এই পোস্টটি 145 বার দেখা হয়েছে
“ব্যর্থতা’ অনেক মানুষের জীবনেই একটি কঠিন শব্দ, যেটি কেউই চাই না। পক্ষান্তরে মানুষ চাই সফল হতে। জীবনের প্রতিপদক্ষেপ যেন এক একটি সফলতা পুরো জীবনটাকেই রঙিন করে তোলে এটিই কাম্য। কিন্তু তবুও অনাকাঙ্খিত ব্যর্থতা মানুষের জীবনে আসেই। আর যখন ব্যর্থতা আসে তখন তার মাঝে সৃষ্টি হয় এক চরম হতাশা। যে হতাশা একটা জীবনকে ধ্বংসও করে দিতে পারে। “ভয় হয় যদি আবারও ব্যর্থ হই”। নতুন করে এগিয়ে যাওয়ার মত আত্মবিশ্বাস বা প্রেরণা নিজের মধ্যে আর খুঁজে পাওয়া যায় না। কেননা ঐ একটি মাত্র কারণ “যদি আবার ও ব্যর্থ হই। তখন কি হবে? সফল যে হব এর নিশ্চয়তা কেই বা দিতে পারে।” বছর বছর কত লোকই যে তাদের জীবনকে এক চরম দুর্দশায় নিয়ে যাচ্ছে তার ইয়ত্তা নেই। আত্মহত্যা থেকে শুরু করে ড্রাগস গ্রহন, মাদকাসক্ত, কত কিনা হচ্ছে। এসবের কারণ খোঁজ করলে উঠে আসবে সেসব মানুষদের কাহিনী যারা একসময় ব্যর্থ হয়েছিল এবং পরে নিজেদের জীবনের মোড়টাই নিজেরাই ঘুরিয়ে দিল মারাত্বক ধ্বংসাত্মক কাজে। কিন্তু এর কি কোন সমাধান নেই? আমাদের জীবনে যখন ব্যর্থতা আসে তখন কি করনীয় এ সম্পর্কে শাস্ত্রীয় পর্যালোচনার পূর্বে দেখে নেয়া যাক ইতিহাস খ্যাত বিভিন্ন ব্যক্তিদের জীবনে যখন ব্যর্থতা এসেছিল সে সময় তারা কি করেছিল। আশা করি আপনার ভিতরে অনুপ্রেরণা বা আত্মবিশ্বাস সৃষ্টির জন্য এসব ব্যক্তিদের জীবনীসমূহ আপনাকে সাহায্য করবে।
থমাস এডিসন :আপনি হয়ত সমগ্র জীবনে হাতে গোনা কয়েকটি ব্যর্থতার মুখোমুখি হয়েছিলেন। কিন্তু থমাস এডিসনের ব্যর্থতার সংখ্যা নিশ্চিতভাবে আপনার চেয়ে অনেক গুন বেশি ছিল। তিনি বৈদ্যুতিক বাতি আবিষ্কারের পূর্বে আট হাজার পরীক্ষা নীরিক্ষা চালিয়েছিলেন। কিন্তু তবুও এতটুকু দমে যান নি। ঠিকই পরের বার আকাঙ্খিত সাফল্য অর্জন করেছিলেন বৈদ্যুতিক বাতি আবিষ্কারের মাধ্যমে। তিনি বলেছিলেন, “আমি আট হাজার ব্যর্থতার মধ্যেও অনুৎসাহিত হইনি। আমি অন্ততপক্ষে এ ব্যর্থতার মাঝে ভুলসমূহ বের করতে পেরেছিলাম।” এটাই হল সফলতা। সেক্ষেত্রে আপনার একটি ব্যর্থতা যদি আপনার জীবনকে সামনে চলতে বাধা দেয় সেটা নিতান্তই আপনার বোকামী।
উইন্সটন চার্চিল : যুক্তরাজ্যের একসময়ের সফল প্রেসিডেন্ট ছিলেন এই উইন্সটন চার্চিল। অথচ ছোটবেলায় তিনি যে ভবিষ্যতে একজন বিখ্যাত প্রেসিডেন্ট হবেন কেউ স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি। ভাবতে না পারার যথেষ্ট কারণও রয়েছে। কেননা তিনি লেখাপড়ায় এমন কাঁচা ছিলেন যে, তার বাবা তাকে কুত্তা বলে গালাগালি করত। স্কুলে থাকার সময় সবসময়ই লোয়ার গ্রেড পেত। এমনকি অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে শুধুমাত্র ভর্তি পরীক্ষায় টিকতে তাকে দু’দুবার পরীক্ষা নিতে হয়েছিল। অথচ এসব অপমানজনক অপবাদ এবং ব্যর্থতার পরেও তিনি থেমে থাকেননি। জোড় মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে চলার মাধ্যমে তিনি হয়েছিলেন যে সময় সূর্য কখনো অস্ত যায়নি সেই সময়কালীনের যুক্তরাজ্যের প্রেসিডেন্ট। তিনি এমনকি গত বিংশ শতাব্দির সবচেয়ে বিখ্যাত বক্তাদের মধ্যে অন্যতম হিসেবে বিশ্বে সুপরিচিত।
