ভিন্ন স্বাদের খবর: পাশ্চাত্য দেশ মানেই নাস্তিকতার পাল্টাতে শুরু করেছে কৃষ্ণভাবনামৃতের প্রচারের মাধ্যমে। ভক্তিবেদান্ত স্বামী ছড়াছড়ি। অবশ্য এখন এই প্রেক্ষাপট দর্শন আন্তর্জাতিক সংঘ ইসকনের প্রতিষ্ঠাতা আচাৰ্য্য এ. সি. প্রভুপাদের সুদক্ষ উপস্থাপনায় পাশ্চাত্য দেশের অনেক নাস্তিককেই শ্রীভগবানের অস্তিত্বকে বিশ্বাস করাতে বাধ্য করাচ্ছে। কিন্তু তবুও কিছু গোড়া নাস্তিক প্রকৃতির লোক তাদের নাস্তিক্যবাদ দর্শন প্রচার করে চলেছে। তাদের নিজস্ব সংস্থাও রয়েছে যাদের কাজ হল ‘ভগবান বলতে কেউ নেই’ এ দর্শন প্রচার করা। আর তাতেই অনেক সাধারণ লোকই ‘ভগবান কি আদৌ রয়েছে’? এ ধরনের দ্বন্দ্বে যুক্ত হচ্ছে। যাদের আগে থেকেই দৃঢ় বিশ্বাস রয়েছে যে, ভগবান রয়েছে তারাও তাদের এই বিশ্বাসের প্রতি আত্মবিশ্বাস বা দৃঢ়তা দুটোই হারিয়ে ফেলছে পাশ্চাত্যের অনেক নাস্তিক সংস্থা রীতিমত বিভিন্ন বিজ্ঞাপন, পোস্টার প্রচার করে চলছে। কিন্তু তাদের এই অপপ্রচারের বিরুদ্ধে আত্মবিশ্বাস সহকারে লড়তে এখনও কিছু সাধারণ জনগণ রয়েছে একথাটি বোধহয় তাদের জানা ছিল না। তাই গত জানুয়ারীতে ব্রিটেনের কয়েকটি বাসে ‘There is no god’ ‘ভগবান বলতে কেউ নেই’। এ বিজ্ঞাপন টাঙিয়ে দিলে একটি বাস কোম্পানী এক কঠিন ঝামেলার মুখে পড়ে। আর এ ঝামেলাটি সৃষ্টি করছে একজন সামান্য বাস ড্রাইভার । ঐ বাস কোম্পানীকে এতটাই নাচিয়ে ছাড়ল যে, বোধহয় ভুলক্রমে হলেও কোন বাস কোম্পানী তাদের বাসগুলোতে এ ধরনের বিজ্ঞাপন তুলে ধরার সাহসই করবে না। আর ভগবানের অস্তিত্বে সম্পূর্ণ বিশ্বাসী এ বাস ড্রাইভারের নাম হল রন হেদার যার আবাসস্থল হ্যাম্পশায়ারে। ঘটনার সূত্রপাত হয়, প্রতিদিনকার মত একদিন ঐ কোম্পানীর বাসগুলো ব্রিটেনের রাস্তায় চালাতে গিয়ে। তো সেদিন হলো কি প্রায় অনেকগুলো বাসের গায়ে বড় অক্ষরে রঙ বেরঙের কালি দিয়ে লেখা ‘There is no god’ ব্যাস, তখনই তিনি উত্তেজিত হয়ে গেলেন।
তারপর রেগেমেগে সোজা চলে গেলেন কোম্পানীর ম্যানেজারের কাছে জবাবদিহি চাইতে। জবাবদিহি সন্তোষজনক না হওয়ায় রীতিমত চাকরিটাই ছেড়ে দিলেন। এর পরেই পুরো শহর জুড়ে এক আলোড়ন শুরু হল। বিশ্ব সংবাদ মিডিয়া বিবিসি তখন তার সাক্ষাৎকার নেয়ার জন্য আসে। তিনি তখন বিবিসি রেডিও সলেন্টকে বলেন, “আমি যখন ঐ বিজ্ঞাপন দেখলাম তখন আমি খুব আশ্চর্য হয়েছি এবং খুব মনোকষ্টও পেয়েছি। আর এই