনেক মূল্যবান শিক্ষা। দ্বন্দ্ব নিরসনের ক্ষেত্রে প্রয়োজন রয়েছে পারমার্থিক পরিপক্কতা, সহিষ্ণুতা, উভয় পক্ষের প্রতি শ্রদ্ধা, সত্ত্বগুণসূচক আচরণ ইত্যাদি।


(একদা ব্রহ্মার চারপুত্র সনৎ কুমার, সনাতন, সনন্দন, সনক বৈকুণ্ঠলোকে গমন করেছিলেন ভগবান বিষ্ণুকে দর্শন করার জন্য। তখন বৈকুণ্ঠের দুই দ্বারপাল জয় এবং বিজয় তাদেরকে ছোট বালক মনে করে ভুলবশত বৈকুণ্ঠলোকে প্রবেশ করতে বাধা দিয়েছিলেন। ফলে তারা চতুঙ্কুমারের চরণে মহাপরাধ করেন। ফলে চতুঙ্কুমার তাদেরকে অভিশাপ দেন। অথচ সেই চারজন ঋষি ছিলেন বৈষ্ণব এবং তাই ক্রোধের বশবর্তী হয়ে তাদের অভিশাপ দেয়া উচিত হয়নি। এই দুই পক্ষের এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভগবান বিষ্ণু এর দৃষ্টান্তসূচক নিষ্পত্তি সাধন করেছিলেন।)

উভয় পক্ষকে নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা

শ্রীল প্রভুপাদ লিখেছেন, “ভগবান জানতেন যে, অপরাধী দ্বারপালেরাও ছিলেন তাঁর শুদ্ধ ভক্ত, যদিও ঘটনাক্রমে তাঁরা অন্য ভক্তদের চরণে অপরাধ করে ফেলেছেন। কোনো ভক্তের প্রতি অপরাধ করা ভগবদ্ভক্তির মার্গে অত্যন্ত ভয়ংকর। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু তাই বলেছেন যে, বৈষ্ণব অপরাধ হচ্ছে মত্ত হস্তীকে ছেড়ে দেওয়ার মতো; কোন মত্ত হস্তী যখন একটি বাগানে প্রবেশ করে, তখন সে সেখানকার সমস্ত গাছপালাগুলি পদদলিত করে। তেমনই, ভগবানের শুদ্ধ ভক্তের চরণে অপরাধ ভক্তিমার্গে ভক্তের স্থিতিকে বধ করে। ভগবানের পক্ষে কোন রকম অপরাধ-ভাব ছিল। না, কেননা তাঁর ঐকান্তিক ভক্তের কোন রকম অপরাধ তিনি গ্রহণ করেন না। কিন্তু ভগবদ্ভক্তকে সব সময় সাবধান থাকতে হয়, যাতে অন্য কোনো ভক্তের চরণে অপরাধ না হয়ে যায়। ভগবান সকলের প্রতি সমদর্শী, এবং তাঁর ভক্তের প্রতি তিনি বিশেষভাবে অনুকূল, তাই তিনি অপরাধী এবং যাদের চরণে অপরাধ করা হয়েছিল, তাঁদের উভয়েরই প্রতি কৃপাপূর্ণ নয়নে দৃষ্টিপাত করেছিলেন। ভগবানের এই মনোভাবের কারণ হচ্ছে তাঁর অপরিমিত অপ্রাকৃত গুণাবলী । ভক্তদের প্রতি তাঁর প্রসন্ন মনোভাব এতই আনন্দদায়ক এবং মর্মস্পর্শী যে, তাঁর মৃদু হাস্যও তাঁদের কাছে আকর্ষণীয় ছিল।” (শ্রীমদ্ভাগবত ৩/১৫/৩৯ তাৎপর্য) পারস্পরিক দ্বন্দ্বের ক্ষেত্রে অন্যতম সবচেয়ে বৃহৎ সমস্যা হলো দুই পক্ষের মধ্যে কোন এক পক্ষকে অবিশ্বাস করা। তাতে অনুভূত হয় যে, “এক্ষেত্রে যে সিদ্ধান্তটি দেওয়া হয়েছে তা একপেশে হয়ে গেছে। আমাদেরকে যথেষ্ট শুনতে দেওয়া হয়নি তাদের কথা প্রথমে শোনা হয়েছে এবং তাই মধ্যস্থতাকারীর মনে প্রথমেই কিছু বিষয় দানা বেঁধেছে। তাই অবশেষে যে সমাধানটি করা হলো তাতে আমরা অখুশি।”
