“আবার আসিব ফিরে, ধান সিঁড়িটির তীরে হয়তোবা…..জীবনানন্দের দাশের রচিত ‘আবার আসিব ফিরে’ এ কবিতাটিতে তার যে পুনর্জন্ম নিশ্চিতভাবেই হবে তার একটি ধারণা বা বিশ্বাসের কথা তুলে ধরেছিলেন। করি দেশপ্রেমের নিদর্শন স্বরূপ শঙ্খচিল, শালিক অথবা গ্রাম্য কোন সরল বালিকার বর্ণনা দিতে গিয়ে তার পুনর্জন্মের অভিব্যক্তি হয়ত কবিতায় তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলেন। তবে তিনি পুনর্জন্ম বিশ্বাস করুক আর নাই বা করুক পুনর্জনা যে মানুষের জীবনে ঘটে তা ধ্রুব সত্য। এর প্রত্যুত্তরে যদি কেউ বলেন “প্রমাণ দেখাতে পারেন? কিংবা এর কতটুকুই বা সত্যতা রয়েছে”? তবে তাদের উদ্দেশ্যেই পুনর্জন্মের কিছু সত্য ঘটনা প্রয়োজনীয় প্রমাণাদীসহ তুলে ধরা হল। আজ থেকে ১০ বছর আগের ঘটনা, শ্রীলংকার বিখ্যাত এ.এফ.পি নাম একটি সংবাদ সংস্থা তাদের নিজস্ব সংবাদ মাধ্যমে একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য তুলে ধরেন। তাদের ভাষ্যমতে শ্রীলংকায় নিহত প্রেসিডেন্ট প্রেমাদাসা দুই বছরের এক শিশুর মধ্য দিয়ে পুনর্জন্ম লাভ করেছেন। সংস্থাটির দাবীর পর প্রতিদিন অসংখ্য লোক তাকে সম্ভাষণ জানাতে আসছে। স্থানীয় পত্র পত্রিকা এ খবর জানায়। সিংহলী ভাষায় প্রকাশিত ডিভাইনা ডেইলী জানায়, শত শত লোক শিশুটিকে দেখার জন্য হাঙ্গুরাঙ্কেথা গ্রামে সমবেত হচ্ছে। ১৯৯৩ সালে আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহত প্রেমাদাসার সঙ্গে শিশুটির চেহারার অবিকল মিল রয়েছে। কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণকারী বালকটি বলেছে, তার নাম প্রেমাদাসা। আঘাত প্রাপ্ত হওয়ার কথাও সে বলেছে। প্রেমাদাসার আততায়ী তামিল বোমা হামলাকারী “বাবু” বলে পরিচিত। পত্রিকা জানায়, বিজেবাহু নামের শিশুটি প্রয়াত প্রেসিডেন্টের মতোই ভোর পাঁচটায় ঘুম থেকে উঠে বৌদ্ধ আচার পালন করে ২২ মাস বয়সী এই বিজেবাহুর বক্তব্যের কোন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা পাওয়া না গেলেও শ্রীলংকার সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধরা পুনর্জন্ম বিশ্বাস করে। অতি আলোচিত ঘটনাটি শুধু শ্রীলংকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। তা মিডিয়ার কল্যাণে পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। ১৪ জানুয়ারি ৯৯ খ্রীস্টাব্দের ভোরের কাগজে পুনর্জন্ম সম্পর্কে এক চাঞ্চল্যকর খবরটি সুন্দরভাবে তুলে ধরেছিল। গত ১৭ মে ২০০৯ইং তারিখে ‘সমকাল’ পত্রিকায় সম্প্রতি পুনর্জন্ম বিষয়ক আরেকটি আলোচিত প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তবে এবারের ‘পুনর্জন্মের ঘটনাটি আমাদের বাংলাদেশেই। ‘জাতিস্মর।’ শিরোনামে প্রতিবেদনটিতে তুলে ধরা হয় কিভাবে ‘অর্পণ মণ্ডল’ এক শিশুর পুনর্জন্ম ঘটনাটি ঘটে। সংবাদটি পত্রিকায় প্রকাশিত হবার পর আলোচনার ঝড় তুলে।
‘জাতিস্মর’
