এই পোস্টটি 526 বার দেখা হয়েছে
মাধব স্মুলেন: জাতিসংঘে ইস্কন ও ইস্কন বৈষ্ণব মন্ত্রণালয় “আলোচিত গল্প: সংস্কৃতি, ধর্ম ও নারীর ক্ষমতায়ণ” শীর্ষক একটি ইন্টারফেইথ প্যানেল আলোচনার আয়োজন করেছে। ২১ মার্চ তারিখে এটি অনলাইনে অনুষ্ঠিত হবে। প্যানেলের আলোচনা প্রায় দেড় ঘন্টা অবধি চলবে। অর্থায়নে সহযোগিতা করবেন মুসলিমদের একটি সংগঠন ‘প্রগতিশীল মূল্যবোধের জন্য মুসলিম’ এবং খ্রিষ্টানদের প্রগতিবাদী, মানবিক ও উন্নয়ন কাজের সাথে সম্পৃক্ত একটি জোট। প্রতি বছরের মার্চ মাসে জাতিসংঘ নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় দুই সপ্তাহব্যাপী এক কর্মশালার আয়োজন করে থাকে। লিঙ্গসমতা, নারীর ক্ষমতায়ণ এবং নারীরা বর্তমানে যেসব সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে তা নিয়ে কয়েকশ’ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশ, সংস্থা ও অঙ্গসংগঠনের সদস্যরা চাইলে অংশগ্রহণ করতে পারে। ইস্কনের সদস্যদেরকে এতে অংশ নেয়ার জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে।
এখন প্রশ্ন হল ইস্কন কীভাবে জাতিসংঘের সাথে যুক্ত হল? যেকোনো এনজিও সংস্থা, যাদের কর্মকাণ্ড উচ্চমহলে প্রশংসিত হয়েছে তারা জাতিসংঘের স্থায়ী বা অস্থায়ি সদস্যপদ লাভ করতে পারে। সে হিসেবে ২০১৬ সালে ইস্কনও জাতিসংঘের অঙ্গসংগঠন অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের সদস্যপদ লাভ করে। সে সময় অনুত্তম দাসকে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘের ইস্কন প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।
গোপাল লীলা দাস ২০১৫ সাল থেকে জাতিসংঘের সাথে বিভিন্ন বিষয়ে কাজ করছেন। তাই তাঁকে ‘জাতিসংঘ ইস্কন’ প্রকল্পের তদারকির জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়।
জাতিসংঘের সাথে কাজ করার জন্য ইস্কন পাঁচটি বিষয় খুঁজে বের করে। এগুলি হল: পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন, লিঙ্গ, স্বাস্থ্য, গোপাল প্রভুর কর্মভার পড়েছে এখন জাতিসংঘে ইস্কন ও গোবর্ধন ইকো-ভিলেজ প্রকল্প বিগত ছয় মাস ধরে এখনো পর্যন্ত তিনি জাতিসংঘের ইস্কন ও আন্তর্জাতিক ইস্কন বৈষ্ণবী মন্ত্রণালয়ে জেন্ডার অর্থাৎ লিঙ্গ সমতা বিষয়ে নিউইয়র্ক থেকে রাধা দেবী দাসী এবং প্রেম বিলাসিনী দেবী দাসীর সাথে যৌথভাবে কাজ করছেন।
২১ মার্চ হতে যাওয়া অনুষ্ঠানটি ইস্কনের এতসব কর্মযজ্ঞ প্রচেষ্টার একটি অংশ। অনুষ্ঠানটির মাধ্যমে বিভিন্ন শ্রেণির সংস্কৃতি ও বিশ্বাস লালনের ঐতিহ্য থেকে নারীর ক্ষমতায়ণের ধারণাটি আবিষ্কার করা হবে। এতে অংশগ্রহনকারী মুসলিম, খ্রিস্টান ও আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের (ইস্কন) নারী প্রতিনিধিত্বকারীদের মধ্যে ধর্ম, কৃষ্টি ও নারীর ক্ষমতায়ণ নিয়ে তুমুল আলোচনা হবে। এটি তাদের মাঝে আন্তঃসম্পর্কের এক সেতুবন্ধন তৈরি করবে।
প্যানেল আলোচনায় বক্তারা হলেন অ্যানি জোনেভেল্ড, ‘প্রগতিশীল মূল্যবোধের জন্য মুসলিম’ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি; রাধা দেবী দাসী, ‘ইস্কন বৈষ্ণবী মন্ত্রাণালয়’ এর মন্ত্রী এবং গ্যাডিস নাইরোবা, ‘এ.সি.টি অ্যালায়েন্স আফ্রিকার জেন্ডার কমিউনিটি অব প্র্যাকটিস’ এর সহ-সভাপতি।
“বিশ্বব্যাপী আন্দোলন হিসেবে এক অনন্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি ইস্কন”, বললেন রাধা দেবী দাসী । তিনিই এই বিষয়টির সূচনা করেন এই বলে যে,“আমরা কীভাবে যার যার ধর্মীয় আদর্শ ত্যাগ না করেও নারীর ক্ষমতায়ণের মতো এসব ইস্যুতে পরস্পরের সাথে যোগাযোগ করতে পারি?
