ঘড়িবিহীন সময় নির্ধারনের রহস্য!

প্রকাশ: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২১ | ১১:৫৮ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ | ৬:১২ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 426 বার দেখা হয়েছে

ঘড়িবিহীন সময় নির্ধারনের রহস্য!
সংকীর্তন মাধব দাস
আবার একটি নতুন বছরের সূচনা, সময় কিন্তু থেমে থাকছেনা, সে ভাল সময় হোক বা বর্তমান পৃথিবীর খারাপ সময়। সময় ঘড়ি কিন্তু টিক টিক করে চলছে তো চলছে। আগেকার দিনে তো এই রকম ঘড়ি ছিলনা কিন্তু সময় গণনা হত কিভাবে? হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন, তখনকার দিনে সূর্যের ছায়া দেখে বা বালি ঘড়ি বা জলঘড়ির প্রচলন ছিল। আগেকার রথ ভারতীয় স্থাপত্য ও বিজ্ঞান কিন্তু বেশ উন্নত ছিল। চলুন দেখে নেওয়া যাক তাদের সময় গণনার পদ্ধতি:
কোনার্ক বা কোনারক সূর্য মন্দির অনেকেরই দেখা বা অনেকের দেখার সুযোগ হয়ে ওঠেনি। এই মন্দির সম্পর্কে সামান্য কিছু জেনে নিই, এটি ১০৭৮-১৪৩৪ খ্রীঃ মতান্তরে ১২৩২-১২৫৫ খ্রীঃ নৃসিংহদেব প্রতিষ্ঠা করেন, যার বর্তমান উচ্চতা প্রায় ৮৫৭ ফুট এর মত। মন্দিরের গঠন রথের মত আর তার দুই পাশে রয়েছে ২৪ টি চাকা, বাথচক্র। আর সেই চাকাতেই লুকিয়ে আছে সময় রহস্য। তাহলে বুঝে নেই ঐ চাকার মধ্যে পতিত সূর্যের ছায়া কিভাবে সময়ের হিসাব দিত। ছবিতে দেখা যাচ্ছে একটি চাকাতে মোট ৮টি বড় দণ্ড আছে। একটি বড় দন্ড থেকে আরেকটি বড় দন্ডের মধ্যে তিন ঘন্টা (১৮০ মিনিট) সময়ের ব্যবধান নিশ্চিত করছে অর্থাৎ এখানে ৮টি বড় দন্ড আছে, তাহলে ৮*৩= ২৪ ঘন্টা বুঝানো হয়েছে।
এবার, দুটি বড় দণ্ডের মাঝখানে একটা করে সরু দণ্ড আছে। তিন ঘন্টা সময়কে বিভক্ত করেছে অর্থাৎ দেড় ঘন্টা (৯০ মিনিট)। আবার দুটি বড় দণ্ডের মাঝে ঠিক ধার বরাবর রয়েছে ৬০টি গুটি, যে গুটি গুলোর এক একটি তিন (৩) মিনিট সময় নিশ্চিত করছে। অর্থাৎ ৬০*৩ = ১৮০ মিনিট। তবে এই গণনার বিশেষত্ব হল, হিসাব করতে হয় ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিক থেকে।
এই চাকার মাঝে উত্থিত অংশটিতে সূর্যের ছায়া ওই চাকার যে অংশে ছায়াটা পড়েছে সেটি হিসাব করলেই নিখুঁত ভাবে সময়টা জানা যাবে। এই চাকাটির মাঝখানে আঙ্গুল বা কলম ধরে রাখলে আঙ্গুল বা কলমের ছায়া যে বড় দণ্ড বা সুরু দণ্ড বা যেগুটির উপর পরবে তখন ঘড়ি না দেখেই নিখুঁত সময় বের করা যায়। ৭৫০ বছর পূর্বে এরকম একটি যন্ত্র জ্যোতির্বিদ্, ইঞ্জিনিয়ার এবং ভাষ্কর্যশিল্পীরা যদি তৈরি করত তাহলে কত শ্রমের প্রয়োজন হত।
এখানে দুইটি প্রশ্ন রয়েছে, এই প্রশ্ন দুটি যেকেউ নিজেকে করতে পারে। প্রথম প্রশ্নটি হল কিভাবে সূর্য পূর্ব থেকে পশ্চিমে পরিভ্রমণ করে। যেহেতু চক্রটি দেওয়ালের সাথে গোলাকারে রয়েছে সেহেতু সূর্য এই চক্রটির উপরে তাঁর জ্যোতি বিকিরণ মোটেই করত না। কিভাবে আমরা বিকালে কোন একটা সময় বলে দিতে পারি। বর্তমানে কোণার্ক সূর্য মন্দিরে আরেকটি চক্র রয়েছে, যেটি অবস্থিত মন্দিরটির পশ্চিম পাশে। সেই চক্রটি যথাযথভাবে বিকাল থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত কাজ করতে পারে। আপনি চাইলে এটি ব্যবহার করতে পারেন, তা সময় নির্ধারণের জন্য।
দ্বিতীয় যে কৌতূহলোদ্দীপক প্রশ্নটি রয়েছে, সেটি হল কোণার্ক সূর্য মন্দিরকে ঘিরে সূর্যাস্তের পর সময় কত সেটি কিভাবে আপনি বলতে পারেন। সূর্যাস্থ পর সূর্য আকাশে দৃশ্যমান নয় এবং তাই সূর্যাস্থ থেকে পরদিন সকালে সূর্যাস্ত আগ পযর্ন্ত কোন ছায়া দৃশ্যমান হওয়ার প্রশ্ন উঠে না। যদিও এই মন্দিরে দুটি চক্র রয়েছে যেগুলি কাজ করে শুধুমাত্র সূর্যের আলো বিকিরণ করে।
যাহোক, বলে রাখা ভালো, কোনার্ক সূর্য মন্দিরে শুধুমাত্র দুটি চক্র রয়েছে তা নয়। মন্দিরটিতে সর্বমোট ছব্বিশটি চক্র রয়েছে। সবকয়টি পূর্বে যে চক্রগুলোর কথা বর্ণনা করা হয়েছে সেইরকম গোলাকার। আপনারা কি কখনো মুনডাইল বা চন্দ্রের উপর নির্ভরশীল এরকম চক্রের কথা শুনেছেন। আপনারা কি জানেন এই ধরনের চন্দ্র-নির্ভর চক্র, সূর্যের উপর নির্ভরশীল যে, চক্রগুলোর রয়েছে তাদের মতোই রাত্রিবেলা কাজ করতে পারে।
এমন হতে পারে যে এই মন্দিরে অন্যান্য চক্রগুলো চন্দ্রের উপর নির্ভর করে কাজ করতে পারে। বর্তমান যান্ত্রিকতার যুগে বসে ভাবতে অবাক লাগে, ভারতীয় প্রাচীন স্থাপত্য ও বিজ্ঞান কত উন্নত ছিল সেই সময়। আমরাও বর্তমানে কঠিন সময়ের মধ্যে অতিক্রম করে চলেছি সুসময়ের আশায়। 

মাসিক চৈতন্য সন্দেশ, জানুয়ারি ২০২১ সংখ্যা

সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।