জগন্নাথপুরীর পাহারাদাররা

প্রকাশ: ১৬ জুন ২০১৮ | ৪:৩৯ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ২১ জুন ২০১৮ | ১০:৩৬ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 1194 বার দেখা হয়েছে

জগন্নাথপুরীর পাহারাদাররা

শুধু জগন্নাথ পুরী নয় সমস্ত বিশ্বব্রহ্মান্ডের রক্ষাকর্তা হলেন শ্রী জগন্নাথ। অথচ শ্রী জগন্নাথই তার মন্দিরকে রক্ষণাবেক্ষনের জন্য দায়িত্ব দিয়ে রেখেছেন আটজন শিব এবং আটজন হনুমানকে। যারা প্রত্যেকেই শ্রী মন্দিরকে রক্ষার জন্য সর্বদা সজাগ। এর কারণ হিসেবে শ্রী জগন্নাথদেব ভক্তদের বিভিন্ন আনন্দ বিধানের জন্য লীলাবিলাস কিংবা হনুমান এবং শিবের মত ভক্তদের তার সেবায় নিয়োজিত করানোর উদ্দেশ্যেই হতে পারে। সেটা জগন্নাথের এক অপূর্ব মাধুর্যপূর্ণ চিন্তা-ভাবনা যা আমাদের মত সাধারণ জীবদের বোধগম্য নয়। তবে এটুকু সঠিক যে, এই আটজন হনুমান ও আটজন শিব সমগ্র পুরী ধামকে রক্ষা করে চলেছেন। এই ১৬জন শিব ও হনুমানকে জগন্নাথ বিশেষ বিশেষ দায়িত্ব দিয়ে রেখেছেন। আটজন হনুমানের মধ্যে ৫জন পুরীর চতুর্দিকে সজাগ পাহাড়া দিয়ে চলছে। সিংহদ্বার অর্থাৎ জগন্নাথ মন্দিরের প্রবেশ পথের পূর্ব গেইটে ‘পথে হনুমান’ উত্তরে গেইটে ‘তপস্বী হনুমান’ পশ্চিম গেইটে ‘বীর বিক্রম হনুমান’ এবং উত্তর গেইটে যথাক্রমে ‘কানপাতা হনুমান’ এবং বাধা অবস্থায় ‘বেড়ী হনুমান’ পাহাড়া দিচ্ছে। প্রথমে এসব হনুমান কিভাবে পুরীতে এসেছে তার কতিপয় বিভিন্ন মাধুর্যপূর্ণ ঘটনার দিকে আলোকপাত করা যাক।কানপাতা হনুমান: এই হনুমানের একটি সন্দুর কাহিনী রয়েছে। মূলত জগন্নাথ মন্দির সাগরের তীরবর্তী অবস্থিত। সমুদ্র মস্থনের সময় লক্ষীদেবী আবির্ভূত হলে শ্রী জগন্নাথদেব লক্ষীদেবীকে বিবাহ করেন। এরপর থেকে সমুদ্র হয় জগন্নাথের শ্বশুর এবং সমুদ্রের জামাতা হলেন শ্রী জগন্নাথ। একদিন এক রাত্রে সমুদ্রের ঢেউ কূলে এসে এমনভাবে তর্জন গর্জন করে চলল যে, এক পর্যায়ে মধ্যরাতে জগন্নাথদেবের ঘুম ভেঙে যায়, পরবর্তীতে জগন্নাথ সমুদ্রকে নির্দেশ দেয় যে, তিনি যেন আর এরকম শব্দ না করেন, আর সমুদ্রের এ শব্দকে পাহাড়া দেওয়ার জন্য একজন হনুমানকে তিনি পুরীধামের উত্তর গেইটে অবস্থান করান। এই হনুমান তখন থেকেই খুবই মনযোগ সহকারে পাহাড়া দিতেন এবং সাগরের ঢেউয়ের শব্দ এরপর থেকে কখনো মন্দিরের ভিতর প্রবেশ করে না। কান পেতে মনযোগ সহকারে শ্রবণরত থাকায় এই হনুমানের নাম হয় ‘কানপাতা হনুমান’।তপস্বী হনুমান: শ্রী জগন্নাথ মন্দিরের উত্তর গেইটে এই হনুমান বিগ্রহটি অবস্থিত। জগন্নাথ মন্দিরের এই পাহাড়াদারের আরেকটি নাম হল ‘চারি চক্র’ হনুমান। তবে সবচেয়ে পরিচিত আরেকটি নাম হল অষ্টভুজা হনুমান। ‘চারি-চক্র’ মানে হল যার চার হাতে ৪টি চক্র রয়েছে। পূর্ব দিকে মুখ করে অবস্থিত এই হনুমান বিগ্রহটি প্রায় ৪ ফুট উঁচু। একদিন ভগবানের সুদর্শন চক্র খুব গর্বের সাথে ভাবছিল “আমি প্রভুর খুব নিকটের একজন এবং আমি তার খুবই প্রিয়”। ভগবান জগন্নাথ অহংকার ধ্বংস করার ক্ষেত্রে খুবই বিখ্যাতঅ তিনি সুদর্শন চক্রের এ অহংকার মোটেই পছন্দ করেননি। সুদর্শন তখন আরো ভাবছিল যে, “সে খুবই শক্তিশালী কেননা তিনি