শুক্রবার, ২৪ মার্চ ২০২৩, ১০ চৈত্র ১৪২৯

এলিয়েন ও ফ্লাইং সসার

প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০২২ | ১২:৩১ অপরাহ্ণ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০২২ | ১২:৩১ অপরাহ্ণ
এলিয়েন ও ফ্লাইং সসার

বৈদিক শাস্ত্রের প্রেক্ষাপটে কতটুকু গ্রহণযোগ্য ?

“আমার বয়স যত বাড়ছে তত বেশী বোধগম্য হয়েছে যে, এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে আমরা একা নই।… তারা আমাদের চেয়ে অধিক শক্তিশালী এবং তাদের চোখে আমরা যেরকম ব্যাকটেরিয়াকে দেখি সেরকমই তুচ্ছ” ।
দ্য গার্ডিয়ানকে দেওয়া সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংস
এলিয়েন নিয়ে গবেষণার জন্য গত বছর একশ মিলিয়ন ডলারের একটি প্রজেক্টের ঘোষণা দিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। নতুন করে গত সেপ্টেম্বরে স্টিফেন হকিংস ও অন্যান্য গবেষকরা মহাজগতে এলিয়েন অনুসন্ধান বিষয়ে আরো তৎপর হয়েছেন। বিষয়টির প্রাসঙ্গিতা নিয়ে শ্রীল প্রভুপাদের শিষ্য বিজ্ঞানী রিচার্ড এল থম্পসন (দীক্ষিত নাম-সদাপুত দাস) এর বিখ্যাত একটি গ্রন্থ ‘Alien Identities’ অবলম্বনে রচিত দু’পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের প্রথম পর্ব।

ইউএফও সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণার পর এই তথ্য পাওয়া যায় যে, মানব জাতির সঙ্গে এমন সব উচ্চতর বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন জীবের সঙ্গে যোগাযোগ হয় যারা মানুষ না হলেও আশ্চর্যজনকভাবে তারা আমাদেরই মত বৈশিষ্টসম্পন্ন। বৈশিষ্ট্যগুলো এতটাই সাদৃশ্য পূর্ণ যে, এই সমস্ত জীবদের ‘এলিয়েন’ বলে সম্বোধন করাটাও অযথাযথ। তবুও ‘এলিয়েন’ সম্বোধনটা এই অর্থে যে, আমাদের সঙ্গে তাদের সম্বন্ধ বিচ্ছিন্ন। সারাবিশ্বে ইউএফও সংক্রান্ত সামগ্রিক বিষয়টিকে গোপন রাখা হয়েছে এবং এই জন্যে কোন সরকারকেও দায়ী করা যায় না। ইউএফও বিভ্রান্তিপূর্ণ আচরণ এবং করে ইউএফও – এর জীবদের সাথে যোগাযোগ করার ব্যাপারটিও সন্দেহপূর্ণ ও অসংগত। ভিন গ্রহের এই সমস্ত জীব মানব সমাজের সাথে কোন স্বচ্ছ সম্পর্ক না রেখেই দূর থেকে মানব সমাজের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। প্রাতিষ্ঠানিক ও সরকারিভাবে এখনও বিষয়টি স্বীকৃত নয় যে, এই ধরনের জীবদের অস্থিত্ব রয়েছে। তবে আশ্চর্য হলেও সত্য যে, প্রকৃতপক্ষে পৃথিবীর মানব সমাজের সঙ্গে উচ্চতর মাত্রার জীবদের সঙ্গে একটি সংযোগ রয়েছে। এই বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তৃত দৃষ্টান্ত রয়েছে ভারতের প্রাচীন বৈদিক সমাজে। সেখান থেকে আমরা জানতে পারি ভিন গ্রহের জীবেরা কিভাবে বাস করে এবং সে সাথে মনুষ্য সমাজের সাথে তাদের সম্পর্ক কেমন? নিম্নে সংক্ষেপে তার কিছু উল্লেখ করা হল।

বিমান

প্রাচীন বৈদিক শাস্ত্রে বিভিন্ন আকাশচারী অদ্ভুত বিমান সম্পর্কে উল্লেখ রয়েছে, যেগুলো সংস্কৃত ভাষায় ‘বিমান’ হিসেবে সুপরিচিত। এই সমস্ত বিমানগুলো হতে পারে জড় মেশিন বা সূক্ষ্মশক্তি বা অপ্রাকৃত শক্তি দিয়ে তৈরি। যদিও এই সমস্ত অদ্ভুত বিমানগুলোও কিছু উন্নত জীব দ্বারা পরিচালিত হয়।
শাস্ত্রে উল্লেখ রয়েছে, কাঠ দিয়ে তৈরি বিমানগুলো বর্তমান আধুনিক বিমানের মতো ডানার সাহায্যে উড়ত। যদিও ঐ সমস্ত যানকে বিমান বলা হতো কিন্তু অধিকাংশ বিমান প্রকৃতপক্ষে বিমানের মত দেখতে ছিল না ইউএফও সংক্রান্ত বিভিন্ন ঘটনায় যে সমস্ত বিমান ও অদ্ভুত জীবদের সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায় তার সঙ্গে ঐ সমস্ত প্রাচীন বিমান ও জীবের কিছু সাদৃশ্য পরিলক্ষণ করা যায়।
এর একটি অন্যতম দৃষ্টান্ত হল শাল্বের উড়ন্ত যন্ত্র । শাল্ব প্রাচীন এক রাজা ছিলেন এবং তলাতল গ্রহের ময়দানব থেকে এই অদ্ভুত যন্ত্রটি লাভ করেছিলেন।

