এই পোস্টটি 468 বার দেখা হয়েছে
“যতক্ষণ পর্যন্ত নিজের চোখে আমি ভগবানকে দেখেছি না বা কেউ যদি আমাকে ভগবানকে দেখাতে না পারে ততক্ষণ পর্যন্ত আমি বিশ্বাস করি না যে ভগবান বলে আদৌ কেউ আছে।” আচ্ছা ঠিক আছে মশাই কিন্তু শাস্ত্রে তো বলা হয়েছে ভগবান আছেন এবং তিনি সার্বক্ষনিক আমাদের প্রতিপালন করছেন। “ও শাস্ত্র, ও গুলোরতো কোন ভিত্তি নেই কবে কে কি সব লিখেছে, ঐ সব শাস্ত্র টাস্ত্র আমি বিশ্বাস করি না।” এখানে যেসব উক্তিগুলো তুলে ধরা হয়েছে তা প্রায় লোকেই বলে থাকে। আপনি কি ভগবান বলে যে কেউ আছে বিশ্বাস করেন? ‘না’। শাস্ত্র বিশ্বাস করেন? ‘না’। তাই আমাদের এবারকার বিষয়বস্তু হচ্ছে বিশ্বাস প্রসঙ্গেই ।
যে কঠিন সত্যকে এড়িয়ে চলে আমরা অবলীলায় বলি ‘আমি বিশ্বাস করি না’ তা কতটা ন্যায়সঙ্গত এবং যুক্তিসঙ্গত? এখানে ন্যায়সঙ্গত বলছি এই কারণেই, আমরা যদি আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে অনেক কিছুকেই চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করতে পারি তাহলে ভগবানকে বা পবিত্র শাস্ত্রসমূহকে বিশ্বাস করতে আমাদের আপত্তিটা কোথায়? যেমন, আমরা যখন অসুস্থ হয়ে পড়ি তখন নিশ্চিতভাবে কোনরূপ বিকল্প ভাবা ছাড়াই ডাক্তারের শরণাপন্ন হই। একটা বিশ্বাস যে, এই নামকরা এম.বি.বিএস ডাক্তারই আমার রোগ ভালো করতে পারেন। এমনকি ভুয়া ডিগ্রীধারী, সার্টিফিকেটহীন কোন ডাক্তারের ডিগ্রিসর্বস্ব সাইনবোর্ড দেখে ছুটে যায় চিকিৎসার জন্য। অনেক সময় ডাক্তারের সহকারীদেরকে ডাক্তার মনে করে চিকিৎসা করার যথেষ্ট বিশ্বস্ততাও আমাদের রয়েছে। আমরা এমনই অজ্ঞানী যে, যে কেবলমাত্র প্রেসক্রিপশন দেখে ঔষধ বিক্রি করে তাকেও আমরা ডাক্তার বলে জানি। কিন্তু যেসব ডাক্তারদের আপনি বিশ্বাস করছেন তারা কতটা বিশ্বাসযোগ্য তার অনেকগুলো ঘটনা থেকে একটি আলোচিত মর্মাহত ঘটনার কথা তুলে ধরা হল।
বিশ্ববিখ্যাত টাইম ম্যাগাজিন’ (মার্চ ২০০৩) সংখ্যায় ছাপানো হয়েছিল। জেসিকা হল নামে ১৭ বছর বয়সী এক মেক্সিকান বালিকা ‘ডিউক ইউনিভার্সিটি হসপিটাল’ এর মত য়ার বিশ্ববিখ্যাত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল এক কঠিন রোগ নিয়ে। কিন্তু যে হাসপাতালটি বিশেষজ্ঞ সার্জনদের জন্য বিখ্যাত ছিল সেই সব সার্জনরাই শুধুমাত্র একটি ভুলের কারণেই মেয়েটিকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। যখন তার হার্ট এবং ফুসফুস পরিবর্তন করার প্রয়োজন হয়েছিল তখন ডাক্তাররা অন্য