এই পোস্টটি 310 বার দেখা হয়েছে
গত সংখ্যার পর
গত সংখ্যায় তুলে ধরা হয়েছিল যে, আমরা প্রতিনিয়ত কত কিছুকেই অন্ধভাবে বিশ্বাস করি কিন্তু অত্যন্ত দুর্ভাগ্য যে, ভগবান বা তার শাস্ত্রকে বিশ্বাস করতেই আমাদের যত সব আপত্তি। বলাবাহুল্য, ভগবানের বিরুদ্ধে বলার সময় আমাদের = জ্ঞানও বহুগুনে বেড়ে যায়। মনে হয় যেন সবজান্তা জেসিকার মত একটি ফুটফুটে ই মেয়ের অকাল মৃত্যু হওয়ার মতো ঘটনা ছাড়াও আরও বিবিধ প্রাত্যহিক বিশ্বাসের কাহিনীও গত সংখ্যায় তুলে ধরা হয়েছিল। এরকম আরও বিশ্বাসগুলোর মধ্যে একটি হল ভবিষ্যতকে সুদৃঢ়ভাবে বিশ্বাস’। ধরুন একজন ছাত্র লেখাপড়া করছে ভবিষ্যতে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ব্যাংকার, শিক্ষক বা অধ্যাপক ইত্যাদি
হওয়ার বাসনায়। কিন্তু এসব সন্তান এবং তাদের বাবা-মা ভবিষ্যতকে এতটা বিশ্বাস করে চলছে যে, আদৌ কি পূরণ হবে তাদের লক্ষ্য বা আশা? হয়ত সেই সন্তান পরীক্ষায় অকৃতকার্যও হতে পারে। কিংবা খারাপ বন্ধু বান্ধবীদের ফলে নষ্ট হয়ে যেতে পারে অথবা, দুর্ভাগ্যবশত কাঙ্খিত লক্ষ্য পূরণ নাও হতে পারে। অথচ তবুও তারা
অনিশ্চিত ভবিষ্যতকে নিশ্চিত বিশ্বাস করে। ভবিষ্যতের লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হওয়া এরকম অনেক ছাত্র/ছাত্রী কিংবা মা-বাবার করুণ কাহিনী বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে প্রচুর রয়েছে। তাদের কেউ কেউ এই ব্যর্থতার
চরম হতাশায় আত্মহত্যা পর্যন্ত করছে।কিংবা যারাই তাদের লক্ষ্য পূরণ করেছে তারাও কি কাঙ্খিত সুখ পাচ্ছে? শেষ খায়ে ৷ পর্যায়ে বার্ধক্য এবং মৃত্যুতে অতৃপ্ততার ব্যর্থতা নিয়েই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। কিন্তু যদি তাদেরকে বলা হয় শাস্ত্র বা ভগবান কি বিশ্বাস করেন? তারা বলে, আরে মশাই না না, এসব ধর্ম কর্ম বা ভগবান
ছেড়ে বরঞ্চ বাস্তবতাকেই গ্রহণ কর। সুন্দর ভবিষ্যত এর আশায় জনগণ নেতা বানায়। কিন্তু নেতারাই জনগণের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে। তাই কথায় বলে, “যে যায় লঙ্কায়, সে হয় রাবণ’। অথচ বিশ্বাসের সিকি ভাগও যদি ভগবান বা শাস্ত্রের উপর অর্পণ করত তাহলে তারা অনেক অনেক খ/সুখ /শান্তি উপভোগ করতে পারত। চাই
তাই শ্রীমদ্ভগবদ্গীতাতেই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আমাদেরকে কিভাবে তাকে তার মুখনিঃসৃত শাস্ত্রকে বিশ্বাস করা যায় এ স্পর্কিত বিভিন্ন সতর্কবাণী ও সমাধান দিয়ে গেছেন। উল্লেখ্য, এ অবিশ্বাস সন্দেহেরই একটি প্রতিমূর্তি। তাই কৃষ্ণ বলেছেন,
অজ্ঞশ্চশ্রদ্দধানশ্চ সংশয়াত্মা বিনশ্যতি ।
