এই পোস্টটি 359 বার দেখা হয়েছে

শ্রীমান মনোহর বেণুধারী দাস
আমরা গত সংখ্যায় কেন এই মহাবিশ্ব তত্ত্ব শ্রবণ করব? শ্রবণ করলে কি লাভ হবে এই সব বিষয়ে আলোচনা করেছি। এই সংখ্যায় আমরা ভূ-মণ্ডলের সাতটি বর্ষের মধ্যে জম্বুদ্বীপের বর্ণনা করব। সাধারণত আমরা ‘শাস্ত্রের উক্তিকে’, ‘জড় জগতে আমাদের অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি’ করে বিচার করি।
চলুন আজকে আমরা শাস্ত্রের দৃষ্টিকোণ থেকে জড় জগতকে দর্শন করি।
যেহেতু শাস্ত্র স্বয়ং ভগবৎ অবতার কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন ব্যাসদেব রচনা করেছেন তাই বৈদিক শাস্ত্র ভ্রম, প্রমাদ, বিপ্রলিপ্সা ও করণাপাটব জনিত তরুটি মুক্ত।
ব্রহ্মাণ্ডের বর্ণনা পড়তে হলে কিছু সংস্কৃত শব্দের অর্থ জানা আবশ্যক যা এই অংশে ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন-
দ্বীপ: যার উভয় পাশেই জল রয়েছে।
-যে উভয় পাশ থেকেই জল পান করে।
বর্ষ: দুই পর্বতের মাঝের উপত্যকা ১ যোজন: প্রায় ৮ মাইল বা ১৩ কি.মি (১ মাইল = ১.৬০৯ কি.মি)
১ মিলিয়ন যোজন = ১০ লক্ষ যোজন
প্রিয়ব্রত মহারাজ এই ভূ-মন্ডলের শাসনভার গ্রহণ করার পূর্বে এই ভূ-মন্ডল সাতটি দ্বীপে এবং সাতটি বর্ষে বিভক্ত ছিল না। তিনি যখন তার পিতামহ ব্রহ্মা এবং পিতা মনুর আদেশে আর কোন শাসনকর্তা না থাকায়, এই ভূ-মন্ডলের শাসন ভার গ্রহণ করেন, তখন তিনি লক্ষ্য করলেন যে, সূর্য যখন আলো প্রদান করেন তখন তার বিপরীত দিকে অন্ধকার থাকে।
অর্থাৎ সূর্য যখন সূর্য যখন উত্তর দিক আলোকিত করে, তখন অবনীতলের দক্ষিনভাগ অন্ধাকারাচ্ছন্ন থাকে, আবার সূর্য যখন দক্ষিন ভাগ আলোকিত করেন তখন অবনীতলেল উত্তর ভাগ অন্ধকাচ্ছন্ন থাকে। তখন তিনি সূর্যের বিপরীত দিকের অংশও আলোকিত করতে চাইলেন। তখন তিনি তার রথে আরোহন করে সূর্যের তেজ বিকিরন করে সূর্যের বিপরীত দিক থেকে সূর্যের পিছন পিছন ঘুরতে লাগলেন। ফলে উভয় পাশেই আলোকিত হল।
তিনি এই ভাবে সুমেরু পর্বতকে কেন্দ্র করে এই ভূ-মন্ডল সাতবার প্রদক্ষিণ করেন। ফলে তার রথের চাকায় সাতটি পরিখা সৃষ্টি হয়। এই গুলো পরবর্তীতে বিভিন্ন তরল পদার্থ দ্বারা পূর্ণ হয়ে সাতটি সমুদ্রে পরিণত হয়। এই সাতটি সমুদ্র ভূ-মন্ডলকে সাতটি বর্ষে বিভক্ত করে। সাতটি বর্ষের নাম জম্বু, প্লক্ষ্ম, শাল্মলী, কুশ, ক্রৌঞ্চ, শাক, এবং পুষ্কর দ্বীপ। এই সমস্ত দ্বীপের পরিমাণ পূর্ব পূর্ব দ্বীপ থেকে পরবর্তী দ্বীপ দ্বিগুন পরিমাণ।
