এই পোস্টটি 38 বার দেখা হয়েছে
রত্নাবলী দাসী, ইসকন জি.বি.সি ভক্তিচারু স্বামী মহারাজের একজন শিষ্যা। সম্প্রতি তিনি ইস্কন সহ সারাবিশ্বে খুবই আলোচিত হচ্ছেন তার পুনর্জন্মের ঘটনা নিয়ে। যিনি ১৯৭৩ সালে শ্রীল প্রভুপাদ থেকে দীক্ষা নেওয়ার পরের দিনই মর্মান্তিক এক সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত হন। এর ঠিক দু’বছর পরই ১৯৭৫ সালের ৯ আগস্ট লন্ডনে একটি সনাতন ধর্মাবলম্বী পরিবারে জন্ম নেন। এরপরেই ধীরে ধীরে তার মধ্যে প্রকাশিত হতে থাকে পূর্বজন্মের অদ্ভুদ সব ঘটনাবলী। সেসব ঘটনাবলী তিনি একটি ডায়েরীতে লিপিবদ্ধ করেন। সে ডায়েরী থেকে সংগৃহীত আলোচিত চুম্বক ঘটনাবলী ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরা হল।
অক্টোবর ১৯৯৭: আমার সাথে কৃষ্ণ বিদ্ধি প্রভুর সাথে বিয়ে হয় এবং ইস্কন ভক্তের পূনর্জন্ম এর দু’বছর পরেই শ্রীমৎ ভক্তিচারু স্বামী মহারাজের কাছ থেকে দীক্ষা গ্রহণ করি এবং নাম হয় রত্নাবলী দাসী।
(তিনি ১৯৭২ সালের দিকে গ্রন্থ বিতরণকারী ভক্তদের সহায়তায় লন্ডনের ইসকন মন্দিরে রাধা লন্ডনেশ্বরের দর্শন পান। সেই থেকে ভক্তদের সাথে একটি সুসম্পর্ক গড়ে উঠে)
জুন-২০০০: লন্ডনে শনিবার রাতে ত্রিভুবননাথ প্রভুর হরিনাম সংকীর্তন আমাকে খুবই আনন্দ জুগিয়েছিল। তিনি হঠাৎ আমাকে তার পাশে দাঁড়াতে বললেন। একজন মেয়ে হিসেবে তার পাশে দাঁড়াতে সংকোচবোধ হয়নি। তিনিও কেন জানি খুব স্বাভাবিক ছিলেন। এর কিছু সময় পর আমিও ঐ কীর্তনে খুব নৃত্য করছিলাম। ঐদিন থেকে তিনি আমাকে শিখিয়েছিলেন কিভাবে হরিনাম সংকীর্তনের সময় দেহগত সম্পর্কেরও উর্ধ্বে চিন্ময় আনন্দে হরিনাম সংকীর্তন করতে হয়। আমি খুব ভালোভাবেই অনুভব করছিলাম তিনি আমাকে একজন ব্রহ্মচারীর মতই শিক্ষা দিয়েছিলেন।
আগস্ট-২০০০: আমি কৃষ্ণ ক্ষেত্র প্রভুকে (আমার শিক্ষাগুরু) হঠাৎ বলেছিলাম ১৯৭৩ সালের দিকে আমি ট্রাফেলগার স্কয়ারে রথযাত্রার সময় ছিলাম। তিনি উত্তর দিলেন “সত্যিই কি আমি ছিলাম”। এরপরে আমি আশ্চর্য হয়ে ভাবছিলাম কেন আমি এটা বললাম কেননা আমার জন্ম তো ১৯৭৫ সালে।
অক্টোবর-২০০০: ত্রিভুবননাথ প্রভুকে বললাম, -পূর্ব আফ্রিকায় যেন আমি তার আয়োজিত ২৪ ঘন্টার কীর্তন উৎসবে ২৪ ঘন্টাই ড্রাম বাজাতে চাই।” তিনি উত্তর দিলেন, “তবে তো তুমি মরেই যাবে।” আমি বললাম, “একটি দূর্ঘটনায় মরার চেয়ে কীর্তনে মরা অনেক ভাল। কথাটি বলার পর আমি ভাবছিলাম আমি এই প্রকার উদ্ভট কথা কেন বললাম?
