জগন্নাথের বিশেষ ভোগ নিমপাতা !

প্রকাশ: ১৬ জুন ২০১৯ | ১:০৫ অপরাহ্ণ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৯ | ১:০৫ অপরাহ্ণ

এই পোস্টটি 1353 বার দেখা হয়েছে

জগন্নাথের বিশেষ ভোগ নিমপাতা !

এক সময় পুরীধামে লাণ্ডিমাতা নামে একজন বৃদ্ধা থাকতেন, তিনি ছিলেন জগন্নাথদেবের এক অনুরক্ত ভক্ত। শ্রীজগন্নাথদেবের প্রতি তার বিশেষ ভাব অন্তরে উদিত হয়েছিল, সেই ভাবভক্তির প্রভাবে প্রভুকে তিনি তার পুত্র বলে ভাবতেন। প্রতিদিন লাণ্ডিমাতা প্রভুর জন্য কিছু নিমপাতা বাটা নিয়ে আসতেন। তিনি মনে মনে ভাবতেন, শ্রীজগন্নাথ প্রতিদিন ষাট বার ভোজন করেন, যার মধ্যে থাকে ছাপ্পান্ন রকমের অন্ন ব্যাঞ্জন, কতরকমের মিষ্টি, কত রকমের ঘি। তিনি অবশ্যই এত ধরণের গুরুপাক, জমকালো খাবার দাবার ভোজন করে বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন, এবং তার হয়তো কিছু পেটের সমস্যা হয়েছে। সেই জন্য যদি কিছু নিমপাতা বাটা খান তাহলে তার পক্ষে তা খুবই ভালো হবে। এইরকম মনোভাব নিয়ে লাণ্ডিমাতা প্রতিদিন মন্দিরে যেতেন তার পুত্রকে নিমপাতা বাটা খাওয়াতে। একদিন পাত্রটি হাতে নিয়ে লাণ্ডিমাতা মন্দির প্রবেশ দ্বারে পৌঁছালেন, কিন্তু মন্দির প্রবেশের আগেই কর্তব্যরত নিরাপত্তারক্ষী তাকে থামালো ও বলল, ও হে বৃদ্ধা! এই পাত্রে তুমি কি নিয়ে যাচ্ছো? লাণ্ডিমাতা উত্তর দিলেন, আমি আমার পুত্রের জন্য কিছু নিমপাতা বাটা নিয়ে যাচ্ছি। রক্ষী বলল, তোমার পুত্র কি মন্দিরের মধ্যে রয়েছে? লাণ্ডিমাতা উত্তর দিলেন, আমার পুত্র রত্নসিংহাসনে বসে আছে, তার আখিঁ দুটি বিশাল সে আমার এই নিমপাতার তৈরী পদটি ভোজন করার জন্য প্রতীক্ষা করছে। আমাকে ভিতরে যেতে দাও। রক্ষী রেগে গিয়ে তাকে বলল, তুমি কি বলছো? জগন্নাথ তোমার ছেলে? প্রভু জগন্নাথদেবকে কত ধরণের অন্নব্যাঞ্জন নিবেদন করা হয়। সেই সব ভোজন করে তিনি তৃপ্ত নন?

