এক মহান দূতের আগমনের ভবিষ্যদ্বাণী

প্রকাশ: ১১ এপ্রিল ২০২১ | ৫:১৩ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০২১ | ৫:২৯ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 471 বার দেখা হয়েছে

এক মহান দূতের আগমনের ভবিষ্যদ্বাণী

শ্রীল প্রভুপাদ যে প্রকৃতপক্ষে কে এই বিষয়টি অনেকেরই অজানা। কিন্তু বৈদিক শাস্ত্রের উদ্ধৃতি ও মহান ভগবদভক্তদের সাক্ষ্য অনুসারে শ্রীল প্রভুপাদের প্রকৃত পরিচয় উদঘাটন করা যায়। শ্রীল প্রভুপাদকে সাম্প্রতিক গবেষণামূলক উক্ত প্রতিবেদনটি তুলে ধরেছেন শ্রীমৎ

ভক্তিচারু স্বামী

 
 
উদুপির শ্রীকৃষ্ণ মঠের পিঠাধিপতি শ্রীল বিশ্ববেশ তীর্থ শ্রীল প্রভুপাদ অনন্য অবস্থান সম্পর্কে চিহ্নিত করে নিন্মােক্ত প্রশংসাসূচক উদ্ধৃতি প্রদান করেছেন।
“সমস্ত ব্যক্তিদের মধ্যে, পরমেশ্বর ভগবানের ভক্তই হল সবচেয়ে মহান এবং ভক্ত হওয়ার জন্য কাউকে কোনাে নির্দিষ্ট শ্রেণি কিংবা জাত বা জাতিতে জন্ম নেওয়ার প্রয়ােজন হয় না। কৃষ্ণভক্তি শুধুমাত্র এ ভারতবর্ষেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু স্বামী প্রভুপাদ এই কৃষ্ণভক্তি ভারতবর্ষের বাইরে নিয়ে গেলেন এবং সারাবিশ্বের প্রত্যেককে বাছবিছারহীনভাবে বিতরণ করলেন। এই কারণে আজ আমরা দেখতে পাই যে, সারা বিশ্বের মানুষ ভক্তিমূলক সেবা গ্রহণ করছে এবং কৃষ্ণভক্তে পরিণত হচ্ছে। এভাবে তারা সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ হিসেবে পরিণত হচ্ছে।”
“গঙ্গা নদী তার পরিশুদ্ধতার জন্য বিখ্যাত। এক সময়, গঙ্গা এ পৃথিবীতে প্রবাহিত হতাে না। ভগীরথীই গঙ্গাকে উর্ধ্ব গ্রহ থেকে এই পৃথিবীতে নিয়ে এসেছিলেন। এই কারণে ভগীরথী পূজ্য হন। স্বামী প্রভুপাদ হলেন ঠিক ভগীরথীর মতাে ভক্তি গঙ্গাকে ওপর থেকে নিয়ে এসেছেন এবং সমগ্র বিশ্বকে প্লাবিত করেছেন। এভাবে স্বামী প্রভুপাদ যা করেছেন তা ভগীরথীর চেয়েও অনেক বেশি উত্তম কিছু করেছেন।’’
১৯৭৬ সালে, শ্রীল প্রভুপাদের গ্রন্থাবলি দর্শন করে এবং তাঁর কিছু যুবক শিষ্যের কৃষ্ণভাবনামৃতের প্রচার পর্যবেক্ষণ করে, দক্ষিণ ভারতের রামানুজ সম্প্রদায়ের একজন গুরু মন্তব্য করেছেন : “এই ব্যক্তি সমস্ত আচার্যের মধ্যে পরম মঙ্গলময়।”
এভাবে শ্রীল প্রভুপাদের যেকোনাে একনিষ্ঠ শিষ্য এবং অনুসারীর জন্য শ্রীল প্রভুপাদের অদ্বিতীয়, স্বতন্ত্র অবস্থান ও অর্জনসমূহের মাধ্যমে তাঁকে (accomplishments) বিশ্ব আচার্য, জগৎগুরু হিসেবে অবলােকন হওয়াটি সর্বপ্রথম কর্তব্য। তার এ অবস্থান তাঁর অর্জনসমূহের জন্য, কোনােটি তাঁর নিজ প্রদত্ত পদবি নয় । তিনি হলেন প্রকৃত সম্প্রদায় আচার্য ভবিষ্যতে সমস্ত বৈষ্ণববৃন্দ, প্রচারক ও গুরু, পারমার্থিক শিক্ষকগণ তাঁর শরণাগত হবেন এবং পূর্ণরূপে তার সেবা করবেন।

