উডস্টক ফেস্টিভ্যাল ও ফেস্টিভ্যাল অব ইন্ডিয়া

প্রকাশ: ২৯ আগস্ট ২০২১ | ১১:৩৪ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ২৯ আগস্ট ২০২১ | ১১:৩৪ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 290 বার দেখা হয়েছে

উডস্টক ফেস্টিভ্যাল ও ফেস্টিভ্যাল অব ইন্ডিয়া

পোল্যান্ডে ইস্‌কন উৎসবের ইতিবৃত্ত

কৃষ্ণ-কৃপা দাস

ইস্‌কন পোল্যান্ড, কৃষ্ণভাবনামৃত প্রচারে খুব দ্রুত অগ্রসরমান। আর এ কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলনকে যিনি দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, তিনি হলেন কৃষ্ণকৃপাশ্রীমূর্তি অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদের কৃপাধন্য শিষ্য শ্রীমৎ ইন্দ্রদ্যুম্ন স্বামী মহারাজ। কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলনে উৎসব একটি অপরিহার্য অঙ্গ। আর এ উৎসবগুলোকে বিস্তৃত রূপ দানের মাধ্যমে শ্রীমৎ ইন্দ্রদ্যুম্ন স্বামী মহারাজ ইস্‌কন পোল্যান্ডে কৃষ্ণভাবনামৃত প্রচারে সাধারণ জনগণদের খুব সহজেই আকর্ষণ করছেন। এর মধ্যে পোল্যান্ডে ইস্‌কনের সবচেয়ে জনপ্রিয় উৎসব হল ফেস্টিভ্যাল অব ইন্ডিয়া। সে সাথে উডস্টক ফেস্টিভ্যালে ইস্‌কনের উৎসবটিও লক্ষ লক্ষ দর্শনার্থীদের জন্য অনেক আকর্ষনীয় একটি উৎসব। এক গ্রীস্মে পোলিশ উডস্টক ফেস্টিভ্যালে ইস্‌কনের ঐ উৎসবে অংশগ্রহণ করার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। সেবার ১৬টি দেশের ভক্তদের সঙ্গে যোগ দিয়ে ইন্দ্রদ্যুম্ন স্বামীর পোলিশ ফেস্টিভ্যাল ভ্রমণে প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে ছিলাম। সেই ভ্রমণে পাঁচটি শহর, চারটি বীচ এবং সর্বশেষ কাঙ্ক্ষিত সেই বিশাল পোলিশ উডস্টক ফেস্টিভ্যাল উপভোগ করেছিলাম ।
উডস্টক ফেস্টিভ্যাল শুরু হওয়ার পূর্বে ইসকনের ঐ উৎসবে সবাইকে যোগদানের জন্য প্রচার প্রচারণা করা হয়। দুই দিনের সেই ফেস্টিভ্যালে সারাবিশ্ব থেকে নামীদামী প্রায় ৫০টি ব্যান্ড দল অংশগ্রহণ করে। প্রায় চার লক্ষেরও বেশি লোক যাদের মধ্যে অধিকাংশ যুবসমাজ এই উৎসবে অংশগ্রহণ করে।


