এই পোস্টটি 308 বার দেখা হয়েছে
আমার তিনটি বিষয়ে লোভ জন্মেছে। সেগুলো হচ্ছেঃ ১) আমার রাধার প্রেমের মহিমা কি রকম? ২) রাধা সেই প্রেম দ্বারা আমার যে মাধুরী আস্বাদন করে, সেই মাধুর্য বা কিরকম? ৩) আমার মাধুর্য আস্বাদন করে রাধা যে সুখ অনুভব করে, সেই সুখই বা কি রকম? তাই রাধারানীর প্রেমভাব, রাধারাণীর অঙ্গকান্তি অবলম্বন করে আমি অবতীর্ণ হবো যাতে আমার এই তিন বাসনা পূর্ণ হয়। এই বিষয়ে লোভ জন্মানোর ফলে শ্রীকৃষ্ণচন্দ্ৰ শ্রীমতী রাধারাণীর ভাব ধারণ করে শচীমাতার কোলে আবির্ভূত হলেন। লোভাৎ বদ্ ভাবাঢ্যঃ সমজনি শচীপতসিদৌ হরীন্দুঃ শ্রীল কৃষ্ণদাস কবিরাজ গোস্বামী যিনি চৈতন্য চরিতামৃতের রচয়িতা তিনি বললেন শ্রীকৃষ্ণ যখন রাধারাণীর তার অঙ্গকান্তি অবলম্বন করে তার তিন বাসনা পূর্ণ করার জন্য স্থির করলেন, সময়ে যুগাবতারের মবির্ভাবের সময় হল। আর সেই সময় শ্রী দ্বৈত আচার্য নিষ্টাতরে শ্রীকৃষ্ণের আরাধনা করছিলেন। অদ্বৈত আচার্যের হুঙ্কার শ্রীকৃষ্ণকে আকর্ষন করল। তখন শ্রীকৃষ্ণ প্রথমে তাঁর পিতা মাতা ও গুরুজনদের অবতরণ করালেন।তারপরে শ্রীমতী রাধারাণীর ভাব অঙ্গকান্তি অবলম্বন করে নিজে নবদ্বীপে শচীমাতার কোলে প্রকাশিত হলেন। কলিযুগের ধর্ম হরিনাম সংকীর্তন এবং কৃষ্ণভক্তি শিক্ষাও প্রচার করলেন। নিশ্চয়ই এতক্ষণে উপলব্দি করতে পারছেন উপরোক্ত আলোচনা কাকে নিয়ে আলোচিত হচ্ছে। তিনি হলেন পতিতপাবন শ্রী গৌরহরি। যিনি শচীমাতার গর্ভে শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু রূপে কলিহত জীবদের উদ্ধারের জন্য গোলকের গুপ্ত ধন হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র প্রচার করতে এসেছিলেন ১৪৮২ সনে। তাই অনন্ত সংহিতায় শ্রী মহাদেব অত্যন্ত উচ্ছ্বসিত পার্বতীদেবীকে বললেন –
য এব ভগবান কৃষ্ণো
রাধিকাপ্রাণবল্লভ
সৃষ্ট্যাদৌ স জগন্নাথো গৌর
আসীন্মহেশ্বরি ॥
“হে মহেশ্বরী, যিনি শ্রীমতি রাধারাণীর প্রাণবল্লভ এবং সমস্ত জগতের সৃষ্টি, স্থিতি ও প্রলয়ের ঈশ্বর, সেই জগন্নাথ শ্রীকৃষ্ণ গৌররূপে আবির্ভূত হন।” নন্দনন্দন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যখন গৌর রূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন তখন তিনি তার অন্তরঙ্গ ভক্তদের সঙ্গে অত্যন্ত মাধুৰ্য্যময় ও আনন্দময় বিভিন্ন লীলাবিলাস প্রকাশ করেছিলেন যা শ্রবণ ও দর্শন করে কৃষ্ণ প্রীতি লাভার্থে নিম্নে কতিপয় লীলাবিলাস ও লীলাস্থলীর বর্ণনা তুলে ধরা হল । তাহলে পাঠ করুন ও দর্শন করুন। যোগপীঠঃ কলকাতা থেকে ১৩০কি.মি. দূরে শ্রীধাম মায়াপুরে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু আবির্ভূত হয়েছিলেন। এখনও সেই নিম বৃক্ষটি রয়েছে যেখানে তিনি আবির্ভূত হয়েছিলেন। বৈষ্ণব আচার্য শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুরই সর্বপ্রথম মহাপ্রভুর জন্মস্থান চিহ্নিত করেছিলেন। পরবর্তীতে তিনি সেখানে মহাপ্রভু, বিষ্ণুপ্রিয়া, লক্ষ্মীপ্রিয়া এবং রাধা মাধবের অপরূপ বিগ্রহসম্বলিত একটি সুন্দর মন্দির স্থাপন করেছিলেন।
মহাপ্রভুর কম্বলঃ