অতএব, হে ভারত! তোমার হৃদয়ে অজ্ঞানপ্রসূত সংশয়ের উদয় হয়েছে, তা জ্ঞানরূপ খড়গের দ্বারা ছিন্ন কর। যোগাশ্রয় করে যুদ্ধ করার জন্য উঠে দাঁড়াও। ৯ম অধ্যায়ে এই বিশ্বাস সম্বন্ধে আরও একবার বলেছেন,
“আমি যখন মনুষ্যরূপে অবতীর্ণ হই, তখন মূর্খেরা আমাকে অবজ্ঞা করে। কারণ আমার পরম ভাব সম্বন্ধে অবগত নয় এবং তারা আমাকে সর্বভূতের মহেশ্বর বলে জানে না।” ষোড়শ অধ্যায়ের ২৪নং শ্লোকে শাস্ত্র সম্পর্কে ভগবান অর্জুনকে উপলক্ষ করে আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেনতস্মাচ্ছাস্ত্রং প্রমাণং তে কার্যাকার্যব্যবস্থিতৌ জ্ঞাত্বা শাস্ত্রবিধিানোক্তং কর্ম কর্তৃমিহাহসি ॥ “অতএব, কর্তব্য ও অকর্তব্য নির্ধারণে শাস্ত্রই তোমার প্রমাণ। অতএব শাস্ত্রীয় বিধানে কথিত হয়েছে যে কর্ম, তা জেনে তুমি সেই কর্ম করতে যোগ্য হও।”২৩নং শ্লোকেও ভগবান অবিশ্বাসীদের জন্য সতর্কবাণী দিয়েছেন এভাবে,
য শাস্ত্রবিধিমুৎসৃজ্য বর্ততে কামকারতঃ ।
“যে শাস্ত্রবিধি পরিত্যাগ করে কামাচারে (খেয়ালখুশি মত কর্ম বা আচরণ) বর্তমান থাকে, সে সিদ্ধি, সুখ অথবা পরাগতি লাভ করতে পারে না।”ইস্কনের অন্যতম আচার্য্য সৎস্বরূপ দাস গোস্বামী তার একটি গ্রন্থে উদ্ধৃত করেছেন, “যখন আমাদের ভগবান বা শাস্ত্রের প্রতি মায়ার মাধ্যমে অবিশ্বাস জন্মায় তখন আমাদের ভাবা উচিত এই পৃথিবী, এই গ্রহ, সূর্য, চন্দ্র এগুলো কে সৃষ্টি করেছেন? বিজ্ঞানীরা তো বাতাস, সূর্যের আলো, চন্দ্রের কিরণ কিংবা এক টুকরো ঘাস বা এত সুন্দর পুস্প সৃষ্টি করতে পারে না। তাহলে এই গোছানো প্রকৃতির পরিচালনা নিশ্চয়ই কেউ একজন করছেন। আর তিনিই হলেন পরমেশ্বর ভগবান ।”
ইসকন প্রতিষ্ঠাতা আচার্য শ্রীল প্রভুপাদও বলেছিলেন, “বিশ্বাসহীনরা ভগবদ্ভক্তির এ সুন্দর প্রক্রিয়া গ্রহণ করতে পারে না, বিশ্বাস সৃষ্টি হয় ভক্তদের সঙ্গে সঙ্গ করার মাধ্যমে। দুর্ভাগা লোকেরা, এমনকি বৈদিক সাহিত্যে ভগবান সম্পর্কিত সমস্ত প্রমাণাদি শ্রবণ করেও ভগবানকে বিশ্বাস করে না। তারা অস্বস্থিতে ভোগে এবং ভগবানের অপ্রাকৃত সেবায় নিজেকে দৃঢ়ভাবে মনোনিবেশ করতে পারে না। (গীতা-৯/৩ তাৎপর্য) যেখানে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাকে ও তার শাস্ত্রকে বিশ্বাস করার জন্য এবং তা গ্রহণ করার জন্য স্পষ্ট নির্দেশ দিয়ে গেছেন, তারপরও যদি তার এ নির্দেশ আমরা গ্রহন না করি সেক্ষেত্রে এটি গোঁড়ামি ছাড়া আর কিছুই নয়। আর তার ফলও কিন্তু ভয়ংকর যেটি ভগবান প্রদত্ত উক্ত শ্লোকগুলিতেই ব্যাক্ত করা হয়েছে। হরে কৃষ্ণ।।
চৈতন্য সন্দেশ আগষ্ট- ২০০৯ প্রকাশিত