জারির মেয়রের সাথে সাক্ষাৎ

শ্রীমৎ ইন্দ্ৰদ্যুম্ন স্বামী

নন্দিনি, রাধা সখীবৃন্দ, বারা-নায়েক এবং আমি নির্দিষ্ট সময়ের কয়েক মিনিট পূর্বেই পৌছলাম এবং মেয়রের সেক্রেটারি আমাদের অভ্যর্থনা কক্ষে অপেক্ষা করার জন্য বললেন। হঠাৎ TVN24 (CNN এর পোলিশ ভার্সন) এর এক কর্মচারি মহিলা ঝড়ের গতিতে কক্ষটিতে প্রবেশ করল। তিনি ছিলেন একজন রিপোর্টার এবং তার দেরীর জন্য সেক্রেটারির কাছে ক্ষমা চেয়ে নিলেন।
সেক্রেটারি বলল, “আমি বলব, আপনার দেরী হয়েছে, কিন্তু আপনার তো এক ঘন্টা পূর্বে আসার কথা!”
কয়েক সেকেন্ড পর মেয়র তার দরজা খুলল এবং কারা দেখা করতে এসেছে তা দেখল। মৃদু হেসে তিনি বললেন, “আমি প্রথমে হরেকৃষ্ণ ভক্তদের সঙ্গে সাক্ষাত করতে চাই, তারা আমার কাছে অন্যদের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।”
তিনি নিজেই দরজাটি আরও খুলে দিলেন এবং আমরা তখন একে একে ভিতরে প্রবেশ করলাম। দরজা বন্ধ করার পর তিনি আমাদেরকে বসতে বললেন। দু’সেকেন্ড পর আবারও কে যেন দরজা খুলল। হাতে ক্যামেরা নিয়ে সেই টেলিভিশন কর্মী।
বড় একটি লাইট জ্বালিয়ে, রিপোর্টারটি মেয়রকে বললেন, “যদি কিছু মনে না করেন আমরা আপনার সঙ্গে হরে কৃষ্ণ ভক্তদের সাক্ষাৎকারটি ভিডিও করতে পারি? এটি একটি বিরাট ব্যাপার হবে।”
শান্তভাবে মেয়র বললেন, “মোটেই না” এবং তিনি তখন উডস্টক ফেস্টিভ্যালে আমাদের অংশগ্রহণের ব্যাপারটি নিয়ে খুব প্রশংসা করতে লাগলেন।
“হরেকৃষ্ণ আন্দোলনের সদস্যরা উডস্টক ফেস্টিভ্যালে একটি সুন্দর সংস্কৃতি নিয়ে এসেছে।” তিনি বললেন, “আমাদের শহরে তাদেরকে পেয়ে খুবই গর্বিত। আমাদের দেশের যুব সমাজের জন্য তাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা রয়েছে। এবং দেখুন তারা সবসময় কত খুশি!”
রিপোর্টারটি মেয়রের সঙ্গে একা কথা বলার জন্য অনুমতি চাইলে, আমরা প্রস্থান করি। তিনি আমাদেরকেও অনুরোধ করলেন বাইরে কিছু সময় অপেক্ষা করার জন্য, কেননা আমাদের উদ্দেশ্যে তার কিছু জিজ্ঞাসা রয়েছে?
কয়েক মিনিট পর ক্যামেরাম্যানকে সাথে নিয়ে রিপোর্টারটি বেরিয়ে এলে, টাউন হলের সম্মুখে এক সাক্ষাতকারের আয়োজন করা হয়। তিনি বললেন, “এটি জাতীয় সংবাদমাধ্যমে তুলে ধরা হবে। আপনাদের জন্য এটি একটি সুযোগ।”
ক্যামেরা যখন প্রস্তুত আমি পোলিশ জাতীয় পতাকার নিচে দাঁড়িয়ে জাতির উদ্দেশ্যে কিছু কথা বললাম: “হরে কৃষ্ণ আন্দোলনের সদস্য হিসেবে উডস্টকের মত বৃহৎ একটি ইভেন্টে অংশগ্রহণ করতে পেরে আমরা খুবই খুশি। জুরিখ ওসিয়াক প্রতিবছর আমাদেরকে আমন্ত্রণ জানান, কেননা আমরা দুটি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে এ উৎসবে অংশগ্রহণ করে থাকি। কোন বিশৃঙ্খলা নয় এবং ড্রাগসের প্রতি আসক্ত যুব সমাজকে সাহায্য করতে কাজ করে যাওয়া । আর এর জন্য আমাদের ফর্মুলাটি খুব সরল: আমরা ভগবানের নাম জপ কীর্তন করি- হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে। হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে এবং আমরা ভগবানকে নিবেদিত প্রসাদ বিতরণ করি। এই সরল কার্য দুটির মাধ্যমে যে কারো হৃদয় পরিশুদ্ধ হবে।”


