কৃষ্ণভাবনামৃতে নারীর ভূমিকা

প্রকাশ: ১ নভেম্বর ২০২১ | ১০:০৭ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ১ নভেম্বর ২০২১ | ১০:০৭ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 245 বার দেখা হয়েছে

কৃষ্ণভাবনামৃতে নারীর ভূমিকা

নারী স্বাধীনতা ও কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলনে নারীর ভূমিকা নিয়ে সীতা রাণী দেবী দাসী সাক্ষাৎকার দেন। তারই সাক্ষাৎকার নিয়ে এ প্রবন্ধটি সীতা রাণী দেবী দাসী চার বছর যাবৎ আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের সাথে জড়িত। তিনি একজন গ্রেট ব্রিটেনিয়ান। তিনি ১৯৭৯ সালে অস্ট্রেলিয়ায় কৃষ্ণভাবনামৃতে যোগদান করেন। তিনি সর্বপ্রথম কৃষ্ণভাবনামৃতের জ্ঞান লাভ করেন শ্রীল প্রভুপাদের একজন প্রবীন শিষ্যের কাছ থেকে। তিনি এখন ফিলা ডেলফিয়ায় তার স্বামীর সাথে বসবাস করেন। তাঁর স্বামী, শুভানন্দ দাস ভক্তিবেদান্ত বুক ট্রাস্টের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

ব্যাক টু গডহেড : বর্তমানে যখন নারীবাদ ও নারী স্বাধীনতা সমাজে একটি মূল চালিকাশক্তির আসনে অধিষ্ঠিত হচ্ছে ঠিক সেই সময়ে ধর্মে নারীর ভূমিকা কী? এবং ধর্ম নারীদের কি কি অধিকার দিচ্ছে? যেহেতু ধর্ম বিষয়টি অনেকটা পুরুষ শাসিত। যেখানে প্রতিনিধিত্ব করে পুরুষেরাই। এরকম ঐতিহ্য সমৃদ্ধ ধর্মে নারীদের কি ভূমিকা থাকতে পারে?
আপনি কৃষ্ণভাবনামৃতের মূল তত্ত্বটি আমাদের বলেন। বেদ এবং বৈষ্ণবীয় সভ্যতায় নারীদের সম্বন্ধে কি বলছে? এবং এদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি কি রকম?
সীতা রাণী দেবী দাসী : সর্বাগ্রে আমাদের নারী স্বাধীনতা বলতে কি বোঝায়? এবং এর গূঢ় রহস্য কী তা জানা প্রয়োজন। যদি আপনি উন্নত নাগরিক সভ্যতার দিকে তাকান তবে দেখতে পাবেন পুরুষ শাসিত এ সমাজে নারীরা সামাজিকভাবে, রাজনৈতিকভাবে এবং অর্থনৈতিকভাবে সমান বলে দাবী করলেও তারা অধিকার বঞ্চিত। আমরা যদি নারী স্বাধীনতার মূল তত্ত্ব নিয়ে ভাবি তবে বিষয়টি অনেকটাই পরিস্কার হবে। বর্তমানে নারীরা তাদের কর্মের জন্য পুরুষ কর্তৃক সম্মানিত হয় না। তাদের পরিচয় হলো পুরুষের মৈথুন সুখের অংশীদার। হোটেল, বারসহ, বিনোদন কেন্দ্রসহ বহু স্থানে সুন্দরী নারীর ছবি ব্যবহৃত হয় পুরুষদের আকৃষ্ট করার জন্য পুরুষরা সেই সুন্দরী নারীর ছবি দেখে আকৃষ্ট হয়। মূল কথাটি হলো, পুরুষ শাসিত এ সমাজে নারী হচ্ছে পুরুষের ইন্দ্রিয় তৃপ্তির একটি উত্তম আশ্রয়স্থল। যা নারীর জন্য অপমান ও অসম্মানই বটে।
