কৃষ্ণ নামের মহিমায় সরস্বতী

প্রকাশ: ২৪ জানুয়ারি ২০২২ | ১০:২৮ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০২২ | ১০:২৯ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 309 বার দেখা হয়েছে

কৃষ্ণ নামের মহিমায় সরস্বতী

মাতা সরস্বতী দেবী সাধারণত বিদ্যার দেবী হিসেবেই সুপরিচিত। পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য সরস্বতী দেবী একটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে থাকে। কেননা জ্ঞান আলোক বর্তিকার জন্য মাতা সরস্বতী দেবী সকল বিদ্যার্থীদের সহায়তা প্রদান করে থাকে। মূলতঃ দুর্গাদেবীর লীলায় অংশগ্রহণ করার জন্য সরস্বতী দেবী নিজেকে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন। তবে এর বাইরেও সরস্বতী দেবী ভগবানের বিভিন্ন লীলাই একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে ভূমিকা রেখেছিলেন। এখানে পাঠকদের সরস্বতী দেবীর বিভিন্ন মহিমামূলক লীলাসমূহ তুলে ধরা হল ।
রাম লীলায় অংশগ্রহনঃ পরাক্রমশালী রাক্ষসরাজ রাবণ, কুম্ভকর্ণ ও বিভীষণসহ তিন ভাই একদা কঠোর তপস্যায় ব্রতী হয়েছিলেন ব্রহ্মাকে সন্তুষ্ট করার সংকল্পে । অবশেষে কঠোর তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে ব্রহ্মা তিন ভাইয়ের অভীষ্ট সংকল্প পূরণের জন্য সম্মত হল। রাবণ ও বিভীষণ যথাক্রমে তাদের স্ব-স্ব প্রার্থনা করার পর ব্রহ্মা তা পূরণ করলেন। কিন্তু দুষ্টবুদ্ধিসম্পন্ন কুম্ভকর্ণ লোভময় এক বর প্রার্থনা করে বসলেন। তিনি তার হৃদয়ে দেবরাজ ইন্দ্রের আসন লাভের সংকল্প করেছিলেন। তখন দেবরাজ ইন্দ্র তার অভিলাষ বুঝতে পেরে অত্যন্ত ভীতসন্ত্রস্থ হয়ে পড়লেন। উপায়ান্ত না দেখে অবশেষে তিনি মাতা সরস্বতী দেবীর শরণাপন্ন হলে, সরস্বতী দেবী তাকে এ বিপদ থেকে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দেন। যখন কুম্ভকর্ন ব্রহ্মার কাছে ‘ইন্দ্রাসন’ লাভ করার সংকল্প তুলে ধরতে চাইলে মাতা সরস্বতী দেবী তৎক্ষণাৎ তার জিহ্বায় উঠে বসেন। তখন কুম্ভকর্ণ ‘ইন্দ্রাসন’ এর পরিবর্তে ‘নিদ্রাসন’ চেয়ে বসেন পরবর্তীতে ব্রহ্মা তাকে সারাজীবনের জন্য নিদ্রাসন বর দিলে তাকে বছরে ছয় মাস ঘুমেই কাটাতে হয়। আর এভাবে সরস্বতী দেবী দেবরাজ ইন্দ্রকে রক্ষা করেন এবং ভগবান শ্রী রামচন্দ্রের রাবণ বধের অংশস্বরূপ কুম্ভকর্ণকে বিনাশে সমর্থ হয়। কৃষ্ণলীলায় অংশগ্রহণঃ একদা গোকুলে বৃষভানু নামে এক মহান রাজা বাস করতেন। পরমেশ্বর শ্রীহরির প্রীতিসাধনের উদ্দেশ্যে বৃষভানু রাজা রাজসূয় প্রভৃতি শত শত যজ্ঞ অনুষ্ঠান করেছিলেন। অবশেষে যথাবিধানে তিনি প্রজেয় বাসিন্দা বিষ্ণুভক্ত বিন্দুগোপের কনিষ্ঠা কন্যা গুণবতী কীর্তিদার পাণিগ্রহণ করেন। বহুদিন অতিবাহিত হলো। তাদের কোনও সন্তান জন্মাল না। সন্তান লাভের নিমিত্তে বহু রকমের যজ্ঞ, দান, পূজা-অর্চনা, তীর্থ সেবা প্রভৃতি করেও ফল হলো না। বৃষভানু নিজেকে অত্যন্ত পাপী বলে দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে মূর্ছিত হয়ে পড়লেন। সাধ্বী পত্নী কীর্তিদা তাকে সুস্থ করিয়ে বললেন, চলো যাই, আমরা দেবী কাত্যায়নীর আরাধনা করি। তখন তারা দু’জনই কাত্যায়নী দেবীর আরাধনা করতে আরম্ভ করলেন। সহসা একদিন বিদ্যাবুদ্ধিদাত্রী সরস্বতী দেবী আকাশ মার্গে আবির্ভূত হয়ে বলতে লাগলেন—