মূলত এর আয়োজক হলেন ফিলাথ্রোপিস্ট জুরে ওসিয়াক। যে সমস্ত যুব সমাজ পোল্যান্ডের দরিদ্র ও অসুস্থ ছেলেমেয়েদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে তাকে সাহায্য করেন, তাদেরকে ধন্যবাদ জানাতেই তিনি এই বিশাল উৎসবটির আয়োজন করে থাকেন। এজন্যে তিনি ইস্‌কন ভক্তদেরকে আমন্ত্রণ জানান উৎসবে অংশগ্রহণের জন্য। যাতে করে ভক্তরা তাদের দর্শন, জীবন যাত্রা প্রদর্শনের মাধ্যমে আগত দর্শনার্থীদের আনন্দ দিতে পারেন। সে সাথে যেন সমগ্র প্রোগ্রামটি শান্তিপূর্ণ হয়।
যদিও মূল উডস্টক ফেস্টিভ্যাল দু’দিনের। কিন্তু ভক্তদের উৎসবটি তিন দিন স্থায়ী হয়। ফেস্টিভ্যাল শুরু হওয়ার একদিন পূর্বে আমরা জারি শহরের নিকটবর্তী রাস্তায় রাস্তায় দু’ঘন্টা ধরে হরিনাম সংকীর্তন করেছিলাম। ড্রাম, করতাল, ট্রাম্পেট, একরডিয়ান নামে এক প্রকার বাদ্যযন্ত্রের সঙ্গে কীর্তন চলছিল। ধীরে ধীরে কীর্তন দলের সাথে অনেক লোক অংশগ্রহণ করল। কেউ শুধু হাততালি, কেউবা আমাদের সাথে নৃত্যে অংশগ্রহণের মাধ্যমে উপভোগ করছিল। ছোট ছোট বাচ্চারাও পিছিয়ে ছিল না। ছোট পতাকা হাতে নিয়ে তারা অনেকটা পথ ছিল। যখন আমরা কীর্তন থামিয়ে এক জায়গায় দাঁড়ালাম, তখন ছোট একটি জনতার ভিড় আমাদের দলটিকে ঘিরে ধরে প্রায় এক ঘন্টা পর্যন্ত কৃষ্ণভাবনামৃতের দর্শন সম্বন্ধে খুব মনযোগ সহকারে শুনল।
উডস্টক ভক্তদের ক্যাম্পটি পরিচিত ‘Krishna’s village of peace’ নামে। বাংলায় ‘কৃষ্ণের শান্তির গ্রাম’। আমাদের প্রধান তাবুটি তৈরিকালীন শ্রীমৎ ইন্দ্রদ্যুম্ন স্বামী স্থানীয় দমকল বাহিনীর প্রধানের সঙ্গে কথা বলছিলেন।
পরে মহারাজ ভক্তদের বলেন “দমকল বিভাগের প্রধান বলছিলেন যে, জারির জনগণ সারাটি বছর আপনাদের আগমনের অপেক্ষায় থাকে। তারা ‘কৃষ্ণের শান্তির গ্রাম’ দর্শন করার জন্য উৎসুক হয়ে থাকে। তারপর তিনি মৃদু হেসে বললেন, “আপনার মনে পড়ে, গত বছর আপনি আমাদের দমকল বিভাগ পরিদর্শন করেছিলেন। তখন আপনি আমাকে একটি শ্রীমদ্ভগবদ্‌গীতা যথাযথ দিয়েছিলেন?”
কিছুক্ষণ ভাবার পড় মনে পড়ল, হ্যাঁ তাইতো। লোকটি বলছিল, “আমি সারা বছর ধরে এটি অধ্যয়ন করে আসছি। কিন্তু এটি আমার জন্য বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠে গত মাসে যখন আমার একজন সহকর্মীর ঘরে আগুন ধরে। আগুনের সাথে যুদ্ধ করতে করতে অবশেষে সে মারা যায়। তখন ঐ গ্রন্থটি থেকে আমি উপলব্ধি করেছিলাম যে, আত্মা হল শাশ্বত।
কৃষ্ণের শান্তির গ্রাম বছরের পর বছর ধরে বৃহত্তর থেকে বৃহত্তম হচ্ছে। তখন প্রায় ৫৪০ জনের মত ভক্ত উৎসবের বিভিন্ন সেবার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল। প্রতি বছর ভক্তদের মঞ্চে বিশেষ ইভেন্টের আয়োজন করা হয়। যেমন, জনসমক্ষে বৈদিক বিবাহ অথবা জন্মাষ্টমী উদ্‌যাপন হচ্ছে অন্যতম। এ বছর (২০১২) জগন্নাথের রথযাত্রা পালিত হয়। রথের শোভাযাত্রার পূর্বে জারির মেয়র এবং প্রাক্তন মেয়র শোভাযাত্রা উদ্বোধন করেন। শোভাযাত্রাটি দু’ঘন্টারও বেশি ধরে বিভিন্ন স্থানে প্রদক্ষিণ করে। হাজার হাজার লোক এ শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করে। কেউ নৃত্য করছে, কেউবা কীর্তন করছে, কেউ রথের দড়ি টানছে আবার অনেকেই দূর থেকে কৌতুহলবশত ছবি তুলছে। এক যুবক অনেকক্ষণ ধরে পর্যবেক্ষণের পর অবশেষে যোগদান করে এবং দু’হাত জোড় করে জগন্নাথের উদ্দেশ্যে প্রণতি নিবেদন করে। টেলিভিশন ক্যামেরাগুলো তাদের সন্ধ্যার নিউজে এই ইভেন্টটি সম্প্রচারের জন্য তাক করে আছে।