নারীর এ অপমান যেন নারীদেরও গা সওয়া হয়ে গেছে। নারী যেন অপরের ভোগ্য পণ্য। এ মনোভাব পোষণ করতে নারীরা হয়তোবা অভ্যস্ত হয়ে গেছে। অথবা একে তোষামোদ ভাবতে শুরু করেছে। সমস্ত সমস্যাটার মূল এক জায়গায়। একজন ভক্ত জীবনকে জাগতিক ও পারমার্থিক দু’ভাবে বিচার করে। সাধারণ মানুষ নিজের দেহকেই সর্বস্ব মনে করে। যদি কেউ এই নশ্বর দেহটিকেই নিয়ে ভাবতে থাকে তবে শাস্ত্রে একে মায়া বলা হয়েছে। যখন আমরা বুঝতে শিখি আমি এ দেহ নই, তখন আমরা নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করি এবং জগতের ক্ষণস্থায়ী আনন্দগুলো থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিতে সচেষ্ট হই। যখন মানুষ দেহগতভাবে মোহগ্রস্থ হয় তখন সে কোনো নারীকে উপভোগ করতে চায় এবং সর্বদা সঙ্গ কামনা করে। জগতে এটিই হচ্ছে ভালবাসার সংজ্ঞা।
বিটিজি : কিন্তু নারীরা কি দেহগতভাবে তাই নয়?
সীতা রাণী দাসী : এটি সবক্ষেত্রে এক নয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে নারীরা বিরোধমূলক পরিস্থিতিতে পড়ে এরকম কাজ করতে বাধ্য হয় । সে তাকে ভোগ্য পণ্য রূপে মানুষের কাছে উপস্থাপিত করতে চায় না। কিন্তু প্রকৃতিগতভাবে নারীরা নিজেদের উপস্থাপন করে আনন্দ পায়। পৃথিবীতে পোশাক ও প্রসাধন শিল্পের বাজারটা বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের। নারীরা সাজতে পছন্দ করে তবে তা পুরুষকে আকৃষ্ট করার জন্য নয়। বরং পুরুষ নারীদের বিভিন্ন রকম আবেগময়ী আবেদন করে এবং নারী সে আবেদনে সাড়া দেয়। এই সমস্যা সৃষ্টি হয় পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব ও আধিপত্যকারী মানসিকতার জন্য। পুরুষেরা নারীদের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সর্বক্ষেত্রে কর্তৃত্ব থেকে বঞ্চিত করে আনন্দ পায়। সেজন্য কর্তৃত্ব করে পুরুষরা যেরকম আনন্দ পায় নারীরা সেরকম পায় না। যেমন- একজন পুরুষ নির্বাহী কর্মকর্তা যেভাবে অপরকে নির্দেশ দিতে পারে সেরূপ নারীরা পারে না। কারণ প্রাকৃতিকভাবে নারীরা এরকম নয়। এটাই পুরুষদের কর্তৃত্ববাদে উজ্জীবিত করে। যা সমাজের জন্য একটি দুষ্ট ক্ষতের মতো।
বিটিজি : তাহলে এর সমাধান কী?
সীতা রাণী দাসী : নারীরা ভোগপণ্য হিসেবে উপস্থাপন করার বেপরোয়া প্রতিযোগিতায় লিপ্ত না হয়ে যদি অপ্রাকৃত স্তরে উন্নীত হওয়ার প্রচেষ্টা করে তা হবে নারীর জন্য কল্যাণকর। তবে পুরুষকেও তার মন মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। আধ্যাত্মিক দৃষ্টিকোণ থেকে কোনো মানুষ শুধুমাত্র শরীর নয়, সে চিন্ময় আত্মা। যখন তার এ উপলব্ধি আসবে তখন সে নারী পুরুষের মধ্যে ভেদাভেদ করবে না। যখন কোনো মানুষ ভাবে আমি নারী, আমি পুরুষ তখন তাকে বলা হয় মায়া। যৌন আকর্ষণ হলো মায়ারই একটি রূপ। যা স্বভাবগতভাবে নারী পুরুষকে পরস্পরের প্রতি আকৃষ্ট হতে বাধ্য করে।
বিটিজি : যৌন আকর্ষণকে কেন আপনি মায়া বলে অবহিত করছেন?
