এই পোস্টটি 359 বার দেখা হয়েছে
নিজেকে সুস্থ সুন্দর রাখতে আপনি প্রসাধনী সামগ্রীক ব্যবহার করেন। কিন্তু এত কিছু না করে শুধু তামা থেকে আপনার শরীরের কী কী উপকার হতে পারে জানেন কি? আমাদের আয়ুর্বেদ শাস্ত্রেও এই তামার ব্যবহারের অজস্র গুণের কথা বলা আছে। জেনে নিন শুধুমাত্র তামার গ্লাসে বা পাত্রে জল খেয়ে কী ভাবে সুস্থ থাকতে পারেন।
১. হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে: তামার এমন কিছু গুণ রয়েছে যা চোখের পলকে পাকস্থলীর ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াগুলো মেরে ফেলে। ফলে আলসার, বদহজম এবং স্ট্্মাক ইনফেকশনের মতো রোগ হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়। স্টমাকে জমে থাকা ক্ষতিকর টক্সিড বের করে দেওয়ার পাশাপাশি লিভার এবং কিডনির কর্মক্ষমতা বাড়াতেও দারুন কাজে আসে তামা। তাই প্রতিদিন তামার গ্লাসে খাওয়ার পরামর্শ দেন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকেরা। পেটের সমস্যা যেমন: কোষ্ঠকাঠিন্য ও অম্বল যদি থাকে, সেটা কমে। তামার পাত্রে রাখা জল খেলে ডায়রিয়া প্রতিরোধ হয় এবং হজম শক্তিও বাড়ে।
২. অ্যানিমিয়ার প্রকোপ কমে: মানুষের শরীরে তামার অভাবকে পূর্ণ করতে আপনি তামার বোতল বা গ্লাসে জল খান। বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, তামার পাত্রে জল খাওয়া শুরু করলে শরীরের ভিতরে তামার মাত্রা বাড়তে শুরু করে। ফলে একদিকে যেমন কোষের কাজের ক্ষমতা বাড়ে, তেমনি শরীরে আয়রনের শোষণের হারও বেড়ে যায়। ফলে লোহিত রক্ত কণিকার উৎপাদন এত মাত্রায় বেড়ে যায় যে, অ্যানিমিয়ার মতো রোগের প্রকোপ কমতে সময় লাগে না। শরীরের তামার পরিমাণ কম হলে কিছু এনজাইম যা তামার ওপর নির্ভর করে এবং শরীরের আয়রনগুলিকে রক্তকণিকায় পৌঁছে দেয়, তাতে ঘাটতি হয়। ফলে পর্যাপ্ত পরিমাণ তামা অ্যানিমিয়ার হাত থেকে বাঁচায়।
৩. ক্যান্সার দূরে থাকে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হল ক্যান্সার বিরোধী। তাই শরীরে যত অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের পরিমাণ বাড়ে, দূরে থাকে ক্যান্সার। তামায় রয়েছে প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা জলের সঙ্গে মিশে আমাদের শরীরে গিয়ে কোষেদের বিভাজন যাতে ঠিক ঠিক নিয়ম মেনে হয় সেদিকে খেয়াল রাখে। ফলে দেহের ভিতরের কোষের অস্বাভাবিক বিভাজন হয়ে ক্যান্সার সেলের জন্ম নেওয়ার সম্ভাবনা একেবারে কমে যায়। আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির মতে, তামার মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিক্যানসার উপাদান। সেটাই সাহায্য করে এক্ষেত্রে।
৪. আর্থ্রাইটিসের কষ্ট কমে তামা জয়েন্ট-পেইন কমায়। তামার অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি প্রপাটিজ আর্থ্রাইটিসের যন্ত্রণার সঙ্গে শরীরের যে কোনও প্রদাহ কমাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তামায় এমন কিছু উপাদান আছে যা হাড়ের গঠন মজবুত করে। তাই ৪০ এর পর থেকে মহিলাদের নিয়ম করে তামার পাত্রে জল খাওয়া উচিত। কারণ নানা কারণে বেশিরভাগ মহিলার শরীরেই ক্যালসিয়ামের ঘাটতি থাকে। ফলে আর্থ্রাইটিসের মতো হাড়ের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। তামার পাত্রে নিয়মিত পানি খেলে হাঁটুর ব্যথা এবং বাতের সমস্যা অনেকটাই কমে যায়।