সন্ধ্যা হতে না হতেই হাজার হাজার দর্শকরা আমাদের প্রধান তাবুতে এসে ভিড় করে । তিন দিন ধরে ক্রমাগত দুপুর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত প্রোগ্রাম চলতে থাকে। তবুও দর্শকদের কমতি হয় না। আমাদের সাউন্ড সিস্টেম ব্যস্ত কৃষ্ণভাবনার অপ্রাকৃত তরঙ্গ চতুর্দিকে যতটুকু সম্ভব ছড়িয়ে দেয়ার জন্য। মঞ্চ প্রদর্শনীতে রয়েছে ভারতীয় নৃত্য, রামায়ণ নাটক, মার্শাল আর্ট, পুনর্জন্মের উপর মুকাভিনয়, কৃষ্ণলীলার উপর পাপেট শো, ভক্তিমূলক ভজন, ভজনের সাথে সাথে ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্রের বাজনা এবং বিভিন্ন ধরনের ব্যান্ড দল কর্তৃক কৃষ্ণভাবনাময় সঙ্গীত পরিবেশন।
যখনই ব্যান্ড সঙ্গীত পরিবেশিত হয় আমাদের প্রধান মঞ্চের সম্মুখে অবস্থিত হাজারো জনতা উন্মাদের মতো নৃত্য করে। সন্ধ্যার দিকে সর্বশেষ যে ব্যান্ড সঙ্গীতটি পরিবেশিত হয় তা শুনে শ্রোতারা ‘আরো আরো’ বলে পোলিশ ভাষায় চিৎকার করতে থাকে। আর ভক্তরাও বাধ্য হয়ে তাদের সঙ্গীত এবং নৃত্য চালিয়ে যেতে থাকে। সময়ে সময়ে কৃষ্ণভাবনাময় প্রবচন প্রদান করে উপস্থিত দর্শকদের উদ্বুদ্ধ করে। অন্যান্য তাবুগুলো ব্যস্ত প্রসাদ পরিবেশনে, গ্রন্থ ও প্রসাধনী সামগ্রী বিতরণে, মুখমণ্ডলে কৃষ্ণভাবনাময় বিভিন্ন রঙের বৈদিক নকশা ও ছবি অংকনে। একটি তথ্যবুথ এবং প্রশ্নোত্তর বুথ ব্যস্ত কৃষ্ণভাবনার বিভিন্ন তথ্য ও প্রশ্নের উত্তর প্রদানের জন্য। রয়েছে একটি ধ্যানকেন্দ্র যেখানে দর্শনার্থীরা হরিনাম ধ্যান অনুশীলন করতে পারে। বৈদিক জ্যোতির্বিদ্যা বুথেও দর্শকদের আনাগোনা চলছে। তারা বিভিন্ন সমস্যা ও সমাধান সম্পর্কে অবগত হচ্ছে। পুনর্জন্ম বিজ্ঞান ও নিরামিষের গুরুত্ব সম্পর্কে বিভিন্ন প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। সবচেয়ে মজার ব্যাপারটি ঘটে প্রসাদ বিতরণের সময়। ভক্তদের তৈরিকৃত এবং নিবেদিত প্রসাদ জারির চারদিকে বিভিন্ন স্কুলে বিতরণ করা হয়। তিনদিন ধরে প্রায় এক লক্ষ প্লেট প্রসাদ বিতরণ করা হয়। আমি আশ্চর্য হই, যখন ভাবি এত সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে কিভাবে ভক্তরা অত সুন্দরভাবে আয়োজন করেছে।
উডস্টকে কৃষ্ণের শান্তির গ্রামটি তৈরি হয় এভাবে সম্পূর্ণ বৈদিক ভাবধারায়। যেখানে যোগ, আর্ট, জ্যোতির্বিদ্যার মত বিষয়ভিত্তিক বৈদিক সংস্কৃতির ভাবধারায় প্রায় ২০-২৫টি পৃথক তাবু তৈরি করা হয়। দর্শনার্থীরা নিজেদের মত করে এসব তাবু পরিদর্শন করে জ্ঞান আরোহণ করে। উডস্টকের মূল প্রোগ্রামে চার লক্ষেরও বেশি মানুষের সম্মুখে হরে কৃষ্ণ ব্যান্ড প্রদর্শনীও আরেকটি চমকপ্রদ ও দর্শনীয় দৃশ্য। উপস্থিত দর্শকরা হরেকৃষ্ণ কীর্তনের সাথে সাথে উন্মাতাল নৃত্য-কীর্তন করে। আর এভাবে ইসকন পোল্যান্ডের জনগণ উৎসবমুখর কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলনের প্রতি আকর্ষিত হয়ে আন্তরিকতার সঙ্গে এটি গ্রহণ করছে।

