এই পোস্টটি 209 বার দেখা হয়েছে
এই প্রশ্নটা যথার্থ নয়। কর্মহীন ধর্ম কিংবা ধর্মহীন কর্ম- এই দুটির কোনটারই মূল্য নেই। তিন রকমের কর্ম আছে, পুণ্যকর্ম, পাপকর্ম ও ভক্তিকর্ম। যে কর্ম করলে পরিণামে জাগতিক সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য লাভ হয়, কিংবা মৃত্যুর পর স্বর্গগতি লাভ হয়, সেই শাস্ত্র-বিহিত কর্ম হচ্ছে পুণ্যকর্ম। যে কর্ম করলে পরিণামে কষ্টই ভোগ করতে হয় কিংবা মৃত্যুর পর নরকগতি লাভ হয়, সেই শাস্ত্রনিষিদ্ধ কর্ম হচ্ছে পাপকর্ম। যে কর্ম করলে পাপ ও পুণ্য এই দু’য়ের ঊর্ধ্বে বৈকুণ্ঠগতি লাভ হয়, সেই শাস্ত্র নির্ধারিত ভগবৎ সেবামূলক কর্ম হচ্ছে ভক্তিকর্ম। পুণ্যকর্ম ফলে স্বর্গ-সুখ ভোগ হয়, সুখ ভোগ করতে করতে পুণ্য শেষ হয়ে গেলে আবার এই মর্ত্যলোকে জন্মাতে হয়। “ক্ষীণে পুণ্যে মর্ত্যলোকং বিশন্তি।” পাপকর্মের ফলে নরক-যাতনা ভোগ হয়, যাতনা ভোগ করতে করতে পাপরাশি শেষ হয়ে গেলে আবার এই মর্ত্যলোকে জন্মাতে হয়।
ভক্তিকর্ম ফলে বৈকুণ্ঠ-জীবন প্রাপ্তি হয়। ভয়ংকর বৈষ্ণব অপরাধ না করলে ভক্তি নষ্ট হয় না। বরঞ্চ বৈকুণ্ঠ-গতি হওয়ার ফলে তাকে আর এই জন্ম-মৃত্যু-জরা-ব্যাধিপূর্ণ মায়ার জগতে ফিরে আসতে হয় না। যদি কেউ জড় জগতে জন্ম-মৃত্যুর দুঃখময় চক্রে ঘুরপাক খেতে না চান তবে তিনি ভগবদ্ভক্তি-সেবামূলক কর্ম করবেন। ধর্ম হচ্ছে আমাদের জন্য ভগবানের দেওয়া নিয়মকানুন। ধর্মংস্তু সাক্ষাৎ ভগবৎ, প্রণীতম্, ধর্ম হচ্ছে ভগবানের দেওয়া নিয়মকানুন। সেই নিয়ম-কানুনটি কি? যেখানে যেরূপ অবস্থায় থাকি না কেন জীবনের সম্পূর্ণ অর্থাৎ শতভাগই হরিভজনে যুক্ত থাকতে হবে। অর্থাৎ আপনার যাবতীয় কর্ম- চাষবাস করা, চাকুরী করা, ব্যবসা করা, ঝাড় দেওয়া, রান্না করা, ঘর সংসার করা, সন্ন্যাস নেওয়া, কথা বলা, সিনেমা দেখা, বাজার করা, বই পড়া, গান শোনা, খাওয়া দাওয়া, ঘর সাজানো, জল আনা- সবই ভগবৎ সেবাকর্মের অনুকূলে, ভগবানকে কেন্দ্র করেই গড়ে তুলতে হবে। ভগবদ্ প্রীতির উদ্দেশ্যে এইভাবে জীবনযাপন করাটাই মনুষ্য জন্মের একমাত্র কর্ম। আর সেটিই একমাত্র শাশ্বত পরমগতি লাভের কারণ।