অনেকেই মনে করে লম্বা চুল, দাড়ি ও গোফ থাকলেই বুঝি কোনো ব্যক্তি সাধু বা বৈষ্ণব। আবার অনেকেই লম্বা দাড়ি গোঁফ বা চুল রেখে নিজেকে সাধু বা বৈষ্ণব বলে জাহির করতে উদ্যোগী হন। কিন্তু শ্রীল প্রভুপাদ ও পূর্বতন আচার্যদের যথার্থ নির্দেশনা অনুসারে প্রেক্ষাপট ভিন্ন, যা হরে কৃষ্ণ আন্দোলনের হাজার হাজার অনুসারীদের জন্য অবশ্য পালনীয়।
সঙ্কর্ষণ দাস
২০১৩ সালে এপ্রিল মাসে শ্রী বৃন্দাবন ধাম পরিদর্শনের সময় আমি লক্ষ্য করেছিলাম, ইসকনের অনেক দীক্ষিত ভক্ত দাড়ি রেখেছে। এ বিষয়ে শ্রীল প্রভুপাদের নির্দেশনাসমূহ কী? শ্রীল প্রভুপাদের গ্রন্থাবলী, পত্রাবলী, প্রবচন সমগ্র এবং বিভিন্ন কথোপকথনের মাধ্যমে আমরা এ বিষয়ে তাঁর বাসনা কি সেটি উপলব্ধি করতে পারি এবং এভাবে তাঁর নির্দেশনাসমূহ পালনের মাধ্যমে তাঁর প্রীতি সম্পাদন করতে পারি।
ব্রহ্মানন্দ দাসের কাছে লেখা শ্রীল প্রভুপাদ এক পত্রে ব্যক্ত করেছেন, “কীর্তনানন্দ হল আমাদের সংঘের প্রথম ভক্ত, যে সুন্দরভাবে মস্তক মুণ্ডন করে এবং শিখা পরিহিত হয়েছিল। এখন সে আবার দাড়ি রাখা শুরু করেছে। এটি ভাল নয়। আজকাল সে যা করছে তা আমার অনুমোদিত নয়।” (১১ অক্টোবর, ১৯৬৭)
শ্রীমদ্ভাগবতে (৬/৫/১৪) শ্রীল প্রভুপাদ লিখেছেন: “আমাদের কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলনে ফ্যাশন-পরায়ন ব্যক্তিদের কেবল একটি ফ্যাশনই অবলম্বন করার শিক্ষা দেওয়া হয় মুণ্ডিত মস্তকে তিলক শোভিত হয়ে বৈষ্ণব সাজে সজ্জিত হওয়া। তাঁদের মন, বেশভূষা, আহার শুদ্ধ করার শিক্ষা দেওয়া হয় যাতে তাঁরা কৃষ্ণভাবনায় যুক্ত হতে পারেন। কখনও লম্বা চুল, দাড়ি রেখে রূপ এবং বসনের পরিবর্তন করে কি লাভ? সেটি ভাল নয়। এই প্রকার তুচ্ছ কার্যকলাপে সময় নষ্ট করা উচিত নয়। সর্বদা কৃষ্ণভক্তিতে একনিষ্ঠ থাকা এবং সুদৃঢ় বিশ্বাস সহকারে মহৌষধ সেবন করা উচিত।”
বৃন্দাবনে এক প্রাতঃভ্রমণে শ্রীল প্রভুপাদ দাড়ি না রাখার সুফল সম্পর্কে ব্যক্ত করেছেন:
শ্রীল প্রভুপাদ একটি পরিত্যক্ত মাঠের দিকে ফিরলেন, যেখানে আমরা অনেক ময়ূরের বিচরণ দেখছিলাম-উজ্বল ময়ূরদের সাথে সাধারণ ময়ূরীরা। গুরুদাস বললেন, “পাখিদের মধ্যে পুরুষরা, নারীদের চেয়েও অনেক বেশি সুন্দর।”
শ্রীল প্রভুপাদ বললেন, “মানুষের মধ্যে নারীরা”।
গুরুদাস বললেন, “তারপর আমরা (ভক্তরা) হলাম কম সুন্দর। আমাদের কোনো চুল নেই।” “হ্যা, আমাদের কেউ পছন্দ করে না”, শ্রীল প্রভুপাদ মৃদু হাসলেন। “আমরা পুরুষও না, নারীও না কেউ জানে না আমরা কে। এটি অনেক ভাল। যদি তুমি কোনো নারী বা পুরুষের প্রতি আকর্ষিত না হও, তবে তুমি মুক্ত।”
(Life with the perfect master : অধ্যায় ৪) শ্রীল প্রভুপাদ স্পষ্টভাবে তাঁর গ্রন্থে উদ্ধৃত করেছেন যে, যদি কেউ এই আন্দোলনে যোগদান করতে চায় তবে তার কোনো দাড়ি রাখা যাবে না।