আজ থেকে ৫০০ বছর আগে যখন মহাপ্রভু নবদ্বীপ হয়ে পুরীতে যাচ্ছিলেন তখন মহাপ্রভু সালন্দী নদীর তীরবর্তী ভাদ্রক নামক স্থানে শ্রীশ্রী রাধামদনমোহনের একটি অতি প্রাচীন মন্দিরে রাত্রিযাপন করেছিলেন। পরবর্তীতে জগন্নাথ পুরীর উদ্দেশ্যে যখন মহাপ্রভু রওনা হচ্ছিলেন তখন তিনি ঐ মন্দিরের পূজারীকে আশীর্বাদস্বরূপ তার ব্যক্তিগত একটি কম্বল দিয়েছিলেন। এই কম্বলটি প্রায় গত ৫০০ বছর পর্যন্ত পূজিত হয়ে আসছে। কিন্তু প্রতিবছর শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট দিনে (মহাপ্রভুর ভদ্রাকে পৌঁছার বার্ষিকী দিনটি উদযাপনের সময়) জনসমক্ষে দর্শনের ব্যবস্থা করা হয়। উল্লেখ্য ভদ্রাকই শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুরের আবাসস্থল ছিল। মহাপ্রভুর ব্যবহৃত কম্বলের ছবিটি ৪র্থ পৃষ্টায় দেখুন।
গদাধর অঙ্গনঃ
এই স্থানটিতে মহাপ্রভু নিত্যানন্দ প্রভুসহ তার অন্তরঙ্গ ভক্তদের সঙ্গে প্রাণোচ্ছল কীর্তন করতেন। মহাপ্রভুর এই কীর্তন দলের মৃদঙ্গ ভেঙে ফেলা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে চাঁদকাজী নিজের ভুল বুঝতে পেরে মহাপ্রভুর চরণে আশ্রয় নিয়েছিলেন এবং মহাপ্রভু তাকে কৃপা করেছিলেন।
অদ্বৈত ভবনঃ
এ ভবনে অদ্বৈত আচার্য্য ও মহাপ্রভুর দুটি বিগ্রহ রয়েছে। এই ঘরেই অদ্বৈত আচার্য্য সকল বৈষ্ণববৃন্দদের সাথে কৃষ্ণকথা আলোচনা করতেন। এখানে অদ্বৈত আচার্য্য কৃষ্ণের আরাধনা করতেন এবং তার হুঙ্কারেই চৈতন্য মহাপ্রভু অবতীর্ণ হয়েছিলেন। এখানে মহাপ্রভু প্রায়ই এই ভবনটিতে আসত।
দাঁত পরিষ্কার করার কাঠি:
এই স্থানটি হরিদাস ঠাকুরের ধ্যান কুঠির সিদ্ধ বকুল হিসেবে পরিচিত। এখানেই হরিদাস ঠাকুর প্রতিদিন। ভগবানের দিব্যনাম লক্ষ বার জপ করত। হরিদাস ঠাকুর ছায়াতলের জন্য মহাপ্রভু এখানে একটি দাঁত পরিষ্কার করার কাঠি রোপন করেছিলেন যেটি ভগবান শ্রী জগন্নাথের জন্য ব্যবহৃত হত। পরবর্তীতে খুব তাড়াতাড়িই অত্যন্ত আশ্চর্যজনকভাবেই এটি বৃক্ষ আকারে বেড়ে উঠে হরিদাস ঠাকুরের ভজনের সময় ছায়া প্রদর্শন করত।
হরিদাস ঠাকুরের সমাধি মন্দির :
এখানে মহাপ্রভু নিজ হাতে হরিদাস ঠাকুরের সমাধি দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন যে “যদি কেউ এই স্থানে ভগবানের নাম জপ ও কীর্তন করে তবে সে অতি শীঘ্রই কৃষ্ণ প্রীতি লাভ করবে।”
অন্তর্ধানঃ
টোটাগোপীনাথ মন্দিরেই মহাপ্রভু টোটাগোপীনাথের শ্রী অঙ্গে অন্তর্ধান হয়েছিলেন।
মহাপ্রভুর হাতের আঙ্গুলের ছাপঃ
ছবিতে যে শীলাটি আপনারা দর্শন করছেন তার নাম হল গোবর্ধন শীলা। এই শিলাটি স্বয়ং চৈতন্য মহাপ্রভুর আঙ্গুলের ছাপ রয়েছে। উল্লেখ্য মহাপ্রভু তার হাতের আঙ্গুলের ছাপ সম্বলিত এই গোবর্ধন শিলাটি রঘুনাথ দাস গোস্বামীকে উপহার দিয়েছিলেন।
তেন্তুলী তলা :
মহাপ্রভু বৃন্দাবনে অবস্থিত তেন্ডুলী তলা নামক স্থানে একটি তেঁতুল গাছের নীচে বসে বৃন্দাবন ও যমুনা নদীর শীতল সৌন্দর্য অবলোকন করতেন এবং হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ করতেন।
বটগাছ :
মহাপ্রভু রাজা ঘাটে অবস্থিত একটি বটগাছের নীচে বসে বসে হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ করতেন। তাই তীর্থযাত্রীরা এ বটগাছকে অত্যন্ত শ্রদ্ধাভরে পূজা দিয়ে থাকেন।
সুরঙ্গঃ
জগন্নাথ পুরীতে অবস্থিত এই সুরঙ্গটি মহাপ্রভু ব্যবহার করতেন যার দুটি পথ আছে একটি পথ জগন্নাথ পুরীর দিকে এবং অন্যটি গিয়েছে পুরীর সাগরের দিকে।
এই স্বল্প পরিসরে মহাপ্রভুর লীলাস্থলী বর্ণনা তুলে ধরা অসম্ভব তবে পাঠকদের জ্ঞাতার্থে এটুকুই বলতে পারি যে, আপনারা যদি এ দুর্লভ মনুষ্য জীবনের সদ্ব্যবহার করতে চান তবে অচিরেই এ লীলাস্থলী দর্শন করে আসুন। এর মাধ্যমেই আপনি আপনার মানবজীবনকে ধন্যাতিধন্য করতে পারেন। হরে কৃষ্ণ।