এই পোস্টটি 61 বার দেখা হয়েছে
জনমনে কিছু প্রশ্ন প্রায়ই উদিত হয় ভগবান কি সত্যিই এই ধরাধামে অবতীর্ণ হয়েছিলেন? যে জন্মাষ্টমী সবাই শ্রদ্ধাভরে প্রতিবছর পালন করে আসছে তার যৌক্তিকতাই বা কতটুকু? বিশেষত শিক্ষিত যুবগোষ্ঠীদের একাংশের ধারণা শ্রীকৃষ্ণের জন্ম এবং তার লীলাকাহিনীগুলো Mythology. অর্থাৎ মানুষেই কতগুলো এই নিছক কল্প কাহিনীগুলো তৈরি করেছে। কুরুক্ষেত্রের বিশাল সে যুদ্ধ, বৃন্দাবন, মথুরা, দ্বারকা ইত্যাদি ঐতিহাসিক স্থানসমূহ যে কোন নিছক কল্প কাহিনী নয় তার প্রমাণ এখন আবিষ্কৃত হয়েছে।
বিজ্ঞানীদের গবেষণায় আবিষ্কৃত হয়েছে মথুরা, দ্বারকা, হস্তিনাপুরের মত প্রাচীন শহরে বিভিন্ন ঐতিহাসিক নিদর্শন। হস্তিনাপুর, উত্তর প্রদেশের মিরুট এবং মাওয়ানা এর মধ্যবর্তী অঞ্চল বিদুর-বণ-টিলা (বিদুরের প্রাসাদ), দ্রৌপদী-কি-রাসৌ (দ্রৌপদীর রান্নাঘর) এবং দ্রৌপদী ঘাট (স্নান করার ঘাট) যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। ১৯৫২ সালের দিকে আর্কিওলজিস্টরা এ স্থান থেকে প্রাচীন হস্তিনাপুরে আরো অনেক ব্যবহৃত নিদর্শন খুঁজে পাওয়া যায়। যেমন কপারের বাসনপত্র, লোহার তীর, স্বর্ণ এবং রৌপ্যের তৈরি গহনা। টেরাকোটা জিংকস ইত্যাদি জিনিসপত্র আবিষ্কৃত হয়। বিভিন্ন লোহার জিনিসপত্র যেমন তীর এবং বর্শা, কুঠার, ছুরিসহ বিভিন্ন ধারালো অস্ত্রশস্ত্রও আবিষ্কৃত হয়েছে। যা নির্দেশ করে ঐ স্থানে একসময় বসবাস করত একটি বিশাল সৈনিক গোষ্ঠী যারা যুদ্ধের জন্য এসব অস্ত্র নিয়ে ব্যস্ত থাকত। মহাভারতের ৩৫টি সাইট চিহ্নিত করা হয়েছে দক্ষিণে। যেখানে প্রতিনিয়তই আবিষ্কৃত হচ্ছে নিত্য নতুন প্রাচীন দ্বাপর যুগের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন।
মহাভারতের ঘটনাবলী ঘটেছিল আনুমানিক ১০০০-৯০০BC এর মধ্যে। পরবর্তীতে মৎস্য এবং বায়ু পুরান অনুসারে গঙ্গা নদীর মাধ্যমে সৃষ্ট একটি বিরাট বন্যায় হস্তিনাপুর ধ্বংস হয়ে যায় এবং কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের পর অভিষিক্ত পরীক্ষিত মহারাজের (অর্জুনের প্রপৌত্র) পর পঞ্চম রাজা নিচক্ষু তার রাজধানী স্থানান্তর করেন কাউসম্বীতে। যেটি এলাহাবাদ থেকে ৫০ কি. মি. দূরে অবস্থিত। এই স্থানে অর্থাৎ তৎকালীন হস্তিনাপুর এলাকাটিতে একসময় একটি বিরাট বন্যা হয়েছিল তার প্রমাণ মেলে বিজ্ঞানীদের গবেষণায়। ঘন কাঁদা মাটির নিদর্শন এখনও সেই সংঘটিত বন্যার ইঙ্গিত বহন করে।
পাণ্ডবদের নির্বাসনের সময়ে তারা তিনটি গ্রাম চেয়েছিলেন। সেগুলো হল পানিপ্রস্থ, সোনাপ্রস্থ এবং ইন্দিরাপ্রস্থ যেগুলো এখনো রয়েছে। নিউ দিল্লিতে অবস্থিত সেসব স্থান এখন পানিপথ, সোনেপথ এবং পুরাণকিলা নামে পরিচিত। এ স্থানগুলোতেও আবিষ্কৃত হয়েছে অনেক কিছু। পুরাণকিলাতে ড্রেনেজ সিস্টেম সহ প্রাচীন দালানকোটার কাঠামোও আবিষ্কৃত হয়।
কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধ যেখানে হয় সেখানে আবিষ্কৃত হয় বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্র। সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার মহাভারতের যে সরোবরগুলোর কথা বলা হয়েছে সেগুলো এখনো রয়েছে।