নাস্তিক কথা স্মরণ করেই আমি আর বাস না চালানোটাই যৌক্তিক মনে করলাম। তারপর আমি আমার ম্যানেজারকে বললাম অন্য কোন বাস আছে কিনা যেখানে এরকম বিজ্ঞাপন নেই। তারা উত্তর দিল ‘না’। আর তখন আমি ভাবলাম আমার তাহলে বাড়ি ফিরে যাওয়াটাই অনেক ভালো। আমি এ ধরনের লেখা যারা লিখে তাদেরকে ধিক্কার জানাই। এরপরে একদিন যেতে না যেতেই রন হেদার আবার তার চাকরিস্থলে ফিরে আসে এসেই যথারীতি সমস্ত ম্যানেজারদের সঙ্গে এক বৈঠক বসে।
আর ঐ বৈঠকেই সিদ্ধান্ত হয় যে, সে ধরনের বাসই হেদারকে দেয়া হবে, যে বাসগুলোতে এ ধরনের নাস্তিক দর্শন লেখা থাকবে না। তখন রনের আনন্দ আর দেখে কে? রীতিমত আনন্দের সাথে ঐরকম বিজ্ঞাপনবিহীন বাস আবারও পুনরোদ্যমে চালাতে শুরু করল। ঐ কোম্পানীর ম্যানেজার বিবিসিকে বলেন, “আমরা মি. হেদারের দর্শনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এবং উনার যৌক্তিক অনুরোধের ফলশ্রুতিতে আমাদের ঐসব বাসগুলোই হেদারের জন্য বরাদ্দ থাকবে যেগুলোতে এ ধরনের কোন বিজ্ঞাপন থাকবে না।” অবশ্য রন হেদার একদিক দিয়ে খুশি হলেও অন্য দিক দিয়ে তার মনটা একটু খারাপ। কেননা তার বাসগুলো বাদে অন্যগুলোতেও এ ধরনের বিজ্ঞাপন লেখা থাকবে। এটা ভেবেই একটি অতৃপ্ত সান্ত্বনা নিয়েই তার চাকরি নতুন করে শুরু করে। এদিকে বৃটিশ হিউম্যান এসোসিয়েশন এবং প্রোমিনেন্ট এথিয়েন্ট এ ধরনের ঘটনায় অনেকটা রেগে মেগে আগুন। এই নাস্তিক সংস্থা বলে, ‘কিছু বিশেষ ধর্মীয় বিশ্বাসী লোক কেন নাস্তিক দর্শনের মত ভিন্ন দর্শনের সামনে এসে এ ধরনের কাও করে ভেবে পাই না”।
তাদের একগুয়েমী এ মন্তব্যে ক্ষিপ্ত হয়ে তখন নিকটস্থ গীর্জার ধর্মযাজকও এর উচিত প্রত্যুত্তর করেছে। তারা বলেন, “এটি খুবই ভালো খবর যে, লোকজন পারমার্থিক গভীরতায় লিপ্ত রয়েছে। ভগবানের প্রতি এ ধরনের আগ্রহ আরো বেশি করে চালিয়ে যাওয়া উচিত।” পক্ষান্তরে, নাস্তিক্যবাদের বিরুদ্ধে ভগবানের অস্তিত্বে বিশ্বাসী এই সচেতন ড্রাইভারের অত্যন্ত দুঃসাহসিক ও ভিন্ন ধরনের আন্দোলন সবারই মনে ভিন্ন স্বাদের সৃষ্টি করবে এটুকুই স্বাভাবিক। তবে এই প্রকার ভিন্ন স্বাদের খবরটিতে লুকিয়ে আছে এক গভীর নিগূঢ় দর্শন যেটি হল ‘There is really god’ অর্থাৎ “সত্যিই ভগবান রয়েছেন।” আর এই নিগূঢ় দর্শনটিই প্রচার করল রন হেদার নামে বৃটেনের পারমার্থিকভাবে সচেতন এই ড্রাইভার। হরে কৃষ্ণ।
সূত্রঃ বিবিসি নিউজ, ২০০৯