সেপ্টেম্বর ২০০১: কর্মের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে এক পর্যায়ে আমার গুরুমহারাজকে আমি বলছিলাম যে, আমার স্বামী আমাকে রীতিমত একজন ব্রহ্মচারী হিসেবে দেখে। এরপর গুরুমহারাজ আমাকে যা বললেন তাতে আমি খুবই অবাক হয়েছি। আমি নাকি পূর্বজন্মে একজন ব্রহ্মচারী ছিলাম এবং এতে কোন সন্দেহ নেই।
অক্টোবর ২০০১: আমি একটি স্বপ্ন দেখেছিলাম যাতে আমি স্কটল্যান্ড যাচ্ছিলাম একটি – দৃশ্যে আমি ছিলাম হাসপাতালের একটি ওয়ার্ডে। আরেকটি দৃশ্যে আমি একটি পার্কে জপ করছিলাম যেটি আমি বিভিন্ন দিক থেকে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম। ২ সপ্তাহ পর আমি আবার একটি স্বপ্নে ঐ একই পার্কে জপ করতে দেখলাম।
ত্রিভুবননাথ প্রভু ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দেহত্যাগ করলে তার স্মরণে কৃষ্ণদাস প্রভু তার বক্তৃতায় বলছিলেন, কেউ কেউ অসময়ে চলে যান। তখন আমার ভিতর থেকে এর প্রত্যুত্তর করল, “না এটা সত্যি নয়, আমি এখানে।” আমি তারপরই ভাবতে লাগলাম কেন আমি তা বললাম আমি তো উনাকে (কৃষ্ণদাস প্রভু) চিনি না।
নভেম্বর ২০০১: শ্রীল প্রভুপাদের কয়েকজন শিষ্যকে জিজ্ঞেস করলাম তারা এমন কোন ব্রহ্মচারীকে চিনত কিনা যার মৃত্যু ঘটেছিল ১৯৭৪ সালে যিনি হরিনাম ভালোবাসত এবং রাধা লন্ডনেশ্বর ও ত্রিভুবননাথের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। তখন বেরিয়ে আসে শ্রীমান রাঘব দাস ব্রহ্মচারীর (১৯৫৪-১৯৭৪) নাম।
তার পূর্ব নাম ছিল ডেভিড হোয়ে। তিনি ১৯৫৪ সালের ১৪ মে লন্ডনের গ্লাসগোতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন তার বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। ১৩ বছর বয়সে তিনি তার বাবাকে ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করতে দেখেছিলেন। তখন অত্যন্ত হতাশ হয়ে ডেভিড তার জীবনের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর খুঁজছিলেন। একসময় ১৭ বছর বয়সে ইস্কন এডিনবার্গ মন্দিরে যোগদান করেন। ডেভিড ত্রিভুবননাথের প্রতি তার হরিনামের জন্য খুব আকর্ষিত ছিলেন। ত্রিভুবননাথ ও ডেভিড প্রতিদিনই মন্দিরে লম্প জম্প করে কীর্তন করত। করতাল, ড্রাম বাজাত। পরবর্তীতে তিনি লন্ডন মন্দিরে আসেন এবং ভক্তিবেদান্ত মেনরেও আসেন। ১৯৭৩ সালের ১৯ অক্টোবর শ্রীল প্রভুপাদ থেকে দীক্ষিত হয়ে নাম হয় রাঘব দাস ব্রহ্মচারী। এরপরের দিনই গুরুদেবের উদ্দেশ্যে যজ্ঞ করার নিয়ম ছিল। অথচ তার পূর্বেই গ্রন্থ প্রচারে যাওয়ার সময় কৃষ্ণদাস প্রভুর প্রায় নিদ্রিত অবস্থায় গাড়ী চালানোর দরুন দূর্ঘটনা কবলিত হয়। ডেভিড তখন গাড়ীটির পেছনের আসনে ছিল। কৃষ্ণদাস প্রভু বেঁচে গেলেও ডেভিড বাঁচতে পারেনি। হাসপাতালের একটি ওয়ার্ডে তার মৃত্যু হয়। পরবর্তীতে শ্রীল প্রভুপাদ তার উদ্দেশ্যে একটি শোক পত্র লিখেন।