যখন আমাদের অধীনে সেবারত কেউ আমাদের কথা অমান্য করে বা আমাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করে বা তার কোনো কথাবার্তায়, কার্যাবলীতে বা আচরণে অপদস্থতা নিয়ে আসে তখন তাদের প্রতি আমাদের ভালোবাসা পরিত্যাগ করা উচিত নয়। জড় জগতের মালিকরা এক্ষেত্রে হতাশায় পর্যবসিত হয়ে তাদের সেবকদের উদ্দেশ্যে চেঁচামেচি করতে পারে। কেননা অবাধ্য সেবকের কারণে। তারা জগতের কাছে তাদের বিশালত্ব প্রমাণ করতে পারছে না। কিন্তু শ্রীমদ্ভাগবতে দেখা যায় ভগবান বিষ্ণু ভুল-ভ্রান্তি সত্ত্বেও তিনি তার অধঃনস্তদের ওপর ভালোবাসা পরিত্যাগ করেননি। যদি আমরা ভগবানের এই আদর্শ আচরণ অনুসরণ করতে চাই, উভয় পক্ষের মুখে হাসি ফোটাতে চাই, তবে ভগবানের বিস্ময়কর ও চমৎকার আচরণের প্রশংসা করার মাধ্যমে আমাদেরকে ভগবানের অসীম অপ্রাকৃত আচরণের দৃষ্টান্ত শ্রবণ করার মাধ্যমে এবং চেতনাকে এতে নিবিষ্ট করার মাধ্যমে আমরা নিজেদের পারমার্থিক পরিপক্কতাকে গড়ে তুলতে পারি। এর মাধ্যমে আমরা একজন নিবিষ্টকারী এবং অপ্রাকৃত আচরণের অধিকারী হতে পারি।
অপরাধী পক্ষের প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধা নিবেদন শ্রীমদ্ভাগবতের ৩/১৬/৭-১২ শ্লোকসমূহে ভগবান নারায়ণ ব্রাহ্মণদের মহিমান্বিত করেন এবং তাদেরকে তিনি কিরকম শ্রদ্ধা করেন সে বিষয়ে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ব্রাহ্মণদের চরণরেণু তিনি মস্তকে ধারণ করেন, যা লক্ষ্মীকে আমার সঙ্গী হতে আকর্ষণ করেছে। সেসাথে গঙ্গাকে পবিত্র করেছে ইত্যাদি। তিনি আরও বলেন, “ব্রাহ্মণদের মুখে নিবেদিত ঘৃতপক্ সুস্বাদু আহার্য আমি যতটা আনন্দ সহকারে উপভোগ করি, আমার একটি মুখ যে যজ্ঞাগ্নি, তাতে যজমানের দ্বারা অর্পিত হবিতেও আমি ততটা আস্বাদন করি না। এর মাধ্যমে ভগবদ্ধামে প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করার জন্য দ্বাররক্ষীদের প্রতি অভিশাপ দেয়ার যে ভুল চতুঙ্কুমারগণ করেছিলেন, তা তাদের কাছে উন্মোচন করেছিল।” (শ্রীমদ্ভাগবত-৩/১৬/২৪-২৫)
এক সময় পুনে থেকে ৪ ব্রহ্মচারীর একটি দল একটি গাড়িতে করে যাচ্ছিল। এক স্থানে এসে বিশৃঙ্খলভাবে কিছু যুবক রাস্তা পার হচ্ছিল, যার ফলে ভক্তদের সেই গাড়িটি একটি মারাত্মক দূর্ঘটনার মুখোমুখি হতে যাচ্ছিল।
শ্রীল হরিদাস ঠাকুর একজন বেশ্যাকে শ্রদ্ধা করেছিলেন এবং ফলশ্রুতিতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শুদ্ধ ভক্ত হিসেবে পরিগণিত হয়েছিলেন। শ্রীল প্রভুপাদও হিপ্পিদেরকে তাদের দোষত্রুটি সমালোচনা না করে মর্যাদা প্রদান করেছিলেন। ফলে সেই হিপ্পিরাই তখন হ্যাপিতে পরিণত হয়েছিল।