তিনি এই প্রকার কার্য সম্পাদন করতে সমর্থ হয়েছিলেন কারণ তিনি ভগবানের আরাধনা করার ফলে এই প্রকার অলৌকিক প্রাপ্ত হয়েছিল (ভাগবত ৫.১.৩০-৩৫)।
শাস্ত্রে বর্ণিত হয়েছে-
কিম্ দুরাপাদনং তেষাং পুংসামুদ্দামচেতসাম
যৈরাশ্রিতস্তীর্থপদশ্চরণো ব্যসনাত্যয়ঃ
অনুবাদ: যারা পরমেশ্বর ভগবানের শ্রীপাদপদ্মের শরণ গ্রহন করেছেন, সেই দৃঢ় সংকল্পচিত্ত ব্যাক্তিদের পক্ষে কি কোন বস্তু দুর্লভ হতে পারে ? তার শ্রীপাদপদ্ম সংসার ভয় নাশকারী গঙ্গার মতো পবিত্র নদীর উৎস্য (ভাগবত ৩/২৩/৪২)।
শুকদেব গোস্বামী বর্ণনা করেছেন-
এই ভাবে বিভক্ত হওয়ার ফলে ভূ-মন্ডলকে দেখতে ঠিক একটি পদ্মফুলের মত দেখাচ্ছিল। আর সপ্তদ্বীপ সেই ফুলের কোষ। সেই কোষের মধ্যবর্তী স্থান জম্বুদ্বীপ।
এখানে যে পদ্মফুলের পাতা সেটাকে ভূ-মন্ডলের সাথে তুলনা করা হয়েছে। ফুলের পাপড়ি কে বিভিন্ন বর্ষের সাথে তুলনা করা হয়েছে। জলকে গর্ভোদক সমুদ্রের জলের সাথে তুলনা করা হয়েছে। পদ্মফুলের কর্নিকাকে সুমেরু পর্বতের সাথে তুলনা করা হয়েছে।
এই বর্ষগুলির মধ্যে ইলাবৃত বর্ষ নামক বর্ষটি সেই পদ্মকোষের মধ্যভাগে অবস্থিত। ইলাবৃতবর্ষের মধ্যে রয়েছে সুবর্ণময় সুমেরু পর্বত। সেই সুমেরু পর্বত ভূ-মন্ডলরূপ পদ্মের কর্নিকার মধ্যে অবস্থিত। এই পর্বতের উচ্চতা জম্বুদ্বীপের বিস্তারের সমান অর্থাৎ ১ লক্ষ যোজন।
এই সুমেরু পর্বতের ১৬০০০ যোজন মাটির অভ্যান্তরে রয়েছে, তাই পৃথিবীর উপরে পর্বতের উচ্চতা ৮৪০০০ যোজন। সুমেরু পর্বতের শিখরের বিস্তার ৩২০০০ যোজন এবং পাদদেশ ১৬০০০ যোজন। পরবর্তী সংখ্যায় আমরা জম্বুদ্বীপের আরো বিস্তারিত আলোচনা করব।
লেখক পরিচিতি: মনোহর বেণুধারী দাস চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ণকালীন ইস্্কন নন্দনকানন পরিচালিত ইয়ূথ ফোরামের সাথে যুক্ত হন। পরবর্তীতে ২০১৫ সালে শ্রীমৎ জয়পতাকা স্বামী মহারাজের থেকে দীক্ষা নিয়ে ইস্কনের পূর্নকালীন ভক্ত হন। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাণিজ্যে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। মুম্বাই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ভক্তিবেদান্ত বিদ্যাপীঠ থেকে ভক্তিবৈভব, ভক্তিবেদান্ত বিদ্যাপীঠ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি এবং চৈতন্য চরিতামৃতে ডিপ্লোমা ডিগ্রি লাভ করেন। বর্তমানে তিনি রাধামাধব মন্দির এবং গৌর নিতাই আশ্রমের অধীনে মায়াপুর ইনস্টিটিউটে সেবা প্রদান করছেন।