ফেস্টিভ্যাল অব ইন্ডিয়া

পোল্যান্ডে ইস্‌কনের আরেকটি জনপ্রিয় উৎসব হল ‘ফেস্টিভ্যাল অব ইন্ডিয়া’। পোল্যান্ডের বিভিন্ন স্থানে এ উৎসবটি আয়োজন করা হয়। ইন্দ্রদ্যুম্ন স্বামী মহারাজের নেতৃত্বে ভক্তদের একটি বিশাল দল এটি পরিচালনা করে থাকেন। ‘ফেস্টিভ্যাল অব ইন্ডিয়া’ যে পোল্যান্ডেই হয় তা নয়। বিভিন্ন দেশেও এটি অনুষ্ঠিত হয়। পোল্যান্ডের এই দলটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাদের অনুষ্ঠানশৈলী প্রদর্শন করে থাকেন।
একটি স্থানে ‘ফেস্টিভ্যাল অব ইন্ডিয়া’ অনুষ্ঠিত হওয়ার দু’সপ্তাহ পূর্ব থেকেই শহর ও গ্রামের বিভিন্ন স্থানে প্রচার প্রচারণা শুরু হয়। ভক্তরা বর্ণিল সাজে সজ্জিত হয়ে অনুষ্ঠান সম্পর্কে সাধারণ জনগণদের ধারণা দেন এবং সেসাথে অনুষ্ঠানে আসার আমন্ত্রণ জানান। উডস্টকের মত এখানেও মাঝে মাঝে প্রায় কিছু তাবুতে প্রদর্শন করা হয় বৈদিক সংস্কৃতি। মূল উন্মুক্ত প্রোগ্রামটিতে প্রদর্শন করা হয়
বৈদিক নাটক, মার্শাল আর্ট, বৈদিক নৃত্য, পাপেট শো ইত্যাদি। পাপেট শো এবং বিভিন্ন চরিত্রের মুখোশ পরে বৈদিক নাটক প্রদর্শন, উপস্থিত দর্শকদের জন্য খুবই আকর্ষণীয় একটি ব্যাপার। ভক্তদের পাপেট থিয়েটারে প্রায় ২০টিরও বেশি পাপেট রয়েছে। সর্বোচ্চ যে পাপেটটি রয়েছে তা প্রায় ৭ মিটার দীর্ঘ এবং দৈর্ঘ্যে ২৬ মিটার। পাপেট শো প্রদর্শনীর সময় ছোট ছেলেমেয়েরাবৃহদাকৃতির ভয়ংকর পাপেট দেখে অনেক সময় ভয়ে লুকালেও প্রকৃতপক্ষে এটি তাদের জন্য খুবই রোমাঞ্চকর এবং আনন্দপ্রদ মনে হয়। বৈদিক নাটকেও সর্বস্তরের জনগণ অধিক কৌতূহল নিয়ে অপেক্ষা করে থাকে, এরপর কি হবে? মাঝখানে শ্রীমৎ ইন্দ্ৰদ্যুম্ন স্বামী তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে কৃষ্ণভাবনামৃতের দর্শন এবং শ্রীমদ্ভগবদ্‌গীতা যথাযথ এর গুরুত্ব সম্পর্কে উপস্থিত দর্শকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরেন।