এক ব্যক্তির নিকট থেকে হার্ট এবং ফুসফুস নিয়ে মেয়েটির দেহে প্রতিস্থাপন করে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সেই ব্যক্তির রক্তের গ্রুপ ছিল A আর মেয়েটির ছিল O গ্রুপ। রক্তের গ্রুপ চেক করার অবহেলার দরুন তিন দিন যেতে না যেতেই যখন মেয়েটির অবস্থা আশংকাজনক হয়ে দাড়ায় তখন ডাক্তারদের এ সাধারণ ভুলটি ধরা পরে। এমনিতেই দ্বিতীয় বার হার্ট ও ফুসফুস পরিবর্তন করার ঘটনা বিরল। আর এই বিরল কাজটিই যখন আমাদের অত্যন্ত বিশ্বাসযোগ্য ডাক্তাররা করতে গেলেন তখন মেয়েটির ব্রেইন বা মস্তিস্ক সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং ফলশ্রুতিতে মস্তিস্কের ক্ষতিগ্রস্থদের কারণে অকালেই তার মৃত্যু হয়।
যেখানে ডিউক হসপিটালের মত বিশ্ববিখ্যাত হাসপাতালের ডাক্তাররা এ অতি সাধারণ ভুলটি করতে পারে তাহলে সেইসব ডাক্তারদের আমরা কতটা বিশ্বাস করতে পারি? আমাদের দেশেও পেটে তুলা রেখে সেলাই করে দেয়া, রোগাক্রান্ত চোখের বদলে ভালটা সার্জারি করে ফেলে দেয়ার মত 1 অমার্জনীয় ভুল দৈনিক পত্রিকায় অনেকবার বি স প্রকাশিত হয়েছে। এমনিতেই আমরা == প্রাথমিকভাবে অনেক সময় কোন ডাক্তারকে যাচাই বাছাইও করিনা যে, “তিনি কি আসলেই একজন ডাক্তার, তিনি কি এক চান্সেই ডাক্তারী পাশ করেছেন, তিনি কি ফার্স্টক্লাস পেয়েছেন?” এসব প্রশ্নের অনুসন্ধান না করেই অন্ধভাবে যদি কোন ডাক্তারকে বিশ্বাস করতে পারি তাহলে ভগবানকে বিশ্বাস করার সময় এত প্রশ্ন কেন? শিক্ষকদের ক্ষেত্রেও একই প্রশ্ন করা যায় যে, আপনার শিক্ষা জীবনের রেজাল্ট কেমন ছিল?
এবার আসুন একজন মা-বাবার কথায়।
যিনি তার ছেলেমেয়েকে বৃদ্ধ অবস্থার ভরসা হিসেবে পাওয়ার জন্য সারাজীবন অত্যন্ত যত্নের সাথে প্রতিপালন করে। কিন্তু দেখা যায় যে, অনেকক্ষেত্রে তাদের সেই সুদৃঢ় বিশ্বাসকে দূরে ঠেলে দিয়ে বৃদ্ধ বয়সের অবলম্বন তো দূরের কথা উল্টো তাদেরকেই মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে চরম বিশ্বাসঘাতকের পরিচয় দেয়। অন্যদিকে আপনার চারপাশের ছদ্মবেশী বন্ধু বা সঙ্গীদের কথা আর কিই বা বলব। প্রায় প্রতিদিনই কোন না কোন দৈনিক পত্রিকায় ছাপানো হয় যে, কিভাবে ঘনিষ্ট বন্ধুর কারণে কারো মৃত্যু হয়েছে কিংবা কোন বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। অথচ এসব প্রিয় সঙ্গী এবং বন্ধুদেরই আমরা প্রতি মুহূর্তেই বিশ্বাস করছি। কিন্তু ভগবানকে বিশ্বাস করতেই যত আপত্তি। খাবার দাবারের কথা আসলে