কিন্তু কৃষ্ণকৃপায় চালক ভক্তটি ঠিক সময়ে ব্রেক ধরতে পেরেছিল এবং এভাবে মারাত্মক একটি দূর্ঘটনা এড়িয়ে গেল। কিন্তু ঢালকটি ক্রোধের বশবর্তী হয়ে গাড়ি থামিয়ে দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে যে ছেলেটির কারণে এই দূর্ঘটনা ঘটতে যাচ্ছিল তার বাম হাত ধরে ডান গালে কষে এক চড় দিল। ছেলেটি তখন মুখ দিয়ে বিড়বিড় করছিল। কিন্তু সে কি বলছিল তা কেউ বুঝতে পারল না। এরপর ভক্তরা সিদ্ধান্ত নিল গাড়িটিকে একটি গাছের নীচে থামিয়ে সেখানেই মধ্যাহ্ন ভোজন সেরে নিবে এবং তারপর না হয় যাওয়া যাবে। এ সময় যখন তারা প্রসাদ পাচ্ছিল হঠাৎ তারা দেখল একদল যুবক চিৎকার চেঁচামেচি করে গাড়িটির চারদিক ঘেরাও করেছে। তারা জানতে চাইল, “আমাদের কমিউনিটির ছেলেকে চড় মেরেছে কে? আমরা কেরোসিন নিয়ে এসেছি, তোমাদের গাড়ি পুড়িয়ে দেব এবং তোমাদের সবাইকে ইচ্ছামতো মারব।” গাড়ির ভেতরে ভক্তরা তখন সবে মাত্র প্রসাদ সেবন শেষ করল, ঠিক তখনই এই কাণ্ড এবং তারা কি করবে বুঝতে না পেরে ভয়ে কাঁপছিল । অন্যান্য ভক্তরা তখন সেই ভক্ত চালককে বলছিল তাদের কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করার জন্য। চালকটির মনমানসিকতা ছিল ক্ষত্রিয় ধরনের। তিনি বললেন, “এরকম অবস্থাকে আমি ভয় পাই না। আমি একজন যোদ্ধা। আমি অর্জুনের মতো যুদ্ধ করবো।” যখন যুবকরা চিহ্নিত করল, এই চালকই হচ্ছে সেই ব্যক্তি যে চড় মেরেছিল। তখন তারা ছেলেটির কাছে মাথা নত করতে বলল এবং তার পায়ে ধরতে নির্দেশ দিল। তা শুনে চালক ভক্তটি আরো ক্ষেপে গেল। এদিকে অবস্থা আরো জটিল হতে শুরু করল। যুবকদের দলটি গালিগালাজ করতে লাগল। ইতোমধ্যে একজন জ্যেষ্ঠ ভক্ত চালক ভক্তটিকে স্মরণ করিয়ে দিলেন, “প্রভু, আপনার কি স্মরণে নেই? গুরু মহারাজ আমাদেরকে এটি শিক্ষা দিয়েছে যে, তৃণাদপি সুনীচেন, তরোরিব সহিষ্ণুনা। আপনি যদি একবার মাথা নত করেন তবেতো আপনার হারাবার কিছু নেই।” তবুও চালকটিকে রাজী করা গেলো না। অবস্থা বেগতিক দেখে পরামর্শদাতা নিজেই ছেলেটির কাছে চরণ ধরে ‘সরি’ বললেন। কিন্তু বিধিবাম। তবুও যুবকটি তার অবস্থানে অনড়। তখন যুবকরা বলল, “আমরা জানি, এই চালকটি ছাড়া তোমাদের বাকি সবাই ভাল। তাই তোমাদের চালক ব্যতীত আর কারো কাছ থেকেই মাথা নত করা চাই না।” তখন ভক্তরা পুনরায় চালককে অনুরোধ করল, “প্রভু, আমরা কেউ চাই না, প্রভুপাদের সম্পদ এই গাড়িটি আগুনে পুড়ে যাক এবং আপনিও নিশ্চয়ই চান না, ওরা আমাদের আঘাত করুক!” অবশেষে চালক ভক্তটি মাথা নত করে ছেলেটিকে ‘সরি’ বলল। পর মুহূর্তে যুবকরাও উদিত সূর্যের সম্মুখে কুয়াশার আবরনের মতো প্রস্থান করল।
এখানে প্রতীয়মান হয়, আমরা যদি অন্য জীবকে তার প্রাপ্য মর্যাদা না দিই তবে আমাদেরকে এর চরম মূল্য দিতে হবে।
