প্রকাশ: ২৯ নভেম্বর ২০২০ | ৭:৫৬ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০২০ | ৮:১২ পূর্বাহ্ণ
এই পোস্টটি 570 বার দেখা হয়েছে
ভিয়েতনাম যুদ্ধে অনেক আমেরিকান সৈনিক নিহত ও লাঞ্ছিত হচ্ছিল যা আমেরিকানদের নিকট ছিল বিশেষ লজ্জাক র। ১৯বছর ১৮০দিন ধরে এই যুদ্ধে ৫৮ হাজার আমেরিকান সৈন্য নিহত হয়েছিল। সারা আমেরিকাতে এর প্রভাব পড়েছিল। প্রতিটি শহরে ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিরুদ্ধে আন্দোলন হচ্ছিল। সারা আমেরিকায় অবৈধ গাঁজা, কোকেন, LSD নেশাখোরের সংখ্যা বেড়ে যায়। হাত বাড়ালেই যে কেউ এইসব নেশাদ্রব্য পেয়ে যেত। অনেক বখাটে যুবকের সাথে ধনী পরিবারের সদস্যরাও নেশাগ্রস্ত হয়ে পরে।
এমনই এক যুবক তার ধনী পরিবারের জন্য হুমকি হয়ে গেলে মা আইনের আশ্রয় নিয়ে তাকে ত্যাজ্যপুত্র করতে বাধ্য হয়।
যুবকটি (হিপ্পিদের) অর্থাৎ টোকাইদের সাথে যোগ দিয়ে ১৯৬৬ সালে বাওয়ারীতে চলে আসে।
শীতের সময় হিপ্পিরা শহরের নোংরা ফেলার পাত্রে আগুন জ্বালিয়ে চারপাশে বসে আগুন পোহাত নেশা করত আর বাজে মেয়েদের সাথে অবৈধ যৌনক্রিড়াও করত। রাত্রীবেলা সস্তা হোটেলে, ফুটপাতে, দোকানের দোরগোড়ায়, কোন পরিত্যক্ত বাক্সের মধ্যে অথবা শুঁড়িখানার পাশে পাশাপাশি শুয়ে ঘুমোত। অনেকে রোগাগ্রস্ত হয়ে মৃত্যুকে বরন করত, আবার সেই লাশ নিয়ে ভিক্ষা করে, সেই ভিক্ষের ডলারে আবার নেশার মহৌৎসব চলত, গীটার বাজিয়ে সবাই কোরাশ গান শুরু করত,” দ্য বাওয়ারী ! দ্য বাওয়ারী ! — আই উইল নেভার গো দেয়ার এনি মোর”।
সেই সময় শ্রীল প্রভুপাদ বাওয়ারীর ডেভিড এলেনের ছাদ ছেড়ে
সেকেন্ডে এভিনিউর একটি দোকান ঘর ভাড়া নিয়ে প্রতিদিন কীর্ত্তন ও ভাগবত পাঠ করতেন। এরমধ্যে কয়েকজন হিপ্পিরা প্রভুপাদের সাথে সঙ্গ দিত। একদিন ভোরে মঙ্গল আরতি শেষ করে শ্রীল প্রভুপাদ ভাগবত পাঠ করবেন কিন্তু শ্রবন করার কেউ ছিল না।
প্রভুপাদের দুই শীর্ষ ডন ও র্যাফলকে বলল, ” দেখ রাস্তায় কেউ আছে কিনা”।
তারা বলল এক যুবক নেশা অবস্থায় ড্রেনের পাশে নাক ডেকে ঘুমুচ্ছে, তাছারা আর কেউ নেই। প্রভুপাদ বলল তাকেই নিয়ে এস।
শ্রীল প্রভুপাদ ভাগবত পাঠ শেষে দেখলেন যুবকটি চোখ ডলছে আর এদিক- ওদিক তাকাচ্ছে। প্রভুপাদ মাইককে বললেন ওকে কাল জাবন প্রসাদ দাও। বলে প্রভুপাদ উপরে চলে গেলেন।
যুবকটি কাল জাবন খেয়ে দারুন অনুভুতি হল এবং ভাবল জাবনটি খেলে নেশাটা ভাল জমে। সে প্রতিদিন সারারাত LSD নেশা করত আর ভোরে কাল জাবন খেতে প্রভুপাদের দোকান-মন্দিরে আসত। একদিন সে চিন্তা করল প্রতিদিন বুড়োটি কি বলে আজ শুনবো। সেদিন শ্রীল প্রভুপাদ দেহ নশ্বর এবং আত্মার নিত্যতা সম্বন্ধে বলছিলেন। যুবকটি আশ্চর্যাম্বিত হল এবং ভাবল ঠিকই বলছে। এখন প্রতিদিন সে ভাগবত শোনার জন্য মঙ্গল আরতির আগে এসে বসে থাকত। এবং শ্রীল প্রভুপাদের কৃপায় ভাল ভক্ত হয়ে গেল। আমিষ, নেশা, জুয়া, অবৈধ স্ত্রীসঙ্গ ছেড়ে ভক্তে পরিনত হল। সে অনেক গ্রন্থ প্রচার করত বলে শ্রীল প্রভুপাদ তাকে আদর করত। এইভাবে এক বছর গত হল।
