এই পোস্টটি 302 বার দেখা হয়েছে
মথুরা রাজ্যের রাজা কংস সম্পর্কে কৃষ্ণের মামা ছিলেন। কিন্তু তিনি সমাজের অন্য দশজন মামার মতো ভাগ্নের প্রতি স্নেহশীল আচরণ করেননি। তিনি ছিলেন। অত্যন্ত রূঢ় ও নির্দয় প্রকৃতির। বর্তমানে বাংলা ব্যাকরণে প্রচলিত ‘কংস মামা’ বাগধারাটি তারই পরিচয় বহন করে। প্রাণের মায়াই স্বার্থ পরায়ণ হয়ে কংস কৃষ্ণকে হত্যার উদ্দেশ্যে যে সকল পরিকল্পনা করেছিলেন তা পর্যালোচনা সাপেক্ষে বর্ণিত হলো-গোপ শিশুদের হত্যাকারী কংস দেবকী ও বসুদেবের সদ্যজাত শিশুদের সবাইকে হত্যা করতে সম্মত হয়েছিল। শ্রীকৃষ্ণের বড় ভাই বলরাম যিনি দেবকীর গর্ভে সপ্তম শিশু হয়ে জন্ম নিয়েছিল রক্ষা পেয়েছিল রোহিনীর গর্ভে স্থানান্তরের মাধ্যমে।
গোকুলে সদ্যজাত শিশুদের হত্যার প্রচেষ্টা : কংস যখন দৈববাণীর মাধ্যমে জানতে পারল যে, গোকুলে কৃষ্ণ রয়েছেন, তাই তিনি তার সৈন্যদের আদেশ দিলেন যে, একদিনে সদ্যজাত সকল শিশুদের হত্যার জন্য। কিন্তু তিনি আসল শিশুটিকে হত্যা করতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হলেন।
পুতণাকে প্রেরণ : রাজা কংস কৃষ্ণকে মারার জন্য পুতনা নামে এক রাক্ষসীকে পাঠিয়েছিলেন যার স্তনে ছিল বিষ মাখানো দুধ। সেই বিষ মাখানো দুধ খাইয়ে পুতণা অনেক সদ্যজাত শিশুকে নির্মমভাবে হত্যা করে। কিন্তু পুতণা যখন কৃষ্ণকে সে স্তন পান করাতে গিয়েছিল তখন কৃষ্ণ কঠোরভাবে সে স্তন পান করার সাথে সাথে পুতণার প্রাণবায়ূ হরণ করেন।
তৃণাবর্ত অসুর প্রেরণ : পুতণার মৃত্যুর খবর শুনে রাজা কংস তার অন্য সহচর তৃণাবর্ত অসুরকে পাঠালেন। তৃণাবর্ত অসুর এক ভয়ংকর বায়ুর তোড়ে কৃষ্ণকে আকাশে উড়ে নিয়ে গেলেন। তখন তৃণাবর্ত অসুরের কোলে কৃষ্ণ তার ওজন বৃদ্ধি করতে লাগলেন। কৃষ্ণের অতিরিক্ত ওজন বহণ করত না পেরে তৃণাবর্ত অসুর ভূমিষ্ট হল এবং মৃত্যুবরণ করল। বকাসুর প্রেরণ :
এরপর কৃষ্ণকে মারার জন্য কংস বকাসুরকে প্রেরণ করেন। বকাসুর একটি প্রকাণ্ড বক পাখি আকার ধারণ করলে কৃষ্ণ বকাসুরের ঠোঁঠ টেনে দু’ভাগ করে দেন। আর তৎক্ষণাৎ বকাসুরের মৃত্যু হল । রাজা কংসের
জীবনাবসান : বার বার কৃষ্ণকে মারতে ব্যর্থ হলে কংস বলরাম এবং কৃষ্ণকে একটি মল্লযুদ্ধের আহ্বান জানিয়ে মথুরায় আমন্ত্রণ জানালেন, তিনি শুরুতেই কৃষ্ণকে মারার জন্য মথুরার প্রবেশ পথে কুবলয়াপীড় নামক একটি মত্ত হাতিকে প্রেরণ করলে কৃষ্ণ একে একে কুবলয়পীড়সহ চানুর এবং তোসলককেও হত্যা করেছিলেন। যারা কৃষ্ণের সঙ্গে মল্লযুদ্ধ করতে চেয়েছিল তাদেরকেও হত্যা করেন। এরপর কৃষ্ণ কংসকে তার সিংহাসন থেকে চুল ধরে টেনে হেঁচড়ে মাটিতে নামান এবং কংসকে বধ করেন। এভাবেই কংস হত্যার মাধ্যমে তার জীবনের নির্দয় কার্যকলাপের সমাপ্তি ঘটে ও রাজ্যের লোকেরা তার, মৃত্যুতে আনন্দে উদ্ভাসিত হয়ে কৃষ্ণের জয়গান করতে থাকে। এভাবেই কংস মামার ধ্বংস লীলা সম্পন্ন হল। হরেকৃষ্ণ । বিজ্ঞানীরা কোন জাগতিক সৃষ্টির প্রথম স্রষ্টা নন পারমাণবিক বিশ্লেষণ হতে আমরা