অপরপক্ষে কাউকে মর্যাদা, সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শনের মাধ্যমে আমরা কারো হৃদয় জয়লাভ করতে পারি। শ্রীল হরিদাস ঠাকুর একজন বেশ্যাকে শ্রদ্ধা করেছিলেন এবং ফলশ্রুতিতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শুদ্ধ ভক্ত হিসেবে পরিগণিত হয়েছিলেন। শ্রীল প্রভুপাদও হিপ্পিদেরকে তাদের দোষত্রুটি সমালোচনা না করে মর্যাদা প্রদান করেছিলেন। ফলে সেই হিপ্পিরাই তখন হ্যাপিতে পরিণত হয়েছিল। ভগবান শ্রীবিষ্ণু ক্রোধান্বিত কুমারদের প্রতিও সেই শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেছিলেন এবং তখন কুমারদের ক্রোধ দূরীভূত হয়েছিল এবং ফলে তাদের মধ্যে সর্বোত্তম বৈষ্ণবীয় গুণাবলীর প্রকাশ ঘটেছিল।

দ্বাররক্ষীদের হৃদয় জয়,
তাদেরকে পরিত্যাগ করা নয়

ভগবান যখন স্বয়ং কুমারদের প্রশংসা করছিল তখন সম্ভবত তার দ্বাররক্ষীরা এটি ভাবতে পারে যে, “আমরা শুধুমাত্র প্রভুর জন্যই এই দ্বাররক্ষির সেবা করছি। এখন প্রভু বোধহয় আমাদের ওপর অপ্রসন্ন হয়েছেন এবং আমাদেরকে পরিত্যাগ করেছেন। তাই এই জীবন রেখে আর কি হবে? আমরা প্রভু কর্তৃক পরিত্যাগ হয়েছি।” এই ধরনের বিষণ্নতা থেকে সেবকদের রক্ষা করার জন্য ভগবান তাদের মুখে হাসি ফোটালেন এবং এই বলে তাদেরকে সম্পূর্ণরূপে নিজের করে নিলেন যে, “আমার পরিচারকেরা যে অশ্রদ্ধা প্রদর্শন করেছে তা আমারই দ্বারা করা হয়েছে, কেননা সেই দ্বারপালেরা আমারই পরিচারক। আমি মনে করি যে, এই অপরাধ আমিই করেছি; তাই এই ঘটনার জন্য আমি আপনাদের কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করি।” (ভাগবত-৩/১৬/৪)
“আমার এই সেবকরা তাঁদের প্রভুর অভিপ্রায় না জেনে, আপনাদের (চতুঙ্কুমার) বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে। তাই যদি আপনারা এই আদেশ দেন যে, তাঁরা যেন তাঁদের অপরাধের ফল ভোগ করে শীঘ্রই আমার কাছে ফিরে আসে এবং আমার ধাম থেকে তাঁদের নির্বাসনের কাল অচিরে অতিবাহিত হয়, তাহলে তা আমার প্রতি আপনাদের অনুগ্রহ বলে আমি মনে করব।” (ভাগবত-৩/১৬/১২)
এভাবে তাদের ভুল সত্ত্বেও যে প্রভুর ভালবাসা এখনও রয়েছে সে বিষয়ে দ্বাররক্ষীরা পূর্ণ নিশ্চিত হলো।
সম্পর্কের ক্ষেত্রে একে অপরের প্রতি লোকেদের অনেক আশা প্রত্যাশা থাকে। যা প্রায়ই হতাশায় পর্যবসিত করে, কেননা জীব স্বভাবতই ভুল করে। কারো অভ্যাস রয়েছে বর্তমানের কাজ ভবিষ্যতের জন্য রেখে দেয়া, কেউবা ধীরে কাজ করে, কেউ কাজ করতে গিয়ে গণ্ডগোল পাকিয়ে ফেলে, কাউকে আবার একই কর্মের জন্য বারংবার বলতে হয়, কেউবা আবার নিম্নমানের কাজ করে ইত্যাদি। এক্ষেত্রে কি করণীয়? এই জগতে শান্তিপূর্ণভাবে জীবন যাপন করতে হলে, আমাদেরকে ক্ষমা, সহিষ্ণুতা, অনুকম্পা, বিনম্রতা ইত্যাদি সব মহৎ গুণাবলী থাকার চর্চা করতে হবে এবং পরমেশ্বর ভগবানের কাছে এই সমস্ত গুণাবলী অনন্ত রয়েছে।
