এই পোস্টটি 530 বার দেখা হয়েছে
পুতনা সর্বদাই মনুষ্য শিশুর রক্তের প্রতি উৎসাহিত ছিল এবং সেই অভিলাষ নিয়ে সে কৃষ্ণকে হত্যা করতে ব্রজে প্রবেশ করেছিল। কিন্তু যেহেতু পুতনা ভগবানকে তার স্তন দুগ্ধ প্রদান করেছিল তাই তিনি সর্বোচ্চ পুরস্কার লাভ করেছিলেন। বিশ্বনাথ চক্রবর্তী বলেন- যদি একজন ব্যক্তি ভগবানের প্রতি শক্রভাবাপন্ন হয়ে সেবা প্রদান করে সর্বোচ্চ সিদ্ধি লাভ করে তবে যারা শান্ত রসে ভগবানের সেবা করছেন তাদের কি গতি হবে? যারা ভগবানের প্রতি বিশ্বাস রেখে সেবা করছেন তাদের গতি কি না হবে? যারা ভগবানের প্রতি শুদ্ধভক্তিতে সেবা করছেন তাদের আরো অধিক কি লাভ করবেন? যিনি ভগবানকে অবতার জেনে আরাধনা করেন তারা সর্বোচ্চ গন্তব্য লাভ করেন।
কিন্তু যিনি ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে সকল অবতারের অবতারী জেনে সেবা করেন, তিনি সর্বাপেক্ষা অধিক কি লাভ করবেন?
পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সর্বদাই ভক্তের হৃদয়ে অবস্থান করেন। যেহেতু কৃষ্ণ পুতনার দেহকে অত্যাধিক আনন্দে জড়িয়ে ধরেছিল এবং স্তন্য পান করেছিল, যদিও সে ছিল এক মায়াবী রাক্ষসী, তথাপিও সে চিন্ময় জগতে ভগবানের মাতৃপদ প্রাপ্ত হয়ে সর্বসিদ্ধি লাভ করেছিলেন। এছাড়াও আমরা উপলব্ধি করতে পারি সেই সব গাভীদের স্থিতি যাদের স্তন্য কৃষ্ণ অত্যন্ত সন্তুষ্টির সাথে পান করেছিলেন এবং সেই গাভীসমূহও নিজ সন্তান স্নেহে কৃষ্ণকে দুগ্ধ প্রদান করেছিলেন। পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হলেন পরম বরদাতা, সকলের কল্যাণকারী। সেই পরমেশ্বর ভগবানের প্রতি গোপীগণ সবর্দাই মাতৃবৎ বাৎসল্য রসে জড়িত, তাই কৃষ্ণ সেই মাতৃবৎ গোপীদের স্তন্য পান করে কৃষ্ণ অত্যন্ত সন্তষ্ট হতেন। যদিও গোপীগণ বিভিন্ন পারিবারিক ক্রীড়াকর্মে নিয়োজিত ছিলেন তথাপিও আমাদের এই মনে করলে ভুল হবে যে তাদের পুনর্জন্ম হয়েছিল সকাম কর্মের কারণে। বিশ্বনাথ চক্রবর্তী পুতনার মুক্তি সর্ম্পকে আরো বলেন:
পুতনা বৈকুণ্ঠের কোন লোকে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন? এই শ্লোকে বলা হয়েছে, পুতনা মাতা যশোদা যেই লোকে অধিষ্ঠিত ছিলেন সেই লোক প্রাপ্ত হয়েছিলেন, জননী গতিং। তাই বলা যায়, পুতনা গোলক প্রাপ্ত হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি পূর্ব থেকে কৃষ্ণের প্রতি বাৎসল্য রসে অধিষ্ঠিত ছিলেন না। তাই কেউ বলতে পারবে না তিনি মাতৃপদ পেয়েছিলেন কিনা। শ্রীমদ্ভাগবতের (১০/৬/৩৬) শ্লোকে বলা হয়েছে, সেই স্থানটি প্রাপ্ত হবেন তারাই যারা কৃষ্ণের প্রতি অহৈতুকি প্রেমপূর্ণ ভালবাসার সম্পর্কে যুক্ত বিশেষত গাভীগণ ও মাতৃবৎ গোপীগণ যারা বৃন্দাবন লীলায় কৃষ্ণকে স্তন্য পান করিয়েছিলেন, তাই তারা পুতনার চেয়ে অধিক উন্নত সম্পর্কে কৃষ্ণের সাথে সম্পর্কযুক্ত হয়েছিলেন।
এখন প্রশ্ন হল, পুতনা যে কংসের মতই কৃষ্ণকে ঘৃণা করত, কেন সে মাতা যশোদার মত মর্যাদা পেল? এই প্রসঙ্গে উদ্ধব বলেছিলেন (ভাগবত ৩/২/২৩) পুতনা ধাত্রীর মর্যাদা লাভ করেছিলেন। তাই বর্তমান শ্লোক অনুসারে, জননী শব্দ দ্বারা ধাত্রী বোঝানো হয়েছে। কিন্তু তা দ্বারা আমাদের এটা মনে করা উচিত নয় পুতনা সরাসরি কৃষ্ণের ধাত্রীরূপে গোলোকে বর্তমান। বরং তিনি কৃষ্ণের ধাত্রীরূপ প্রাপ্ত হয়ে সেই একইরূপ পরমানন্দ লাভ করে চলেছেন।