খুলনা ব্যুরো ও দাকোপ প্রতিনিধি খুলনার দাকোপ উপজেলার পূর্ব বাজুয়া গ্রামের সুশান্ত শেখর মণ্ডলের আড়াই বছরের সন্তান অর্পণ মণ্ডল বলছে, সে ‘জাতিস্মর’। শিশুটির ভাষ্য মতে, আগের জন্মের পিতা মৃত নগেন মণ্ডল তার নাম দিয়েছিল রণজিত মণ্ডল। তাদের বসবাস সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার নাড়ারাবাদ গ্রামে। পরে জাতিস্মরের দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী খবর পাঠালে ঘটনাস্থলে হাজির হন ‘পূর্বজন্ম’- এর মা কদম মণ্ডল (৬৫)। তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, ‘অর্পণের আচার-আচরণ, কথাবার্তা ও চালচলনের মধ্যে আমি রণজিতের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাচ্ছি। আমি অর্পণকে আমার ছেলে হিসেবে স্বীকার করে নিয়েছি।’ শিশুটি বলে, ‘২০০৪ সালে শিব চতুর্দশী পূজার রাতে তার বন্ধু রাজেন মণ্ডল তাকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়। তারপর অপরিচিত দুইজন লোক এসে তাকে জোরপূর্বক মোটরসাইকেলে তুলে জঙ্গলের ভেতর নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। তখন তার বয়স ছিল প্রায় ৩০ বছর।’
এ ব্যাপারে অর্পণের কথিত পূর্বজন্মের স্ত্রী চন্দনা মণ্ডলের (৩০) কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘২০০৪ সালের এক শিব চতুর্দশীর পূজার রাতে আমার স্বামী নিখোঁজ হয়। তারপর থেকে তার আর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।’ সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শিশু অর্পণ তার বর্তমান মাকে ‘মাম্মি’ এবং তার কথিত পূর্বজন্মের মাকে ‘মা’ বলে ডাকছে। অর্পণের এই কথিত পুনর্জন্মের কথা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ায় গত কয়েকদিন ধরে শত শত মানুষ ওই শিশুটিকে দেখতে যাচ্ছে। কৌতূহলী অনেকেই তাকে নানা প্রশ্ন করছে। সে কখনো উত্তর দিচ্ছে, আবার কখনো চুপ করে থাকছে।
এদিকে, গত শুক্রবার সন্ধ্যায় ওই বাড়িতে আসেন জাতিস্মরের পূর্বজন্মের বন্ধু নাড়ারাবাদ গ্রামের সেই রাজেন মণ্ডল। বিস্ময় বালক অর্পণ তার নাম বলায় রাজেন মণ্ডল রাত ৩টার দিকে ওই বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছে বলে স্থানীয় লোকজন দাবি করেন।
প্রসঙ্গত, ২০০৪ সালে আশাশুনি উপজেলার নাড়ারাবাদ গ্রামের মাছ ব্যবসায়ী রণজিত মণ্ডল নিখোঁজ হয়েছিলেন। অদ্যাবধি তার কোনো সন্ধান মেলেনি। ওই ঘটনায় তার স্ত্রী চন্দনা মণ্ডল বাদী হয়ে ৬ জনকে আসামি করে আশাশুনি থানায় গুম মামলা করেছিলেন। অর্পণের বিষয়ে কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন, আসলেই অর্পণের পনর্জন্ম হয়েছে। আবার অনেকের অভিমত, পুনর্জন্মের বিষয়টি একেবারেই অবাস্তব এবং কাল্পনিক। সারাবিশ্বে পুনর্জন্মের এরকম আরো প্রামাণিক ঘটনা ঘটেছে। তবুও মূর্খ, নাস্তিকরা পুনর্জন্ম যে বাস্তব সেটা বিশ্বাস করতে চায় না।
চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেও তারা বলে এসব বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এসব নাস্তিকরা এক সময় অবশ্যই তাদের ভুল বুঝে আমাদের পতাকাতলে সমবেত হবে। প্রকৃতিই তাদের সেটা করতে বাধ্য করবে। ভগবান যদিও কিছু কিছু ব্যক্তিদের পুনর্জন্ম ঘটানোর মাধ্যমে আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। ভগবদ্গীতায় ২/২৭নং শ্লোকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন “যার জন্ম হয়েছে তার মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী এবং যার মৃত্যু হয়েছে তার জন্মও অবশ্যম্ভাবী”। তাই উপরোক্ত প্রমাণাদির সূত্র ধরে জীবনানন্দ দাশের সথে সুর মিলিয়ে আমরাই বলতে পারি “আবার আসিব ফিরে হয়তবা…।
হরে কৃষ্ণ ।