অন্য জগৎ

বৈদিক শাস্ত্র মতে অন্য জগতে ভ্রমণ করা অসম্ভব নয়। অন্য জগৎ বলতে অন্য নক্ষত্র কিংবা উচ্চতর মাত্রায় অবস্থিত অঞ্চলগুলোকে বোঝানো হচ্ছে। এমনকি এ জড় জগৎ ছেড়ে অপ্রাকৃত জগতেও ভ্রমণ করা সম্ভব। এই পরিপ্রেক্ষিতে একটি প্রশ্ন উঠতে পারে তখন তো এত উন্নত প্রযুক্তি ছিল না এবং গ্রহ-নক্ষত্র নিয়ে সেরকম কোন ধারণাও ছিল না, তবে এটি কি করে সম্ভব? উত্তর হলো অনেকের কাছে তখনকার উন্নত জ্ঞান সম্পর্কে বিস্তৃত ধারণা নেই যদিও বর্তমান আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে এর কিছু সামঞ্জস্যতা পরিলক্ষিত হয়।
দৃষ্টান্তস্বরূপ, অর্জুন কর্তৃক বিভিন্ন নক্ষত্ররাজিতে ভ্রমণ কাহিনি। এই কাহিনিতে নক্ষত্ররাজি সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়েছে। শ্রীমদ্ভাগবতের ৮/৩/৫ নং শ্লোকে বর্ণনা রয়েছে। এখানে রয়েছে পরিচিত ও অপরিচিত অনেক উপাদান। আমরা মনে করি, যদি আমরা নক্ষত্রগুলো ভ্রমণ করি তবে আমরা কোন সূর্য ও চন্দ্রকে দেখতে পাব না। মনে হয় যেন নক্ষত্রগুলো অনেক বিশাল এবং স্ব-জ্যোতির্ময় এবং সেখানে কোন সাধুসুলভ মানুষের অস্থিত্ব নেই। বলা হয় যে, নক্ষত্রগুলি হলো একেকজন ব্যক্তি এবং নির্দিষ্ট ব্যক্তিই নির্দিষ্ট নক্ষত্রের শাসক। প্রকৃতপক্ষে সূর্য, চন্দ্রসহ অন্যান্য গ্রহে যেমন শুক্র, মঙ্গল, বুধ, বৃহস্পতি, শনি গ্রহেও জীবের অস্থিত্ব রয়েছে।

বিভিন্ন প্রকার জীব

পদ্ম পুরাণে ৪ লক্ষ প্রজাতির মানব সদৃশ জীবের কথা উল্লেখ রয়েছে যারা ভিন্ন ভিন্ন গ্রহে অবস্থান করছে এবং ৮০ লক্ষ প্রজাতির অন্যান্য জীব যেমন-উদ্ভিদসহ অন্যান্য নিম্ন শ্রেণির জীব জন্তুও রয়েছে। এই ৪ লক্ষ প্রজাতির মধ্যে মানব জাতি সবচেয়ে কম শক্তিশালী। বিষয়টি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় এ পর্যন্ত ইউএফও এর সঙ্গে বিভিন্ন যুদ্ধের ঘটনা থেকে। মানব জাতির মধ্যে কিছু মানব রয়েছে যাদের রয়েছে অতিন্দ্ৰীয় শক্তি বা সিদ্ধি। এই পৃথিবীর মানুষেরা এই সিদ্ধিগুলো অর্জন করতে পারে। এক্ষেত্রে কিছু মানুষের রয়েছে এর চেয়েও উন্নত শক্তি। এরকম কিছু সিদ্ধি হল:

১. অপরের সঙ্গে মানসিক যোগাযোগ ও অপরের চিন্তাভাবনা সম্পর্কে অবহিত হওয়ার অতিন্দ্রীয় শক্তি।
২. অনেক দূর থেকে কোন কিছু দর্শন বা শ্রবণ করার শক্তি।
৩. অণিমা ও মহিমা সিদ্ধি: কোন বস্তু বা শরীর পরিবর্তন করার শক্তি। এতে তার স্বাভাবিক গঠন পরিবর্তন হবে না।
৪. লঘিমা সিদ্ধি: মাধ্যাকর্ষণের বিরুদ্ধে গমনের শক্তি। এই সিদ্ধি অনুসারে কেউ তার ওজন বিশাল পরিমাপে বৃদ্ধি করতে পারে।
৫. প্রাপ্তি সিদ্ধি: এক স্থান থেকে অন্য স্থানে কোন কিছুকে প্রেরণের অদ্ভুত শক্তি। এই শক্তির মাধ্যমে সমান্তরাল, উচ্চ-মাত্রায় গ্রহ বা জগতে ভ্রমণ করা যায়।
৬. জড় কোন কিছুর প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই কোনকিছুকে সরাসরি ইথারের মধ্য দিয়ে স্থানান্তর করার সক্ষমতা। এই ধরনের ভ্রমণকে বলা হয় বিহাযশ। আরেক প্রকারের ভ্রমণ রয়েছে যাকে বলা হয় মনঃ যবঃ, যার মাধ্যমে কোন একটি শরীরকে মনের কার্যকলাপের মাধ্যমে নির্দিষ্ট কোন স্থানে স্থানান্তরিত করা যায়।
৭. বশিতা সিদ্ধি: বহু দূরে অবস্থিত কাউকে সম্মোহিত বা বশ করার শক্তি। বৈদিক শাস্ত্রানুসারে এই শক্তি কারও চিন্তা-ভাবনা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
৮. অন্তর্ধান বা অদৃশ্য হওয়ার শক্তি।
৯. বিভিন্ন রূপ পরিগ্রহ করা বা মোহনীয় শরীর সৃষ্টি করার শক্তি।
১০. অন্যের শরীরে প্রবেশ করে সেই শরীরটিকে নিয়ন্ত্রণ করার শক্তি। এটি করা হয় সূক্ষ্ম শরীর ব্যবহারের মাধ্যমে।