“এই শ্লোকে ‘ভদ্র করাঞা’, কথাটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। লম্বা চুল ও দাড়ি থাকার ফলে সনাতন গোস্বামীকে মুসলমান দরবেশের মতো দেখাচ্ছিল । সনাতন গোস্বামীর সেই রূপ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর ভাল লাগেনি, তাই তিনি চন্দ্রশেখরকে বলেছিলেন তাঁকে মুণ্ডন করিয়ে ভদ্র করতে। কেউ যদি কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলনে আমাদের সঙ্গে থাকতে চায়, তাহলে তাকেও চুল-দাড়ি কামিয়ে এইভাবে ভদ্র হতে হবে। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর অনুগামীরা লম্বা চুল রাখা পছন্দ করেন না।” (শ্রীচৈতন্য চরিতামৃত, মধ্য ২০/৭০ তাৎপর্য)
ঐ একই গ্রন্থের ওপর প্রবচন প্রদান কালে তিনি একই বিষয় নিয়ে পুনঃ নিশ্চিত করেছেন:
“শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর সম্প্রদায় অনুসারে, ভক্তরা পরিষ্কারভাবে ক্ষৌরকর্ম করবে। এক্ষেত্রে একটি মাত্র ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত হলেন, অদ্বৈত প্রভু। তাঁর দাড়ি রয়েছে এবং চৈতন্য মহাপ্রভুও কখনো তাঁকে দাড়ি কামানোর জন্য বলেননি। এর একটি কারণ হল, অদ্বৈত প্রভু তাঁর পিতাসম ছিলেন, তাই তিনি এ বিষয় তুলে ধরতে পছন্দ করেননি। কিন্তু অন্যান্য ক্ষেত্রে, তাঁর শিষ্যদের সবাই পরিষ্কারভাবে ক্ষৌরকর্ম সম্পাদন করতেন।” (শ্রীচৈতন্য চরিতামৃত, মধ্যলীলা ২০/৬৬-৯৬ এর প্রবচন, নিউইয়র্ক, নভেম্বর ২১, ১৯৬৬)
যখন একজন শিষ্য দাড়ি কামিয়ে ফেলে তখন শ্রীল প্রভুপাদ তার প্রতি সন্তুষ্ট হন: “তুমি যে তোমার লম্বা দাড়ি বিসর্জন দিয়েছ সেজন্যে আমি তোমার প্রতি অত্যন্ত প্রসন্ন হয়েছি…”
(হয়গ্রীবকে পত্র, বৃন্দাবন ২৯ আগষ্ট, ১৯৬৭)
১৯৭৬ সালে অকল্যান্ডে শ্রীল প্রভুপাদ পুনরায় দাড়ি রাখার বিরুদ্ধাচার করেছিলেন : “ছোট এক মন্দির কক্ষে ঠাসাঠাসি করে অবস্থানরত ভক্তদের উদ্দেশ্যে এক সন্ধ্যায় শ্রীল প্রভুপাদ শ্রীচৈতন্য চরিতামৃতের মধ্য লীলা (২০/৯৮-১০২) থেকে শ্রীল সনাতন গোস্বামীর কাহিনি বর্ণনা করছিলেন। তিনি একটি বিশেষ বিষয় আলোকপাত করেছিলেন যে, যখন সনাতন গোস্বামী বেনারসে চৈতন্য মহাপ্রভুর সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন, তখন প্রথম যে জিনিসটি তিনি করেছিলেন সেটি হল, তিনি তাঁর দাড়ি চুল কামিয়ে ফেলেছিলেন। শ্রীল প্রভুপাদ বলেন, “তিনি আমাদের আন্দোলনের অন্যতম অগ্রদূত। যদি কেউ এ আন্দোলনে দীক্ষিত হতে চায় তবে তাকে অবশ্যই পরিচ্ছন্ন ক্ষৌরকর্ম সম্পাদন করতে হবে।” ঐ সময় উপস্থিত শ্রোতাদের মধ্যে অধিকাংশই ছিলেন তুষ্টকৃষ্ণ মহারাজের অনুগতরা, যাদের বেশিরভাগই ক্ষৌরকর্ম করেনি।”
(হরিসৌরি প্রভুর ডায়েরি : আগস্ট ২৭,১৯৭৬, অকল্যান্ড)
শ্রীল প্রভুপাদ লীলামৃতে শ্রীল প্রভুপাদ পুনরায় এটি নিশ্চিত করেন :
“প্রভুপাদ স্টিভকে তার লম্বা চুল ও দাড়ি কামানোর জন্য বলেন। স্টিভ ইতস্তত করে বললেন, “আপনি আমার মস্তক মুণ্ডন কেন
“যখন আচার্যদের দাড়ি রাখতে দেখি, সেটি চাতুর্মাস্যের সময়, জুলাই-সেপ্টেম্বর। ভালভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, আচার্যরা শুধু দাড়িই রাখতেন না, তারা অনেক নিয়ম নীতিও অনুসরণ করতেন। সেসময় কেউ কিছু নির্দিষ্ট খাবার খাবেন না। এই নয় যে, তারা সর্বদা দাড়ি রাখতেন।”
চাইছেন শ্রীকৃষ্ণ, শ্রীরাম, শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু এবং গীশুর লম্বা চুল ছিল। তবে কেন আমাকে মস্তক মুণ্ডন করতে হবে?”