ফেস্টিভ্যালের প্রশংসায়

পোল্যান্ডের বিভিন্ন শহরের মেয়র এবং পরিচালকগণ কর্তৃক লিখিত পত্রসমূহের কিছু উদ্ধৃত অংশ এখানে তুলে ধরা হল।

পারমার্থিক পরিবেশের মধ্য দিয়ে উৎসবটি খুব সুন্দরভাবে অনুষ্ঠিত হল, অভিনন্দন রইল।
-মিডজকডের মেয়র
ফেস্টিভ্যালের ধারণাটি চমৎকার এবং লোকেরা এটিকে কৃপা ও আশীর্বাদের পরিপূর্ণতা হিসেবে দেখছে। আমি এখনও আশাবাদী যে, যে সমস্ত লোক ‘সহিষ্ণুতা’ শব্দটিকে যথাযথভাবে বুঝতে পারে না, তাদের জীবনে এ উৎসবটি একটি বিরাট পরিবর্তন নিয়ে আসবে এবং সেসাথে আগামী বছরগুলোতে এ ধরনের প্রদর্শনী (উৎসব) সবাই ব্যাপকভাবে গ্রহণ করবে।
–কালচার হাউজ এর পরিচালক, মিডল্‌কক্ড

অত্যন্ত উন্নত ব্যবস্থাপনার অধীনে পরিচালিত ফেস্টিভ্যাল অব ইন্ডিয়া হল একটি সংস্কৃতিময় ও শৈল্পিক নিদর্শন। আমরা আয়োজকদের সর্বোচ্চ মার্ক দিচ্ছি। ভারতীয় সংস্কৃতি প্রদর্শনের জন্য ধন্যবাদ স্বরূপ আমরা আবারও আপনাদের গ্লোগৌতে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।
-গ্লোগৌর কালচার ডিপার্টমেন্টের প্রধান
গ্লোগৌর সভাপতির পক্ষ থেকে

এরকম অসাধারণ ও রাজকীয় বিনোদনের জন্য হৃদয় থেকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। সৌহার্দ্যপূর্ণ মনোভাব ও দয়ার ভাব এই ফেস্টিভ্যাল অব ইন্ডিয়া উৎসবে আমরা দেখতে পাই। আর এটি একটি চমৎকার দৃষ্টান্ত। নৃত্য, থিয়েটার, কনসার্ট এ সবকিছুতে পাশ্চাত্য ও ভারতীয় সংস্কৃতির অপূর্ব সমন্বয় সাধিত হয়েছে। এ বিষয়টির মাধ্যমে ফেস্টিভ্যালে অংশগ্রহণকারীরা মোহিত হয়েছে।
– ওলজটিনের মেয়র