উপরে বর্ণিত শক্তিগুলোর ব্যবহার পরিলক্ষিত হয় ইউএফও জীবদের মধ্যে। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য সিদ্ধ, চারণ, উড়গ, গুহ্যক ও বিদ্যাধরদের মত মানব প্রজাতির মধ্যে প্রথাগত ও আবির্ভাবগত তারতম্য থাকলেও তারা পারস্পরিক সহযোগীতার মাধ্যমে বসবাস ও কার্য করে। তাদের মধ্যে উপরোক্ত সিদ্ধিগুলো রয়েছে। গন্ধর্ব ও সিদ্ধদের মত জীবরা খুব সুন্দর মানব রূপ পরিগ্রহ করতে পারে। আবার কিছু জীব খুব কুৎসিত, ভয়ানক বা বিকৃত দেখতে হয়। একটি শ্রেণি রয়েছে যাদেরকে বলা হয় কিমপুরুষ, ‘কিম’ অর্থ হল ‘এটি কি? এবং ‘পুরুষ’ অর্থ হল ‘মানব’।
অতীতে এই প্রকার অনেক মানব প্রজাতির সন্ধান এই পৃথিবীতে লাভ করা যেত। তাদের কেউ হয় অন্য গ্রহের ভ্রমণার্থী আবার কেউ কেউ এই গ্রহেরই বাসিন্দা। মাঝে মাঝে পৃথিবীর অধিকাংশ অঞ্চল তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। রামায়নে উল্লেখ রয়েছে, কিভাবে ভগবান শ্রীরামচন্দ্র লঙ্কা রাজ্য থেকে তাঁর পত্নী সীতাদেবীকে উদ্ধার করেছিলেন। সীতাদেবীকে রাক্ষস রাজ রাবন অপহরণ করেছিলেন রাক্ষসরাও ৪ লক্ষ প্রজাতির মানুষের মধ্যে শ্রেণিভুক্ত এবং তারা এক সময় লঙ্কা শাসন করত । কিছু কিছু মনুষ্য প্রজাতীর রয়েছে দীর্ঘায়ু। বৈদিক শাস্ত্র অনুসারে ৫ হাজার বছর পূর্বে মানব জীবনের আয়ুষ্কাল ছিল প্রায় ১ হাজার বছর। আবার পৃথিবীর বাইরে অনেক মানব সদৃশ জীবের আয়ুষ্কাল ছিল ১০ হাজার বছর, দেবতা নামেও এক প্রকার জীবন রয়েছে যারা এই বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ডের বিভিন্ন দায়িত্বে রয়েছেন এবং তাদের আয়ুষ্কাল লক্ষ লক্ষ বছর।
অতীত এই প্রকার অনেক মানব প্রজাতির সন্ধান এই পৃথিবীতে লাভ করা যেত। তাদের কেউ হয় অন্য গ্রহের ভ্রমণার্থী আবার কেউ কেউ এই গ্রহেরই বাসিন্দা।

স্ব ইচ্ছার উপাদান সমূহ

বিভিন্ন প্রকার মানব সদৃশ জীবের মধ্যে কিছু বিশেষ ধরনের জীব রয়েছে যারা নির্দিষ্ট গুণাবলীর কারণে প্রকাশিত হয়। কিছু কিছু উচ্চতর জীব রয়েছে যারা প্রবল ঐশ্বর্যশালী, কিছু কিছু জীব রয়েছে যাদের বাহ্যিক অবয়ব সম্পূর্ণ অদ্ভুত। তাদের রয়েছে অতিন্দ্রীয় শক্তি ও প্রযুক্তি। যেমন ময়দানব কর্তৃক শাল্বকে বিমান প্রদান। এসমস্ত বিভিন্ন প্রকৃতির জীবেরা উচ্চতর কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্র ণের অধীনে থাকে এবং তাই তারা নিজেদের ইচ্ছা মতো কাজ করতে পারে না। তাদের কেউ কেউ আবার মাঝে মাঝে পৃথিবীর বিভিন্ন বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে। এরকম জীবদের মধ্যে শক্তিশালী হলো অসুরগণ। পুরাণে বর্ণিত আছে, স্বর্গলোকে কিভাবে দেবতা এবং অসুরদের মধ্যে বিভিন্ন যুদ্ধ সংগঠিত হতো এবং মহাভারতেও দেখা যায় অসুরগণ পৃথিবীতে আক্রমণ করে।


শাল্বের বিমানটি এমন আশ্চর্যজনক ছিল যে মাঝে মাঝে একসাথে অনেক বিমানের আবির্ভাব হতো আবার অদৃশ্য হয়ে যেতো। ঐ একটি বিমান সময়ে সময়ে দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান হলে যদুবংশের যোদ্ধারা বিভ্রান্ত হয়ে যেতো।

এধরনের ক্ষতিকর কার্যকলাপগুলো ইউএফও এর কিছু ঘটনার সঙ্গে সাদৃশপূর্ণ। দেবতারা বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের বিভিন্ন দায়িত্বে নিয়োজিত। অপরদিকে অসুরগণ প্রকৃতির যে স্বাভাবিক নিয়মকানুন তার বিপরীতে অবস্থান করে এবং তারা নাস্তিক বলে প্রতিভাত হয়। এছাড়াও বৈদিক শাস্ত্রে এরকম অনেক প্রজাতির জীবদের কথা বর্ণিত আছে যারা দেবতা ও মানবজাতির মধ্যবর্তী স্তরে অবস্থান করে। তাদের মধ্যে রয়েছে বিদ্যাধর, উড়গ ও রাক্ষস। রাক্ষসগণ হলো অসুর প্রকৃতির এবং তাদের সঙ্গে মানব জাতির রয়েছে বৈরী ভাবাপন্ন সম্পর্ক। পক্ষান্তরে বিদ্যাধর ও উড়গরা হলো নিরপেক্ষ প্রকৃতির। তারা বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ডের শৃঙ্খলা রক্ষা করে এবং তারা মানব জাতির বিরুদ্ধে অবস্থান করে না। তারা উপ-দেবতা শ্রেণিভুক্ত ।