সীতা রাণী দাসী : আমি একটি গল্প বলব যা মায়ার স্বরূপ উন্মোচিত করবে।
এক ব্যক্তি এক সুন্দরী নারীর প্রতি আসক্ত হয়ে তাকে প্রস্তাব দেন। কিন্তু নারীটি ঐ পুরুষের প্রস্তাব প্রত্যাখান করলে পুরুষটি কামার্ত হয়ে তাঁকে জোর করতে থাকে, তাই সেই নারীটি ঐ কামার্ত পুরুষকে সাতদিন অপেক্ষা করতে বলেন এবং একটি নির্দিষ্ট সময়ে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বলেন।
সেই নারী তখন পরম সত্যের প্রকৃত সৌন্দর্য প্রকাশ করার জন্য এক শিক্ষণীয় পন্থা অবলম্বন করেন। তিনি অত্যন্ত উগ্ররেচক ঔষধ গ্রহণ করেন এবং তার ফলে সাতদিন ধরে ক্রমান্বয়ে মল-মূত্র ত্যাগ এবং বমি করতে থাকেন। সেই মল, মূত্র এবং বমি তিনি একট পাত্রে সঞ্চয় করে রাখেন। সেই রেচক ঔষধের প্রভাবে তথাকথিত অতি সুন্দরী নারীটি রুগ্ন, জীর্ণ ও কঙ্কালসার হয়ে পড়েন। এইভাবে নির্দিষ্ট সময়ে তিনি সেই প্রেমিক পুরুষটিকে অভ্যর্থনা জানাবার জন্য প্রতীক্ষা করতে থাকেন।
পুরুষটি তখন সুন্দর পোশাকে সজ্জিত হয়ে এসে, সেই নারীটিকেই জিজ্ঞেস করেন, তিনি সেখানে কোনো সুন্দরী নারীকে দেখেছেন কি না। সেই পুরষটি বুঝতেই পারেননি যে, সুন্দরী সেই নারীটি তাঁর সম্মুখেই দণ্ডায়মান।
অবশেষে সেই নারীটি কামুক পুরুষটিকে বলেন, তিনি তাঁর সৌন্দর্যের উপাদানগুলি একটি পাত্রে সঞ্চয় করে রেখেছেন। তিনি তাকে এটিও বলেন যে, তিনি ইচ্ছা করলে তাঁর সৌন্দর্যের রস উপভোগ করতে পারেন। যখন কামুক পুরুষটি সেই সৌন্দর্যের রস দেখতে চান, তখন নারীটি তাকে পুঁতিগন্ধময় মল, মূত্র এবং বমিপূর্ণ পাত্রটি দেখান। এইভাবে তরল সৌন্দর্যের রহস্য তার কাছে প্রকাশিত হয়। অবশেষে সাধ্বী নারীর কৃপায় সেই মানুষটি প্রকৃত বস্তু এবং তার ছায়ার মধ্যে পার্থক্য সম্বন্ধে অবগত হন এবং এইভাবে তিনি প্রকৃতিস্থ হন।
বিটিজি : আপনার কথা শুনে যা বুঝলাম আমরা পুরুষ বা নারী কোনোটিই নই। কিন্তু আমরা কী শারীরিক ও মানসিকভাবে পুরুষদের সমকক্ষ? আমাদের কি কোনো সীমাবদ্ধতা নেই? আপনাকে অবশ্যই স্বীকার করতে হবে, শারীরিকভাবে আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। যা পুরুষ ও নারীকে আলাদা করার জন্য যথেষ্ট।
সীতা রাণী দাসী : বেশ, আমি মানলাম। কিন্তু তা শারীরিকভাবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে নারীদের বিশেষত্ব আছে যেমন- নারীরা সন্তান ধারণ করতে পারে, পুরুষরা তা পারে না। সেক্ষেত্রে কি আমরা শ্রেষ্ঠ নই?
