এই পোস্টটি 1736 বার দেখা হয়েছে
ডেইলি হাফিংটনপোষ্ট
বর্তমান বিশ্বে স্বাস্থ্য সচেতনতা, প্রাণীদের প্রতি ভালবাসা এবং ধর্মীয় কারণে মানুষের মাঝে নিরামিষাশী হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে হলিউড, বলিউড সেলিব্রেটিরাও নিরামিশাষী হচ্ছেন। নিরামিষ খাবারে উৎসাহ বৃদ্ধিকারক প্রতিষ্ঠান পেটা এর মতে বর্তমানে শুধুমাত্র আমেরিকায় ৮শতাংশের ওপর মানুষ নিরামিশাষী। এই সংখ্যা দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এবার আমরা জানব বিখ্যাত ব্যক্তিরা কেন নিরামিশাষী হলেন এবং তাদের অভিজ্ঞতা কী?
নাটালিয়া পোর্টম্যান
আমেরিকার নাটালিয়া পোর্টম্যান ১৯৯৪ সাল থেকে অভিনেত্রী হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করলেও খ্যাতি লাভ করেন ষ্টার ওয়াবের তিনটি মুভির মাধ্যমে। সেরা অভিনেত্রী হিসেবে তিনি বহু পুরষ্পার লাভ করেন। যেমন: গোল্ডেন গ্লোব পুরুষ্কার, বাফটা পুরষ্কার এবং ২০১১ সালে অস্কার পুরষ্কার।
ছোটবেলা থেকেই নিরামিশাষী নাটালিয়া পোর্টম্যান। তবে বিশেষত ২০০৯ সালে জোনাথন স্যাফ্রন ফোয়ের এর বই “ইটিং এনিমেলস” পড়ার পর তিনি আরো কঠোরভাবে নিয়ম পালন করতে শুরু করেন। তিনি কখনোই পশুর চামড়ায় তৈরিকৃত পোষাক বা জুতা ব্যবহার করেন না। তিনি একসময় হাফিংটন পোষ্টের একটি ব্লগে লিখেছিলেন, “শুধুমাত্র পশু হত্যাকারীদের পোষাকের জন্য মানুষকে ফ্যাক্টরিতে পশু হত্যার চরম মূল্য দিতে হবে, কেননা এর কারণে পরিবেশের ক্ষতির সাথে সাথে পশু উৎপাদনের সুযোগও শেষ হয়ে যাচ্ছে।”
পোর্টম্যান এমনকি ২০১২ সালে অনুষ্ঠিত তার বিয়ের খাবার মেন্যুতে সকল প্রকারের আমিষ বর্জন করে নিরামিষ খাবারের ব্যবস্থা করেছিলেন।
মাইফ টাইসন
বিখ্যাত বক্সিং চ্যাম্পিয়ন মাইক টাইসন, যার নাম শুনলেই মানুষ এক অন্যরকম উত্তেজনা অনুভব করত। মাত্র ২০ বছর বয়সেই তিনি সর্বকনিষ্ট বক্সার হিসেবে ডব্লিউ বিসি, ডব্লিউ বিএ এবং আইবিএফ চ্যাম্পিয়ন হন। তিনি ২০১০ সনে নিরামিশাষী হন এবং তার ওজন ১৪০ পাউন্ড কমিয়ে ফেলেন। তিনি বলেন, “নিরামিশাষী হওয়ার পর অমি একটি স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনের সুযোগ লাভ করেছি। পূর্বে আমি এত বেশি নেশা ও কোকেনে আসক্ত ছিলাম যে, আমার শ্বাস নিতে কষ্ট হত, ছিল উচ্চ রক্তচাপ সমস্যা। কিন্তু যখন থেকে আমি নিরামিশাষী হলাম আমার সকল দুর্দশা সমাপ্ত হল।” এবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি পূর্ব অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বলেন, “আগে আমি প্রচুর পরিমাণে মাংস খেতাম। কিন্তু একসময় আমি নানা অসুস্থতার মধ্যে জর্জরিত হয়ে গেলাম। আমার বান্ধবী ছিলেন নিরামিষাশী। আমি তার পরামর্শে নিরামিশাষী হয়ে যেন এক নবতর জীবন পেলাম।
ক্যারি আন্ডারউড
ক্যারি আন্ডারউড একজন সংগীতজ্ঞ, গীতিকার এবং অভিনেত্রী। তিনি ২০০৫ আমেরিকান আউডল চ্যাম্পিয়ন হয়ে খ্যাতি লাভ করেন। তিনি সেরা গায়িকা হিসেবে ৬বার গ্র্যামি পুরষ্কার, ৭বার আমেরিকার মিউজিক পুরষ্কার এবং ১৬ বার বিলবোর্ড পুরস্কার লাভ করেন। ওমেনস হেলথ ম্যাগাজিনে তিনি তার উজ্জ্বল স্বাস্থ্য ও স্যৌন্দর্যের রহস্য হিসেবে নিরামিষ খাবার গ্রহণের তথ্য তুলে ধরেন।
ছোটবেলায় একটি খামারের সন্নিকটে ছিল তাঁর বাসস্থান যেখানে তিনি প্রতিনিয়ত প্রাণী হত্যা স্বচক্ষে দেখতে পেতেন। একবার স্বচক্ষে প্রাণী হত্যা দেখে ক্যারি আন্ডরউড ১৩ বছর বয়সে নিরামিষাশী হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি এখনো পর্যন্ত সম্পূর্ণরূপে আমিষ জাতীয় খাবার বর্জন করে যাচ্ছেন। যেহেতু আমিষ জাতীয় খাবার গ্রহণে স্থুলতা, মেদ, রোগ ও পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে, তাই পৃথিবীর বহু বিখ্যাত ব্যক্তি নিরামিষ খাবার গ্রহণের অভ্যস্থ হচ্ছেন। তাঁরা নিরামিশাষী হওয়ার মাধ্যমে সকলকে অনুপ্রাণিত করছেন এই প্রকারের জীবনযাপন প্রণালী অনুসরণ করে আমাদের ব্যক্তিগত জীবনকে স্বাচ্ছন্দময় করে তুলতে। (চলবে….)
(মাসিক চৈতন্য সন্দেশ জানুয়ারি ২০১৪ প্রকাশিত)