সংযোগ স্থাপন

বৈদিক সভ্যতার ইতিহাসে মানব নয় এরকম বিভিন্ন জীবের সাথে সংযোগ স্থাপনের বিভিন্ন নিদর্শন রয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন রাজাদের রাজ-দরবারে উচ্চতর গ্রহলোকের এরকম অনেক ঋষি ও দেবতা নিয়মিতভাবে পরিদর্শন করতেন। তাদের একে অপরের সঙ্গে ছিল সুসম্পর্ক। এরকম একটি দৃষ্টান্ত শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণে বর্ণিত রয়েছে যে, রাজা যুধিষ্ঠিরের আয়োজিত রাজসূয় যজ্ঞে অনেক উচ্চতর জীবের আগমন ঘটেছিল। এই যজ্ঞটি আয়োজিত হয়েছিল পাঁচ হাজার বছর পূর্বে ইন্দ্রপ্রস্থ শহরে যেটি বর্তমান নয়াদিল্লির নিকটে অবস্থিত। তদ্রুপ পিতৃলোক নামক গ্রহে বাস করে পিতৃগণ যারা একগ্রহ থেকে অন্যগ্রহে স্থানান্তরিত হয়। গন্ধর্বরা হলেন আরেক প্রকার সুন্দর জীব যারা উপদেবতা শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। যুধিষ্ঠির মহারাজের যজ্ঞ সম্পন্ন হলে উচ্চতর জীবেরা রাজা থেকে অনুমতি নিয়ে প্রস্থান করে। এর অর্থ এই নয় যে, তিনি তাদের শাসক ছিলেন। পক্ষান্তরে রাজার সাথে সুসম্পর্ক থাকায় তারা এরকম স্বাভাবিক সদাচার পালন করেছিল।
দ্বারকায় আকাশ যুদ্ধ ইউএফও সংক্রান্ত যে তথ্যগুলো প্রচলিত রয়েছে তার সঙ্গে অনেক সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায় শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণের ১০ম স্কন্ধের শাল্বের কাহিনি থেকে। শাল্ব ছিলেন এই পৃথিবীর রাজা এবং তিনি কৃষ্ণের প্রতি বিদ্বেষ পরায়ণ ছিলেন। তিনি কৃষ্ণের দ্বারকা নগরী বিনাশ করার প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করেছিলেন। এজন্যে তিনি শিবকে সন্তুষ্ট করে একটি অদ্ভুত বিমান লাভ করেন। শাল্বের বিমানটি এমন আশ্চর্যজনক ছিল যে মাঝে মাঝে একসাথে অনেক বিমানের আবির্ভাব হতো আবার অদৃশ্য হয়ে যেতো। ঐ একটি বিমান সময়ে সময়ে দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান হলে যদুবংশের যোদ্ধারা বিভ্রান্ত হয়ে যেতো। শ্রীল প্রভুপাদ এই কাহিনির তাৎপর্যে কখনো ইউএফও কিংবা ফ্লাইং সসারের কথা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেন নি। কিন্তু ইউএফও এর বৈশিষ্ট্যের সাথে এই বিমানের অনেক সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়। যেমন ১৭ জুলাই ১৯৫৭ সালে আমেরিকার সাউথ সেন্ট্রালে ইউএফও সংক্রান্ত একটি কেইস বিবেচনা করা যায়। যেটি অ্যাস্ট্রোনটিক্স ও অ্যারোনটিক্স জার্নালে প্রকাশিত হয়। “ছয় অফিসার নিয়ে একটি আরবি-৪৭ বিমান যখন আকাশে উড়ছিল তখন সাতশ মাইল দূরে অবস্থিত একটি অদ্ভুত বস্তু তাদেরকে অনুসরণ। প্রতি দেড় ঘণ্টা পর পর এটি দৃশ্যমান হচ্ছিল এবং মিসিসিপ্পি থেকে লুসিয়ানা, টেক্সাস এবং উকলাহোমা মধ্য দিয়ে উড়ে যাচ্ছিল। এটি ছিল অদ্ভূত আলোক সদৃশ…।” এর পাইলট বলছিল, “ইসিএম মনিটরে সেই অদ্ভূত বস্তুটি দৃশ্যমান হয় আবার কিছুক্ষণ পর আবার অদৃশ্য হয়ে যায়। এটি এমনকি ইউথার এডিসি সাইটে অবস্থিত রাডার পরিদর্শন থেকেও অদৃশ্য হয়ে যায়। আবার কিছুক্ষণ পরেই ইসিএম মনিটর ও গ্রাউন্ড রাডারে যুগপৎভাবে দেখতে পাওয়া যায়।” শ্রীমদ্ভাগবতের ১০ স্কন্ধের ৭৬ অধ্যায়ের ৪-১২ শ্লোকে নিন্মোক্ত বর্ণনা রয়েছে—
“এইভাবে তার প্রতিজ্ঞা করে সেই মূর্খ রাজা প্রতিদিন একমুষ্টি ধূলি ছাড়া অন্য কিছু না ভক্ষণ করে দেবাদিদেব পশুপতিকে (শিব) তার ঈশ্বররূপে পূজা করতে শুরু করল।”
মহাদেব উমাপতি ‘আশুতোষ’ রূপে পরিচিত, তবুও এক বৎসরের শেষে তাঁর শরণাগত শাল্বকে একটি বর প্রার্থনা করতে বলে তিনি তাকে সন্তুষ্ট করেছিলেন। শাল্ব একটি যান প্রার্থণা করল যা দেবতা, দানব, মানব, গন্ধর্ব, নাগ ও রাক্ষসদের দ্বারাও অবিনাশী, সে যেখানে যেতে ইচ্ছা করবে সেখানেই তা ভ্রমণ করতে পারবে এবং যা বৃষ্ণিদের আতঙ্কিত করবে। এই দুর্ধর্ষ যানটি অন্ধকারেও যেকোন স্থানে যেতে পারত। সেটি পেয়ে তার প্রতি বৃষ্ণিদের শত্রুতা স্মরণ করতে করতে শাল্ব দ্বারকায় গিয়েছিলেন। হে ভরতশ্রেষ্ঠ, প্রান্তিক উপবন ও উদ্যান, নিরীক্ষণ কেন্দ্রসহ প্ৰসাদ, অট্টালিকা, পুরদ্বার এবং চতুর্দিকের প্রাচীর ও জনগণের ক্রীড়াক্ষেত্রও বিনষ্ট করে শাল্ব এক বিশাল সৈন্যবাহিনী নিয়ে নগরী অবরোধ করেছিল । তার অনবদ্য আকাশযান থেকে সে নীচে প্রস্তর, বৃক্ষগুঁড়ি, সর্প ও শিলাবৃষ্টি সহ অস্ত্র বর্ষণ করেছিল। একটি প্রচণ্ড ঘূর্ণিবার্তা উঠে সমস্ত দিক ধূলিতে আচ্ছন্ন করেছিল। এইভাবে সৌর বিমান দ্বারা ভয়ঙ্কররূপে বিপর্যস্ত হওয়ার ফলে হে রাজন, ঠিক যেমন পৃথিবীতে যখন পিত্রপুরাসুর দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিল সেইভাবে শ্রীকৃষ্ণের নগরীতে কোন শান্তি থাকল না।”
শাল্বের বিমানটি কোন সাধারণ মানব কর্তৃক তৈরি নয়। এরকম অনেক অদ্ভুত বিমানের কথা বৈদিক শাস্ত্রে বর্ণনা রয়েছে। শাল্ব সেই বিমান থেকে পাথর, গাছের গুড়ি ও সাপ নিক্ষেপ করতো। তখন কোনো বোমা ব্যবহারের কথা উল্লেখ নেই। তার ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি প্রযুক্তি যার মাধ্যমে আবহাওয়া পরিবর্তন হতে পারে যেমন বজ্রপাত, ঘুর্ণিঝড় ও শিলাবৃষ্টি ইত্যাদি। বিমানটি প্রদান করেছিলেন ময়দানব। যিনি তলাতল গ্রহের দানবদের শাসক ছিলেন। এই দানবগণ মানুষ সদৃশ দেখতে শক্তিশালী জীব। তারা খুব দক্ষ প্রযুক্তি সৃষ্টির জন্য সুপরিচিত। ‘ময়’ শব্দের অর্থ হলো ‘এমন একটি শক্তি যা জড় বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডকে তৈরি করে’, আবার এর আরেকটি অর্থ রয়েছে যা হলো ‘মায়া শক্তি বা যাদু’ ময়দানব নামটি দেওয়া হয়েছে এজন্যেই যে, তিনি অত্যন্ত দক্ষ একজন মায়াবি ছিলেন। শাল্ব তার কাছে এমন একটি বিমান চেয়েছিল যা পৃথিবীতে দেবতা, অসুর, গন্ধর্ব ও রাক্ষসদের ধ্বংস করতে পারে। তার বিমানটিকে বর্ণনা করা হয় লৌহ নগরী হিসেবে অর্থাৎ, এটি অবশ্যই ধাতু দিয়ে তৈরি এবং অত্যন্ত সুবিশাল দেখতে।