জ্যেষ্ঠ এবং অধীনস্থদের মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিশ্বাস অধিকতর বৃদ্ধি পায়, যদি উভয়পক্ষই একে অপরের প্রতি কোনো প্রত্যাশা ছাড়া ভালবাসা, শ্রদ্ধা প্রদর্শন এবং বিশ্বাস স্থাপন করতে সমর্থ হয়। যেহেতু ভগবান বিষ্ণু তার পরিচারকদের ভুল সত্ত্বেও তাদের প্রতি আস্থা রেখেছিলেন এবং ভালবাসা অব্যাহত রেখেছিলেন, প্রত্যুত্তরে সেবকরাও তা বিনিময় করেছিল। তার মানে এই নয় যে, সেবকদের ভুলকে সংশোধন করা উচিত নয়। ভগবান শ্রীবিষ্ণু তাদের পরিশোধনের জন্য তথাকথিতভাবে জড় জগতে প্রেরণ করেছিল। তিনি আরও বলেছিলেন যে, তার পরিচারকরা স্বতন্ত্র আগ্রহের সহিত আচরণ করেছে। কিন্তু তবুও ভগবান তাদের পরিত্যাগ করেননি, বরং তাদের ক্ষমা করে দিয়েছিলেন এবং পুনরায় তার সেবায় নিয়োজিত করেছিলেন।
মাঝে মাঝে সম্পর্কের ক্ষেত্রে এক পক্ষ মনে করে, অন্য পক্ষ যে ভুল করেছে, তা ক্ষমার অযোগ্য। এরকম কঠোর সিদ্ধান্ত দু’পক্ষের মধ্যেই সম্পর্কের সেতুবন্ধনকে বিনাশ করে। আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, আমরা কি সম্পর্কের মধ্যে দেয়াল গড়ে তুলতে চাই, নাকি সম্পর্ককে পুনঃসংযুক্ত করার জন্য সেতু গড়ে তুলতে চাই? ক্ষমাই হল সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে সেতু স্বরূপ।

লেখক পরিচিতি : রাধেশ্যাম দাস (১৯৬৮) ইস্‌কন পুনে শাখার সভাপতি হিসেবে দায়িত্বরত আছেন। তিনি ভয়েস (Vedic oasis for inspiration, culture & education) এর পরিচালক। তিনি IIT মুম্বাই থেকে M.Tec ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি DME, BE.Mech Engg. & M. Tech ডিগ্রি অর্জনের সময় সর্বোচ্চ র‍্যাংকে ছিলেন। তিনি একাধারে একজন, ইয়ূথ কাউন্সিলর ও কর্পোরেট উপদেষ্টা হিসেবে ভূমিকা পালন করেন। আট অফ মাইন্ড কন্ট্রোল, স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট সহ ছোট বড় অনেক গ্রন্থের লেখক। ২০০৪ সালে যুবকদের মাঝে প্রচারের জন্য গ্লোবাল এক্সিলেন্সি এওয়ার্ড লাভ করেন। ভক্তিরসামৃত স্বামী কর্তৃক অনুপ্রাণিত হয়ে সর্বপ্রথম কৃষ্ণভাবনার সংস্পর্শে আসেন এবং পরবর্তীতে শ্রীমৎ রাধানাথ স্বামী মহারাজের কাছ থেকে দীক্ষা লাভ করেন। উল্লেখ্য, বিভিন্ন স্বনামধন্য কোম্পানি ও কলেজ গুলোতে তিনি কৃষ্ণভাবনামৃত প্রচার করে থাকেন।


 

এপ্রিল – জুন ২০১৬ ব্যাক টু গডহেড
সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।