“অটো দূর্ঘটনায় নিহত রাঘব দাস ব্রহ্মচারীর জন্য একটি শোক সভার আয়োজন কর এবং এই আত্মাকে কৃষ্ণভাবনায় অগ্রগতির জন্য কৃষ্ণের কাছে প্রার্থনা কর। কৃষ্ণ অবশ্যই তাকে পরবর্তী জন্মে এমন একটি স্থান দেবে যেখান থেকে সে পুনরায় তার কৃষ্ণভাবনা শুরু করতে পারে। এটি নিশ্চিত।”
(বেরতীনন্দন দাসকে পত্র- ১৪ নভেঃ ১৯৭৩)
নভেম্বর ২০০১: আমি সব কিছু আমার গুরুমহারাজ ও শিক্ষাগুরু তমাল কৃষষ্ণ গোস্বামীকে খুলে বললাম।
জানুয়ারী ২০০২: আমি একটি স্বপ্নে দেখলাম যেখানে কৃষ্ণদাস প্রভু ‘রাঘব, রাঘব, রাঘব!” বলে চিৎকার করছিল। আমার স্বামী ও আমি ইসক্স এডিনবার্গের সেই মন্দিরে গিয়েছিলাম। যেহেতু আমার পাকস্থলীর সমস্যা হয়েছিল তাই মন্দিরের নিকটস্থ একটি হাসপাতালে যায় চিকিৎসার জন্য। সেখান থেকে ফিরে আসার সময় আমি একটি পার্ক দেখি যেটি আমার সে স্বপ্নের পার্কে সঙ্গে মিলে যায়। আমি তৎক্ষনাৎ সেখানে ছুটে যায়। আমার তখন অনুভব হয়েছিল আমার পূর্বের বাড়ী ছিল এখানে। রাঘব এখানে এসে জপ করতে ভালোবাসত। অক্টোবর ২০০১ এর সেই স্বপ্নের সাথে এর অদ্ভুদ মিল দেখে আমি নিশ্চিত হয়।
এপ্রিল ২০০২: পুনরায় এসব অদ্ভুদ ঘটনাবলী আমার গুরু মহারাজকে বিশ্লেষণ করলে তিনি রসিকতা করে বলেন, তোকে – ছিল মেয়েটি, যার কথা চিন্তা করতে করতে তোমার মৃত্যু হয়েছিল।” আমি এটি শুনে আরো বিস্মিত হলাম এবং বললাম। “আমি জানি না”। ভ. গীতার ৮/৬ শ্লোকে বলা হয়েছে” মৃত্যুর সময় যে যে ভাব স্মরণ করে সে পরবর্তীতে সেই ভাবিত তত্ত্বকেই লাভ করে।” নভেম্বর ২০০২: আমি আমার ছেলেবেলার আরো বিভিন্ন স্বপ্ন দেখলাম যেগুলো ছিল খুবই স্বচ্ছ। তখন রাঘব দাস প্রভুর স্ত্রী রেনুবতীকে জিজ্ঞেস করলাম রাঘব দাসের সঙ্গে সেরকম কোন মেয়ের সম্পর্ক ছিল কিনা? অনেক আলোচনার পর এক ভারতীয় মেয়ের কথা বেরিয়ে আসে যে কিনা এডিনবার্গ মন্দিরে আসত। রাঘব ঐ মেয়ে ভক্তের কথা প্রায়ই চিন্তা করত। একসময় ব্যাপারটি ধেনুবতী জানতে পারে। মেয়েটির নাম ছিল সত্যবতী। পরবর্তীতে খোঁজ খবর নিয়ে মেয়েটির সঙ্গে দেখা করলে আমি আরো বিস্মিত হয় যে তার শারীরিক গঠনের সঙ্গে অবিকল মিল দেখে। বিশেষত তার চোখের সঙ্গে এবং দেহের আকৃতির সঙ্গে বিভিন্ন অংশ আমার। অনেক কিছুই মিল আছে। আমি অবাক হয়ে, তাকে কৌশলে রাঘব দাস প্রভু সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি ঠিক মনে করতে পারলেন না।