অদৃশ্য এবং শব্দ অনুসন্ধানকারী তীর

ইউএফও সংক্রান্ত তথ্যের সঙ্গে শাল্বের বিমানের সাদৃশ্যপূর্ণ বৈশিষ্টের আরো কিছু নিদর্শন তুলে ধরা হল। কৃষ্ণ যুধিষ্ঠির মহারাজকে শাল্বের সঙ্গে তার যুদ্ধের বিবরণী প্রদান করেছিলেন, তিনি বলেছিলেন যে, মানব রাজা শাল্ব তার বিমানে অনেক দানব সৈন্যদের নিয়ে এসেছিলেন। কেননা তিনি এটি দানবদের শাসকের কাছ থেকে পেয়েছিলেন। বৈদিক শাস্ত্রের এরকম অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে যে, মানব জাতি ও অন্যান্য মানব সদৃশ জীবের মধ্যে সংযোগ স্থাপিত হতো। যদিও আধুনিক ইতিহাসবিদগণ এলিয়েন বা ভিন গ্রহের জীবদের অস্থিত্ব বিষয়ে সন্ধিহান। তবে এ দৃষ্টান্তগুলো থেকে এটি সুস্পষ্ট যে প্রাচীন ভারতে এলিয়েন সম্পর্কিত ধারণাগুলি প্রচলিত ছিল এবং যদি তখন তাদের অস্থিত্ব থাকে তবে বলা বাহুল্য এই যে, তাদের অস্থিত্ব এখনো রয়েছে। কৃষ্ণের বর্ণনায় উঠে এসেছে যে, দ্বারকা প্রতিরক্ষার জন্য ব্যবহৃত ধনুক ও তীরগুলো কোনো সাধারণ প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি ছিল না। এ সমস্ত তীরগুলো সূর্য সদৃশ আলোকিত এবং এগুলো শব্দের মাধ্যমে লক্ষ্যের দিকে অগ্রসর হতে পারতো। এক্ষেত্রে এটি স্পষ্ট যে, বর্তমান ব্যবহৃত তথাকথিত উন্নত প্রযুক্তির চেয়েও ঐসমস্ত প্রযুক্তিগুলি আরো অধিক উন্নত ছিল। শাল্বের বিমান যদিও অদৃশ্য ছিল কিন্তু ভগবান কর্তৃক নিক্ষেপিত শব্দ অনুসন্ধানকারী তীরগুলো বিমানের শব্দ অনুসরণ করে সেটিকে আঘাত করেছিল। অর্থাৎ, তার বিমানটি অদৃশ্য হলেও সেটি শারীরিকভাবে সেস্থানে বর্তমান ছিল। ইউএফও এর অনেক ঘটনা এই ঘটনার সাথে মিলে যায়। শাল্ব মায়াবী রূপ সৃষ্টি করতে পারত। তিনি ভগবানের সম্মুখে তাঁর পিতা বাসুদেবের একটি মায়াবি রূপ নিয়ে এসে মস্তক ছিন্ন করে হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে চেয়েছিল। কিন্তু ভগবান শ্রীকৃষ্ণ শীঘ্রই স্মরণ করলেন যে, এইসব ময়দানব দ্বারা নির্মিত ও শাল্ব দ্বারা প্ররোচিত এক আসুরিক মায়া ।