শ্রীল প্রভুপাদের অদ্বিতীয় অবস্থান শাস্ত্রের ভবিষ্যতবাণীসমূহ

ভবিষ্য পুরাণের প্রতিস্বর্গ নামে বিংশতি অধ্যায়ের ৭১-৭৩ নং শ্লোকে উল্লেখ করা হয়েছে ; “ভগবান জগন্নাথ, পরমেশ্বর ভগবান শ্রীহরি স্বয়ং সমগ্র জীবের কল্যাণের জন্য এই আকর্ষণীয় বাক্য উদ্ধৃত করেছেন : “কশ্যপের অসুর বংশদরগণ কর্তৃক শাসিত মিশ্র দেশগুলােতে যে সমস্ত স্লেচ্ছ ও শূদ্র জন্মগ্রহণ করেছেন তারা দীক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে ব্রাহ্মণে পরিণত হবে। তারা শিখা পরিহিত হবেন ও ব্রাহ্মণ পৈতা ধারণ করবে এবং বেদসমূহের বিশুদ্ধ ফলরুপ শ্রীমদ্ভাগবতে সুন্দরভাবে শ্লোকায়িত হবে। সমস্ত প্রভুদের প্রভু, শচীদেবীর সুরক্ষাকারী, শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু কর্তৃক প্রদত্ত যজ্ঞ দ্বারা তারা আমার আরাধনা করবে।
 