আমরা অন্যান্য ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতিনিধিদেরকেও এ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানাই যাতে তারা মনে করতে না পারে যেন আমরা কেবল গৌড়ীয় বৈষ্ণব দৃষ্টিকোণ থেকেই তা আলোচনা করছি।
প্রত্যেকে এ বিষয়ে সত্যিই উচ্ছ্বসিত। আমার মনে হয় আলোচনাটি প্রতিটি ধর্মীয় গোষ্ঠীকে অনুরণিত করে। প্রতিটি ধর্মীয় গোষ্ঠীর স্থানানুসারে কিছু না কিছু সাংস্কৃতিক পার্থক্য রয়েছে। আর এটা জানা সত্ত্বেও আমরা সকলকে একই কাতারে নিয়ে আসার জন্য কুস্তি লড়ছি।
রাধা দেবী দাসী উদাহরণস্বরূপ, শ্রীমদ্ভাগবতমের প্রথম খণ্ড থেকে অশ্বত্থামা যে কারণে শাস্তি পেয়েছিলেন সে গল্পটি তুলে ধরবেন। এই গল্পে দ্রোণাচার্যের পুত্র অশ্বত্থামা কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের শেষে দ্রৌপদীর ঘুমন্ত পঞ্চপুত্রের মস্তক শিরশ্ছেদ করেছিল। তাকে কি ধরনের শাস্তি দেওয়া হবে সে সম্বন্ধে দ্রৌপদীর কাছে থেকে জানতে চাওয়া হয়েছিল। বিশেষ করে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ, ভীম এবং যুধিষ্ঠির মহারাজ দ্রৌপদীর কাছ থেকে কিছু না শুনে কোনো সিদ্ধান্তে যাচ্ছিলেন না”, জানালেন রাধা দেবী দাসী।
আলোচনায় তিনি এমন কিছু ধারণা নিয়ে এসেছেন যা নারীদের কাছে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আরও যোগ করেন, “আমাদের আলোচনায় আরও থাকবে কি করে নারীরা তাদের ভাষা ব্যক্ত করতে পারে এবং তাদের নেতৃত্বের প্রকাশ ঘটাতে পারে এবং সেই সাথে অপরকে অনুপ্রাণিত করতে পারে।”
তিনি ব্যাখ্যা করেছেন যে, পরমেশ্বর ভগবান তাঁর স্বরূপ কেবল এককরূপে প্রকাশ করেন না বরং প্রেমিক-প্রমিকা যুগলরূপে প্রকাশ করে থাকেন। পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে সর্বদা অংশীদারিত্ব থাকে। তাই এটি বিবেচনা করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
এ ধরনের প্লাটফর্মে কেবল পুরুষরাই বলবে, নারীরা পারবে না; আবার নারীরাই অগ্রাধিকার পাবে, পুরুষরা পাবে না এমনটি নয়-আমরা চাই ভারসাম্য রক্ষার্থে আমরা নারী-পুরুষ উভয়ের কথা শুনতে চাই।
জাতিসংঘে ইস্কন বৈষ্ণবীদের সাথে তৎপরবর্তী অভ্যন্তরীণ আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে আগামি ১৮ই এপ্রিল। এটা ইস্কন বৈষ্ণবী মন্ত্রাণালয়ের ফেইসবুক পেইজে প্রকাশ করা হবে। বিশিষ্ট বৈষ্ণবী কিশোরি জানি এবং শ্রী রাধা গোবিন্দ দাসীর মতো ব্যক্তিত্বদ্বয় নারীর ক্ষমতায়ণ সম্পর্কে আলাপ-আলোচনা করবেন।
জাতিসংঘে ইস্কনের প্রতিনিধিত্বকারী গোপাল লীলা দাস মন্তব্য করেছেন, “আমি জানি যে, শ্রীল প্রভুপাদ চাইতেন, বিশ্বনেতারা যেন বৈশ্বিক সমসাময়িক ইস্যু নিয়ে আলোচনা করে এবং সে সমস্ত বিষয় দূরীকরণে তারা যেন তাদের ভূমিকা পালন করে।”
আজকের দিনে বিশ্ববাসীর কাছে বেশ গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয় হলো নারীর ক্ষমতায়ণ, লিঙ্গ ও লিঙ্গসমতা। আরও অধিকতর উন্নত বিশ্ব গঠনে ইস্কন বিশ্বের নীতি-নির্ধারকদের সাথে তাদের পরিকল্পনাসমূহ আদান-প্রদান করছে।
গোপাল প্রভু আরো বলছেন, “অন্যরা কি বলছে তা আমাদের শুনা দরকার বুঝা দরকার। পৃথিবীজুড়ে লিঙ্গ বিষয়ে কি কি সমস্যার উদয় হচ্ছে তা জানা দরকার। এ থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা আমাদের সমাজের উন্নতি ঘটাতে পারি যা একপ্রকার দ্বি-মুখী সংলাপ।”