“প্রভুপাদ মৃদু হেসে উত্তর দিলেন, “কারণ তুমি এখন আমাকে অনুসরণ করছ।” সেখানে দেওয়ালে ঝুলানো সুরদাস নামের একজন বৈষ্ণবের চিত্রপট ছিল। “তোমাকে এর মতো মস্তক মুণ্ডন করতে
হবে।” সুরদাসকে দেখিয়ে প্রভুপাদ বললেন। স্টিভ বললেন, “আমার মনে হয় না আমি এটি করতে এখনও প্রস্তুত” প্রভুপাদ বললেন, “ঠিক আছে, তুমি এখনও যুবক। তোমার এখনও সময় আছে। তবে অন্তত একজন মানুষের মতো তোমার মুখ শেভ ও চুল কাঁটা উচিত।”
দীক্ষার সময়, স্টিভ তার দাড়ি কামাল এবং কানের চারদিকে চুল এমনভাবে কাটল যাতে সামনের দিকটা ছোট দেখায় কিন্তু পেছন দিকটা লম্বা।
স্টীভ বলল, “এখন কেমন দেখাচ্ছে?”
প্রভুপাদ উত্তর দিলেন, “তোমার পেছন দিকটাও কাটা উচিত।” স্টিভ তাতে সম্মত হয়েছিল। (শ্রীল প্রভুপাদ লীলামৃত, অধ্যায়-২২: স্বামী হিপ্পিদের
আমন্ত্রণ জানালেন।”) “আরেকজন আমেরিকান শিষ্য শ্রীল প্রভুপাদের আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। তিনি হলেন হেইট অ্যাসবেরী থেকে আগত রামানুজ। স্বামীজির সানফ্রান্সিসকো ত্যাগ করার ঠিক পূর্বে তিনি দীক্ষিত হয়েছিলেন এবং তার তখন গাল ভরা কালো দাড়ি ছিল।
প্রভুপাদ দাড়িওয়ালাদের তেমন পছন্দ করতেন না। সাবধানতা সহকারে এবং অপ্রত্যক্ষভাবে তিনি এটি উল্লেখ করতেন : কিন্তু তবুও রামানুজের দাড়ি বহাল ছিল। রামানুজ তিব্বতিয়ান বৌদ্ধধর্মের একটি গ্রন্থ রাখতেন এবং এতে মনে হতো তিনি তখনও কৃষ্ণভাবনার দর্শনে স্থিত ছিলেন না। তবে সানফ্রান্সিকোর ভক্তবৃন্দের অন্যতম অনাবিষ্ট, আবেগপ্রবণ ভক্ত তখন প্রস্তুত হয়েছিলেন স্বামিজীর সাথে ভারতীয় অভিযাত্রার জন্য।”
(শ্রীল প্রভুপাদ লীলামৃত, অধ্যায় ২৭, ভারতে পুনঃভ্রমণ, প্রথম ভাগ)
“রামানুজের দাড়ি বেশি ছিল। দেখে মনে হয় একজন সাধারণ হিপ্পি, তিনি এর মাধ্যমে যেখানে সেখানে শ্রীল প্রভুপাদের আদর্শকে ভুলভাবে প্রদর্শন করতেন। প্রভুপাদ অচ্যুতানন্দকে বলতেন, “তোমার বন্ধুকে ক্ষৌরকর্ম করতে বল।” অচ্যুতানন্দ ও রামানুজের মধ্যে এ নিয়ে কথা হয়, কিন্তু তবুও রামানুজ শেভ করবে না। রামানুজ যাতে স্বতঃস্ফূর্তভাবেই এতে সম্মত হন তার জন্য প্রভুপাদ পুনরায় তাকে এ বিষয়ে বলতে চান নি। কিন্তু যখন সম্প্রতি প্রকাশিত ব্যাক টু গডহেড ম্যাগজিনের একটি কপি এসে পৌছাল, প্রভুপাদ তার জন্য কিছু একটি পেলেন। ম্যাগাজিনের দুটি ছবিতে প্রদর্শিত ছিল হরিদাস ঠাকুর এক বেশ্যাকে কিভাবে পরিবর্তন করেছিল। সেই বেশ্যাটির হৃদয় পরিবর্তন হওয়ার পর, বেশ্যাটি তার মস্তক মুণ্ডন করেছিল। রামানুজকে সেই ছবিগুলো দেখিয়ে প্রভুপাদ বললেন, ‘এই ছবির সঙ্গে সেই ছবিটির পার্থক্য কি?”
