এই পোস্টটি 330 বার দেখা হয়েছে
কৃষ্ণকে পরম আশ্রয়রূপে উপলব্ধি ব্যতিরেকে এই জড় জগতে কখনই শান্তি এবং আনন্দ লাভ করা সম্ভব নয়
গিরিরাজ স্বামী
১৯১২ সালের ১৫ এপ্রিল ভোরে আটলান্টিক মহাসাগরের গভীর অতলে পাঁচটি সর্ববৃহৎ পিয়ানো, একটি মোটরগাড়ি, পঞ্চাশ লাইন বিশিষ্ট টেলিফোন সুইচবোর্ড, একটি মণিরত্নখচিত “রুবাইত অব ওমর খৈয়াম” গ্রন্থ এবং ১৫০০ এর বেশি যাত্রীর জীবন হারানোর মাধ্যমে বিলাসিতার প্রতীক প্রমোদতরী টাইটানিক এর ডুবে যাওয়ার ঘটনার শতবার্ষিকীকে টাইটানিক পুনরায় যেন জলমগ্ন হয়ে ভেসে গেল বহু প্রবন্ধ, গ্রন্থ, টেলিভিশন সিরিজ এবং নতুনরূপে ত্রিমাত্রিক আঙ্গিকে রিলিজ হওয়া ব্লকব্লাস্টার মুভি টাইটানিক (একে ত্রিডিতে রূপান্তরিত করতে খরচ হয়েছে ১৮ মিলিয়ন ডলার) এর মাধ্যমে ।
কখনই জলমগ্ন হবে না এমন জাহাজের জলমগ্ন হওয়া
আমার এই বিশেষ দিনের কথা স্মরণ হয়েছিল কয়েক বছর পূর্বে যখন আমি একজন ডেন্টিস্ট-এর অফিসে অপেক্ষা করছিলাম এবং আমার চোখে পরল লাইফ ম্যাগাজিনের একটি সংখ্যার প্রচ্ছদ। একটি বৃহৎ জাহাজ যার অর্ধেক অংশ জলমগ্ন এবং বাকি অংশটি সুবিশাল সমুদ্রগর্ভে ডুবে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। যাত্রীগণ ভয়ার্ত হয়ে জাহাজের ওপরের রেলিং এ অবস্থান নিয়েছে, লাইফবোটে থাকা কিছু যাত্রী স্তব্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে জাহাজের দিকে। জাহাজের আলো মৃদুভাবে জলে প্রতিফলিত হচ্ছে এবং ছোট ছোট লাইফবোটসমূহ মৃত্যুপথযাত্রীদের ফেলে ধীরে ধীরে দূরে সরে যাচ্ছে। যেন রাতের আকাশে পলকহীন দৃষ্টিতে দেখা এক ভয়ানক প্রদর্শনী এটি ছিল একটি ভয়ানক ছবি এবং ম্যাগাজিনের কভারে লেখা ছিল
“টাইটানিক জ্বর : কেন আমরা দুর্যোগ থেকে মুক্ত নই?”
উক্ত প্রবন্ধে ইতিহাসের বিভিন্ন দুর্যোগের ঘটনা উল্লেখিত হয়েছে – ৭৯ খ্রিস্টাব্দে ভিসুভিয়াস পর্বতে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত, যা পমপাই নগরী এবং এর ২০ হাজার অধিবাসীদের ২০ ফুট আগ্নেয়গিরির ছাইয়ের নিচে তলিয়ে ফেলে; ১৯০৬ সালের বিখ্যাত শিকাগো অগ্নিকাণ্ড, যা ২৫০ জন অধিবাসী এবং ২০০০ একর জমি ধ্বংস করে দেয়; ১৭৫৫ সালের লিসবোন ভূমিকম্পে ৬০ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়. বিখ্যাত বোস্টন মোলাসেস বন্যা, মোলাসেসের একটি ঝরনার জল লোহার ট্যাঙ্ক এর বেষ্টনি অতিক্রম করে শহরের রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ে এবং ২১ জন মানুষকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়;
১৯৮৬ সালে মহাকাশযান চ্যালেঞ্জার বিস্ফোরণ ঘটে যা সরাসরি লক্ষ লক্ষ মানুষ টেলিভিশন সেটে সরাসরি প্রত্যক্ষ করে এবং এর ৫০ বছর পূর্বে জ্যাপলিন হিন্সবার্গে আঘাত হেনেছিল যা রেডিওর মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ লোক প্রত্যক্ষভাবে শ্রবণ করে। মনুষ্য ক্ষতি বিহীন কোনো দুর্যোগের কথা ইতিহাসে পাওয়া যায় না।