একদিন ভক্তটি চোখে জল ভর্তি ছলছল নয়নে প্রভুপাদকে জানাল সে তার মার সাথে দেখা করতে নিউইয়র্কে যেতে চায়। প্রভুপাদ সায় দিলেন।
ভক্তটি তার বাড়ীর কলিং বেলে টিপ দিলে মা এলেন এবং দরজার গ্লাস ছিদ্র তার নেশাখোর ছেলেকে দাড়িয়ে দেখতে পেলেন। আরও দেখলেন এখন সে নতুন রুপে, মাথা মুন্ডন, টাকের পিছে এক গুচ্ছ চুল, স্যাফরন কাপড়ে ঢাকা শরীর ও গলায় ঝুলছে ভিক্ষা করার ছোট্ট ঝুলি। মা ভাবল ছেলে তার নতুন বহুরুপী হয়েছে যেমন আগে কানে বালী, ভ্রুতে রিং , মাথার চুল একেকদিন একেক কালার, ছেড়া জিনস্ প্যান্ট, বিভিন্ন উৎকট কালারের গেঞ্জি-শার্ট পরতো। এখন বোধ হয় নতুন কোন উন্নত নেশা করছে।
ভক্তটি বলল, ”মা একটিবার দরজা খোল আমি তোমাকে প্রনাম করে চলে যাব। মা প্লিজ, প্লিজ”।
তার ঠান্ডা অনুনয় গলার স্বরে আশ্চর্য হল, কিন্তু কি করবে বুঝতে পারছিল না। ভাবছিল। একসময় দরজা খুলে দিল।
তৎক্ষনাৎ দেখল তার একসময়ের আদরের ছেলে মাটিতে শুয়ে তার পা ধরে কি যেন ভারতীয় মন্ত্র বলে তাকে প্রনাম করছে।
শুদ্ধভক্তের হাতের ছোয়ায় মার চোখে জল এসে গেল, মা কাঁদছে ছেলেও কাঁদছে, মা বলল, ”ভিতরে আয়”।
ভিতরে ঢুকেই ভক্তটি বলল, ”মা ক্ষুধা লেগেছে”।
মা ফ্রিজের দিকে যাচ্ছে দেখে ছেলে বাধা দিল বলল, ”মা আজ আমি রাধবো ও তোমাকে খাওয়াব”।
ভক্তটি চুলা, সিঙ্ক, থালা-বাটি সব ধুয়ে রান্না করল। মা অবাক হয়ে দেখছে। সুন্দর রান্নার গন্ধ। তারপর সে রান্নাকরা খাবার থালায় সাঁজিয়ে, ভারতীয় কোন দেবতার নিকট রেখে মন্ত্র পড়া শেষ হলে। মাকে প্লেটে দিল ও নিল। দুজনে খেল।
মা এমন সুস্বাদু ভেজিটেবল খাবার খেয়ে অবাক হল।
মা তার এখনকার আচার ও ব্যবহারে অনেক শান্তি পেল।
ছেলে বলল, ”মা আমি চললাম”।
মা বলল, ” আজ একটু থাক”।
বিকেলে ভক্তটি আশেপাশের যুবক- যুবতিদের নিয়ে ড্রয়িং স্পেশে বসে তাদেরকে মিষ্টি সুরে মুল্যবান উপদেশ দিচ্ছে, মা শুধু চেয়ে চেয়ে দেখছে আর ভাবছে,”আমি মনে করেছিলাম ও নেশাগ্রস্ত নেশা করতে করতে বোধ হয় এতদিনে মারাই গেছে, কিন্তু তার উল্টাটা হয়েছে, সে এখন মহাপুরুষ, কি করে এমন হল”।
মা দেখল রাতে আশেপাশের বয়স্ক পুরুষ-মহিলা ও বৃদ্ধদের নিয়ে এল। তাদেরকেও অনেক সুন্দর সুন্দর কথা বলল যা তিনি জীবনে শুনেন নি। মা ঘুমাবার আগে জিজ্ঞেস করল,”কে তোকে এমন মহান করল”।
ভক্তটির চোখে জল ছলছল করে উঠল বলল, ” মা তোমার এই নেশাখোর ছেলেকে ড্রেন থেকে তুলে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়ে কৃষ্ণের কাছে দান করেছেন যিনি
তার নাম এ সি ভক্তিবেদান্ত স্বামী শ্রীল প্রভুপাদ”।
মা বলল, ” আমি তার সাথে দেখা করব”।
ভক্তটি মাকে জড়িয়ে ধরে জোরে জোরে কাঁদতে লাগলো, মাও কাঁদতে লাগলো।
হরেকৃষ্ণ।