অদৃশ্য ও পুন প্রকাশিত হওয়া

কৃষ্ণ যখন শাল্বকে সে অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল । বৈদিক শাস্ত্রে উল্লেখ রয়েছে, একজন ব্যক্তি শারীরিকভাবে এক স্থান থেকে অদৃশ্য হয়ে অন্য স্থানে দৃশ্যমান হতে পারে। এটি এক প্রকার সিদ্ধি। কিছু জীব যেমন, চারণ ও সিদ্ধগণ যারা জন্মগতভাবে এ সিদ্ধি লাভ করে এবং অনেকে আবার নির্দিষ্ট পন্থায় এ সিদ্ধি অর্জন করে থাকে। এর একটি দৃষ্টান্ত ব্যাসদেব। তিনি বাল্যকালে মাতা সত্যবতীর কাছে এক প্রতিজ্ঞা করেন— “কখনো আমার প্রয়োজন হলে আমাকে স্মরণ করার সাথে সাথে আমি উপস্থিত হয়ে আপনার আজ্ঞা পালন করব।” অনেক বছর পর সত্যবতীর কনিষ্ঠ পুত্র বিচিত্র বীর্য কোনো কারণে দেহত্যাগ করলে রাজ বংশের উত্তরাধিকার শূণ্য হয়ে পড়ে। তখন তিনি ব্যাসদেবের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করতে চেয়েছিলেন এবং বৈদিক মন্ত্র উচ্চারণ করার মাধ্যমে তাকে স্মরণ করা মাত্রই ব্যাসদেব তার সম্মুখে আবির্ভূত হন। ব্যাসদেব ছিলেন ভগবানের শক্ত্যাবেশ অবতার এবং বলা হয় যে এখনো তিনি হিমালয়ে অবস্থান করছেন। প্রাচীন বৈদিক সভ্যতায় এ ধরনের সাধুগণ পৃথিবীর মানব সমাজের সাথে উচ্চতর লোকের জীবদের সাথে একটি সম্পর্ক স্থাপনে ভূমিকা রাখতে পারতেন। ইউএফও নিয়ে যত সাহিত্য প্রকাশিত হয়েছে সেখানে এলিয়েনদের এরকম অদৃশ্য হওয়ার বা পুনপ্রকাশিত হওয়ার ঘটনা বর্ণিত রয়েছে।

