এই পোস্টটি 1316 বার দেখা হয়েছে
?আপনি কি জানেন ইসকন কি??
?আমেরিকার টাকায় গঠিত একটি বিদেশি সংস্থা।।।?
?আসলেই কি ঠিক??
আসুন জেনে নিই মুল কাহিনী ইসকন কি??
???“ইসকন” হল ইংরেজী শব্দ। ইংরেজীতে “ISKCON” এর পূর্ণরূপ হল I=INTERNATIONAL, S=SOCIETY for, K=KRISHNA, CON=CONSCIOUSNESS. “INTERNATIONAL SOCIETY FOR KRISHNA CONSCIOUSNESS” এর বাংলা অর্থ হল “আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ” এবং এর সংক্ষিপ্ত রূপ হল “ইসকন”।
ইসকন হল একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা বা গোষ্ঠী বা সংঘ। যে সংঘের উদ্দেশ্য হল মানুষকে কৃষ্ণভাবনাময় করে তোলার মাধ্যমে পৃথিবীতে প্রকৃত শান্তি ফিরিয়ে আনা।
ইসকনের কার্যাবলী সমূহ।
কলি পাবন অবতার গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন –
পৃথিবীতে আছে যত নগরাদি গ্রাম।
সর্বত্র প্রচার হবে মোর নাম।।
– এর অর্থ এই যে, পৃথিবীর প্রতিটি শহর (নগর) ও গ্রামে তাঁর নাম, রূপ ও লীলার প্রচার হবে এবং সকলেই তাঁকে জানতে পারবেন।
গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু স্বয়ং তাঁর দুইজন পার্ষদ নিত্যানন্দ প্রভু ও হরিদাস প্রভুকে তাঁর আজ্ঞা সর্বত্র প্রকাশ করতে বলেছিলেন।
শুন শুন নিত্যানন্দ, শুন হরিদাস।
সর্বত্র আমার আজ্ঞা করহ প্রকাশ।।
প্রতি ঘরে ঘরে গিয়া কর এই ভিক্ষা।
বল কৃষ্ণ, ভজ কৃষ্ণ, কর কৃষ্ণ শিক্ষা।।
-গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু এখানে তাঁর পার্ষদবৃন্দ বা ভক্তকে প্রতি ঘরে ঘরে বা বাড়িতে যেতে বলেছিলেন এবং কৃষ্ণ ভজন বা কৃষ্ণ শিক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
ইসকন এর সমস্ত সদস্যবৃন্দই গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর অনুসারী। গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর নির্দেশ পালন করাই তাঁদের একমাত্র কাজ।
ইসকন এর উদ্দেশ্যসমূহ।
১। সুসংবদ্ধ-ভাবে মানবসমাজে ভগবত্তত্ত্বজ্ঞান প্রচার করা এবং সমস্ত মানুষকে পারমার্থিক জীবনযাপনে অনুপ্রাণিত হতে শিক্ষা দেওয়া, যার ফলে জীবনের যথার্থ উদ্দেশ্য সম্বন্ধে বিভ্রান্তি প্রতিহত হবে এবং জগতে যথার্থ সাম্য এবং শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে।
২। ভগবদ্গীতা এবং শ্রীমদ্ভাগবতের অনুসরণে কৃষ্ণভাবনামৃত প্রচার করা।
৩। এই সংস্থার সমস্ত সদস্যদের পরস্পরের কাছে টেনে আনা এবং শ্রীকৃষ্ণের কাছে টেনে আনা, এইভাবে প্রতিটি সদস্য-চিত্তে এমনকি প্রতিটি মানুষের চিত্তে সেই ভাবনার উদয় করানো, যাতে সে উপলব্ধি করতে পারে যে, প্রতিটি জীবই হচ্ছে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বিভিন্ন অংশ।
৪। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু প্রবর্তিত সমবেত ভগবানের দিব্য নাম কীর্তন করার যে সংকীর্তন আন্দোলন, সে সম্বন্ধে সকলকে শিক্ষা দেওয়া এবং অনুপ্রাণিত করা।
৫। সংস্থার সদস্যদের জন্য এবং সমস্ত সমাজের জন্য একটি পবিত্র স্থানে নির্মাণ করা যেখানে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাঁর নিত্যলীলা-বিলাস করবেন এবং পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের উদ্দেশ্যে তা নিবেদিত হবে।
৬। একটি সরল এবং অত্যন্ত স্বাভাবিক জীবনধারা সম্বন্ধে শিক্ষা দেওয়ার জন্য সদস্যদের পরস্পরের কাছে টেনে আনা।
৭। পূর্বোল্লিখিত উদ্দেশ্যগুলি সাধন করার জন্য সাময়িক পত্রিকা, গ্রন্থ এবং অন্যান্য লেখা প্রকাশ এবং বিতরণ করা।
ইসকন যেভাবে পরিচালিত হয়?