ডঃ সিউজ এবং তার শিশুদের গ্রন্থ :একজন বিখ্যাত ব্যক্তি একটি শিশুদের গ্রন্থ লিখেছিলেন যেটি পাবলিশার্সরা গুনে গুনে ২৭ বার প্রত্যাখ্যান করেছিল। এত বার ব্যর্থ হওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই তিনিও বিষন্ন হয়ে পড়েন এবং তিনি এত বিষণ্ন হয়ে পড়েন যে, তার সেই পান্ডুলিপিটি পোড়াতে উদ্যত হয়েছিলেন। ঐ বিখ্যাত ব্যক্তিটির নাম ডঃ সিউজ। যিনি সারা বিশ্বে সবচেয়ে বিখ্যাত শিল্পাঙ্ক লেখক হিসেবে পরিচিত। তিনি তার সমগ্র জীবনে ৩০টি বেশি বিক্রিত শিশুতোষ গ্রন্থ লিখেছিলেন। এখনও পশ্চিমা দেশগুলো প্রতিটি শিশু ছোট থেকে বেড়ে উঠে তার গ্রন্থগুলো অধ্যয়ন করে। অথচ সেরকম একজন বক্তি একসময় চরম ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছিলেন। কিন্তু জয় হল তার দৃঢ় মানসিকতারই। ব্যর্থতার নয়।
বিটলস্ ব্যান্ড :১৯৬২ সালের দিকে একটি মিউজিক্যাল দল তাদের একটি গান His Masters voice প্রদর্শন করেছিলেন। বিশ্ববিখ্যাত কলম্বিয়া রেকর্ডস, ডিকর রেকর্ডস, পে রেকর্ডস, ফিলিপিস রেকর্ডস কোম্পানির কাছে। কিন্তু ঐ গানটির মূল্যায়ন দেয়নি এসমস্ত কোম্পানীগুলোর কেউই। রীতিমত তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছিল। সেই মিউজিক্যাল দলটির নাম বিশ্বখ্যাত ‘বিটলস’। এতসব ব্যর্থতা আর অবহেলা সত্ত্বেও এই ব্যান্ড দলটিই একসময়কার আলোচিত ব্যান্ড দল। তাদের প্রকাশিত যেকোন অ্যালবামই র্যাংকিংয়ে এক নম্বর
দখল করত।
এলভিস প্রেসলিঃযিনি তার হাই স্কুলের অধ্যয়নরত অবস্থায় গান শিখতেন। অথচ সেসময় তিনি গানের পরীক্ষায় ‘C’ গ্রেডের ঊর্ধ্বে পেতেনই না। তার গানের শিক্ষক তাকে বলেছিল গান শেখা ছেড়ে দেয়ার জন্য। সেই এলভিস প্রেসলি ধীরে ধীরে তার অদম্য প্রচেষ্ঠায় হয়ে উঠেছিলেন রক মিউজিকের রাজা। এলভিস প্রেসলিকেও ব্যর্থতা হার মানাতে পারেনি।
এস. গ্র্যান্ট – ইউ. এস. প্রেসিডেন্ট : যিনি একসময় এস্টেট এজেন্ট হিসেবে একজন কৃষক হিসেবে, একজন কাষ্টম এজেন্ট হিসেবে এমনকি একটি দোকানের দপ্তরি হিসেবেও সবসময় ব্যর্থ হয়েছিলেন। যাকে বলা যায় পুরো ব্যর্থ একজন ব্যক্তি। অথচ তিনিই পরবর্তীতে হয়েছিলেন আমেরিকার প্রভাবশালী প্রেসিডেন্ট।
এরকম বিশ্বের আরো অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি রয়েছে যারা কিভাবে ব্যর্থ থেকে পরবর্তীতে সফল হয়েছিলেন সেসব কাহিনীগুলো আগামী সংখ্যার জন্য থাকল। সঙ্গে থাকবে বৈদিক শাস্ত্র থেকে সংগৃহিত এ বিষয়ে অনেক অনেক সমাধান। এ দুইয়ের সমন্বিত প্রচেষ্ঠায় আশা করি আপনার জীবনও এক বিরাট পরিবর্তন সাধিত হবে তথা ব্যর্থতা নামক আতংক নিশ্চিতভাবেই আর আপনার জীবনকে আতংকগ্রস্থ করবে না। সমাজের সমস্ত ব্যর্থ ব্যক্তিদের মানসিক দৃঢ়তা তৈরি লক্ষ্যে আমাদের এই প্রচেষ্ঠা। পরবর্তী সংখ্যায় চোখ রাখুন। (চলবে…)
চৈতন্য সন্দেশ অ্যাপ ডাউনলোড করুন :https://play.google.com/store/apps/details?id=com.differentcoder.csbtg
Hare Krishna Thanks For Reading