৪৬ বছর পূর্বে কলিযুগের প্রারম্ভে, শ্রী রামানুজ সম্প্রদায়ের অন্যতম দ্বাদশ মহান বৈষ্ণব বিষ্ণুচিত্ত ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন : “এমন একটি জাতি আসবে যারা হাত তুলে ও কপালে তিলক পরিহিত হয়ে হরিনাম কীর্তন করবে, যার। মাধ্যমে সমগ্র পৃথিবী এক সূত্রে গাঁথা হবে; এটিই কলিযুগের প্রভাবকে বিনষ্ট করবে।”
(দিব্য-প্রভানন্দ ১/১০)
এই ভবিষ্যদ্বাণীর স্বার্থক রূপায়ক আর কেউ নন, তিনি হলেন শ্রীল প্রভুপাদ।
শ্রী রামানুজ সম্প্রদায়ের আরেকজন অন্যতম দ্বাদশ মহান বৈষ্ণব নান্মলবর (৩১০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) ঘােষণা করেছিলেন :
“বিজয়! বিজয়! বিজয়! আমি আশ্চর্য কিছু পেয়েছি : জীবের সমস্ত অশুভ প্রভাব বিনষ্ট হয়েছে, কেউই আর নরকে যাবে না, যমরাজের আর করার কিছুই নেই এবং কলিযুগের প্রভার আর বর্তমান নেই। এর কারণ সমগ্র বিশ্বে বিশাল সংখ্যক ভগবান বিষ্ণুর ভক্তগণ দিব্য বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে তাঁর পবিত্র নাম নৃত্য-কীর্তন করছে।
(দিব্য-প্রভানন্দ, তিরুভ্যমলি ৫/২/১)
শ্রীল প্রভুপাদের কৃপায় আজ ভগবানের পবিত্র নাম সারা বিশ্বের প্রতিটি স্থানে কীর্তিত হচ্ছে।
শ্রীপাদ মাধবাচার্য ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন : “জীব ও শ্রীহরির মধ্যকার পার্থক্যসূচক প্রকৃত জ্ঞান এবং শ্রীহরির প্রতি সেবা নিবেদন বিশ্বজুড়ে খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে।” (অনু মাধব বিজয়-শেষ অধ্যায়)।
প্রকৃতপক্ষে এই অপ্রাকৃত জ্ঞান সারা বিশ্বে যিনি ছড়িয়ে দিয়েছেন তিনি আর কেউ নন শ্রীল মাধবাচার্য ধারা অন্তর্গত শ্রীল প্রভুপাদ। শ্রীপাদ রামানুজাচার্য ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন : “কর্ম ও জ্ঞান পরিত্যাগপূর্বক শ্রীহরির প্রতি শুদ্ধ ভক্তি একটি বটবৃক্ষের ন্যায় বর্ধিত থেকে বর্ধিত হয়ে সমগ্র বিশ্বকে আবৃত করবে, যারা এর আশ্রয় গ্রহণ করবে তারা এ বিষয়ে শিক্ষা লাভ করবে।
(প্রপন্নামৃত তর্পণ, শেষ অধ্যায়)
এটি আশ্চর্য যে, এই বিষয়টি শ্রীল প্রভুপাদের ইস্কন প্রচার করছে ‘জ্ঞান কর্মাদি অনাবৃতম’ থেকে প্রতিটি নগর ও গ্রামে, “যারে দেখ তারে”।
ভাগবত মাহাত্ম্যে (পদ্মপুরাণের উত্তর কাণ্ড) স্বয়ং ভক্তিদেবী নারদ মুনিকে বলেন : ‘’ইদং স্থানং পরিত্যজ্য বিদেশাম জ্ঞান্যতে ময়া”-আমি এই দেশ ভারতবর্ষ ছেড়ে দূর দেশে গমন করব।” শ্রীল প্রভুপাদের কৃপায় সারাবিশ্বে এখন ভক্তিমূলক সেবা সম্পাদিত হচ্ছে।
বেদের শিক্ষাকে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে শাস্ত্র ও আচার্যগণ কর্তৃক প্রদত্ত এইসব ভবিষ্যদ্বাণী স্বার্থক করেছেন নিশ্চিতভাবে অন্য কেউ নন, তিনি হলেন শ্রীল প্রভুপাদ।
শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর উদ্ধৃতি :
শ্রীচৈতন্য মঙ্গল, শ্রী লােচন দাস ঠাকুর; ভবিষ্যতে এক মহান সেনাপতি ভক্তের আবির্ভাব ঘটবে যিনি সারাবিশ্বে কৃষ্ণভাবনা প্রচার করে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর স্বয়ং প্রদত্ত ভবিষ্যদ্বাণী; যারি পাপী চারি ধর্ম দূর দেশে যারা মাের সেনাপতি- ভক্ত যাইবে তথায়-“হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র সঙ্কীর্তনের সুতীক্ষ্ম তলােয়ারের সাহায্যে আমি বদ্ধ জীবাত্মাদের হৃদয়ের সমস্ত আসুরিক মানসিকতার শিকড় উৎপাঠন ও ধ্বংস করব। যদি কিছু পাপী ব্যক্তি ধর্মীয় আদর্শ পরিত্যাগ করে দূরদেশে চলে যায়, তখন সেসময় তাদেরকে কৃষ্ণভাবনা প্রদান করতে আমার সেনাপতি ভক্ত আবির্ভূত হবেন।
শ্রীচৈতন্য চরিতামৃতে, শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন : “পৃথিবীতে যত আছে নগরাদি গ্রাম, সর্বত্র প্রচার হবে মাের নাম।”

শ্রীল ভক্তিবিনােদ ঠাকুরের ভবিষ্যদ্বাণী :