মহাভারতের আরেকটি উল্লেখযোগ্য নিদর্শন হলো প্রাচীন দ্বারকা নগরী যেটি ভারত মহাসাগরে তলিয়ে গিয়েছিল। আর্কিওলজিস্টরা দ্বারকা নগরীর অনেকাংশ পানির নিচে আবিস্কার করে। যেখানে সন্ধান পাওয়া যায় ব্যবহৃত কয়েন, স্থাপত্য নিদর্শন, অস্ত্রশস্ত্র, লোহার তৈরি জিনিসপত্র সহ আরো অনেক কিছু। এ বিষয়ে চৈতন্য সন্দেশ পত্রিকার একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছিল। মহাভারতে যেসব গ্রাম, সরোবর এবং পাহাড়ের কথা বর্ণিত হয়েছে সেগুলোর নিদর্শন এখনও খুঁজে পাওয়া যায়।
ঐতিহাসিক পটভূমি খুঁজলে বের হয়ে আসে শুরুর দিকে যেসব রাজারা একসময় ভারতবর্ষ শাসন করত তাদের জীবনীতেও মহাভারতের ঘটনাপুঞ্জীর সঙ্গে একটি যোগসাজেশ পাওয়া যায়। এই যেমন খ্রিষ্টপূর্ব ৪র্থ শতাব্দীতে চাণক্য উল্লেখ করেন মহাভারতের বিভিন্ন কাহিনী প্রসঙ্গ। পানিনি, পতঞ্জলী, বৌদ্ধ এবং জৈনদের কার্যক্রমেও কৃষ্ণ এবং কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের বিভিন্ন ঘটনাবলীর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সেসময়ের একজন বিখ্যাত চাইনিজ পরিদর্শক ইয়ান চাং কুরুক্ষেত্র স্থানে এক বিশাল যুদ্ধের কথা স্বীকার করেছিলেন কেননা তিনি তার গবেষনায় সেই স্থানে মাটির নীচে অনেক মৃত যোদ্ধাদের হাঁড় খুঁজে পান। যা নির্দেশ করে এখানে এক সময় কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল।
মহাভারতের কাহিনী সংঘটিত হয়েছিল সাড়ে পাঁচ হাজার বছর আগে। এর কাছাকাছি সময়ে এভাবে অনেক রাজাদের কাহিনীতে কৃষ্ণ সম্পর্কিত অনেক কার্যক্রমের ঘটনা খুঁজে পাওয়া যায়।
১৮০-১৬৫BC তে গ্রীক শাসক এজাথোক্লেস একটি কয়েন বা মুদ্রার প্রচলন করেছিলেন যেখানে খোদাইকৃত ছিল বাসুদেব চক্র হাতে দাড়িয়ে। খ্রীষ্টপূর্ব প্রথম শতাব্দীতে তৎকালীন গ্রীক রাষ্ট্রদূত হেলীওদোরাস বেসনগর নামক স্থানে বাসুদেবের উদ্দেশ্যে গরুড় স্তম্ভ স্থাপন করেন। তিনি ঘোসেন্দি, হাতিভরতেও বিভিন্ন নিদর্শন স্থাপন করেন।
মহাভারতের আরেকটি উল্লেখযোগ্য স্থান হল মথুরা। কৃষ্ণের জন্ম যেখানে হয়েছিল সে স্থানটি এখনও এক গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন।
এভাবে মহাভারতের কাহিনীসমূহ যে নিছক কোন কল্পকাহিনী নয় তার প্রমাণ মেলে। যারা এসব অস্বীকার করে তারা নিশ্চিত গোঁড়া নাস্তিক ছাড়া আর কিছুই নয়। সুতরাং উপরোক্ত তথ্যাবলী থেকে একটি সূত্র দাঁড় করানো যায় তা হল, মহাভারতের কাহিনী যদি সত্য হয়, তবে শাস্ত্র অভ্রান্ত আর এই অভ্রান্ত দিক নিদর্শনা যদি মানুষ অনুসরণ করে তবে তাদের জীবন সুখী ও সমৃদ্ধশালী হবে। পক্ষান্তরে যারা শাস্ত্রকে অসম্মান করে তাদের এই কালে ও পরকালে দুর্গতির সীমা থাকবে না। যেখানে বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও শাস্ত্র উক্তির এ দু’য়ের সমন্বয়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের লীলাস্থলী সম্পর্কে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় সেখানে যদি নাস্তিকরা তবুও চোখ বন্ধ করে বলে কৃষ্ণ নামের কোন পুরুষের অস্থিত্ব আদৌ ছিল না তা কল্প কাহিনী মাত্র তবে তা নিতান্তদুঃখজনকই বটে।
হরে কৃষ্ণ।