উক্ত প্রবন্ধে টাইটানিককে ঘিরে মানুষের উন্মাদনার কথা আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়া “টাইটানিমেনিয়া”কে ঘিরে রচিত হয়েছে ডজন ডজন গ্রন্থ, সিডি, টেলিভিশন মুভি, সংগীত, ব্লকব্লাস্টার হিট হলিউড মুভি, কোটি কোটি টাকার টাইটানিক প্রদর্শনী এবং এমনকি একটি রান্নার বইও টাইটানিকে সর্বশেষ ভোজ (Last Dinner on the Titanic) |
যদিও প্রচার করা হয়েছিল যে, এই জাহাজ কখনোই জলমগ্ন হবে না তথাপিও টাইটানিক তাঁর উদ্বোধনী যাত্রায় মহাসাগরে ৪র্থ দিনের মাথায় ডুবে যায়। এটি ছিল সেই সময়কার সর্ববৃহৎ, সর্বাপেক্ষা আরামপ্রদ জাহাজ, যার নিমার্ণব্যয় ছিল প্রায় ৭.৫ মিলিয়ন ডলার। এছাড়া নিযুক্ত হাজারো নাবিক, কর্মী। টাইটানিকে মোট ৮৯২ জন সেবক ছিলেন, অর্থাৎ প্রতি তিনজন যাত্রীর জন্য দুই জন সেবক। এমনকি সেই ১৯১২ সালের হলেও সেখানে জিমনেশিয়াম, একটি সুইমিং পুল এবং তুর্কিশ স্নানঘর ছিল। যাত্রীদের জন্য আভিজাত্যময় পরিবেশে সকল প্রয়োজনীয়তা পূরণ করার সুব্যবস্থা ছিল ।
সকলের কাছেই মনে হচ্ছিল যেন একটি আরামদায়ক এবং আনন্দময় ভ্রমণ হতে যাচ্ছে। যাত্রীদের মধ্যে ছিল কোটিপতি জন জেকব এস্টার, উদ্যোক্তা ইসাইডোর স্ট্রয়াস, শিল্পপতি জর্জ ওয়াডিনার এবং ইংরেজ শিল্পী ফ্রান্সিস মিলেট। যাত্রীদের উৎসাহ দ্বিগুণ হল যখন টাইটানিক সাউথঅ্যাম্পটন বন্দর ত্যাগ করল। প্রত্যেকেই মনে মনে নিশ্চিত হল, “ভ্রমণটি নিরাপদ হবে।”
মহাসমুদ্রে দুইদিন কাটানোর পর জাহাজের ক্যাপ্টেন বরফ এবং প্রতিকূল আবহাওয়ার ব্যাপারে সতর্কতা পেলেন। দু’দিন পর ১৪ এপ্রিল ১৯১২ সালের রোববার আবহাওয়া পরিবর্তনের কোনো লক্ষণ দেখা গেল না, তাই জাহাজের ক্যাপ্টেন অন্যান্য নাবিকদের নিকট জাহাজের দায়িত্ব অর্পণ করে নিজে অবসর নিলেন। তিনি তাঁদের জানালেন যে, যদি জাহাজের অবস্থা কোনো কারণে আদৌ খারাপ হয় তবে তাকে যেন জানানো হয়। জাহাজের নাবিকেরা সতর্ক করেছিল যে, সেখানে কোনো বায়নোকুলার ছিলনা, এছাড়া জাহাজের যে তারবিহীন যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল সেটি যাত্রীদের চাহিদা পূরণে অতিব্যস্ত থাকায়, পুনঃ পুনঃ প্রতিকূল আবহাওয়ার সতর্ক বার্তা পাওয়া সত্ত্বেও তারা কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেনি।
যখন আভিজাত্য ও জৌলুসতায় পূর্ণ এই জাহাজ লোকচক্ষুর আড়ালে, তখন এর চলাচল হচ্ছিল অত্যন্ত ভয়ংকর জলে। ৪৬,৩২৯ টনের টাইটানিক বরফখণ্ডে ধাক্কা লাগার পরও এটি নিশ্চিত হতে নাবিকদের এতই দেরি হয়েছিল যে, তাদের পক্ষে আর আসন্ন মহাদুযোর্গ মোকাবেলা করা সম্ভব হয়নি।