বিটিজি : নারীবাদ প্রচার করে যে, নারীদের মানসিক দুর্বলতা তা সমাজ ও সংস্কৃতি কর্তৃক সৃষ্ট। সমাজ ও সংস্কৃতি তাদেরকে দুর্বল হতে বাধ্য করেছে।
সীতা রাণী দাসী : হয়তোবা। কিন্তু বর্তমানে নারীরা তাদের স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে হাজির হয়েছে। তারা সমস্ত দৈহিক ও মানসিক দুর্বলতার ঊর্ধ্বে যাওয়ার জন্য সচেষ্ট হচ্ছে। যদি কোনো নারী তার এ দুর্বলতাকে অগ্রাহ্য না করে এটিকে আধ্যাত্মিক অগ্রগতির মাধ্যমে অতিক্রম করতে চায় তবে তাই হবে যথার্থ। যখন নারীরা তাদের স্বাধীনতাকে সদ্ব্যবহার করে আধ্যাত্মিক জ্ঞানের চর্চা করবে তখনই তারা যথার্থ নারী স্বাধীনতা উপলব্ধি করতে পারবে। যদি তারা নিজেদের মধ্যে পুরুষালী মনোভাবের চর্চা করে তবে তা কখনই নারী স্বাধীনতা হতে পারবে না।
বিটিজি : বৈদিক জ্ঞান নারীদের সুরক্ষার ব্যাপারে কি বলে? একটি ধারণা প্রচলিত আছে, শৈশবে নারীরা পিতা কর্তৃক, বৈবাহিক জীবনে স্বামী কর্তৃক এবং বার্ধক্যে সন্তান কর্তৃক সুরক্ষিত থাকবে এই ধারণা নারীদের দুর্বল মানসিকতাকে উজ্জীবিত করে? সে সর্বদা ভাবতে থাকবে যেহেতু আমি কারো দ্বারা সুরক্ষিত সেহেতু আমি নিজেকে নিজে সুরক্ষা দিতে পারি না। এটি কি ধরনের ধারণা?
সীতা রাণী দাসী : না, বিষয়টি এরকম নয়। পুরুষ কর্তৃক নারীর সুরক্ষা, এটি কোনো পুরুষতান্ত্রিক সমাজের মনোভাব নয়। এটি বাস্তবে ভালবাসা প্রসূত। কারণ নারীরা শারীরিকভাবে দুর্বল এবং অস্বাভাবিকরূপে আবেগপ্রবণ। তাই তাদের ভালবাসা প্রসূত একটি সুরক্ষা প্রয়োজন। নারীবাদীরা জোরগলায় এর বিরোধিতা করবে। কেন? আমরা নিজেদের সুরক্ষা কি নিজেরা করতে পারি না? এটি নারীদের আত্মরক্ষার ক্ষমতাকে নষ্ট করে।
আমরা সবাই জানি যে, নারীরা পুরুষের তুলনায় বেশী আবেগপ্রবণ। কারণ, নারীরা একদিকে ভালবাসা চায়, আবার অন্যদিকে সুরক্ষা। নারীরা তাদের প্রেমিকের নিকট থেকে ভালবাসা এবং সুরক্ষা দুটিই কামনা করে। এবং চায় তার সঙ্গী যেন তাকে ত্যাগ না করে। যখন কোনো যুবতী কোনো যুবক কর্তৃক প্রতারিত হয় তখন তার ভালবাসাটা ঘৃণায় রূপান্তরিত হয়। তখন সে কোনো যুবককে আর বিশ্বাস করতে পারে না। যখন কোনো নারী যৌবনে অসতী হয় তখন সে যখন তার বৈবাহিক জীবন শুরু করে তার পূর্বকৃত অপরাধ তাকে কুড়ে কুড়ে খায়। সে সর্বদা ভীতসন্ত্রস্থ থাকে, কখন তার স্বামীর কাছে বিষয়টি প্রকাশিত হয়ে যায়। আর প্রকাশিত হলেই স্বামী তাকে ঘৃণা করবে। সেজন্য অপ্রাপ্ত