শ্রীল ভক্তিবিনােদ ঠাকুরের সজ্জন-তােষণী গ্রন্থে এক মহান ভক্তের আবির্ভাবের ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে, যিনি শ্রীগৌরাঙ্গের বাণী পশ্চিমা দেশে গিয়ে প্রচার করবেন।
বৈষ্ণব তােষণী জার্নালে নিন্মের উদ্ধৃতিটি প্রদান করা হয় : “শ্রীমন মহাপ্রভু স্বপার্ষদ পরিবৃত হয়ে শুধুমাত্র ভারত ভূমির জীবদের উদ্ধার করার জন্য অবতরণ করেননি, বরং তাঁর প্রকৃত উদ্দেশ্য ছিল সমস্ত জীবাত্মার জন্য নিজ ধর্ম প্রচারের মাধ্যমে সারাবিশ্বের সমস্ত জীবকে উদ্ধার করা ও ঊর্ধ্বমুখী করা। বিশ্বে অনেক প্রকার ধর্ম রয়েছে এবং তাদের মধ্যে সবচেয়ে উন্নত ধর্ম হল ভগবানের পবিত্র নাম সম্মিলিতভাবে কীর্তন করা। এ বিষয়ে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই। হায়! কখন সে দিন আসবে যখন সমস্ত সৌভাগ্যবান আত্মা ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, রাশিয়া, প্রাসিয়া এবং আমেরিকার মতাে দেশগুলােতে ব্যানার, Kettle drums, মৃদঙ্গ, করতাল সহযােগে অপ্রাকৃত হরিনাম কীর্তনের ঢেউ সৃষ্টি হবে এবং শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর পবিত্র নাম এ সমস্ত দেশগুলোর শহরে ও গ্রামে রাস্তায় রাস্তায় কীর্তন করা হবে? কখন সেই দিন আসবে, যখন শব্দ ও চিন্ময় কৃষ্ণপ্রেম সমস্ত জীবাত্মার একমাত্র ধর্ম হিসেবে পরিগণিত হবে এবং সমস্ত ছােট প্রথাগত ধর্মগুলাে অসীম ও বৈশ্বিক ধর্ম কৃষ্ণের প্রতি ভক্তিমূলক সেবার জন্য একত্রে মিলিত হবে যেরকম সমস্ত নদী গিয়ে মহাসাগরে মিশে? ওহ্ কখন সেদিন আসবে?
(শ্রীল ভক্তিবিনােদ ঠাকুরের সজ্জন-তােষণী গ্রন্থ, ১৮৮০)
এবং ভক্তিবিনােদ ঠাকুরের এই ইচ্ছা ও ভবিষ্যদ্বাণীকে স্বার্থক করেছেন শ্রীল প্রভুপাদ। এক কথায়, শ্রীল ভক্তিবিনােদ ঠাকুর একজন বিশেষ সেই সেই ব্যক্তির আগমনের সম্পর্কে বিবেচনা করে তিনটি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন।
প্রথম ভবিষ্যদ্বাণী : *একজন বিশেষ ব্যক্তি শীঘ্রই আবির্ভূত হবে এবং তিনি সারাবিশ্বে ভ্রমণ করে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর শিক্ষা প্রচার করার জন্য সমগ্র বিশ্ব ভ্রমণ করবেন।”
দ্বিতীয় ভবিষ্যদ্বাণী : “খুব শীঘ্রই সারাবিশ্বে হরিনাম সঙ্কীর্তন ছড়িয়ে পড়বে, ওহ কখন সে দিন আসবে যখন আমেরিকা, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া থেকে লােকেরা করতাল মৃদঙ্গ নিয়ে নিজ নিজ শহরে হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র কীর্তন করবে। তৃতীয় ভবিষ্যদ্বাণী : কখন সেই দিন আসবে যখন আমেরিকা, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া থেকে লােকেরা করতাল মৃদঙ্গ নিয়ে নিজ নিজ শহরে হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র কীর্তন করবে।”