রামানুজ বললেন, “আমি জানি না, স্বামিজী” ‘না’, ছবিগুলো নির্দেশ করে, প্রভুপাদ বললেন,
“এই ছবির মধ্যে পার্থক্য কি?”
“ও, তিনি (বেশ্যা রমণী) একজন ভক্ত।” “হ্যা”, প্রভুপাদ বললেন, ‘কিন্তু আর বিশেষ কিছু?”
‘ও, তিনি একজন মস্তক মুণ্ডিত।”
“হ্যাঁ”, প্রভুপাদ মৃদু হাসলেন, “একজন ভক্ত মস্তক মুণ্ডিত হবে ।”
‘আপনি আমার মস্তক মুণ্ডন চান?”
“হ্যাঁ”।
রামানুজ তখন মস্তক মুণ্ডন করেছিল। কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যে সে পুণরায় দাড়ি ও চুল রাখতে লাগল। প্রভুপাদ অচ্যুতানন্দকে বললেন, “এখন থেকে, আর কোনো সস্তা দীক্ষা নয়। তাদেরকে কিছু জানতে হবে।”
(শ্রীল প্রভুপাদ লীলামৃত অধ্যায় ২৮ : ভারতে পুনঃভ্রমণ : দ্বিতীয় ভাগ)
প্রথম দিকে শ্রীল প্রভুপাদ তাঁর যুবক শিষ্য মুকুন্দ দাসের দাড়ি রাখার ব্যাপারটি সহ্য করেছিলেন। কিন্তু পরে তিনি তাঁর শিষ্যকে বুঝিয়েছিলেন যে, গুরুদেবকে সন্তুষ্ট করতে হলে তার দাড়ি ত্যাগ করা উচিত।
১৯৬৭ সালে যখন প্রভুপাদ প্রথম সানফ্রান্সিকো এসে পৌছান, তখন মুকুন্দ দাসের দাড়ি ছিল। এটি মুখ ভর্তি ছিল, তবে ততটা লম্বা ছিল না এবং মুকুন্দ সেটি পরিপাটি করে রেখেছিল। তাঁর আগমনের কিছু পরে প্রভুপাদ বললেন, “তোমাকে একজন সাধুর মতো দেখায়।” এটি মুকুন্দের অনুভূতিকে প্রীত করেছিল এবং তিনি তার দাড়ি কামানোটি প্রয়োজন মনে করেননি। পরে যখন প্রভুপাদের অনেক শিষ্যই মস্তক মুণ্ডন করলেন, মুকুন্দ তখন তার সম্পর্কে অনিশ্চয়তা অনুভব করছিল। একদিন তিনি শ্রীল প্রভুপাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বললেন, “প্রভুপাদ আপনি কি এটি পছন্দ করেন?” এবং তিনি তখন তার দাড়ির প্রতি অঙ্গভঙ্গী করছিলেন। প্রভুপাদ তখন তাঁর নিজের পরিচ্ছন্ন মুখে টোকা মেরে বললেন, “আমি এরকম পছন্দ করি।” তারপর তিনি মৃদু হাসলেন। মুকুন্দ বুঝতে পারলেন, দাড়ি অনুমোদিত নয় এবং পরদিনই তিনি সেটি কামিয়েছিলেন।”
(শ্রীল প্রভুপাদ অমৃত ৫-১: কিছু অমৃত বিন্দু) গোফ প্রসঙ্গে শ্রীল প্রভুপাদের নিম্নোক্ত উক্তি : প্রভুপাদ : আমি পুনঃ পুনঃ বলব, যে লম্বা চুল রাখছে সে আর আমার শিষ্য নয়।”
ভক্ত (২) : ঠিক আছে।
প্রভুপাদ : এটি হল প্রথম শর্ত।
ভক্ত (১) : যারা গৃহস্থ রয়েছেন তাদের জন্যেও কি এটি প্রযোজ্য নাকি শুধু ব্রহ্মচারীদের জন্য? এমনকি আমি ভাগবতে আপনার ছবি দেখেছি যে, আপনি তখন মস্তক মুণ্ডিত ছিলেন না, গোঁফও ছিল তখন আপনি একজন গৃহস্থ হিসেবে ব্যবসা বাণিজ্য করতেন। তবে একজন গৃহস্থেরও কি মস্তক মুণ্ডিত হওয়া উচিত নাকি সেটি….?