এরকম এক অত্যাশ্চর্য ইভেন্ট কোসিয়ানৌর অধিবাসীরা অনেকদিন মনে রাখবে। ফেস্টিভ্যালটি অংশগ্রহণকারীদের হৃদয় আন্দোলিত করেছে এবং সে সাথে ভারতীয় সংস্কৃতির সাথে সংযোগ স্থাপন করতে সম্ভব হয়েছে। এর মাধ্যমে ভারতীয় দর্শন, সংস্কৃতি, জীবনযাত্রা আসলেই জনগণকে স্পর্শ করেছে। পরবর্তী উৎসবে পরিদর্শনের আশা করছি।
– কোসিয়ানৌর মেয়র

এত সুন্দর একটি উৎসব থেকে অনেক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা প্রদানের জন্য এবং এটি আয়োজনের জন্য আমরা আপনাদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। আমরা এটি আশা করি যে, ভবিষ্যত সহযোগিতার পথে এটি হল প্রথম একটি পদক্ষেপ।
-কালচার ডাইরেক্টর হাউস কোসিয়ানৌ


দর্শকদের সাথে নিয়ে কিছু বিনোদনেরও ব্যবস্থা করা হয়। বিশেষত ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা এতে অংশগ্রহণ করে। কিভাবে শাড়ী পড়তে হয়, কিভাবে নৃত্য করতে হয় এসব বিষয়গুলো যখন শেখানো হয় তখন বাচ্চাদের সাথে সাথে অভিভাবকরাও আনন্দিত হন। এরপর শ্রীমৎ ইন্দ্রদ্যুম্ন স্বামীর সুললিত কীর্তনের ছন্দে ভক্তদের সঙ্গে দর্শকদের নৃত্য কীর্তন আরেকটি দারুণ উপভোগ্য বিষয়।
স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে তারা চিন্ময় আনন্দে নৃত্য করতে থাকে। তখন সমগ্র পরিবেশটি চিন্ময় হয়ে উঠে। সর্বশেষ প্রসাদ আস্বাদন। আর এটি বিতরণের সেবায় নিয়োজিত থাকে প্রায় সমস্ত ভক্তই। প্রসাদ আস্বাদনের পর এক অদ্ভুত আত্মতৃপ্তি নিয়ে দর্শকরা ফিরে যায় নিজ নিজ আবাসস্থলীতে। তাদের আবেগ, আনন্দমুখর ভাবই বলে দেয় তারা কি রকম আনন্দ উপভোগ করেছে। প্রকৃত আনন্দ ও কৃত্রিম আনন্দের যে শরীরি ভাষা তা তখন উপলব্ধি করা যায় ইস্‌কন পোল্যান্ডের এ দুটি বড় উৎসবে অংশগ্রহণকারী দর্শকদের দেখেই।


উডস্টক ফেস্টিভ্যাল সম্পর্কে লিখেছেন, কৃষ্ণকৃপা দাস। তিনি শ্রীমৎ সৎস্বরূপ দাস গোস্বামীর একজন শিষ্য এবং ফ্লোরিডার আলচুয়াতে ভক্তিবেদান্ত ইনস্টিটিউটে সেবা করেন। উল্লেখ্য ভক্তিবেদান্ত ইনস্টিটিউট হরে কৃষ্ণ আন্দোলনের বিজ্ঞান বিভাগ । তার কাছে লিখতে পারেন: bvi@afn.org ফেস্টিভ্যাল অব ইন্ডিয়া সম্পর্কে সমস্ত তথ্যাবলী নেয়া হয়েছে একটি ভিডিও ফুটেজ থেকে। যেখানে ভক্তরা এ বৃহৎ অনুষ্ঠানটি সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্যাবলী তুলে ধরেন।


 

জানুয়ারি-মার্চ ২০১৩ ব্যাক টু গডহেড
সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।