ভগবানকে সবসময় সুরক্ষা দিয়ে থাকেন। কোন কঠিন কাজের জন্য শ্রীজগন্নাথ সুদর্শন চক্রের উপরই নির্ভর করেন । সুদর্শরে এ অহংকার বুঝতে পেরে ভগবান জগন্নাথ তার এ অহংকার চূর্ণ করার সিদ্ধান্ত নিলেন। একদিন শ্রী জগন্নাথ অভয়ারণ্যে তপস্যায় রত হনুমানকে ডেকে আনার জন্য সুদর্শনকে পাঠালেন। যথারীতি হনুমানকে এ খবর দেয়ার পর যখন হনুমান মন্দিরের সম্মুখে আসলেন তখন হনুমান যাতে জগন্নাথের রত্ন সিংহাসন পযর্ন্ত পৌঁছতে না পারে তার জন্য মন্দিরের চতুর্দিকে খুব দ্রুত সহকারে ঘুরতে লাগলেন “আমি কিভাবে আমার প্রভুর সাক্ষাত লাভ করতে পারি?” এই বলে যখন হনুমান ভগবানের শরণাগত হলেন তখন হনুমান সঙ্গে সঙ্গেই জগন্নাথের কৃপায় শক্তি প্রাপ্ত হয়ে ৮টি হাতে সুসজ্জিত হলেন। যার ৪টি হাতেই ৪টি সুদর্শন এবং বাকি দু’হাত ভগবানের প্রতি প্রণাম নিবেদনরত। এরপর হনুমানকে আর সুদর্শন আটকাতে পানেনি। তাকে অগ্রাহ্য করে তপস্বী হনুমান জগন্নাথের সথে দেখা করলেন। ‘সুদর্শন’ তখন অনুতপ্ত হৃদয়ে তার সেই অহংকারের কথা বুঝতে পেরে জগন্নাথের কাছে ক্ষমা চাইলেন। সুদর্শন তার চেয়েও বেশি হনুমানের এই শক্তি দেখে মনে মনে খুব লজ্জা অনুভব করল। অবশেষে জগন্নাথ সুদর্শনকে অভিশাপ দিল যে ‘তুমি কলিযুগে তোমার স্ব-আকৃতিতে (গোলাকার) পূজিত হবে না। তুমি একটি দন্ড হিসেবেই পূজিত হবে। তবে তোমার চিন্তার কোন কারণ নেই, কেননা তুমি আমার বামপাশেই সবর্দা অবস্থান করবে।’ এরপর সুদর্শন যখন এ অভিশাপে হতাশ হল তখন জগন্নাথ পুনরায় আবার বললেন “ চিন্তা করো না। কলিযুগে তুমি সর্বদা আমার শ্রী মন্দিরের চূড়ায় অবস্থান করবে এবং যে তোমাকে ঐ চূড়ায় দর্শন করবে সে আমাকে দর্শনে যে ফল বা আনন্দ লাভ হয় তার সমান আনন্দ বা ফল লাভ করবে।” তখন থেকে তপস্বী হনুুমান বাইলী বৈকুন্ঠে অবস্থিত মন্দিরের উত্তর গেইটে দাড়িয়ে রয়েছে এবং সুদর্শন চক্র জগন্নাথ মন্দিরের চূড়ায় অবস্থান করছে। বেড়ী হনুমান: চক্র-তীর্থের নিকটেই এই বেড়ী হনুমান মন্দিরটি অবস্থিত। এখানে যে হনুমানটি রয়েছে তা দড়ি (বেড়ী) দিয়ে বাধা বলেই এই হনুমানের নাম বেড়ী হনুমান। জগন্নাথ এ বেড়ী হনুমানকে স্থাপন করেন পুরীধামকে সমুদ্রের নিকট থেকে রক্ষা করার জন্য। কেননা পূর্বে মাঝে মাঝে সমুদ্রের ঢেউ পুরী ধামে এসে সমগ্র অঞ্চল প্লাবিত করে ফেলত। এর ফলে পুরীধামের অধিবাসীদের অনেক কষ্ট ভোগ করতে হত তাই এ হনুমানকে পাহাড়াদার হিসেবে এ স্থানে বসানো হয়। কিন্তু একদিন হনুমান অযোধ্যা দর্শনের উদ্দেশ্যে স্থান ছেড়ে চলে যায়। আর এ সুযোগে সমুদ্রের জলরাশি পুরী ধামকে প্লাবিত করে। পরবর্তীতে শ্রী জগন্নাথ অযোধ্যা থেকে হনুমানকে ধরে নিয়ে আসে এবং এ স্থানে তাকে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখে। তাকে এর নির্দেশ দেয় যে, সে যেন কখনো এ স্থান ত্যাগ না করে এবং তার কর্তব্য সুন্দরভাবে সম্পাদন করে। জগন্নাথ পুরীর অন্য পাহাড়াদাররা অর্থাৎ অষ্টশম্বুর বর্ণনা বিশেষ সংখ্যায় দেওয়া হলো। (বিস্তারিত বিশেষ সংখ্যায় দেখুন) হরেকৃষ্ণ।

(মাসিক চৈতন্য সন্দেশ জুন ২০০৯ সালে প্রকাশিত)

সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।