বয়স্কদের যৌন চর্চা ভাবী জীবনে দুঃখই ডেকে আনে। হয়তোবা সেসময়ে ক্ষণিক আনন্দের মোহে এই কাজে লিপ্ত হয়। কিন্তু পরবর্তীতে তার এই কু-কর্মের জন্য তাকে অনুতপ্ত হতেই হয়। এজন্যই নারীদের জীবনের প্রতিটি পর্যায়েই কারো না করো সুরক্ষা প্রয়োজন। এই ধারণাটি পূর্ববর্তী শতাব্দীতে যেরকম সত্য ছিল বর্তমানেও তাই। এটি তাকে সম্মান দেয় ও উদ্বেগ থেকে মুক্ত করে। ভক্তরা নারীদের শুধুমাত্র সমাজের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবেই বিবেচনা করে না। তারা নারীদেরকে মাতার মতো সম্মান করে। এই বিষয়টিকে খুব গুরুত্বের সাথে নেয়া উচিত। সমাজে এখন একটি ধারণা প্রচলিত হয়েছে নারীদের নিজেদের জীবিকা নিজেদেরই ব্যবস্থা করতে হবে। সমাজে নারীরা একসাথে মাতা ও পত্নীর অবতীর্ণ হতে হচ্ছে। আসলেই এটি কঠিন। বর্তমানে পাশ্চাত্যে নারী স্বাধীনতা বলতে যা বুঝায় তা হলো, একজন নারী যে কোনো মানুষের সাথে অবৈধ সঙ্গ করবে। ফলে ঐ নারী গর্ভবতী হবে। কিন্তু গর্ভের সন্তানকে লালন পালন করার জন্য সরকারের কাছে ভিক্ষা চাইবে। সরকার তার সন্তান প্রতিপালনের জন্য অর্থ দেবে সে অর্থে প্রতিপালিত হবে এই অবৈধ সন্তান। অথবা সে যদি সন্তানটি অনাকাঙ্ক্ষিত মনে করে তবে তাকে গর্ভেই হত্যা করবে। পাশ্চাত্যে এটিই হচ্ছে নারী স্বাধীনতার সংজ্ঞা।
বিটিজি : কিছু কিছু নারী পুরুষ কর্তৃক প্রতিরক্ষা পছন্দ করে না। কেননা পূর্বের কষ্টদায়ক ধারণা তাদের পুরুষের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনে বাধা দেয়। সীতা রাণী দাসী : হ্যাঁ তা ঠিক। পুরো বিষয়টি হাস্যকর বলে মনে হবে, যখন প্রতিরক্ষা প্রদানকারী পুরুষটি আধ্যাত্মিকভাবে সুশিক্ষিত হবে না। বর্তমান সমাজে কয়জন পুরুষকে পাওয়া যাবে যারা আধ্যাত্মিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সংসার জীবনে প্রবেশ করছে? তাই নারীরা বিয়ে করার পরও স্বামীর কাছ থেকে সুরক্ষা পায় না। একজন পুরুষ যখন জাগতিক ও আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রে সঠিকভাবে প্রশিক্ষিত না হয় তবে সে যথার্থ সুরক্ষা দিতে পারে না। কৃষ্ণভাবনামৃতের মাধ্যমেই নারী ও পুরুষ জানতে পারে যে, পুরুষ কর্তৃক নারীকে নিরাপত্তা দেওয়া কোনো দাসত্বের অভিপ্রকাশ নয়। এটি পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় রাখার উদ্দেশ্য মাত্র।
বিটিজি: কৃষ্ণভাবনামৃতে নারী ভক্তরা কি পুরুষ ভক্ত কর্তৃক সম্মানিত হন?