দেখতে পায় যে, অসংখ্য পরমাণুর সমষ্ঠিতে এই জড় জগতটি গঠিত হয়েছে। এই জড় জগত ঘড়ির কাটার দিকে দুর্বোধ্য গতিতে প্রতিনিয়ত ছুটে চলেছে। বিজ্ঞানীরা কিছু মহাকাশ যান তৈরি করেছে কিন্তু তারা কি ভেবে দেখেছে যে, পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বহু পূর্বেই এর চেয়েও অতি উন্নত মডেলের মহাকাশ যান তৈরি করে রেখেছেন। যেমন- মহাকাশে স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে ভাসমান কোটি কোটি গ্রহ-নক্ষত্র ও তারকাপুঞ্জ। আমরা যদি স্থিরভাবে এবং পূর্ণ সতর্কতার সাথে এই সকল বিস্ময় জাগানো গ্রহ-নক্ষত্রগুলোর সম্পর্কে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করি তাহলে আমরা উপলব্ধি করতে পারব অবশ্যই একজন সর্বোচ্চ বুদ্ধিমত্তার অধিকারীর অধিনে এইগুলো পরিচালিত হচ্ছে। শ্রীকৃষ্ণের সুনিয়ন্ত্রিত নির্দেশে এই প্রকৃতি সুসজ্জিত। এইটি একটি সাধারণ জ্ঞান যে, প্রত্যেকটি কর্মের পিছনে একজন কর্তা রয়েছেন। যেমন একজন অপারেটর ছাড়া একটি মেশিন নিজে নিজে চলতে পারে না। আধুনিক বিজ্ঞানীরা স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র উদ্ভাবন করতে পেরে নিজেদেরকে খুব গর্বিত বলে মনে করে, কিন্তু স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রটি তৈরির জন্য যে বুদ্ধিমত্তার প্রয়োজন তা এলো কোথা থেকে। এমন কি বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনষ্ট্যাইনও স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন যে, “সকল জাগতিক সৃষ্টির নিয়ম-নীতি সমূহ একজন পরম নিয়ন্তার দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে।” যখন আমরা বুদ্ধিমত্তা ও অপারেটর নিয়ে আলোচনা করি তখন স্বাভাবিকভাবে একজন ব্যক্তিকেই নির্দেশ করা হয়। ইহা কখনই অব্যক্তিক হতে পারে না। যে কেউ প্রশ্ন করতে পারে কে এই ব্যক্তি? তিনি হচ্ছেন পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যার নির্দেশে সমগ্র বিশ্ব-ব্রহ্মান্ড পরিচালিত হচ্ছে, যা তিনি আজ হতে পাঁচ হাজার বছর পূর্বে শ্রীমদ্ভগবতগীতায় প্রতিপন্ন করেছেন। প্রকৃতিং স্বামবষ্টভ্য বিসৃজামি পুনঃ পুনঃ । ভূতপ্রামমিমং কৃৎসমবশং প্রকৃতের্বশাৎ ॥ অর্থাৎ, এই জগৎ আমারই (ভগবান শ্রী কৃষ্ণ) প্রকৃতির অধীন, তারা প্রকৃতির বশে অবশ হয়ে আমার দ্বারা পুনঃ পুনঃ সৃষ্ট হয় এবং আমারই ইচ্ছায় অন্তকালে বিনষ্ট হয় । (গীতা ৯/৮) এখন আমরা সৃষ্টির কয়েকটি দৃষ্টান্তের আলোকে প্রতিপন্ন করব যে, প্রত্যেকেরই এই উন্নত ধারণাটি থাকা উচিত যে, শ্রীকৃষ্ণই হচ্ছেন সমস্ত জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎস তথা পরম বৈজ্ঞানিক (Supreme Scientist), কেননা এই জাগতিক সৃষ্টির প্রতি পরতে পরতে রয়েছে তাঁর সুনিয়ন্ত্রিত পরিকল্পনা। যেমন- সূর্যকে আমরা সব চেয়ে নিকটস্থ নক্ষত্র হিসাবে প্রতিদিন দেখতে পায় যার ব্যসার্ধ একশটি পৃথিবীর পরিধির সমান এবং যেটি পৃথিবী হতে ৯ কোটি ৩০ লক্ষ মাইল দূরে অবস্থিত। এই দূরত্বে থেকে সূর্য পৃথিবীর উদ্দেশ্য একটি সোলার সিস্টেমের মাধ্যমে নিদিষ্ট তাপশক্তি ও আলো বিকিরণ করে। সূর্যের মোট বিকিরিত শক্তির অতিক্ষুদ্র পরিমাণ পৃথিবীতে এসে পৌছে। হিসেব করে দেখা গেছে যে, সূর্যে উৎপাদিত 1.00 X 1019) ভাগের মাত্র পাঁচ ভাগ শক্তি পৃথিবীতে এসে পৌঁছে যা পৃথিবীর সমস্ত কলকারখানা ও অনান্য উৎস হতে উৎপাদিত শক্তির চেয়ে এক লক্ষগুণ বেশি। এছাড়া সূর্যে উৎপাদিত এক সেকেন্ড শক্তি দিয়ে এক কিলোওয়াটের একটি অগ্নি চুল্লী প্রায় (1.00 x 1016) বছর জ্বলতে পারবে। আবার অন্য দিকে সূর্যে উৎপাদিত এক সেকেন্ডের শক্তি মানব সভ্যতার আদি ইতিহাস যতটুকু বিস্তৃত তা হতে আজ পর্যন্ত মানুষ অত শক্তি খরচ করতে পারে নি। উক্তিটি বিজ্ঞানী ফ্রেড হোলের। আমরা জানি, সূর্য হচ্ছে অগণিত নক্ষত্রগুলোর মধ্যে একটি এবং সূর্যে উৎপাদিত শক্তি অন্যান্য নক্ষত্রে উৎপাদিত শক্তির তুলনায় অতি নগণ্য। জাগতিক বিজ্ঞানীরা তাদের বুদ্ধিমত্তার দ্বারা প্রকৃতির বিভিন্ন উৎস হতে তাপ, বিদ্যুৎ এবং পারমাণবিক শক্তির সাহায্যে অতি নগণ্য পরিমাণ তাপ, আলো এবং শক্তির যোগান দিয়ে নিজেদের গর্বিত মনে করছে যেখানে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ শুধুমাত্র একটি নক্ষত্র হতে প্রতিনিয়ত অফুরন্ত শক্তি উৎপাদন করছেন এবং সেইসাথে প্রতিটি গ্রহে পর্যাপ্ত পরিমাণ শক্তির যোগান দিচ্ছেন। ভগবদ্গীতায় শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন যদাদিত্যগতং তেজো জগদ্ ভাসয়তেহখিলম্ । যচ্চন্দ্রমসি যচ্চাগ্নৌ তত্তেজো বিদ্ধি মামকম্ ॥ অনুবাদ-সূর্যের যে জ্যোতি সমগ্র জগতকে উদ্ভাসিত করে, তা আমারই তেজ। এবং চন্দ্র ও অগ্নির যে জ্যোতি তাও আমরই। (গীতা-১৫/১২) আমরা জানি, সূর্য হচ্ছে অগনিত নক্ষত্রগুলোর মধ্যে একটি এবং আমরা জানি যে, গ্রহসমূহ একটি নির্দিষ্ট কক্ষপথে সূর্যের চারিদিকে ঘুরছে একইভাবে একটি পরমাণুতেও ইলেকট্রনসমূহ নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। এসমস্ত পারমাণবিক বিশ্লেষণ হতে আমরা বুঝতে পারি অসংখ্য পরমাণুর সমন্বয়ে এ জগত সৃষ্টি হয়েছে। যদিও বিজ্ঞানীরা বহু সাধনার পর কিছু আকাশযান তৈরি করেছে কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ এই রকম মহাকাশচারী এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ গ্রহ নক্ষত্র বহু পূর্বেই তৈরি করে রেখেছেন। গামাবিশ্য চ ভূতানি ধারয়াম্যহমোজস। পুষ্ণামি চৌষধীঃ সৰ্বাঃ সোমো ভূত্বা রসাত্মকঃ ॥ অনুবাদ- প্রতিটি গ্রহে প্রবিষ্ট হয়ে আমি আমার শক্তির দ্বারা চরাচর সমস্ত প্রাণীদের ধারণ করি এবং রসাত্মক চন্দ্ররূপে ধান, যব আদি ওষধি পুষ্ট করি।-(গীতা-১৫/১৩) এই সকল নিয়ম উন্নত বুদ্ধিমত্তার দ্বারা প্রতিষ্ঠিত যা কখনও ভুল হতে পারে না। যেমন- আমরা কখনও সূর্যকে পশ্চিমে উদিত কিংবা পূর্বে অস্ত যেতে দেখি না। নিয়মতান্ত্রিকভাবেই প্রতিবছর ঋতুগুলো আবর্তিত হচ্ছে। (চলবে..) হরেকৃষ্ণ!