কনসার্ট ফর বাংলাদেশ (জর্জ হ্যারিসন)

প্রকাশ: ২৬ মে ২০২৩ | ৯:৩৮ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ১০ জুন ২০২৩ | ১২:৩৩ অপরাহ্ণ

এই পোস্টটি 222 বার দেখা হয়েছে

কনসার্ট ফর বাংলাদেশ (জর্জ হ্যারিসন)
গত ২৬ মার্চ সমগ্র বাংলাদেশে উদযাপিত হল স্বাধীনতা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনটিতে বাঙ্গালী জাতি স্বাধীনতা রক্ষার জন্য রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙ্গনে যখন বাঙ্গালী যুদ্ধরত ঠিক একই সময় ১৯৭১ সালের ১ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটিতে তখন চলছিল আরেক ইতিহাস সৃষ্টির অবতারণা। নিউইয়র্ক সিটির ম্যাডিসন। স্কোয়ার গার্ডেনে চল্লিশ হাজারের অধিক শ্রোতার সম্মুখে অনুষ্ঠিত হয়েছিল এক ঐতিহাসিক মিউজিক কনসার্ট যার নাম ছিল “কনসার্ট ফর বাংলাদেশ”
কনসার্টের মূল হোতা ছিলেন বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু নামে খ্যাত জর্জ হ্যারিসন। বিশ্ববিখ্যাত মিউজিক ব্যান্ড ‘বিটলস’ এর একজন সদস্য হিসেবে তিনি সমগ্র বিশ্বে খ্যাত। আলোচিত উক্ত কনসার্টটি রেকর্ড পরিমাণ প্রায় দুই লক্ষ পঞ্চাশ হাজার ইউ.এস ডলার আয় করে। হ্যারিসন উক্ত অর্থ ইউনিসেফের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশের যুদ্ধকবলিত জনগণের সাহায্যার্থে প্রেরণ করেন। তাঁর লিখিত এবং গাওয়া “বাংলাদেশ’ শিরোনামের গানটি তৎকালীন সুইস, ডাচ, নরজোগিযান, ইউ.কে, ইউ এস টপ চার্টে স্থান করে নেয় । এছাড়া এই কনসার্টটি সারাবিশ্বে বাংলাদেশের পক্ষে সহমর্মিতা ও জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল । বিশ্ববিখ্যাত গায়ক কিংবা বাংলাদেশের বন্ধু ছাড়াও জর্জ হ্যারিসনের আরেকটি পরিচয় আছে যা হয়ত অনেকেরেই অজানা। তা হল তিনি আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইস্কন) এর প্রতিষ্ঠাতা আচার্য শ্রীল অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদের অনুগত এক নিষ্ঠাবান কৃষ্ণভক্ত। অত্যন্ত জঘন্য ও কৃষ্ণবিমুখ পাশ্চাত্যজগতকে কৃষ্ণনামে উদ্ধারের মানসে  সত্তর বছর বয়সে যখন শ্রীল প্রভুপাদ পাশ্চাত্যদেশে গমন করেন, তখন হাজার হাজার ব্যক্তিদের ন্যায় জর্জ হ্যারিসন ও কৃষ্ণভাবনামৃতে আকর্ষিত হন। শ্রীল প্রভুপাদের সুদৃঢ় বৈদিক দর্শন ও হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র তাকে পরম আশ্রয় দান করে।
হ্যারিসন শ্রীল প্রভুপাদ সম্পর্কে বলেন-“শ্রীল প্রভুপাদের একটি উদ্ধৃতি আমার খুব ভাল লাগত। তিনি বলতেন, তিনি হচ্ছেন পরমেশ্বর ভগবানের দাসের অনুদাসের অনুদাস। যদিও বর্তমান সমাজে দেখা যায় যে, অনেক সাধু সন্ত কিংবা সাধারণ ব্যক্তিরা বলেন যে, তারা ভগবান কিংবা ভগবানের অবতার। তিনি আমাদেরকে শিখিয়েছিলেন যে আমরা কেউ ভগবান কিংবা ভগবানের অবতার হতে সক্ষম নই। আমরা শুধুমাত্র স্বরূপত ভগবানের দাস ।