তিনি কেবল তোমার ওই নিমপাতা বাটা ভোজনের জন্য অপেক্ষা করছেন? নিরাপত্তারক্ষী লাণ্ডিমাতাকে মন্দিরের মধ্যে যেতে দিলেন না। ভগ্নহৃদয়ে লাণ্ডিমাতা তার কুটীরে ফিরে এলেন। আমার ছেলে নিশ্চয়ই তার এই নিমপাতার জন্য অপেক্ষা করে আছে, এমন ভাবতে ভাবতে তিনি ক্রন্দন করতে লাগলেন। শ্রীজগন্নাথদেব লাণ্ডিমাতার অন্তরের ভাব উপলদ্ধি করলেন এবং তার সঙ্গে বাৎসল্য রস উপভোগ করার জন্য তিনি সেই রাত্রে তার কুটীরে আবির্ভূত হলেন। হঠাৎই এক উজ্জল আলোকপ্রভায় লাণ্ডিমাতার ঘরটি ভরে উঠল এবং তিনি সবিস্ময়ে দেখলেন যে তার প্রিয় পুত্র জগন্নাথ তার সমানে দাড়িঁয়ে আছে। তারঁ মুখটি যেনো শুষ্ক ও বিবাদ। জগন্নাথ বললেন, মা আজ কত রকমের মিষ্টদ্রব্য ভোজন করেছি। আমার পেটে কষ্ট হচ্ছে, তুমি কি আমাকে কিছু নিমপাতা বাটা দেবে? লাণ্ডিমাতা তাড়াতাড়ি উঠৈ পড়লেন এবং উত্তরে কিছু বলার চেষ্টা করলেন, কিন্তু কিছু বলার আগেই জগন্নাথদেব তার গৃহ হতে অন্তঃহিত হলেন। সেই রাতে প্রভু শ্রীজগন্নাথদেব পুরীর রাজার কাছে স্বপ্নে আর্বিভূত হলেন এবং তাকে বললেন, রাজা! লাণ্ডিমাতা আমাকে তার পুত্র হিসাবে প্রীতি করেন। তিনি আমার মা, আর প্রতিদিন তিনি আমার জন্য অত্যন্ত প্রীতিসহকারে নিমপাতা বাটা নিয়ে আসেন। তোমার নিরাপত্তারক্ষী তাকে প্রবেশেদ্বারে থামিয়েছে এবং তার হাত থেকে নিমপাতা বাটার পাত্রটি ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে। তার তৈরী নিমাপাতা বাটা খেতে আমি খুবই ভালোবাসি। আগামীকাল খুব ভোরে অবশ্যই তুমি তার কাছে যাবে এবং তাকে বলবে, সে যেন আমাকে ভোজন করাবার জন্য নিমাপাতা বাটা নিয়ে আসে। পরদিন খুব ভোরে রাজা তার মন্ত্রীদের সঙ্গে নিয়ে জগন্নাথ মন্দিরের অনতিদূরে অবস্থিত লাণ্ডিমাতার ছোট্ট ঘরে গেলেন। তার কুটিরে রাজাও তার মন্ত্রিদের সঙ্গে নিয়ে জগন্নাথ মন্দিরের অনতিদূরে অবস্থিত লাণ্ডিমাতার ছোট্ট ঘরে গেলেন। তার কুটিয়ে রাজা ও তার মন্ত্রিদের দেখে লাণ্ডিমাতা খুব অবাক হলেন। রাজা তাকে বললেন, হে মাতা ! মন্দিরের পাহারাদার রক্ষী আপনার প্রতি এক মহা অপরাধ করেছে। আমি তার জন্য ক্ষমা চাইছি। আপনার হাতে তৈরী নিমপাতা বাটা শ্রীজগন্নাথদেবের খুবই পছন্দ। আপনি শ্রীজগন্নাথদেবের একজন মহান ভক্ত এবং আপনি অত্যন্ত ভাগ্যবতী যে তিনি আপনার বাৎসল্যপ্রীতির ভাবটি গ্রহণ করেছেন এবং আপনাকে তিনি নিজে মাতা জ্ঞান করেন। আজ থেকে আপনার কুটীরটি লাণ্ডিমাতা মঠ নামে প্রসিদ্ধ হবে। এই স্থানটি একটি পবিত্র তীর্থ হিসাবে বিবেচিত হবে। এই পৃথিবীতে আপনি যতদিন থাকবেন, প্রতিদিন আপনি শ্রীজগন্নাথদেবকে নিমপাতা বাটা খাওয়াবেন। এমনকি আপনি দেহত্যাগ করার পরেও আপনার স্মৃতিতে শ্রীজগন্নাথদেবকে এই পদটি নিবেদন করা হবে। রাজার কাছ থেকে এমন প্রীতিপূর্ণ কথা শুনে লাণ্ডিমাতা তার সৌভাগ্যের কথা ভেবে খুবই আনন্দিত হলেন। এখনকার দিনে নিমপাতা বাটার পরিবর্তে জগন্নাথদেব ছাপ্পান্ন ব্যাঞ্জনপদ ভোজন করার পর তিতোভোগ নামে একটি পদ ভোজন করেন এবং তারপর মিঠিজল বা মিষ্টি জল পান করেন।

সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।