সর্বপ্রথম কোনো যাত্রীই জাহাজের ধাক্কাকে তেমন গুরুত্ব দেয়নি। কিন্তু যখনই জলের প্রবাহে জাহাজের অগ্রপথের পাঁচটি কক্ষ ডুবে নায়, তখনই আসন্ন দুর্যোগের আশংকা প্রকাশিত হয় এবং সকলে বুঝতে সক্ষম হন যে, টাইটানিক জলমগ্ন হতে যাচ্ছে। সেই রাতে ১৫০০ এর অধিক মানুষ টাইটানিকে অবস্থান করছিল। যারা সেই ভয়াল রাতে জীবন বাঁচাতে সক্ষম হলেন তাঁরা টাইটানিকের গল্প বিশ্ববাসীকে জানালেন। উত্তর আটলান্টিক মহাসাগর এই সুবৃহৎ জাহাজটিকে গলাধকরণ করার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত বাকিরা বেঁচে থাকার আকুতি নিয়ে ছিলেন৷
জড় জগতে কোনো আশ্রয় নেই
লাইফ ম্যাগাজিনের প্রবন্ধটি অধ্যয়নের পর, আমার ভগবান নৃসিংহদেবের (ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অর্ধ নর, অর্ধ সিংহ অবতার) নিকট প্রহ্লাদ মহারাজের প্রার্থনার কথা মনে পড়ল যা শ্রীমদ্ভাগবতে (৭/৯/১৯) উল্লেখিত আছে :
বালস্য নেহ শরণং পিতরৌক্ষানৃসিংহ
নার্তস্য চাগদমুদন্বতি মজ্জতো নৌঃ ৷
তপ্তস্য তৎপ্রতিবিধির্য ইহাঞ্জসেষ্ট-
স্তাবদ্ বিভো তনুভৃতাং ত্বদুপেক্ষিতাপনাম্ ॥
অনুবাদ : “হে নৃসিংহদেব, হে বিভো, দেহাত্মবুদ্ধির ফলে আপনার দ্বারা উপেক্ষিত দেহধারী জীবেরা তাদের নিজেদের কল্যাণের জন্য কিছুই করতে পারেনা। তারা তাদের দুঃখ নিবারণের যে উপায়ই গ্রহণ করে তা সাময়িকভাবে লাভজনক হলেও, ক্ষণস্থায়ী। যেমন— পিতা এবং মাতা তাদের শিশুদের রক্ষা করতে পারেনা, চিকিৎসক এবং ঔষধ রোগীর কষ্ট দূর করতে পারেনা এবং তরণি সমুদ্রে নিমজ্জমান ব্যক্তিকে রক্ষা করতে পারেনা।”
তাৎপর্যে শ্রীল প্রভুপাদ লিখেছেন, “পিতামাতার রক্ষণাবেক্ষণে, বিভিন্ন রোগের ঔষধে এবং জলে, আকাশে ও স্থলে রক্ষার বিভিন্ন উপায়ের দ্বারা যদিও জড় জগতের বিবিধ দুঃখ-দুর্দশার নিবৃত্তি সাধনের চেষ্টা করা হয়, তবুও তাদের কোনো একটির দ্বারাও নিশ্চিতরূপে · রক্ষা পাওয়া যায় না। সেগুলি সাময়িকভাবে লাভজনক হতে পারে, কিন্তু সেই লাভ স্থায়ী হয় না।… চরম আশ্রয় হচ্ছেন ভগবান এবং যিনি ভগবানের আশ্রয় গ্রহণ করেন তিনি রক্ষা পান। তা ধ্রুব সত্য।”
“পৃথিবীর ইতিহাসে জড়া প্রকৃতির এই চারটি দুঃখকে কেউ জয় করতে পারেনি।…সারা পৃথিবী জুড়ে আমাদের কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলনের প্রচারের বিনীত প্রচেষ্টাই জনগণের দুঃখ-দুর্দশা নিবারণের একমাত্র উপায় এবং তার ফলে জীবনে সুখ এবং শান্তি আসবে।”
কৃষ্ণ পরম আশ্রয় প্রদান করতে পারেন
যদিও এই জড় জগতে সকলেই জড়া প্রকৃতির আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার প্রচেষ্টায় রত, কিন্তু তাদের সেই প্রচেষ্টা কখনোই সফল হয় না। শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় সৃষ্টিকর্তা নিজেই নিশ্চিত করছেন যে এই জড় জগত হচ্ছে দুঃখের আলয় (দুঃখালয়ম্ অশাশ্বতম্)। শুধুমাত্র ভগবান শ্রীকৃষ্ণের চরণে শরণাগত হলে আমরা রক্ষা পাব।