এদিকে ধেনুবতীর রান্নাঘরে একটি কুকুরকে দেখার সঙ্গে সঙ্গে আমার বাঁ হাত পিছনে চলে গেলে পরবর্তীতে জানতে পারি একসময় কুকুরটি রাঘব দাসের বাঁ হাতে কামড় দিয়েছিল।
এরপরে ধীরে ধীরে ১৯৭৩ সালে সানফ্রান্সিসকোতে শ্রীল প্রভুপাদের সঙ্গে সেই ঐতিহাসিক রথযাত্রায় আমার অংশগ্রহন ও কে কে কোন অবস্থায় ছিলেন সব কিছু তদন্ত থেকে বেরিয়ে আসে এবং তা হুবহু মিলে যায়।
মে ২০০৬: আমি রাঘবের একসময়কার সেই দুর্ঘটনা কবলিত স্থানটি পরিদর্শন করলে আমি রাঘবকে অনুভব করতে পেরেছিলাম। আমি মৃত্যুর সময় আমার দেহকে ছেড়ে যেতে প্রস্তুত ছিলাম না।
২০১০: আমার স্বামী কৃষ্ণ বিদ্ধি প্রভু এবং আমার মধ্যে ডিভোর্স হল। এটি ছিল একটি বন্ধুসুলভ চুক্তি কেননা আমরা দু’জনই সম্মত ছিলাম আমরা কখনো অন্যসব স্বাভাবিক দম্পতির মত একসাথে বসবাস করতে পারি না। আমরা গৃহস্থ জীবনে ব্রহ্মচারীর মত জীবনযাপন করতাম। তিনি বর্তমানে সোহো এস. টি. মন্দিরে পবিত্র হরিনামের মাঝে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। একটি ব্যাপার হল বিয়ের পর থেকেই আমি কোন সন্তান নিতে ইচ্ছুক ছিলাম না।
পরবর্তীতে আমি রাঘব দাসের মেডিক্যাল রেকর্ডসগুলো সংগ্রহ করলাম। রাঘবের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট অনুসারে তার উদর, ইন্টেসটাইনস (নাড়ী-ভূড়ি সংক্রান্ত) এবং পেঠের নীচের অংশে মারাত্মকভাবে আহত হয়েছিল। এটি বিস্ময়কর যে, আমার বর্তমান মেডিক্যাল রিপোর্টের এসব জায়গায় সমস্যা রয়েছে। আমি এখনও এ জায়গাগুলোতে চিকিৎসা নিচ্ছি। রাঘবের আহত স্থানে কিছু হালকা কাঠা দাগের চিহ্ন রয়েছে। [উল্লেখ্য যাদের পুনর্জন্ম হয় তাদের পূর্বের কোন বৈশিষ্ট্য, আহত স্থান ইত্যাদি বর্তমান শরীরেও দেখা যায়]
আমার এই শরীর পাওয়ার পর থেকে একটি অভিজ্ঞতা প্রায়ই হয় যে, জীবিত অবস্থায় কখনো কারও শরীরকে কষ্ট দেওয়া উচিত নয়, কেননা তার প্রতিফলন পরের জন্মে ঘটেই।
উপরোক্ত এ ঘটনাটি আরো সুবিস্তারিত জানতে পরিদর্শন করতে পারেন ওয়েবসাইট iskconctg.org সেখানে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন ছবি ও প্রমাণ এ বিষয়ে তুলে ধরা হয়েছে।
হরেকৃষ্ণ
মাসিক চৈতন্য সন্দেশ , ২০১০