তৃতীয় ভবিষ্যদ্বাণী : কখন সেই দিন আসবে, যখন সাদা চামড়ার বিদেশীরা শ্রীমায়াপুর ধামে আসবে এবং বাঙালি বৈষ্ণবদের সাথে সম্মিলিত হয়ে জয় শচীনন্দন, জয় শচীনন্দন বলে জপ-কীর্তন করবে। কখন সেই দিন আসবে’’
শ্রীল প্রভুপাদ যে স্বয়ং ১৮৯৬ সালে আবির্ভূত হয়েছিলেন এর পারমার্থিক গুরুত্ব সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন,
একই বছরে ভক্তিবিনােদ ঠাকুর তাঁর গ্রন্থসমূহ দূরদেশে প্রেরণ করেন। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর শিক্ষা, ভক্তিবিনােদ ঠাকুরের ইচ্ছা এবং শ্রীল সরস্বতী ঠাকুরের কৃপায় শ্রীল এ.সি ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ বিশেষ শক্তিপ্রাপ্ত হন, যাতে করে তিনি সারাবিশ্বে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর শিক্ষা ও হরেকৃষ্ণ জপ-কীর্তন প্রচার করতে পারেন। শ্রীল প্রভুপাদ ঠাকুরের তিনটি ভবিষ্যদ্বাণীই পূর্ণ করেছিলেন ।
শ্রীল প্রভুপাদ হলেন পরবর্তী দশ হাজার বছরের জন্য বিশিষ্ট (prominent) আচার্য। শক্ত্যাবেশ অবতারের সংজ্ঞানুসারে, আমরা দেখি শ্রীল প্রভুপাদ ছিলেন তেমনই চিন্ময় শক্তিমত্তা সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব। প্রভুপাদ যা করেছেন তা শুধুমাত্র একজন কোনাে অতিন্দ্রীয় শক্তিধর ব্যক্তিই তা করতে পারেন। তিনি সমগ্র ভারতও ভ্রমণ করেছিলেন এবং মায়াবাদী নির্বিশেষবাদ দর্শনের বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে প্রচার করেন। তিনি ভারতজুড়ে অনেক স্থানে বৈষ্ণব দর্শন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু ব্যক্তিগতভাবে দক্ষিণ ভারতে জুড়ে প্রচার করেছিলেন। তিনি একটি পারমার্থিক বিপ্লব শুরু করেছিলেন যা আজও অনুভূত হয়।
সমস্ত পূর্বতন আচার্য ভারতে অবস্থান করেছিলেন। তাঁদের রচিত সাহিত্য ও মন্দিরসমূহ ভারত মহাদেশকে আবদ্ধ করে রেখেছিল। প্রভুপাদ হলেন প্রথম আচার্য যিনি ভারতের বাইরে ভ্রমণ করে অনেক বৈষ্ণব তৈরি করেছিলেন। তিনি সমস্ত বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের শিক্ষার প্রকৃত সারতত্ত্বের ওপর অনেক তাৎপর্য প্রদর্শন করেছেন। এভাবে এক ক্ষেত্রে সবশ্রেষ্ঠ আচার্য, কারণ তিনি সবচেয়ে কঠিন পরিবেশ ও প্রতিকূল পরিস্থিতিতে যা অর্জন করেছেন তা ইতােপূর্বে আর অন্য কেউ করতে পারেনি। মাত্র ১১ বছরের সংক্ষিপ্ত পরিসরে শ্রীল প্রভুপাদ যা প্রাপ্ত হয়েছেন তা ভারতের ইতিহাসে আর অন্য কেউ প্রাপ্ত হন নি।