হরিনাম বিনা বৎস কর্ণমুদ্ধিঃ ন জায়তে।
তস্মাৎ শ্রেয়স্করং রাজন্ হরিনামানুকীর্তনম্ ॥
গৃহান্ হরিনামানি যথাক্রমমনিন্দিত ॥

হে বৎস! হরিনাম বিনা কারও কর্ণশুদ্ধি হয় না। সেইজন্য হে বৃষভানু! শ্রেয়স্কর কোন বিষয় যদি পেতে চাও তবে যথাবিধি হরিনাম গ্রহণ করো। হে বৃষভানু, তুমি যাও, মহামুনি ক্রতুর আশ্রমে গিয়ে তাঁর কাছে হরিনাম গ্রহণ করো। এভাবে তিনি হরিনামকে জগতের কাছে মহিমান্বিত করলেন।
সরস্বতী নদীঃ কথিত আছে একদা গঙ্গা ও সরস্বতী দেবী ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সেবা অভিলাষ নিয়ে বাকযুদ্ধ করছিলেন তখন শ্রীমতি লক্ষ্মী দেবী এসে তাদের ঝগড়া থামাবার চেষ্টা করলে একটি বিশেষ কারণে তাঁরা লক্ষ্মীদেবীকে অভিশাপ্ত করেন যে, তিনি বৃক্ষ হয়ে জন্ম নিবে। এ কারণে লক্ষ্মী দেবী পরবর্তীতে তুলসী বৃক্ষরূপে জন্ম নেয়। ‘সরস্বতী দেবী ‘গঙ্গা’ দেবীকে অভিশাপ দেয় যে গঙ্গা দেবী নদী হয়ে যাক এবং গঙ্গা দেবীকে সরস্বতী দেবী অভিশাপ দেয় যে তিনিও যেন নদী হয়ে যান। আর এ কারণে গঙ্গা ও সরস্বতী নদীর সৃষ্টি হয়। যা আজও ভারতের বিভিন্ন স্থানে প্রবাহিত হয়ে আসছে। তাই গঙ্গা, যমুনা ও অন্যান্য নদীর মত ‘সরস্বতী’ নদীও বৈষ্ণব আচার্য্যদের কাছে এক বিশাল গুরুত্ব বহন করে থাকে। একটি মহান তীর্থক্ষেত্র হিসেবেও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে তাৎপর্যপূর্ণ। এভাবে সরস্বতীদেবী পতিত জীবদের কল্যাণার্থে নিজেকে সরস্বতী নদীরূপে আত্মপ্রকাশ করেন, যাতে এ নদীর পবিত্র জলধারায় সিক্ত হয়ে নিজেকে পরিশুদ্ধ করতে পারেন।
সরস্বতী দেবী সম্পর্কে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুঃ কৃষ্ণনাম বিদ্যাদেবী সরস্বতীর অত্যন্ত প্রিয়। কৃষ্ণনাম কীর্তনে তিনি আনন্দ লাভ করেন। শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য মহাপ্রভু তাঁর শিক্ষাস্টকে বলছেন বিদ্যাবধুজীবনং শ্ৰীকৃষ্ণসংকীর্তনম্ । শ্রীকৃষ্ণ সংকীর্তন বিদ্যা-রূপিনী বধূর জীবন-স্বরূপ। শ্রীমদ্‌ভাগবতমে অধ্যয়নের পূর্বে সরস্বতী দেবী সম্পর্কে বলতে গিয়ে পরিশেষে উল্লেখ করা হয়েছে—

নারায়ণং নমস্কৃত্য নরং চৈব নরোত্তমম্ ।
দেবীং সরস্বতীং ব্যাসং ততো জয়মুদীরয়েৎ ॥
[ভাঃ ১/২/৪]

অনুবাদ : সংসার বিজয়ী গ্রন্থ শ্রীমদ্ভাগবত উচ্চারণ করার পূর্বে পরমেশ্বর ভগবান নারায়ণ, সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ নর-নারায়ণ ঋষি নামক ভগবৎ-অবতার, বিদ্যাদেবী সরস্বতী এবং ব্যাসদেবকে আমি আমার সশ্রদ্ধ প্রণতি নিবেদন করি।
এভাবে মাতা সরস্বতী দেবী একজন পরম পূজনীয় বৈষ্ণবী হিসেবে পূজনীয়। তাই এ মহান বৈষ্ণবীর উদ্দেশ্যে কৃষ্ণভক্তিমূলক বিদ্যা অর্জনের জন্য একজন যথার্থ কৃষ্ণভক্ত প্রার্থনা করে থাকেন। মাতা সরস্বতীই আমাদের প্রগতির জন্য সহায়তা করতে পারেন। জয় পরম বৈষ্ণবী মাতা সরস্বতী দেবী, জয় । হরে কৃষ্ণ ।


 

চৈতন্য সন্দেশ ফেব্রুয়ারি-২০০৯ প্রকাশিত
সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।