পদার্থ ও শূণ্যের মধ্যে দিয়ে ভ্রমণ

ইউএফও এর বিভিন্ন ঘটনা থেকে উঠে আসে যে, ভিন গ্রহের জীবগণ বিভিন্ন কঠিন পদার্থ যেমন দরজা, জানালা, দেয়াল এবং শূণ্যের মধ্যে দিয়ে বিচরণ করতে পারে। ১৯৭৬ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে রেগ নামে এক অ্যাম্বুলেন্স চালক তার শয়ন কক্ষে কিছু অদ্ভুত জীবের সংস্পর্শে আসে। এই ঘটনাটি তদন্ত করেন যুক্তরাজ্যের একজন গবেষক ট্রেভর হুইটেকার। তদন্তে প্রমাণিত হয় ঐ অদ্ভুত জীবরা অনেক লম্বা এবং তাদের চোখ বিড়ালের মতো। তাকে বিছানায় শুয়ে পড়তে বলা হল এবং পরক্ষণে তিনি পক্ষাঘাত গ্রস্থ হলেন। এক সময় তিনি দেখলেন, সিলিংয়ের মধ্য দিয়ে তিনি আকাশে উঠে যাচ্ছেন এবং ইউএফও-এর একটি টিউব আকৃতির বস্তুর মধ্য দিয়ে তারা ভ্রমণ করছিলেন। পরবর্তীতে জ্ঞান ফিরে আসলে তখন তার স্মৃতি শক্তিতে একটি শূণ্যতা অনুভব হলো। (Randles 1988 pp. 84-85)।
এই প্রকার ভ্রমণকে বৈদিক শাস্ত্রে বলা হয় ‘বিহাযশ’। এই প্রক্রিয়ায় একটি বস্তু ইথার বা শূণ্যের মধ্য দিয়ে অন্য একটি স্থানে বিচরণ করতে পারে। যেখানে এর জন্য কোনো স্থুল পদার্থ প্রতিবন্ধক হয় না। ভাগবত পুরাণে এরকম ভ্রমণ কাহিনির একটি উজ্জল দৃষ্টান্ত হলো শ্রীকৃষ্ণের পৌত্র অনিরুদ্ধের অপহরণ। ঊষা নামে বাণাসুরের এক পরমা সুন্দরী কন্যা ছিল। একদিন স্বপ্নে সে অনিরুদ্ধকে তার পাশে দেখল এবং স্বপ্নে সে অনিরুদ্ধকে তার সাথে রমণ করতে দেখল। তার এক বান্ধবী চিত্রলেখা তাকে তখনি বলল, “আমি তোমাকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, যে রাজকুমার তোমার মন হরণ করেছে, ত্রিজগতের মধ্যে উচ্চ, মধ্য বা নিম্নলোকের যেখানে সে থাকুক না কেন, তোমার সন্তুষ্টির জন্য আমি তাকে খুঁজে বের করবই। তোমার স্বপ্ন থেকে তুমি তার সঠিক বর্ণনা দাও, আমি তোমার মনে শান্তি এনে দেব। এখন আমি কিছু ছবি এঁকে তোমাকে দেখাব। আর তুমি অভীষ্ট কান্তকে দেখা মাত্রই চি€িত করবে। তোমার স্বপ্নের কান্তকে দেখিয়ে দেওয়া মাত্র আমি তাকে তোমার কাছে নিয়ে আসবই।”
এই সব কথা বলতেই চিত্রলেখা ঊর্ধ্বলোকবাসী বহু দেবতা, গন্ধর্ব, সিদ্ধ, চারণ, দৈত্য, বিদ্যাধর, যক্ষ এবং বহু মানুষের প্রতিকৃতি এঁকে ফেলল (শ্রীমদ্ভাগবত ও অন্যান্য বৈদিক শাস্ত্রের বর্ণনা থেকে নিশ্চিতভাবে প্রতিপন্ন হয় যে, প্রতি গ্রহে বৈচিত্রময় বহু জীব রয়েছে। তাই এই পৃথিবী ছাড়া অন্যত্র কোথাও জীব নেই বলে যে দাবি করা হয়, তা মূঢ়তা মাত্র)। চিত্রলেখা বহু ছবি আঁকল। বিভিন্ন মানুষের ছবির মধ্যে শ্রীকৃষ্ণের পিতা বসুদেবসহ পিতামহ সূরসেন, বলরাম, শ্রীকৃষ্ণ ও অন্যান্য বহু লোকের প্রতিকৃতি সে অঙ্কন করল। প্রদ্যুম্নের চিত্র দেখে ঊষা একটু লজ্জিত হল; কিন্তু অনিরুদ্ধের চিত্র দেখে এতই লজ্জিত হল যে, তার বাঞ্ছিত কান্তকে দর্শন করে, সে মাথা নিচু করে মৃদু মৃদু হাসতে লাগল । ঊষা তার মন হরণকারী রাজকুমারকে অঙ্কিত চিত্রে সনাক্ত করল ।
চিত্রলেখা ছিল এক বিশেষ অতীন্দ্রিয় শক্তিময়ী যোগিনী। সে এবং ঊষা উভয়েই কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিকে কখনো না দেখলেও, চিত্রের মাধ্যমে ঊষার কাছ থেকে তাঁর পরিচয় লাভ করে। যোগিনী চিত্রলেখা অচিরেই উপলব্ধি করল যে, চিত্রটি হচ্ছে শ্রীকৃষ্ণের পৌত্র অনিরুদ্ধের। সেই রাত্রেই যোগিনী চিত্রলেখা আকাশপথে অতি দ্রুত দ্বারকাপুরীতে পৌঁছল । প্রাসাদের শয়ন-কক্ষে প্রবেশ করে সে ঘুমন্ত অনিরু দ্ধকে যোগবলে শোনিতপুরে নিয়ে এল। তখন আনন্দে উৎফুল্ল ঊষা পরম সুখে অনিরুদ্ধের সান্নিধ্য উপভোগ করতে লাগল।” [লীলাপুরুষোত্তম শ্রীকৃষ্ণ-সপ্তবিংশতি অধ্যায়]

ইন্দ্র, শিব ও পক্ষাঘাতগ্রস্থ হওয়ার ঘটনা

অনেক ইউএফও অপহরণের ঘটনায় একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয় যে, যারা ব্যক্তিটিকে অপহরণ করছে তারা প্রথমে তাকে পক্ষঘাতগ্রস্থ করে ফেলে। মহাভারতে শুধুমাত্র দৃষ্টিশক্তির মাধ্যমে কিভাবে কাউকে পক্ষাঘাতগ্রস্থ করে ফেলা যায় সে বিষয়ে একটি কাহিনি রয়েছে ।


ইউএফও এর বিভিন্ন ঘটনা থেকে উঠে আসে যে, ভীন গ্রহের জীবগণ বিভিন্ন কঠিন পদার্থ যেমন দরজা, জানালা, দেয়াল এবং শূণ্যের মধ্যে দিয়ে বিচরণ করতে পারে ১৯৭৬ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে রেগ নামে এক অ্যাম্বুলেন্স চালক তার শয়ন কক্ষে কিছু অদ্ভুত জীবের সংস্পর্শে আসে।