শ্রীল প্রভুপাদ বিস্তৃত ব্যাখ্যা করেছেন : “এই জড় জগৎ হচ্ছে বিপদসঙ্কুল (পদং পদং যদ্ বিপদং) যেমন, সমুদ্রের মাঝখানে মজবুত জাহাজের আরোহী হলেও সেই স্থান নিরাপদ নয়; কারণ গভীর সমুদ্রে যে কোনো রকম বিপর্যয় ঘটতে পারে। টাইটানিক জাহাজও ন্রিাপদ ছিল, কিন্তু তার প্রথম সমুদ্র যাত্রাতেই জাহাজটি ডুবে যায় এবং বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি জীবন হারায়। সুতরাং বিপদ ঘটবেই কেননা আমরা বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছি। এই জড় জগৎটি বিপর্যয়কর। এই জন্য যত শীঘ্র সম্ভব এই বিপদ সমুদ্র অতিক্রম করাই এখন আমাদের কর্তব্য জাহাজ যতই মজবুত হোক না কেন, যতক্ষণ আমরা সমুদ্রের মধ্যে রয়েছি, আমাদের অবস্থা অত্যন্ত বিপজ্জনক।” (কুন্তীদেবীর শিক্ষা, তাৎপর্য শ্লোক ৮)
কিন্তু জড় জগতের সমুদ্র তরঙ্গে আমাদের বিচলিত হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়; কেননা সেই তরঙ্গ একের পর এক আসে-যায়, তাই আমাদের তা সহ্য করা এবং নিরাপদে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে অপর পাড়ে অর্থাৎ চিন্ময় জগতে পৌছাঁনোর চেষ্টা করা উচিৎ। কিন্তু কীভাবে? ভগবান শ্রীকৃষ্ণের চরণপদ্মের নৌকায় চড়ে :
সমাশ্রিতা যে পদপল্লবপ্লবং
মহৎপদং পুণ্যযশো মুরারেঃ।
ভবাম্বুধির্বৎসপদং পরং পদং
পদং পদং যদ্ বিপদং ন তেষাম্ ॥
– যিনি জড় জগতের আশ্রয়স্বরূপ এবং মুর দানবের শত্রু মুরারিরূপে খ্যাত, সেই ভগবানের পাদপদ্মরূপ নৌকায় যারা আশ্রয় গ্রহণ করেছেন, তাদের কাছে এই ভব-সমুদ্র গোষ্পদতুল্য। পরমপদ বৈকুণ্ঠ লাভইতাঁদের লক্ষ্য। পদে পদে বিপদ-সঙ্কুল এই জড় জগৎ তাঁদের জন্য নয় । (শ্রীমদ্ভাগবত ১০/১৪/৫৮)
যদি আমরা তা চাই তবে আমাদের কি কোনো অনুশীলনের প্রয়োজন নেই? অবশ্যই, আমাদের উচিৎ কিছু বাস্তবিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
শ্রীল প্রভুপাদ বলেছেন, “যদিও নৈমিত্তিক কার্য হিসেবে আমরা বিভিন্ন প্রতিরোধী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি, কিন্তু পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কৃপাপ্রাপ্ত নয়।
এমন করো কাছে আশ্রয় লাভ করা সম্ভব নয়।”
কৃষ্ণ যদি কাউকে রক্ষা করতে চান, তবে কেউ তাকে মারতে পারেনা, আবার কৃষ্ণ যদি কাউকে মারতে চান তবে কেউ তাকে রক্ষা করতে পারেন না (রাখে কৃষ্ণ, মারে কে? মারে কৃষ্ণ, রাখে কে?)।
সহ্যগুণ