প্রভুপাদ : সে সময় আমি দীক্ষা গ্রহণ করিনি। তোমরা আমার ছবি দেখবে, তখন গোফ ছিল যখন আমি দীক্ষিত ছিলাম না। যখন আমি দীক্ষিত হই, আমি সবকিছু মুণ্ডন করি। (কথোপকথন, জুন ২৬, ১৯৭৫, লস এঞ্জেলেস্)
শ্রীল প্রভুপাদ স্পষ্টভাবে চেয়েছিলেন যে, তাঁর শিষ্যরা পরিষ্কারভাবে মুণ্ডিত থাকবে। তবে চাতুর্মাস্যের সময়কালীন ব্যাপারটি কী হবে? কেউ বলতে পারেন আমাদের বৈষ্ণব আচার্যগণ চাতুর্মাস্যের সময় দাড়ি রাখতেন। ১৯৭৬ সালে ১৭ জুলাই, নিউইয়র্ক থেকে এক পত্রে ধৃষ্টকেতুকে শ্রীল প্রভুপাদ ব্যাখ্যা করেন :
“যখন আচার্যদের দাড়ি রাখতে দেখি, সেটি চাতুর্মাস্যের সময়, জুলাই-সেপ্টেম্বর। ভালভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, আচার্যরা শুধু দাড়িই রাখতেন না, তারা অনেক নিয়ম নীতিও অনুসরণ করতেন। সেসময় কেউ কিছু নির্দিষ্ট খাবার খাবেন না।….. এই নয় যে, তারা সর্বদা দাড়ি রাখতেন।”
অতএব, যদি কেউ চাতুর্মাস্যে দাড়ি রাখতে চান তবে তাকে দিনে মাত্র একবার প্রসাদ গ্রহণ করতে হবে….। শ্রীল প্রভুপাদ ১৯৭২ সালে, পিটসবার্গে এটি ব্যাখ্যা করেন যে, শুধুমাত্র চাতুর্মাস্যের সময় এমন দাড়ি রাখা যাবে, অন্য সময়ে নয়। কিন্তু শ্রীল প্রভুপাদ চাতুর্মাস্যের নামে কখনো দাড়ি রাখার ব্যাপারটি নির্দেশ দেননি, বরং এর বিপরীতে দুই সন্ন্যাসীকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, যারা চাতুর্মাস্যের জন্য দাড়ি রেখেছিল, যেটি তাদেরকে অপরিষ্কার ও অপরিচ্ছন্ন দেখাচ্ছিল। হরিসৌরি প্রভুর ডায়েরি গ্রন্থে এরকম লীলার উল্লেখ রয়েছে; “প্রাতঃরাশের পর প্রভুপাদ যশোদানন্দ ও মহংস মহারাজকে ডাকলেন যারা চাতুর্মাস্য পালনের নামে চুল, দাড়ি রেখেছিলেন। শ্রীল প্রভুপাদ তাঁদের বললেন যে, “এরকম গুরুত্বপূর্ণ উৎসবে তাদেরকে অপরিচ্ছন্ন দেখাচ্ছে।” তাঁর এ সমালোচনার ফলে তাদের সুপ্ত বাসনাতে প্রভাব পড়ে, যার কারণে তাঁরা অনতিবিলম্বে তাঁদের মস্তক মুণ্ডন ও মুখমণ্ডল সেভ করেছিলেন।” (অপ্রাকৃত ডায়েরি ৪-৩, হায়দ্রাবাদ)