এছাড়া প্রভুপাদের আরেকটি বিষয় খুবই তাৎপর্যপূর্ণ যে, তিনি নিজেই ধর্মাচরণ করে অপরকে শিখিয়েছিলেন। যখন তিনি কাউকে জপ করার নির্দেশ দিতেন তখন দেখা যেত তিনি নিজেই আন্তরিকভাবে জপ করছেন। তিনি যেহেতু পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে আরাধনার শুদ্ধ পদ্ধতি প্রদর্শন করেছেন সেহেতু সমগ্র বিশ্বে এটি ভালভাবেই পরিব্যাপ্ত হয়েছে। এছাড়া আমার লিখিত অনেক গানে শ্রীল প্রভুপাদের ছোঁয়া রয়েছে, যেমন লিভিং ইন দা মেটারিয়াল ওয়ার্ল্ড, চ্যান্টিং দা নেম অব লর্ড, মাই সুইট লর্ড প্রমুখ। একদিন আমি সত্যিই উপলব্ধি করেছিলাম তিনি সত্যিই একজন উদাহরণ এবং বলেছিলাম “God, this man is amazing!!!” ১৯৭০ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি জর্জ হ্যারিসনের উদ্দেশ্য চিঠিতে শ্রীল প্রভুপাদ লিখেছিলেন “জর্জ, তুমি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের যে সেবা করছ তার বিনিময়ে ভগবান তোমাকে ১০ গুণ বেশি কৃপা করবেন। তাই বলে কৃষ্ণকে তুমি ব্যবসায়ী মনে কোর না, এটি হল তার প্রতি সেবারত ভক্তের প্রতি ভগবানের চিন্ময় কৃপা। উদরকে খাবার দিলে এটি যেভাবে পরিতৃপ্ত হয় তেমনি শ্রীকৃষ্ণের সাথে আমাদের ভালবাসার বিনিময় করলে আমরা পূর্ন পরিতৃপ্ত হতে পারব।” কৃষ্ণভাবনা প্রচারে সমগ্র জীবন জর্জ হ্যারিসন বিভিন্নভাবে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন। শ্রীল প্রভুপাদের লিখিত গ্রন্থ ‘কৃষ্ণ’ এর প্রকাশনায় তিনি ১৯ হাজার ইউএস ডলার সহায়তা দেন এবং উক্ত গ্রন্থের মুখবন্ধ লিখেন। এছাড়া ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ায় পৃথিবীখ্যাত ‘নববৃন্দাবন’ তারই অবদান। এছাড়া তিনি তার সঙ্গীতের মাধ্যমে কৃষ্ণভাবনামৃত প্রচার করেছেন। তার লিখিত ও গাওয়া ‘মাই সুইট লর্ড’ শীর্ষক গানটি ১৯৭০-১৯৭১ সালে পৃথিবীর সবকটি বিলবোর্ড চার্টে এক নম্বর অবস্থান অর্জন করে। এছাড়া এই গানটি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ গানের লিস্টে স্থান করে নিয়েছে।
এই মহান ভক্ত ২০০১ সালে ইহধাম পরিত্যাগ করেন এবং ৩ ডিসেম্বর তারই ইচ্ছা অনুযায়ী তার দেহাবশেষ ইস্কনের মাধ্যমে গঙ্গা ও যমুনা নদীতে সমাহিত করা হয়। কৃষ্ণ গ্রন্থের মুখবন্ধে হ্যারিসন লিখেছিলেন “কৃষ্ণ হচ্ছেন ভগবান। তিনি সবকিছুর উৎস এবং সবকিছুর পরম কারণ। অতীত, ভবিষ্যৎ এবং বর্তমান, সবকিছুর। ভগবান হচ্ছেন অনন্ত, তাঁর আনন্ত নাম রয়েছে আল্লা, বুদ্ধ, জিহোভা, রাম-এঁরা সকলেই এক….. প্রতিটি চিন্তা, প্রতিটি বাক্য এবং প্রতিটি কার্যের মাধ্যমে ভগবানের সেবা করা যায়, এবং তাঁর দিব্য নাম কীর্তন করার মাধ্যমে ভগবদ্ভক্ত অচিরেই ভগবৎ প্রেম লাভ করেন। হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে। হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে । এই মহামন্ত্র কীর্তন করার ফলে জীব অচিরেই কৃষ্ণপ্রেম লাভ করে। (ফলেন পরিচীয়তে বৃক্ষ।)
আমি সকলকে সেই সঙ্গে অনুরোধ করি তাঁরা যেন ভগবানের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার যোগ পন্থার মাধ্যমে জড় জগতের বন্ধন মুক্ত হয়ে ভগবানের সঙ্গ মিলিত হওয়ার প্রয়াস করেন এবং শাস্তির সূচনা করার চেষ্টা করেন। “

হরে কৃষ্ণ ।

চৈতন্য সন্দেশ অ্যাপ ডাউনলোড করুন :https://play.google.com/store/apps/details?id=com.differentcoder.csbtg

Hare Krishna Thanks For Reading

 

মাসিক চৈতন্য সন্দেশ  এপ্রিল ২০১০ হতে প্রকাশিত

সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।