এই বিশ্বাসের ব্যাপারটা আরো বেশি পরিস্কার হয়ে যায়। কত ভেজাল তথাকথিত মুখরোচক খাবার যে আমরা বিশ্বাস সহকারে নির্বিচারে গলাধঃকরণ করছি এবং তা যে কতটা অস্বাস্থ্যকর, শরীরের জন্য মারাত্মক ও বিপজ্জনক তা বিভিন্ন মিডিয়া ও পত্র-পত্রিকাও আমাদের সচেতন করে চলছে। কিন্তু তবুও আমরা অত্যন্ত বিশ্বাস সহকারে এ খাবারসমূহ গ্রহণ করছি। এইতো গত জুন মাসে ‘দৈনিক সুপ্রভাতে’ মিনারেল ওয়াটার সম্পর্কে এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকার এক দোকানদার ‘শেফা’ মিনারেল ওয়াটার বিক্রি করতে গিয়ে দেখে এর ভিতর অনেকগুলো কেঁচো কিলবিল করছে আর পাত্রের গায়ে শেওলা জমে আছে। অথচ সেই মিনারেল ওয়াটারই আমরা বিশুদ্ধ মনে করি নিশ্চিন্ত মনে গ্রহণ করে চলছি। কে না জানে পানিবাহিত রোগ জন্ডিসের প্রাদুর্ভাব হয়ত কোন না কোন মিনারেল ওয়াটারের মাধ্যমেই হতে পারে। এক্ষেত্রে
আমরা বিভিন্ন পণ্যসমূহ ছাড়াও কোথায় কিভাবে তৈরি হচ্ছে তার কোন যাচাই বাছাই ছাড়াই বিশ্বাস সহকারে গ্রহণ করি। অথচ ভগবানের কথা উঠলেই দার্শনিকের ভাব দেখিয়ে বলি ‘ওটা আমরা বিশ্বাস করি না’। আপনি যে যানবাহনেই উঠেন না কেন, ড্রাইভারকে কি আমরা জিজ্ঞেস করি, “আপনি কি সুস্থ? আপনি কি ভালভাবে ঘুমিয়েছেন? আপনি কি অ্যালকোহল পান করেছেন? আপনার কি ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে? থাকলেও সেটা কি মানসম্পন্ন?’ করি না। অথচ অবশ্যই জিজ্ঞেস অন্ধভাবেই বিশ্বাস করার মাধ্যমে নির্ধিদ্বায় যে কোন যানবাহনে উঠে পড়ি। আর ফলশ্রুতিতে হয় কোন সড়ক দুর্ঘটনা অথবা ছিনতাইয়ের মত করুন দুর্ভোগ। এই হল অন্ধ বিশ্বাসের কিছু উদাহরণ। কিন্তু ভগবান বলে যে কেউ রয়েছেন তা কোন অন্ধ বিশ্বাস নয়। শাস্ত্র বা ভগবান এগুলো সবই প্রামাণিক। সুতরাং যদি প্রাত্যহিক জীবনের এসব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিশ্বাসকে অন্ধভাবে গ্রহণ করতে পারেন তাহলে ভগবান বা শাস্ত্র যে চিরসত্য এই বিশ্বাসটি কেন গ্রহণ করবেন না। অন্ধভাবে নয় বরঞ্চ যাচাই বাছাই করেই এ পরম সত্যকে গ্রহণ করুন। এতে তো ক্ষতি নেই বরঞ্চ লাভের পরিসীমায় বেশি হবে। শ্রীল প্রভুপাদের প্রতিষ্ঠিত ইসকন সেই বিশ্বাসকে গ্রহণ করার শিক্ষা দিচ্ছে। তাই অতিসত্ত্বর পরম সত্যের যাচাই-বাছাই করুন আর ভগবান ও শাস্ত্র সম্পর্কে বিশ্বাসকে সুদৃঢ় করে বলুন হ্যাঁ আমি ভগবান এবং শাস্ত্রকে সুদৃঢ়ভাবেই বিশ্বাস করি। এত কোন, সন্দেহ নেই। (চলবে..) হরে কৃষ্ণ l।