ইসকন আন্তর্জাতিক সংঘ বিধায় সারা পৃথিবীতে এর বিভিন্ন শাখা রয়েছে। সারা বিশ্বে বিভিন্ন স্থানে ইসকন মন্দির রয়েছে। প্রতিটি মন্দিরে একজন অধ্যক্ষ থাকেন (টেম্পল প্রেসিডেন্ট)। টেম্পল প্রেসিডেন্ট হলেন মন্দিরের প্রধান কর্মকর্তা।
ইসকনের অনেক মন্দির থাকায়, কাজের সুবিধার্থে ইসকন সারা পৃথিবীতে বিভিন্ন অঞ্চলে (বর্তমানে প্রায় ৩০ টি অঞ্চল) ভাগ করে নিয়েছে। প্রতিটি অঞ্চল একজন অভিজ্ঞ ভক্তের তত্ত্বাবধানে থাকে। এই পদটিকে বলা হয় গভর্নিং বডি কমিশনার বা জি.বি.সি। কিছু কিছু অঞ্চলে দুই বা ততোধিক সহকারী জি.বি.সি সদস্য রয়েছেন। সমস্ত অঞ্চলের জি.বি.সি সদস্যদের নিয়ে গঠিত জি.বি.সি বডি-ই হল ইসকনের সর্বোচ্চ পরিচালনা কর্তৃপক্ষ। প্রতি বছর একবার বিশ্বের মুখ্যকেন্দ্র শ্রীধাম মায়াপুরে জি.বি.সি বডি-র সকল সদস্যবর্গ সংঘের কার্যাবলীর পর্যালোচনা এবং ভবিষ্যতের পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য মিলিত হন। ভোটের ভিত্তিতে জি.বি.সি বডিতে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। জি.বি.সি কর্মাধ্যক্ষ নিয়মিত তাঁর নিজ অঞ্চলের মন্দির-সমূহ পরিদর্শন করেন এবং মন্দিরে নির্দিষ্ট পারমার্থিক মান রক্ষিত এবং বিধি-বিধান সমূহ পালিত হচ্ছে কিনা, মন্দির পরিচালনা ও উন্নয়ন-কাজ সুন্দর ভাবে চলছে কিনা ইত্যাদি তিনি পর্যবেক্ষণ করেন ও প্রয়োজনে সহায়তা করেন। এছাড়া তিনি প্রচার কার্যক্রমে সহযোগিতা করে থাকেন।
ইসকনের প্রতিষ্ঠাতা।
ইসকনের প্রতিষ্ঠাতা হলেন শ্রীল অভয়চরনারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ; সংক্ষেপে শ্রীল প্রভুপাদ। তাঁকে আচার্যবৃন্দ বিভিন্ন উপাধিতে ভূষিত করেছেন। তাঁকে চিন্ময় জগতের দূত, গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর সেনাপতি এবং ভক্তিবেদান্ত বলা হয়।
তাঁর নির্দেশসমূহঃ শ্রীল প্রভুপাদ বলেছিলেন যে, জি.বি.সি. কার্যাধ্যক্ষদের হতে হবে “পাহারাদার কুকুর” (Watch dog)- এর মত। অর্থাৎ ইসকনের কল্যাণ বিধানের জন্য এবং অপ্রামাণিক কোন দার্শনিক মতবাদের অনুপ্রবেশ-জাত দূষণ থেকে সংঘকে রক্ষা করার জন্য তাঁদের সদা সতর্ক থাকতে হবে।
শ্রীল প্রভুপাদ আরও বলেছিলেন যে, “নেতা মানেই হল শ্রবণ-কীর্তনের নেতা।” সেইজন্য ইসকনের নেতৃবৃন্দ কেবল পরিচালন এবং সংগঠন কার্যই নয়, এটাও প্রত্যাশিত যে তাঁরা পরমার্থ অনুশীলন এবং আচার অভ্যাসাদির আদর্শ মানও নিজেরা প্রদর্শন করবেন। শ্রীল প্রভুপাদ এ ব্যাপারে গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। নেতৃবৃন্দ যদি নিজেরা শ্রবণ কীর্তনে আদর্শ দৃষ্টান্ত প্রদর্শন করতে পারে তাহলে ইসকনে অধ্যাত্ম-অনুশীলনের উচ্চমান রাখা সম্ভবপর হবে।
শ্রীল প্রভুপাদের তিরোধানের পর ইসকনে কোন একক মুখ্য নেতা বা প্রধান নেই। শ্রীল প্রভুপাদ স্বয়ং বলেছিলেন যে, তাঁর শারীরিক অনুপস্থিতির পর তাঁর অনুগামী সমস্ত শিষ্যবৃন্দই নেতায় পরিণত হবে। কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলনকে সমগ্র বিশ্বে প্রসারিত করার জন্য তিনি তাঁর সকল শিষ্য বৃন্দকে একত্রে সম্মিলিত ভাবে কাজ করার আদেশ দিয়েছিলেন। আর এই আদেশই এই আন্দোলনের নিরবচ্ছিন্ন প্রসারের একমাত্র ভিত্তিস্বরূপ।
শ্রীচৈতন্য চরিতামৃত অনুযায়ী-
যেই ভজে, সেই বড়, অভক্ত হীন ছাড়।
কৃষ্ণ ভজনে নাই, জাতি কুলাদি বিচার।।
আবার-
কিবা বিপ্র, কিবা শূদ্র, কিবা নর-নারী।
কৃষ্ণ ভজনে হয় সকলে অধিকারী।।???