এই পোস্টটি 39 বার দেখা হয়েছে
পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অনেক মহিমামণ্ডিত নাম রয়েছে যেমনঃ গোপাল, মাধব, মুকুন্দ, ঋষিকেশ ইত্যাদি। দামোদর অর্থ যিনি বাৎসল্য রসের প্রেমরূপ রজ্জু দ্বারা আবদ্ধ হন। একবার গোপাল দুগ্ধের হাড়ি ভেঙ্গে পলায়ন করে, মা যশোদা ষষ্ঠিহাতে তাড়া করে ক্লান্ত ও পরিশ্রান্ত হয়ে পড়েন। তখন গোপাল ইচ্ছা শক্তির মাধ্যমে যশোদার বাৎসল্য প্রেমের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পড়েন। যদিও পরমেশ্বর ভগবানকে কোন জাগতিক রজ্জুর দ্বারা বাঁধা যায় না, কিন্তু মা যশোদা তাকে স্নেহপূর্ণ বাৎসল্য প্রেম দ্বারা বেঁধে ছিলেন, ভগবানকে আমাদের হৃদয়ে শুদ্ধ প্রেমভক্তির মাধ্যমে বেঁধে রাখা সম্ভব। এটাই শ্রীমদ্ভাগবতে খুব সুন্দরভাবে বর্ণনা করা হয়েছে যে, সর্বশক্তিমান পরমেশ্বর ভগবানকে তার শুদ্ধ ভক্ত, প্রেমভক্তি দ্বারা বন্ধন করতে পারেন।
কেন বৈষ্ণবগণ এই দামোদর উৎসব পালন করেন?
আমাদের বৈদিক শাস্ত্র অনুসারে কার্তিক ব্রত বা দামোদর পূজা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ উৎসব। স্কন্ধ পুরান, পদ্মপুরাণ এবং এমনকি ভাগবতে ব্যাখ্যা করে বলা হয়েছে, পরিবারের সবাই মিলে দশ লক্ষ বার কোন মন্ত্র পাঠ বা অন্যান্য ব্রত করলে যে ফল পাওয়া যায় তার থেকে বেশি ফল পাওয়া যায় সঠিকভাবে দামোদর ব্রত করলে। যখন প্রেমভক্তি সহকারে ভগবানকে ঘৃত প্রদীপ নিবেদন করা হয় তখন হৃদয় থেকে সমস্ত খারাপ প্রবৃত্তিগুলো দূরীভূত হয় এবং হৃদয়কে ঘৃতের মত নরম ও কোমল করে তোলে। আর বৈষ্ণবসঙ্গে ভগবানের গুণমহিমা কীর্তন করলে নিজেদের শুদ্ধতাও বৃদ্ধি পায়। কার্তিক মাসে যখন মথুরাতে ভগবানের পূজা করা হত তখন ধ্রুব মহারাজ শ্রীহরিকে দর্শন করার জন্য সেখানে উপস্থিত হতেন। শাস্ত্রে বর্ণিত আছে, কেউ যদি বিশেষ করে কার্তিক মাসে তীর্থযাত্রীগণ বৃন্দাবনে দামোদর আরতী দর্শন করে তাহলে সহজেই তার হৃদয়ে কৃষ্ণপ্রেমভক্তির উদয় হয়। যাদের পক্ষে বৃন্দাবনে যাওয়া অসম্ভব, তারা তাদের জীবদ্দশায় নিকটস্থ ইস্কন মন্দিরে বসে এই বৈদিক সেবাগুলো সম্পাদন করতে পারে কারণ শ্রীল প্রভুপাদের এই ইস্কন মন্দিরগুলো অভিন্ন বৃন্দাবন স্বরূপ।
ব্রত মহিমা/ফলাফল
▶ দামোদর ব্রতকালীন সময়ে কোন ভক্ত যদি ভগবান দামোদরের উদ্দেশ্যে একটি ঘৃত প্রদীপ অর্পণ করে, তাহলে তাঁর শত সহস্র জন্মের পাপরাশি চোখের অর্ধ-পলকেই নষ্ট হয়ে যায়।
▶ কোন ব্যক্তি যদি কার্তিক মাসে ভগবান দামোদরের উদ্দেশ্যে প্রদীপ নিবেদন করে। তিনি ইতোমধ্যে সমস্ত যাগ-যজ্ঞ সম্পন্ন করেন এবং সকল তীর্থ স্থানের ফল প্রাপ্ত হন।
▶ যিনি অন্যের নিবেদনের জন্য ঘৃত প্রদীপ প্রজ্জলন করেন, ভগবান দামোদর তাঁকেও মহিমান্বিত করেন। কার্তিক মাসে যাঁরা শ্রদ্ধাভরে ভগবান দামোদরের অপ্রাকৃত লীলা শ্রবণ করেন, তাঁরা শত গো-দানের ফল লাভ করেন।
▶ যে ভক্ত কার্তিক মাসে ঐকান্তিকভাবে কায়-মন-বাক্যে ভগবান দামোদরের অপ্রাকৃত লীলা শ্রবণ করেন, সে শত পূর্ব পুরুষকে অনায়াসে মুক্ত করতে পারে।
এই ব্রত কিভাবে গৃহে পালন করা যায়?