৫. থাইরয়েডের সমস্যা মেটায় তামা থাইরয়েডের জন্য খুব উপকারী। তামা থাইরয়েডের ব্যালান্স ঠিক রাখতে সাহায্য করে এবং হাইপো বা হাইপার থাইরয়েডিসম-এর জন্য খুব কার্যকর।
৬. শরীর এবং ত্বকের সমস্যা কমে নিয়মিত তামার পাত্রে রাখা পানি খেলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ে। পাশাপাশি ত্বকের সমস্যা দূর করতে সাহায্যও করে। আপনার বলিরেখাও আসে কম। শরীরে অ্যান্টি-অক্সিডেটের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে টক্সিড উপাদানেরাও শরীরের আর কোনও ক্ষতি করতে পারে না। এই প্রাকৃতিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আমাদের শরীরের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে যার ফলে ত্বকে বয়সের ছাপ অনেক দেরিতে পড়ে। এছাড়াও তামা প্রোটিন ক্যারিয়ার হিসেবে কাজ করে, যেটি ত্বক, চুল এবং মাসলের ক্ষতিপূরণে খুব কার্যকর। তামা ‘কপার পেপ্টাইড’ নামক এক যৌগ তৈরি করে যা এই প্রোটিনগুলিকে পৌঁছে দেয় জায়গা মত। তামা কোলাজেন তৈরিতেও সাহায্য করে যা ত্বকের যৌবন ধরে রাখে এবং বলিরেখা দূর করে। তামা মেলানিন নামক পিগমেন্ট তৈরির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা আমাদের স্বাভাবিক রঙ ধরে রাখতে সাহায্য করে। মেলানিন আমাদের নানা ধরনের চর্ম রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
৭. ওজন হ্রাস পায় তামার গ্লাসে জল খাওয়ার অভ্যাস করলে একদিকে যেমন হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে, তেমনি শরীরে জমে থাকা অতিরিক্ত চর্বিও ঝরতে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই মেদ কমতে থাকে। শরীরের ওজন কমাতে তামার পাত্রে পানি নিয়মিত পান করুন।
৮. সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে: পানির মধ্যে লুকিয়ে থাকা ক্ষতিকারক জীবাণুদের দ্রুত মেরে ফেলে তামা। তাই তামার পাত্রে জল খাওয়া শুরু করলে ছোট-বড় নানা ধরনের সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। সেই সঙ্গে ই.কোলাই এবং এস.অরিয়াসের মতো ব্যাকটেরিয়াও ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না।
৯. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আসে আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির করা এক গবেষণা অনুসারে, কপার বা তামা হার্ট অ্যাটাক, কোলেস্টরল এবং উচ্চ রক্তচাপের মতো মরণ ব্যাধিকে ধারেকাছে ঘেঁষতে দেয় না। ফলে আয়ু বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দৈনন্দিন জীবনও সুন্দর হয়ে ওঠে।
১০. ব্রেনের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায় বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত তামার পাত্রে জল খেলে দেহের তামার ঘাটতি দূর হয়। যার প্রভাবে মস্তিষ্কের ভিতরে থাকা নিউরোনের ক্ষমতা এতটা বেড়ে যায় যে ব্রেন-পাওয়ার বাড়তে শুরু করে। সেই সঙ্গে মস্তিষ্ক এত দ্রুত কাজ করে যে, বুদ্ধি এবং স্মৃতিশক্তি বাড়তেও সময় লাগে না।
১১. ক্ষত সারে দ্রুত অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল প্রপাটিজে পরিপূর্ণ থাকার কারণে শরীরে তামার পরিমাণ যত বাড়তে থাকে শরীরে তত দ্রত ক্ষতও সারতে শুরু করে। সেই সঙ্গে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও এতটাই শক্তিশালী হয়ে ওঠে যে, একাধিক সংক্রমণের প্রকোপ একেবারে কমে যায়। অতএব প্লাস্টিক বা কাঁচের বদলে আজ থেকেই শুরু করে দিন তামার গ্লাস বা বোতলে জল খাওয়া। আর নিজেকে সুস্থ রাখুন।