একসময় গঙ্গাদেবী দেবরাজ ইন্দ্রকে হিমালয় পর্বতের চূড়ায় নিয়ে গিয়েছিল: “ইন্দ্র তাকে অনুসরণ করতে করতে দেখলেন পর্বতের চূড়ায় একটি সিংহাসনে বসে আছে এক সুন্দর কোমলমতি বালক। বালকটি অনেক যুবতীর দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিল এবং পাশা খেলায় মগ্ন ছিলেন। তা দেখে দেবরাজ ইন্দ্র তাকে বলল, “জেনে রাখ এটি হল আমার ব্রহ্মাণ্ড কেননা এই জগৎ আমার নিয়ন্ত্রণাধীন।” ইন্দ্ৰ যখন দেখল বালকটি পাশা খেলায় মগ্ন তখন তার প্রতি ক্রোধবশত এই কথাগুলি বললেন।
“বালকটি যিনিও একজন ভগবান তিনি তখন মৃদু হাসলেন এবং ধীরে ধীরে তাঁর চোখ ঊর্ধ্বমূখী করে ইন্দ্রের দিকে দৃষ্টিপাত করা মাত্রই তিনি পক্ষাঘাতগ্রস্থ হয়ে বৃক্ষের মতো দাঁড়িয়ে রইলেন।” বালকটি তখন শিবের রূপ পরিগ্রহ করলে তিনি ইন্দ্রকে তার মিথ্যা অহঙ্কার দূরীভূত করার জন্য দণ্ড প্রদান করলেন। এই ঘটনায় যে সমস্ত ব্যক্তিরা জড়িত ছিলেন তারা সকলেই দেবতা। কিন্তু এই প্রকার নির্দিষ্ট দূরত্বে থেকে অতীন্দ্রিয় শক্তির মাধ্যমে কারো মনকে নিয়ন্ত্রণের এই ক্ষমতা বা বশিতা সিদ্ধি অনেক মানব সদৃশ জীব লাভ করতে পারে।

মায়াবীরূপ পরিগ্রহ করা

ইউএফও এর ঘটনাগুলো থেকে আরেকটি বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয় যে, অনেক ক্ষেত্রে ইউএফও এর জীবেরা সাধারণ কোনো কিছুর রূপ ধারণ করতে পারে। তারা কিছু অবাস্তব রূপ পরিগ্রহ করতে পারে। ১৭ নভেম্বর ১৯৭১; রাত ৯:৩০ এর দিকে এক ব্রাজিলিয়ান ব্যক্তি এই ধরনের একটি অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনেক ব্যক্তি এই ধরনের অভিজ্ঞতা লাভ করেন। এ সম্পর্কিত রামায়ণে একটি কাহিনি রয়েছে।
ভগবান শ্রীরামচন্দ্র যখন সীতাদেবী ও লক্ষ্মণকে নিয়ে বনবাসে গিয়েছিলেন তখন রাবন কর্তৃক প্রেরিত মারিচ নামে এক অসুর সুন্দর মায়াবী হরিণের ছদ্মবেশ ধারণ করে সীতাদেবীর কুড়েঘরের আশেপাশে ঘোরাঘুরি করছিল। হরিণটি খেলার ছলে সীতাদেবীর নিকট এসে আবার দৌড়ে চলে যায়। সীতাদেবী সেই হরিণকে দর্শন করে মোহিত হয়ে রাম ও লক্ষ্মণকে হরিণটি দর্শন করার জন্য ডাকে। লক্ষ্মণ হরিণটিকে দেখে সন্দেহ করেন এবং সতর্ক করেন যে, এই প্রাণীটি হরিণ নয় বরং একটি অসুর। রামচন্দ্র তাকে পরবর্তীতে বধ করেন।
রাক্ষসগণ অন্যগ্রহের একজন ঋষি পুলস্ত্য ঋষির কাছ থেকে অবতরণ করেন। সে সময় তারা লঙ্কা নামে পৃথিবীর একটি রাজ্য দখল করে নিয়েছিল। সেটি বর্তমানে শ্রীলঙ্কা কিনা তা হয়তো সন্দেহ রয়েছে কিন্তু তারা এমন একটি রাজ্য দখল করেছিল। তাদের ছিল অপরিমেয় শক্তি, ভয়ঙ্কর চেহারা ও দাঁত ও অদ্ভুত কান। ইউএফও জীবদের ক্ষেত্রে এরকম কয়েকটি বৈশিষ্ট পরিলক্ষিত হয়। মহাভারতে এরকম আরেকটি কাহিনি রয়েছে। যেখানে হিরিম্বা নামে এক রাক্ষসী সুন্দর রমণী রূপ পরিগ্রহ করে ভীমকে আকর্ষিত করেছিল। অবশেষে তাদের মিলনের ফলে ঘটোৎকচ নামে এক বিশাল আকৃতির সন্তানের জন্ম হয়। এই ঘটনার মাধ্যমে প্রদর্শিত হয় যে পুরাকালে মানব জাতি মানব নয় এমন অনেক ভিন্ন প্রকৃতির জীবের সাথে মিলনের মাধ্যমে সন্তান জন্মদান করতে পারতো।
বিশিষ্ট বিজ্ঞানি রিচার্ড লেসলি থম্পসনের দীক্ষিত নাম সদাপুত দাস একজন আমেরিকান গণিতবিদ, লেখক এবং প্রভুপাদের অন্যতম প্রিয় শিষ্য। বৈদিক সৃষ্টিতত্ত্বের ওপর গবেষণায় সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রাখেন। এ বিষয়ে তাঁর অনেক বিখ্যাত গ্রন্থ রয়েছে, যা সারা বিশ্বে খ্যাতি লাভ করে। তিনি ভক্তিবেদান্ত ইনস্টিটিউটের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও সদস্য। ২০০৮ সালে ১৮ সেপ্টেম্বর তিনি অপ্রকট হন।


 

এপ্রিল-জুন ২০১৭ ব্যাক টু গডহেড
সম্পর্কিত পোস্ট

About csbtg