সীতা রাণী দাসী: অবশ্যই, একজন কৃষ্ণভক্ত প্রতিটি জীবকে ভগবানের দাস হিসেবে সম্মান করে। ভক্ত একটি পিপড়াকে পর্যন্ত সম্মান দেয়। সেখানে মানুষের কথা তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কৃষ্ণভাবনামৃতে অন্যকে সম্মান দেওয়াটা নীতি। আধ্যাত্মিক প্রগতির স্বার্থে সব ভক্তরা এই নীতি অনুসরণ করে।
বিটিজি : বৈবাহিক সম্পর্কে নারীর ভূমিকা কি?
যদিও ইস্‌কনে নারী ভক্তদের বিবাহের ক্ষেত্রে বাধা নেয়, তারা বৈবাহিক জীবনে আধ্যাত্মিকতা অনুসরণ করে?
শাস্ত্রে নারী পুরুষের জন্য মায়া, আবার পুরুষকে নারীর জন্য মায়া হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে, এর প্রধান কারণ হলো যাতে তারা শুধুমাত্র কৃষ্ণের ওপর নির্ভর করতে শিখে। যদি নারী ও পুরুষ পরস্পরকে নিজের ইন্দ্রিয়তৃপ্তির একটি মাধ্যম মনে করেন তবে তা অত্যন্ত ভয়ংকর।
সীতা রাণী দাসী: কৃষ্ণভাবনামৃতে বিবাহের মাধ্যমে একজন নারী ও পুরুষ পরস্পরকে আধ্যাত্মিক জীবনে সহায়তা করার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়। শাস্ত্র বলে, পুরুষরা যে ধর্মীয় কার্য করে নারীরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার অর্ধভাগ পায়। সংস্কৃতে তাই স্বামীকে পতিগুরু রূপে আখ্যায়িত করা হয়েছে। অর্থাৎ স্বামী হলো স্ত্রীর আধ্যাত্মিক অভিভাবক। পত্নীকে বলা হয়েছে-ধর্মপত্নী, কৃষ্ণভাবনামৃতে এমন অনেক ঘটনা আছে নারীরা পুরুষের চেয়ে বেশী ভক্তিমতি ।
বিটিজি: কৃষ্ণভাবনামৃতে নারীরা কি উপেক্ষিত হয় ?
সীতা রাণী দাসী: অবশ্যই না, যদি কেউ তার গুরুদেবের নির্দেশ পালন করে তবে তার আধ্যাত্মিক প্রগতির পথে কোনো বাঁধাই থাকবে না। বিটিজি: কৃষ্ণভাবনামৃতে এই রকম কিছু মহীয়সী নারীর উদাহরণ দিন।
সীতা রাণী দাসী: দ্রৌপদী ছিলেন পঞ্চপাণ্ডবের স্ত্রী, গান্ধারী যিনি ধৃতরাষ্ট্রের পত্নী, কুন্তী মহারাণী যিনি কৃষ্ণের পিসীমা, কপিলদেবের মাতা দেবহুতি কুন্তী দেবীর শিক্ষা নামে আমাদের একটি গ্রন্থও আছে। যেখানে কুন্তী দেবী কিভাবে কৃষ্ণের প্রতি প্রার্থনা জানিয়েছেন তার বর্ণনা পাওয়া যায়।
বিটিজি: নারীরা কিভাবে তপস্বী ও বৈরাগী হতে পারে? নারীর কোন রূপ সেরা- পত্নী নাকি মাতৃরূপ? কৃষ্ণভাবনামৃতে নারীরা কি পুরুষের দ্বারা কোনো ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ে?
