এই পোস্টটি 204 বার দেখা হয়েছে
কৃষ্ণকৃপাশ্রীমূর্তি শ্রীল অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের প্রতিষ্ঠাতা ও আচার্য
১৯৭১ সালের ১৮ আগস্ট মাসে লন্ডনের ইস্কন মন্দিরে শ্রীল প্রভুপাদ ও জনৈক অতিথি এবং ভক্তগণের সঙ্গে কথোপকথনের অংশবিশেষ
অতিথি: মানব সমাজ অতি দ্রুত অধঃপতনে চলে যাচ্ছে। বিগত বছর যাবৎ আপনারা তা লক্ষ্য করে থাকতে পারেন। এটাই কি কলিযুগের লক্ষণ? শ্রীল প্রভুপাদ: হ্যাঁ। কলিযুগের জন্যই এমন ঘটছে। সব অধঃপতনে যাচ্ছে। তাই বলছি যে একমাত্র কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলনের সাহায্যেই আমরা এই অধঃপতন থেকে মানুষকে রক্ষা করতে পারি। সকলকে না হলেও, অনেক জনকেই রক্ষা করা যাবে।
অতিথি: কৃষ্ণভক্তদের মাধ্যমে এই কলিযুগকে বদলে ফেলা যাবে?
শ্রীল প্রভুপাদ: হ্যাঁ। কেন হবে না? একে সত্য যুগে পরিবর্তন করে ফেলা যাবে। ঠিক যেমন আমাদের শরীর বদলায়, ঋতু বদলায়, তেমনি এই অবস্থাও বদলে যাবে।
রেবতী নন্দন: (শ্রীল প্রভুপাদের শিষ্য: শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর আবির্ভাবের ফলেই অস্থায়ী পরিবর্তন হবে। তাই তো? তবে কখনো গুরুদেব হয়তো অনেক দূরে চলে গিয়েছেন, তিনি হয়তো লসএঞ্জেলেসে রয়েছেন। তখন কোন শিষ্য হয়তো হামবুর্গের মন্দিরে এলেন। তখন শিষ্য কিভাবে গুরুদেবকে সন্তুষ্ট করবেন?
শ্রীল প্রভুপাদ: তখন শুধুই গুরুদেবের আদেশ মেনে চলতে হবে। গুরুদেব তাঁর বাণীর মাধ্যমে সর্বদাই তোমাদের সঙ্গে রয়েছেন। ঠিক যেমন আমার গুরুদেব আমার সঙ্গে সাক্ষাৎভাবে বিরাজ করছেন না, কিন্তু তাঁর বাণীর মাধ্যমে আমি তাঁর সঙ্গ লাভ করছি।
রেবতীনন্দন: আর শ্রীকৃষ্ণ তা জানছেন। কেননা তিনি আমাদের হৃদয়ে বিরাজ করছেন। তিনি জানেন যে আমরা কে কি করছি। তাই তিনি দেখতে পাচ্ছেন। “ঐতো সে আমার শুদ্ধ ভক্তের সেবা করছে।”, তখনই ভক্তের উন্নতি লাভ হচ্ছে।
শ্রীল প্রভুপাদ: হ্যাঁ। গুরুদেব তেমনই। শ্রীকৃষ্ণ সীমাবদ্ধ নন। এটি কোন জড় জাগতিক ব্যাপার নয় । শ্রীকৃষ্ণ এবং গুরুদেবের সাথে তুমি যে কোন পরিস্থিতিতেই সঙ্গ করতে পার, অবশ্য যদি তুমি দুটি বিষয়ে অভিলাষ কর। ঠিক যেমন আমরা শ্রীকৃষ্ণের সাথে এই মুহূর্তেই সঙ্গলাভ করতে পারি যদি শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা যথাযথ গ্রন্থখানি গ্রহণ করি। তিনি শ্রমিদ্ভগবদ্গীতা থেকে অভিন্ন। নামরূপে কলিকালে কৃষ্ণ অবতার। শ্রীকৃষ্ণ এই যুগে তাঁর নামের মাধ্যমে অবতার হয়ে এসেছেন। তুমি কৃষ্ণনামের সঙ্গ কর, তৎক্ষনাৎ শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গ লাভ হবে তোমার।
ধনঞ্জয় (শ্রীল প্রভুপাদের শিষ্য): তাঁর ভক্তদের সঙ্গলাভ হবে ?
শ্রীল প্রভুপাদ: হ্যাঁ।
অতিথি: আমি জানতে চাই-শ্রীকৃষ্ণ কি চান যে, আমরা একটা পারমার্থিক নাম গ্রহণ করি?
শ্রীল প্রভুপাদ: হ্যাঁ।
রেবতীনন্দন: গুরুদেব যদি সেই নাম দিয়ে থাকেন, তবে তা শ্রীকৃষ্ণেরই ইচ্ছা। শ্রীল প্রভুপাদ একবার আমাকে বুঝিয়েছিলেন যে, প্রত্যেক ভক্তেরই একটি অনন্য সম্বন্ধ রয়েছে শ্রীকৃষ্ণের সাথে। কোনো সময়ে সম্বন্ধ শ্রীকৃষ্ণের স্বরূপ সম্পর্কিতও হতে পারে আবার কখনো তা বৈকুণ্ঠধামে শ্রীকৃষ্ণের অন্য কোনো রূপের সাথেও হতে পারে। আমরা শ্রীমতী রাধারাণী এবং শ্রীকৃষ্ণের ভক্ত। সুতরাং আমাদের নামও হতে হবে শ্রীশ্রীরাধাকৃষ্ণের সম্পর্কিত এবং সেগুলিও শ্রীকৃষ্ণের নাম। যেমন আমরা কাউকেই ডাকছি বিধানচন্দ্র দাস।
শ্রীল প্রভুপাদ: দাস কথাটি সব সময় থাকছে।
রেবতীনন্দন: কিন্তু বিধানচন্দ্র দাস বলার সঙ্গে সঙ্গে আমি বুঝতে পারছি শ্রীকৃষ্ণেরই নাম উচ্চারণ করছি। অতএব আমাদের নাম সেই একই উদ্দেশ্য সাধন করছে-সব সময় শ্রীকৃষ্ণের স্মরণ হচ্ছে। তবে আমাদের চরম লক্ষ্য হচ্ছে চিৎ জগতের কোনো না কোনখানে শ্রীকৃষ্ণের কোনো রূপের সঙ্গ লাভ করা। এটা যে নামের সঙ্গে অভিন্ন হতে হবে, তা নয়।
শ্রীল প্রভুপাদ: না, সে অভিন্ন নয়। কিন্তু নামটি অভিন্ন। কিন্তু আমরা হলাম ‘দাস’।