আধুনিক যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ আচার্য

তিনি এটি প্রমাণ করেছেন এবং বিশেষত তিনটি পন্থায় তিনি এটি প্রতিষ্ঠা করে গেছেন :
(১) তাঁর অগণিত ভাষ্য ও টিকা, সাহিত্যসমূহ সব ধরনের ভাষায় সারাবিশ্বে বিতরণের ব্যবহারিক আয়ােজন করেছেন।
(২) তাঁর শক্তিশালী প্রচার এবং শুদ্ধতার মাধ্যমে তিনি সারাবিশ্বে হাজার হাজার বৈষ্ণব তৈরি
(৩) এই কলিযুগে ১০৮টি মন্দির, আশ্রম, ফার্ম, গুরুকুল ইত্যাদি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তিনি ভগবানের আরাধনার জন্য বৈশ্বিক গৃহ আশ্রয়স্থল গড়ে তুলেছেন এবং সেগুলােতে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর বাণী প্রচারের জন্য এই প্রতিষ্ঠানগুলাে কীভাবে ব্যবস্থাপনা করতে হবে তার ব্যবহারিক ও সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা প্রদান করেছেন।
তিনি তাঁর দিব্য নির্দেশনাবলীর মাধ্যমে চিরদিন বেঁচে থাকবেন এবং তাঁর অনুসারীরা তাঁর সাথে বাস করেন।
শ্রীল প্রভুপাদ -স্বর্ণযুগের প্রতিষ্ঠাতা-আচার্য প্রতিষ্ঠাতা আচার্য সবসময়ের জন্য একটি বিশেষ অবস্থান। বৈষ্ণবীয় ধারায় প্রতিষ্ঠাতা আচার্যগণ তাঁদের শিষ্যদের যােগ্যতা ও আন্তরিকতা অত্যন্ত কঠোরভাবে পরীক্ষা করে নির্বাচন করতেন। কিন্তু প্রতিষ্ঠাতা আচার্যগণদের বিশেষ গুণাবলির মধ্যে অন্যতম হল তার অপরিসীম কারুণ্য। তিনি যারা আন্দোলনে যােগ দিয়েছেন তাদের সবাইকে গ্রহণ করেছেন এবং শিষ্যদেরও একই আদেশ দিয়েছেন
হরিনাম হল স্বর্ণযুগের ধর্ম – “কলি কালের ধর্ম নাম সংকীর্তন” এবং যিনি এ ধর্ম সারাবিশ্বে প্রচার করেন তিনিই হলেন বিশেষ চিন্ময় শক্তিধরসম্পন্ন আচার্য-কৃষ্ণ শক্তি বিনা নাহি তার প্রবর্তন। শ্রীল প্রভুপাদ কৃষ্ণভাবনার মৌলিক আদর্শ অনুশীলন করেছিলেন শ্রীল রূপ গােস্বামীর আদর্শ অনুসরণে এবং এভাবে তিনি সবাইকে হরেকৃষ্ণ আন্দোলনে নিয়ােজিত করেছিলেন। তাঁর সুদূরপ্রসারী অবদান বৈষ্ণব ধর্মের ইতিহাসে অভুতপূর্ব। এভাবে প্রতিষ্ঠাতা-আচার্য শ্রীল রূপ গােস্বামীর পদাঙ্ক অনুসরণে বিশ্ব বৈষ্ণব রাজ্য গড়ে তুলেছেন। শ্রীল ভক্তিবিনােদ ঠাকুর আকুল আখাঙ্ক্ষা করেছিলেন কখন সে দিন আসবে, যখন সৌভাগ্যবান ভারতীয় নয় এমন বৈষ্ণবগণ বিশ্বের বিভিন্ন শহরে হরিনাম কীর্তন করবেন।”       
(সজ্জন তােষণী ৪/৩, ‘নিত্যধর্ম সূর্যোদয়)।
সেই প্রতিবেদনে তিনি ঘােষণা করেছিলেন মহাপ্রভুর ভবিষ্যদ্বাণী খুব শীঘ্রই পূরণ হবে। তিনি ভবিষ্যৎ দর্শন করেছিলেন যে, সমস্ত বৈষ্ণব সম্প্রদায় একিভূত হবে, “খুব শীঘ্রই, শুধুমাত্র একটি সম্প্রদায় হবে এবং সেটি হবে ব্রহ্ম সম্প্রদায়। সমস্ত অন্যান্য সম্প্রদায় এই সম্প্রদায়ের মধ্যে তাদের পরিণতি খুঁজে পাবেন। সমস্ত ছােট ছােট ধর্ম নদীর জলের মত হরিনামের মহাসাগরে ন গিয়ে মিলিত হবে এবং তখন একটি মাত্র দর্শন হবে-শ্রীকৃষ্ণের পবিত্র নাম সংকীর্তন।”   (বাণী ভৈরব অধ্যায় ৬)
 
শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুর তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন, একজন আত্ম- দীপ্তিময় আচার্যের উদয় হবে, যে চমৎকার ভঙ্গিতে প্রচারের মাধ্যমে তাঁর সমুন্নতি (prominence) প্রমাণ করবেন। পূর্বতন আচার্যদের উপরােল্লিখিত ভবিষ্যদ্বাণী থেকে এটি সুস্পষ্ট যে, ওঁ বিষ্ণুপাদ অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ হলেন একজন আত্ম-দীপ্তিময় (Self-effulgent) প্রতিষ্ঠাতা-আচার্য।
শ্রীচৈতন্য চরিতামৃতে (অন্ত্য-লীলা ৭/১১) এটি বিবৃত হয়েছে
“কলিকালের ধর্ম কৃষ্ণনাম সংকীর্তন।
কৃষ্ণশক্তি বিনা তা প্রবর্তন করা সম্ভব নয়।
শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু বলেছেন, “একজন প্রথম শ্রেণির বৈষ্ণব হলেন তিনিই যার উপস্থিতি অন্যদেরকে হরিনাম জপ-কীর্তন করায়।” জগৎগুরু শ্রীল প্রভুপাদ কি জয়!
 
(এই প্রতিবেদনে শ্রীল প্রভুপাদের চিত্রকর্মগুলাে এঁকেছেন পােল্যান্ডের অধিবাসী আলেক্সান্ডার উর্বনস্কা। তিনি পােল্যান্ডের একটি শীর্ষস্থানীয় আর্ট অ্যাকাডেমি থেকে চারুকলার ওপর উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করেন। তার বােন লীলা মঞ্জুরি দেবীদাসীর (বিখ্যাত ভজন শিল্পী বৈয়াসখী দাসের সহধর্মীনি) মাধ্যমে প্রথম কৃষ্ণভাবনার সাহচর্য লাভ করেন। তিনি অবগত হন যে, হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র হলাে ভগবান স্বয়ং এবং তাঁর পবিত্র নাম জপ করার মাধ্যমে তাকে উপলব্ধি করা যায়। এই নির্দেশটি তিনি হৃদয়ঙ্গম করেছিলেন এবং শুরু থেকে এখনাে প্রতিদিন চৌষট্টি মালা জপ করে চলেছেন। তিনি ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত শ্রীমৎ গৌর গােবিন্দ স্বামীর কাছ থেকে কৃষ্ণভাবনার শিক্ষা লাভ করেন। বর্তমানে তিনি শ্রীমৎ সুভগ স্বামীর অনুপ্রেরণায় কৃষ্ণভাবনা পালন করছেন।)

লেখক পরিচিতি : ইসকন জিবিসি ও আচার্য শ্রীমৎ ভক্তিচারু স্বামী শ্রীল প্রভুপাদের অন্যতম প্রিয় শিষ্য। ১৯৪৫ সালে তিনি বাংলাতে আবির্ভূত হন। ১৯৭০ সালে উচ্চতর শিক্ষা লাভের জন্য জার্মানিতে পাড়ি দেন। তিনি বর্তমানে সারাবিশ্বে কৃষ্ণভাবনামৃত প্রচার করে যাচ্ছেন। উজ্জয়িনীতে তিনি এক বিশাল মন্দির তৈরি করেন। তিনি শ্রীল প্রভুপাদের নির্দেশে অনেক ইংরেজি গ্রন্থ বাংলায় অনুবাদ করে কৃষ্ণভাবনা প্রচারে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন তিনি শ্রীল প্রভুপাদের জীবনীভিত্তিক ১০৪ পর্বের বিখ্যাত অভয়চরণ টিভি মেগা সিরিয়াল নির্মাতা।

 
ত্রৈমাসিক ব্যাক টু গডহেড, জুলাই -সেপ্টেম্বর ২০১৪
সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।