সীতা রাণী দাসী: শাস্ত্র বলছে, তপস্যার ক্ষেত্রে পুরুষেরা নারীদের চেয়ে এগিয়ে থাকবে। শাস্ত্রে নারী পুরুষের জন্য মায়া, আবার পুরুষকে নারীর জন্য মায়া হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে, এর প্রধান কারণ হলো যাতে তারা শুধুমাত্র কৃষ্ণের ওপর নির্ভর করতে শিখে। যদি নারী ও পুরুষ পরষ্পরকে নিজের ইন্দ্রিয়তৃপ্তির একটি মাধ্যম মনে করে তবে তা অত্যন্ত ভয়ংকর। যদি তারা এই আকর্ষণকে কৃষ্ণের জন্য ব্যবহার করে তবেই তা পরষ্পরের জন্য মঙ্গলকর। বেদে আছে যখন তার স্বামী সন্ন্যাস নেওয়ার জন্য গৃহত্যাগ করে তখন সেও গৃহত্যাগ করতে পারে, যদি তা না করে তবে সে তার নিজ পুত্রের নিরাপত্তায় থাকবে।
বিটিজি: এসব কি কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলনে অনুসরণ করা হয়?
সীতা রাণী দাসী: ইস্‌কনে নারীরা অনেক সুযোগ সুবিধা পায়। বৈদিক সমাজে নারীদের বিবাহ বাধ্যতামূলক এবং তারা স্বামী কর্তৃক তেমন পরিত্যক্ত হতো না। কিন্তু শ্রীল প্রভুপাদ যখন আমেরিকায় আসেন তখন দেখেন, এখানকার নারীদের বিবাহ না করে বিপরীত লিঙ্গের সাথে শর্তসাপেক্ষে বাস করার এক জঘন্য প্রবণতা রয়েছে। তারা একে তথাকথিত স্বাধীনতা বলতো। প্রভুপাদ তাদের আন্দোলনে আকৃষ্ট করার জন্য ব্রহ্মাচারীনি আশ্রম বলে এক আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন সেখানে অবিবাহিত নারীরা থাকতো তারা মন্দিরের পুরুষভক্ত কর্তৃক সুরক্ষা পেত।
বিটিজি: আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষ যদি একই হয় তবে মন্দিরে কেন তারা আলাদাভাবে থাকে, সেবা করে এবং প্রার্থনাও আলাদাভাবে করে?
সীতা রাণী দাসী: এর যথার্থ কারণ রয়েছে, এটা করা হয় যাতে যৌন সংস্রবের কারণে পরস্পর কলুষিত না হয়। ভারতে একটি ঐতিহ্য প্রচলিত আছে। একমাত্র পুরুষরাই আশ্রমে বাস করতে পারবে। কিন্তু শ্রীল প্রভুপাদ নারীদেরও কৃষ্ণভাবনামৃতে স্বাগত জানিয়ে ছিলেন। মন্দিরে সুশৃঙ্খল জীবনযাত্রার স্বার্থে তিনি এই নীতি প্রচলন করেন। আমাদের জানা উচিত এই দূরত্ব অপছন্দের নয় এই দূরত্ব পরষ্পরকে সম্মানের দূরত্ব।
বিটিজি: আপনার কোনো সমাপনী নির্দেশনা আছে?
সীতা রাণী দাসী: হ্যাঁ, যেসব নারীরা তাদের নারীত্ব বিষয়ে সচেতন তাদের কৃষ্ণভাবনামৃতে আন্তরিকভাবে আমন্ত্রণ জানাই। একজন মানুষ হিসেবে একজন আধ্যাত্মিক জীবনের পথিক হিসেবে কৃষ্ণভাবনামৃতে অংশগ্রহণ করা উচিত।


 

জানুয়ারি-মার্চ ২০১৬ ব্যাক টু গডহেড

সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।