একজন কৃষ্ণে শরণাগত ব্যক্তি যেকোনো অবস্থাতেই ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সুরক্ষা লাভ করেন। কৃষ্ণকে শুদ্ধ ভক্তের পরম সুহৃদ ও আশ্রয় জেনে, কৃষ্ণ অনুগত ভক্তগণ যে কোনো পরিস্থিতিকে ভগবানের কৃপা বলে মনে করেন। তথাপিও শ্রীল প্রভুপাদ ব্যাখ্যা করেছেন, আমাদের ভাবা উচিত নয় যে, “যেহেতু আমরা ভক্ত হয়েছি তাই আমাদের কোনো দুঃখ-দুর্দশা থাকবে না।”
প্রহ্লাদ মহারাজ, পাণ্ডবগণ, বাসুদেব-দেবকী, হরিদাস ঠাকুরের মত ভগবদ্ভক্তও নানা দুঃখ-দুর্দশা লাভ করেছেন। কিন্তু তারা কখনোই কৃষ্ণের প্রতি বিশ্বাস হারাননি। বরং যখনই ভক্তগণ দুদর্শায় পতিত হন, তখন তারা বিনীতভাবেই মনে করেন যে, তারা এই দুর্দশা ভোগ করার যোগ্য এবং কৃষ্ণ ক্ষুদ্র পরিমাণ মাত্র প্রতিক্রিয়া প্রদান করে আমাদের পূর্বাকৃত ভুল থেকে শিক্ষা দিচ্ছেন, যাতে আমরা কৃষ্ণের আরো নিকটে গমন করতে পারি :
তত্তেহনুকম্পাং সুসমী ক্ষমাণো
ভুঞ্জান এবাত্মকৃতং বিপাকম্ ।
হৃদ্বাগ্বপুর্ভির্বিদধন্নমস্তে
জীবেত যো মুক্তিপদে স দায়ভাক্ ॥
“হে প্রিয় ভগবান, যিনি আপনার অনুকম্পা লাভের আশায় তার পূর্বকৃত মন্দ কর্মের ফল ধৈর্য সহকারে ভোগ করতে করতে তাঁর হৃদয়, বাক্য ও শরীরের দ্বারা আপনাকে প্রণতি নিবেদন করে জীবন যাপন করেন, তিনি অবশ্যই মুক্তি লাভের যোগ্য, কারণ তিনি উপযুক্ত উত্তরাধিকারী।” (শ্রীমদ্ভাগবত ১০/১৪/৮) ভগবান ভাগবতের (১০/৮৮/৮) এ ব্যাখ্যা করেছেন যে, মাঝে মাঝে তিনি ভক্তদের বিশেষ কৃপা প্রদর্শনের জন্য তার ভক্তের জড় আসক্তিকর সমস্ত কিছু হরণ করেন। তাই কৃষ্ণ এভাবেই ভক্তদের পূর্ণ শরণাগত হওয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন যার মাধ্যমে কেউ সর্বোত্তম আনন্দ ও তৃপ্তি লাভ করতে পারবে।
চরম বিপদ মোকাবেলা
লাইফ ম্যাগাজিনের প্রবন্ধে বলা হয়েছে যে, মানুষ দুর্যোগ নিয়ে সবর্দাই বিমোহিত হয়। কেন? দুর্যোগ যেকোনো মুহূর্তে আমাদের নিশ্চিহ্ন করতে পারে। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে দুর্যোগ মোকাবেলা ব্যবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে কিন্তু তথাপিও পরম আশ্রয় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পাদপদ্ম। এই কলিযুগে ভগবানের শরণাগত হওয়ার একমাত্র উপায় হচ্ছে পবিত্র হরিনাম জপ করা ; হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ, কৃষ্ণ কৃষ্ণ, হরে হরে। হরে রাম, হরে রাম, রাম রাম, হরে হরে। এবং শ্রীমদ্ভগবদগীতা ও শ্রীমদ্ভাগবত অনুসারে ভগবানের নির্দেশ মেনে চলা। অন্যথায় আমাদের জীবনে নেমে আসবে মহাদুযোর্গ- টাইটানিক দুর্যোগের মত ।
(ক্যালিফোর্নিয়া নিবাসী শ্রীমৎ গিরিরাজ স্বামী শ্রীল প্রভুপাদের একজন সিনিয়র শিষ্য যিনি ১৯৬৯ সালে ইসকনে যোগদান করেন। তিনি বিভিন্ন প্রকাশনা কার্যক্রমে নিযুক্ত আছেন- বিশেষত তাঁর আধ্যাত্মিক গুরু অনুসন্ধান ও বোস্টন মন্দিরে প্রাচীন দিনলিপি সম্পর্কিত।)
ত্রৈমাসিক ব্যাক টু গডহেড, অক্টোবর – ডিসেম্বর ২০১৩