করণীয়ঃ দামোদর মাসে প্রতিদিন ভগবান শ্রীদামোদরের চিত্রপটের উদ্দেশ্যে ঘৃত প্রদীপ নিবেদনে সকলকে উৎসাহিত করতে হবে।
কারা প্রদীপ নিবেদন করতে পারে?
ছেলে-মেয়ে, যুবক-বৃদ্ধ নির্বিশেষে সকলে ঘৃত প্রদীপ নিবেদন করতে পারে।
কখন: সকালে অথবা সন্ধ্যায় অথবা উভয় সময়ে ঘৃত প্রদীপ নিবেদন করা যাবে।
কোথায়ঃ ভগবান শ্রীদামোদরের বিগ্রহ/চিত্রপট আপনার গৃহের মূল মন্দির বা সুবিধাজনক স্থানে স্থাপন করে এই ব্রত পালন করা যাবে।
ঘৃত প্রদীপ নিবেদনের বিধি
▶ শলিতা প্রজ্জ্বলনের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র ঘি ব্যবহার করা উচিত অথবা তিল তৈল, তবে অন্য কোন তৈল ব্যবহার করা উচিত নয়।
▶ পূজা চলাকালীন সময় সহজ ভজন- কীর্তন করতে পারে। পরিবারের সকলে পূজায় অংশগ্রহণ করলে সবচেয়ে ভাল হয়।
▶ বামহাতে ঘন্টা বাজাতে বাজাতে ঘৃত প্রদীপটি ভগবান শ্রী দামোদরের চিত্রপটের উদ্দেশ্যে ৭ বার ঘড়ির কাটার দিকে ঘুরিয়ে নিবেদন করতে হবে। পঞ্চতত্ত্ব ও শ্রীল প্রভুপাদের উদ্দেশ্যে ৩ বার দেখাতে হবে। তারপর প্রদীপটি পাশে রেখে দিতে হবে এবং তা শেষ না হওয়া পর্যন্ত জ্বলবে। বাড়ির সকলকে দিয়ে এই পদ্ধতিতে ক্রমান্বয়ে ঘৃত প্রদীপ নিবেদন করতে হবে।
▶ প্রদীপ নিবেদনের সময় দামোদর অষ্টকম কীর্তন খুবই ফলপ্রদ যদিও বাধ্যতামূলক নয়।
▶ পূজার পূর্বে বা পরে ভগবান দামোদরের অপ্রাকৃত লীলা পাঠ করাও মাহাত্ম্যপূর্ণ যদিও বাধ্যতামূলক নয়।
▶ পূজা শেষে প্রসাদ বিতরণ করাকে প্রবলভাবে উৎসাহিত করা হয় যদিও বাধ্যতামূলক নয়।
▶ মাটির প্রদীপ পুনরায় ব্যবহার করা উচিত নয়। প্রতিদিন নতুন প্রদীপ ও শলিতা ব্যবহার করতে হবে।
হরে কৃষ্ণ ।
মাসিক চৈতন্য সন্দেশ , নভেম্বর – ২০১০ ইং